লন্ডন হাইকমিশনকে আ.লীগের পার্টি অফিস বানিয়ে ফেলেছিলেন সাইদা মুনা

Spread the love

কূটনৈতিক প্রতিবেদনঃ অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর রদবদলের অংশ হিসেবে ঢাকায় ফেরানো হচ্ছে যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনীমকে। রদবদলের অংশ হলেও মূলত পেশাদারিত্বকে ছাপিয়ে আওয়ামী লীগের প্রতি মুনার বাড়তি আনুগত্যের অভিযোগের কারণে তাকে ঢাকায় ফেরানো হচ্ছে বলে কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে।

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ব্যাপক পরিচিতি পাওয়া এই রাষ্ট্রদূতকে গত রোববার (৩০ সেপ্টেম্বর) এক আদেশে ‘অবিলম্বে’ ঢাকায় সদরদপ্তরে ফিরতে বলেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সাইদা মুনা লন্ডনে প্রায় ৬ বছর দায়িত্ব পালন করেন।

আওয়ামী লীগ সরকারের সব নির্দেশনা বাস্তবায়নে সবসময় তৎপর ছিলেন এই কূটনীতিক। তার মেয়াদে হাইকমিশনকে ‘পার্টি অফিসে’ পরিণত করা হয়েছিল বলে অভিযোগ বিএনপি সমর্থক প্রবাসীদের।

সম্প্রতি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমার জাতীয় নির্বাচনের পূর্ব মুহুর্তে দ্যা সান আয়োজিত একটি বিতর্ক অনুষ্ঠানে ইংলিশ চ্যানেল দিয়ে আসা অবৈধ অভিবাসীকে নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর মন্তব্য করতে গিয়ে বাংলাদেশের নাম ব্যবহার করেন। বিষয়টি প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করলে প্রতিবাদ জানানো হয়। লেবারের দায়িত্বপ্রাপ্ত একজন ডেপুটি লিডারও এই ঘটনার প্রতিবাদে পদত্যাগ করেন। ব্রিটিশ এমপি আফসানা বেগম ,রুশনারা আলী এবং রুপা হক লেবার নেতার মন্তব্যের প্রতিবাদ জানালেও হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনীম একটি চিঠিতে স্টারমারের ভূয়সী প্রশংসা করেন। মিঃ স্টারমারের মন্তব্যের কোন প্রতিবাদ জানাননি এই হাইকমিশনার। এই ঘটনায় প্রতিবাদ জানাননি শেখ হাসিনার ভাগনি ব্রিটিশ মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিকীও।

হাইকমিশনে আয়োজিত কোন জাতীয় অনুষ্ঠান কিংবা লন্ডনে শেখ হাসিনা আগমন উপলক্ষে আয়োজিত কোন প্রেস ব্রিফিংয়ে আওয়ামী সমর্থিত সাংবাদিকদের দাওয়াত করতেন সাইদা মুনা। আওয়ামী মতাদর্শের বিরোধী কোন সাংবাদিককে তাদের অনুষ্ঠানে প্রবেশ করতে দেওয়া হতো না। জানা গেছে হাইকমিশনের অনুষ্ঠান সুচিতে কোন কোন সাংবাদিককে দাওয়াত করা হবে তার লিস্ট দেওয়া হত যুক্তরাজ্য আওয়ামীলীগ থেকে।

কূটনৈতিক সূত্রে জানা যায়, সাধারণত একজন কূটনীতিক কোনো মিশনে তিন বছর রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করে থাকেন। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের অত্যন্ত আস্থাভাজন হওয়ায় সাইদা মুনা ২০১৮ সালের ৩০ নভেম্বর থেকে লন্ডনে হাইকমিশনারের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। ওই কূটনীতিক লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশনকে আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয় বানিয়ে ফেলেছেন বলে বিএনপি-সমর্থক প্রবাসীরা দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছিলেন।

জানা গেছে, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর লন্ডনে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত লোকজন যুক্তরাজ্যে হাইকমিশনার পরিবর্তনের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে চিঠিপত্র এবং স্মারকলিপি প্রদান করে আসছিলেন।

এর আগে রোববার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক (প্রশাসন) মোহাম্মদ নাজমুল হক স্বাক্ষরিত অফিস আদেশে বলা হয়েছে, আপনাকে (সাইদা মুনা তাসনিম) সদর দপ্তর, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঢাকায় বদলির সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। বাংলাদেশ হাইকমিশন লন্ডনে আপনার বর্তমান দায়িত্ব ত্যাগ করে অনতিবিলম্বে সদর দপ্তর ঢাকায় প্রত্যাবর্তনের জন্য অনুরোধ করা যাচ্ছে।

পেশাদার কূটনীতিক তাসনিম বাংলাদেশ পররাষ্ট্র সার্ভিসের ১১তম ব্যাচের কর্মকর্তা। তিনি থাইল্যান্ডে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে তিনি নিউইয়র্কে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন এবং লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশনে বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেন। মন্ত্রণালয়ে তিনি একাধিক বিভাগের মহাপরিচালক হিসেবেও দায়িত্বপালন করেন।

জলবায়ু কূটনীতিতে ভূমিকা রাখার জন্য সাইদা মুনাকে ‘ডিপ্লোম্যাট অব দ্য ইয়ার অ্যাওয়ার্ড ২০২২’ দেয় যুক্তরাজ্যভিত্তিক ‘ডিপ্লোম্যাট’ ম্যাগাজিন।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে কেমিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে লেখাপড়ার পর তাসনিম ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন থেকে পাবলিক পলিসি ও ম্যানেজমেন্ট বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন। তিনি পররাষ্ট্র ক্যাডারে যোগ দেন ১৯৯৩ সালে।


Spread the love

Leave a Reply