স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরাই কি বিরোধী দল গঠন করতে যাচ্ছে?
ডেস্ক রিপোর্টঃ বাংলাদেশে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পর সবচেয়ে বেশি আসন পেয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। বিএনপি এই নির্বাচনে অংশ না নেয়ায় এবং জাতীয় পার্টি এককভাবে খুব বেশি আসন না পাওয়ার কারণে এই সংসদ বিরোধী দল শূন্য হয়ে পড়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
এমন অবস্থায় স্বতন্ত্র প্রার্থীরা বিরোধী দল গঠন করবে কিনা- এমন প্রশ্ন সামনে আসছে।
বিভিন্ন আসনের অন্তত ছয় জন নির্বাচিত স্বতন্ত্র সংসদ সদসের সাথে কথা হয় বিবিসি বাংলার।
তারা বলেছেন, সরকার যে সিদ্ধান্ত নেবে সেটিই মেনে নেবেন তারা। এ বিষয়ে ব্যক্তিগত নয় বরং দলীয় সিদ্ধান্তের প্রতিই নজর রয়েছে তাদের।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাও বলছেন, সংসদের বিরোধী দল কারা হবে সে সিদ্ধান্তও সরকারের পক্ষ থেকেই আসবে। কারণ স্বতন্ত্র প্রার্থীরা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী হওয়ার কারণে দলের সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়া ছাড়া কোন উপায় থাকবে না তাদের।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ এককভাবে ২২২টি আসনে জয় পেয়েছে। জাতীয় পার্টি পেয়েছে ১১টি আসন। আওয়ামী লীগের পর সর্বোচ্চ ৬২টি আসন পেয়েছে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। আর তিনটি আসন অন্যান্য দলগুলো পেয়েছে।
এর আগে ২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী ১৬ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী মিলে হাজী সেলিমের নেতৃত্বে একটি জোট তৈরি করতে দেখা গিয়েছিল। সেই জোটকে আনুপাতিক হারে তিনজন সংরক্ষিত নারী সদস্যের কোটাও দেয়া হয়েছিল। সাড়ে তিন বছর পরে অবশ্য সেই জোটের নেতা হাজী সেলিমসহ বেশিরভাগ স্বতন্ত্র প্রার্থী আবার আওয়ামী লীগে ফিরে যান।
এর আগে ১৯৮৮ সালে বিতর্কিত চতুর্থ জাতীয় নির্বাচনের পরও একই চিত্র দেখা গিয়েছিল। ওই নির্বাচনে জাতীয় পার্টি এককভাবে ২৫১টি আসনে জয় পেয়েছিল। অন্যদিকে জাসদের নেতৃত্বে কম্বাইন্ড অপজিশন পার্টি পেয়েছিল ১৯টি আসন। আর স্বতন্ত্র প্রার্থীরা পেয়েছিল ২৫টি আসন। এছাড়া জাসদ তিনটি এবং ফ্রিডম পার্টি দুইটি আসন পায়।
এই নির্বাচনে জাতীয় পার্টি ক্ষমতা গ্রহণ করে। ফ্রিডম পার্টি ও স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের সমর্থন নিয়ে আ স ম আব্দুর রব সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা নির্বাচিত হয়েছিলেন। সে কারণে তাকে “গৃহপালিত” বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে আখ্যা দেয়া হয়েছিল।
সিদ্ধান্ত আওয়ামী লীগের?
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী যারা হয়েছেন তাদের বেশিরভাগই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতা। এদের অনেকেই এই নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে প্রার্থীও হতে চেয়েছিলেন। তবে মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হন।
তফসিল ঘোষণার পরেই আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা করে দেন, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় যাতে কেউ নির্বাচিত হয়ে আসতে না পারেন, সেজন্য যে কেউ চাইলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারবেন। প্রয়োজনে ডামি হলেও প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী রাখতে হবে।
সোমবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, সংসদে বিরোধী দল কে হবে, সেই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন প্রধানমন্ত্রী।
যদিও এর কিছুক্ষণ পরেই একটি সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ”বিরোধী দলকে তাদের নিজেদের সংগঠিত করতে হবে। আপনি আমাকে বিরোধী দল পছন্দ করতে বলতে পারেন না। অবশ্য আপনি চাইলে আমরা সেটা করতে পারি।কিন্তু সেটা আসলে বিরোধীদল হবে না।”
তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সংখ্যা অনেক বেশি হওয়ায় এবং তারা আওয়ামী লীগের নেতা হওয়ায় শেষ পর্যন্ত তারা কী করবেন, বিরোধী দল কারা হবে, সেসব সিদ্ধান্ত আওয়ামী লীগের শীর্ষ মহল থেকেই আসবে।
ফরিদপুর-৩ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন ব্যবসায়ী নেতা এ কে আজাদ। তবে আওয়ামী লীগ তাকে মনোনয়ন না দিলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে তিনি নির্বাচনে অংশ নেন এবং বিজয়ী হয়েছেন।
এ কে আজাদ বিবিসি বাংলাকে বলেন, স্বতন্ত্র কয়েক জন প্রার্থীর সাথে তার কথা হয়েছে। তবে এদের কেউই এখনো কোন ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। তবে সিদ্ধান্ত অবশ্যই সরকারের ইচ্ছাতেই হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।
“সবকিছু নির্ভর করবে সরকার কীভাবে চাচ্ছে। সরকার যদি মনে করে যেহেতু মেজরিটি স্বতন্ত্র হয়ে আসছে। এরা সবাই কিন্তু আওয়ামী লীগের লোক। আওয়ামী লীগের বাইরের কোন লোক স্বতন্ত্র হয়ে আসছে বলে আমার জানা নেই।”
তিনি বলেন, “এখন এরা যেহেতু আওয়ামী লীগের লোক, তাই সিদ্ধান্তও আওয়ামী লীগের মধ্য থেকেই আসবে যে আমাদের অবস্থানটা কী হবে, জাতীয় পার্টির অবস্থানটা কী হবে। এজন্য আমাদের এককভাবে কোন সিদ্ধান্ত নেয়ার স্কোপ আছে বলে আমি মনে করি না।”
বিরোধী দল গঠন করার প্রস্তাব আসলে কী করবেন এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, অবশ্যই তারা এই প্রস্তাব মেনে নেবেন।
তিনি বলেন, “আমরা সরকারকে সাহায্য করবো, সরকারের ভুল-ত্রুটি ধরিয়ে দিবো। সরকারের কী পরিকল্পনা করা উচিত, কারণ সরকারের সামনে এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ অর্থনীতি।”
“এই চ্যালেঞ্জগুলোর ব্যাপারে সরকারকে সুপরামর্শ দিবো আমরা, সেটা অপজিশনেই থাকি বা না থাকি।”
“যেহেতু আমি নৌকা প্রতীকে হইনি, আমি স্বতন্ত্র হয়েছি, আমি যেটা সরকারের করণীয় এবং সরকার যেটা ভুল করছে, দুটো বিষয়ই আমি তুলে ধরবো।”
তবে জাতীয় পার্টির নেতৃত্বে বিরোধীদল গঠনে তার আপত্তি রয়েছে বলেও জানিয়েছেন মি. আজাদ।
তিনি বলেন, “জাতীয় পার্টির সাথে আমি ব্যক্তিগতভাবে যাবো না। এক্ষেত্রে আমার দ্বিমত আছে।”
“আমার জাতীয় পার্টির লেজুড়বৃত্তি করতে আমার কনসাসে (বিবেকে) বাধে। এটা আমার ব্যক্তিগত মতামত।”
তবে তারপরও এ ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হলে তিনি তার আসনের নেতা-কর্মীদের সাথে পরামর্শ করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানিয়েছেন।
গাজীপুর-৫ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আখতারুজ্জামান বলেন, তিনি আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। তিনি এই দলের হয়ে ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত সংসদ সদস্য ছিলেন। গত তিনটি নির্বাচনে দলের পক্ষ থেকে মনোনয়ন চেয়েও পাননি। এবার দলের অনুমতি থাকায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেছেন তিনি।
“এর অর্থ এই নয় যে আমরা দল থেকে বের হয়ে গেছি বা অন্যরকম হয়ে গেছি।”
তিনি বলেন, “দল একটি কৌশল হিসেবে নির্বাচন নিয়েছে। আমি আশা করি, এই কৌশলগত নির্বাচনে যে কৌশলটা সফল হয়েছে, এই কৌশলগত কারণে যারা জয় লাভ করে এসেছি, আমাদের ব্যাপারেও দল একটা সিদ্ধান্ত নেবে যে, কীভাবে এটা পরিচালিত হবে।”
মি. আখতারুজ্জামান বলেন, সাংবিধানিকভাবে কোন বাধা না থাকার কারণে, তিনি প্রথমত দলের হয়ে কাজ করতে চান। সুযোগ পেলে তিনি আওয়ামী লীগে ফিরে যেতে চান।
তবে দল যদি বিরোধীদল গঠন করার নির্দেশ দেয় তাহলে সেটাতেও তার আপত্তি নেই বলেও জানান। কারণ সংসদে বিরোধী দল থাকাটাও জরুরি।
তিনি বলেন, “এই বিরোধী দলের পারপাসের জন্য যদি দল আমাদেরকে নির্দেশনা দেয় যে তোমরা একটা অপজিশন গ্রুপ গঠন করো, তাহলে স্বতন্ত্র মিলে আমরা একত্রিত হয়ে টাইম টু টাইম বক্তব্য রাখা, পারফর্ম করা, সেইটা হতে পারে।”
তবে জাতীয় পার্টির নেতৃত্বে বিরোধী দল গঠন হলে সেখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে থাকবেন কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে মি. আখতারুজ্জামান বলেন, দলের সাথে আলোচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন তিনি।
হবিগঞ্জ-৪ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী সৈয়দ সায়েদুল ইসলাম সুমন বিপুল ভোটের ব্যবধানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এবং সাবেক বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলীকে হারিয়ে জয় পেয়েছেন।
তিনি বলেন, আপাতত শপথ নেওয়া ছাড়া আর কোন পরিকল্পনা নেই তার। তবে এলাকার জনগণের জন্য কাজ করতে চান তিনি।
সংসদে বিরোধী দলের বিষয়ে ভাবনার কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, শপথ নেয়ার পরই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন তিনি।
“এগুলো আসলে রাষ্ট্রীয় বিষয় বা সরকারি দল, বিরোধী দল। আমি এখনো স্বতন্ত্রই, আমি এখনো একক। অন্যান্য স্বতন্ত্ররা কী করবে না করবে, সেটা শপথ নেয়ার পরই সিদ্ধান্ত হবে।”
প্রধানমন্ত্রী এ ধরনের প্রস্তাব আনলে সেটিতে রাজি হবেন কিনা এমন প্রশ্নের উত্তর তিনি এড়িয়ে গেছেন।
হবিগঞ্জ-১ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জয়ী হয়েছেন আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী।
মিজ চৌধুরী জানান, তিনি পারিবারিকভাবেই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সমর্থক। তিনি নিজেও এবার নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীকে মনোনয়ন চেয়েছিলেন। কিন্তু সেটি না পেয়ে পরে দলের অনুমোদনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেছেন তিনি।
স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে তিনি বিরোধী দল গঠন করবেন কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, সে বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তই মেনে নেবেন তিনি।
তিনি বলেন, “আমার নেত্রী শেখ হাসিনা, তার রাজনৈতিক দিক নির্দেশনা, আমার আদর্শিক জায়গা যেটা আওয়ামী লীগের নির্দেশনার বাইরে আমি কোন চিন্তা করি না। কারণ আমার আইডেন্টিটি আওয়ামী লীগ।”
ময়মনসিংহ-৭ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে জয়লাভ করেছেন এবিএম আনিছুজ্জামান।
স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেও তিনি ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সদস্য।
বিরোধী দল গঠনের বিষয়ে অভিমত জানতে চাইলে মি. আনিছুজ্জামান বলেন, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের যেভাবে দিক নির্দেশনা দিবে আমি সেভাবে থাকবো, উনি যেটা বলবে, যেভাবে বলবে।”
সিলেট-৫ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ হুছামুদ্দীন চৌধুরী বলেন, বুধবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে শপথ নেবেন তিনি। তারপর এ বিষয়ে সিদ্ধান্তের কথা জানাতে পারবেন তিনি। তবে সরকারের সিদ্ধান্ত মেনে নেবেন বলেও ইঙ্গিত দেন তিনি।
“আমি তো স্বতন্ত্র প্রার্থী। বিরোধী দল নিয়ে আমার চিন্তা নাই। তবে এটা সরকারই ভাল চিন্তা করবে।”
স্বতন্ত্রদের জন্য কী কী বিকল্প আছে?
সাতই জানুয়ারির নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি আসন পেয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। মোট ২২২টি আসন পেয়েছে দলটি। এর বাইরে একক দল হিসেবে জাতীয় পার্টি পেয়েছে সর্বোচ্চ ১১টি আসন। আর বাকি ৬২টি আসনে জয়ী হয়েছে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা।
এমন অবস্থায় সংসদে বিরোধী দল কারা হবেন বা স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিরোধী দল হওয়ার সুযোগ আছে কিনা তা নিয়ে নানা ধরনের প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
রাজনীতি ও আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বতন্ত্র প্রার্থীরা চাইলে বিরোধী দল হিসেবে থাকতে পারেন। আবার তারা যেহেতু আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথেও জড়িত, তাই তারা এই দলটিতেও যোগ দিতে পারেন।
অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক অবশ্য বলছেন, স্বতন্ত্র প্রার্থীরা কী করবেন তা পুরোপুরি নির্ভর করবে আওয়ামী লীগের দলীয় সিদ্ধান্তের উপর।
কারণ হিসেবে তারা বলছেন, সাতই জানুয়ারির নির্বাচনে যারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন, তাদের অনেকেই এখনো পদধারী আওয়ামী লীগ নেতা। এছাড়া অনেকে রয়েছেন যারা আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে দলীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে জয়ী হয়েছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও পর্যবেক্ষক শারমিন মুরশিদ বলেন, স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নিয়ে কী করা হবে তার সিদ্ধান্ত নেবে বিজয়ী দল আওয়ামী লীগ।
“বিজয়ী দল চাইলে ঘোষণা করে দিতে পারে এই ৬২ জন আমার বিরোধী দল। আবার তারা উল্টো পথেও হাঁটতে পারে। জাতীয় পার্টি বিরোধী দল হবে বলে যে কথা শোনা যাচ্ছিল, সেটিও হতে পারে।…এ বিষয়ে শেষ সিদ্ধান্ত, যে দলটি ক্ষমতায় আসতে চলেছে, সেই দলের।”
তিনি বলেন, সংসদীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় একই দলের সদস্যরা সংসদে বিরোধীদল হতে পারে কিনা তা নিয়ে প্রশ্নের সুযোগ রয়েছে।
অনেকে আবার বলছেন, এক্ষেত্রে তাদের বিরোধীদল হতে কোন বাধা নেই। কারণ সরকারি দলের বাইরে যারা নির্বাচিত হন তারা স্বাভাবিক নিয়মেই বিরোধীদল হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকেন। সেটি কোন রাজনৈতিক দলের সদস্য বা স্বতন্ত্র প্রার্থী-যেই হোন না কেন।
২০১৪ সালের নির্বাচনের পরে দেখা গেছে, স্বতন্ত্র প্রার্থীরা মিলে একটি জোট গঠন করেছিলেন। সেই জোটকে আনুপাতিক হারে সংরক্ষিত আসনও দেয়া হয়েছিল।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ বলেন, নির্বাচন কমিশনের কাছে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা আওয়ামী লীগের প্রার্থী নন। তারা স্বতন্ত্র।
এমন অবস্থায় স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সামনে আসলে দুটি পথ খোলা আছে বলে মনে করেন তিনি। প্রথমটি হচ্ছে, আওয়ামী লীগ যদি অনুমতি দেয় তাহলে তারা আওয়ামী লীগে আবার যুক্ত হতে পারে। এতে করে আওয়ামী লীগের আসন সংখ্যা আরো বাড়বে।
আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে, সংসদে আওয়ামী লীগের বিপরীতে একটি বিরোধী দল হিসেবে থেকে যাওয়া।
মি. আহমদ বলেন, “স্ট্র্যাটেজিক কারণে যদি আওয়ামী লীগ চায় যে, একটা তথাকথিত অপজিশন থাকুক, তাহলে তারা স্বতন্ত্রদের বলবে যে তোমরা অপজিশন বেঞ্চেই থাকো।”
এই বিরোধীদল সরকারের বিরোধিতা করবে, সেটা নয়। বরং তারা সরকারের ‘গঠনমূলক সমালোচনা’ করবে।
তিনি বলেন, “এটা করার জন্য তো কিছু লোক থাকতে হবে। সে হিসেবে হয়তো তারা থাকবে। তারা হয়তো বা একটা গ্রুপ করে একজন নেতা নির্বাচন করবে। তিনি মন্ত্রীর পদমর্যাদা পাবেন। অনেক লবিং হবে।”
সংসদের বর্তমান বিরোধীদল জাতীয় পার্টি। তবে এর আগে তারা আওয়ামী লীগের মহাজোটের অন্তর্ভুক্ত ছিল এবং যৌথভাবে গত কয়েকটি সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, জাতীয় পার্টি আসলে কার্যত বিরোধীদল ছিল না। বরং তারা ছিল সরকারের অনুগত বিরোধীদল।
স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটতে পারে উল্লেখ করে মি. আহমদ বলেন, “এর আগে সরকারের পার্টনার হিসেবে বিরোধী দল ছিল। এবারো তাই হবে, সরকারের পার্টনার থাকবে তারা।”
আইন বিশেষজ্ঞ তানজিবুল আলম বলেন, সংসদীয় প্রক্রিয়ায় বলা আছে যে, স্বতন্ত্র প্রার্থীরা মিলে একটি জোট গঠন করতে পারে। একে বলা হয় ককাস। এই ককাসের মাধ্যমে একটি জোট গঠন করে তারা একজন নেতা নির্বাচন করে স্পীকারের কাছে বিরোধী জোট হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার কথা জানাতে পারে।
“এক্ষেত্রে তারা দ্বিতীয় বৃহত্তম পার্টি হিসেবে তাদের মর্যাদা দিতে পারবে। তাদের নেতাকে বিরোধী দলীয় নেতা হিসেবে নিতে পারবে।”
মি. আলম বলেন, এক্ষেত্রে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ অর্থাৎ, সংসদে দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে ভোট দেয়া যেটি ফ্লোর ক্রসিং হিসেবে পরিচিত, সেটি এই স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না।
ফলে এই স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে কেউ চাইলে আওয়ামী লীগ বা অন্য কোন দলেও যোগ দিতে পারে বলে জানান তিনি। একই সাথে তারা আলাদাভাবে ছোট ছোট জোট গঠন করেও সংসদে থাকতে পারবে।