স্বপ্ন সেতুর মূল কাজ শুরু
বাংলা সংলাপ ডেস্ক
বহু প্রতিক্ষীত পদ্মা সেতুর মূল অবকাঠামো নির্মান কাজ আজ শনিবার দুপুর থেকে শুরু হয়েছে। মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার মাওয়ায় পাইলিংয়ের মাধ্যমে মূল অবকাঠামো নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনী বক্তব্য শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নদীর এক কিলোমিটার ভেতরে শুরু হয় সাত নম্বর পিলারের মূল পাইলিংয়ের কাজ। এরকম মোট ৪২টি পিলারের ওপর ভর দিয়েই প্রমত্তা নদীর দুই তীরকে যুক্ত করবে পদ্মা সেতু।
এর আগে বেলা ১২টার দিকে শরীয়তপুরের জাজিরা পয়েন্টে পদ্মা সেতুর নদীশাসন কাজের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। পরে সেখানে এক সুধী সমাবেশে বক্তব্য দেন তিনি। জাজিরায় নিজস্ব অর্থায়নে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি চেয়েছিলাম, আমরা পারি, আমরা তা দেখাব। আজ আমরা সেই দিনটিতে এসে পৌঁছেছি। এসময় পদ্মা সেতুতে বাংলাদেশের জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয়ায় ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষের কাছে পাওয়া সাহস তাঁকে শক্তি জুগিয়েছে। এছাড়াও সময়মত যাতে নির্মাণ কাজ শেষ করা যায় সে লক্ষ্যে সবার সহযোগিতা ও দোয়া চান শেখ হাসিনা।তিনি বলেন, পদ্মা সেতু হলে বাংলাদেশ উন্নতি ও সমৃদ্ধির পথে আরও একধাপ এগিয়ে যাবে। অনুষ্ঠানে পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, সেনাবাহিনীর প্রধান, সাংসদ ও এলাকাবাসী উপস্থিত ছিলেন।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন, প্রকল্পের প্রায় ২৭ শতাংশ কাজ এরইমধ্যে শেষ হয়েছে। এই সেতু নির্মাণের পাশাপাশি মাওয়া থেকে পোস্তগোলা পর্যন্ত চার লেইনের সড়ক হবে। রাজধানীর বিজয়নগর থেকে ঢাকা-মাওয়া সড়কের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনে হবে ১৩ কিলোমিটার দীর্ঘ ফ্লাইওভার। এছাড়া জাজিরা পয়েন্ট থেকে খুলনা, বেনাপোল, কুয়াকাটা পর্যন্ত চার লেইনের সড়ক নির্মণের পরিকল্পনার কথাও জানিয়েছেন তিনি।
আশা করা হচ্ছে, ছয় দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সেতু আগামী তিন বছরের মধ্যে যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া যাবে। যান চলাচলের পাশাপাশি রেল যোগাযোগেরও ব্যবস্থা রয়েছে পদ্মা বহুমুখী সেতুতে। প্রায় ২৯ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের এই সেতু দিয়ে ঢাকাসহ দেশের পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে সরাসরি সড়কপথে যুক্ত হবে দক্ষিণ জনপদের ২১ জেলা। এ সেতু হলে দেশের আর্থিক প্রবৃদ্ধি ১ দশমিক ২ শতাংশ বাড়বে, প্রতিবছর শূন্য দশমিক ৮৪ শতাংশ হারে দারিদ্র্য বিমোচন হবে বলে আশা করছে সরকার।
দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি পদ্মা সেতু। ১৯৯৮-৯৯ সালে প্রথম এখানে সেতু নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়। ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে পদ্মা সেতুর নকশার জন্য পরামর্শক নিয়োগ করা হয়। তবে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগে ২০১১ সালে বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতু প্রকল্প থেকে সরে গেলে সরকার নিজস্ব অর্থায়নে এই সেতু তৈরির উদ্যোগ নেয়। ২০১৪ সালে পদ্মা সেতু নির্মাণে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি সই করে সরকার। গত মার্চে নির্মাণকাজ শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি। পদ্মা সেতুর নদীর শাসনের কাজ করছে সিনো হাইড্রো করপোরেশন এবং চায়না মেজর ব্রিজ কোম্পানি মূল সেতুর নির্মাণকাজ করছে।