হাথুরুসিংহের যে দুই কৌশল ইংল্যান্ডকে ভোগাতে পারে
ডেস্ক রিপোর্টঃ ইংল্যান্ডকে হারাতে আক্রমণাত্মক কৌশলে খেলতে চায় বাংলাদেশ। তিন ম্যাচের ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলতে আসা ইংলিশদের মোকাবেলা করতে নতুন এই কৌশলের কথা বলেছেন বাংলাদেশের নতুন কোচ চান্ডিকা হাথুরুসিংহে।
ঢাকায় আজ এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেছেন তিনি।
তবে মি. হাথুরুসিংহে মনে করেন, “ইংল্যান্ড ভালো দল এজন্য আলাদাভাবে উজ্জীবিত হতে হবে ব্যাপারটা এমন নয়। সব দলের বিপক্ষে জাতীয় দলের ভালো করার তাড়না থাকা দরকার।”
বাংলাদেশ ও ইংল্যান্ডের মধ্যকার ওয়ানডে সিরিজ শুরু হচ্ছে পহেলা মার্চ। বুধবার ঢাকার মিরপুরে প্রথম ওয়ানডে ম্যাচ দিয়ে শুরু হবে এই সিরিজটি।
তবে, এই সিরিজ দুই দলের জন্য দুটি ভিন্ন তাৎপর্য বহন করে।
ইংল্যান্ডের ওয়ানডে অধিনায়ক জস বাটলার বলেছেন, তার দেশ বাংলাদেশে এসেছে ‘একটা চ্যালেঞ্জ নিয়ে’।
এদিকে, ছয় মাস পর মাঠে ফিরে বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়ক তামিম ইকবাল বলছেন, এবারে ভালো উইকেটে বেশি ব্যাটিং করা প্রয়োজন।
ইংল্যান্ড এখন সীমিত ওভারের ক্রিকেটের সেরা দল।
ক্রিকেট বিশ্লেষকরা মনে করেন, এই ইংল্যান্ড দলের মতো আক্রমণাত্মক, তীক্ষ্ণ দল ক্রিকেটে খুব কমই এসেছে।
ক্রিকেটে প্রথম দল হিসেবে একই সাথে ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মালিক ইংল্যান্ড।
টেস্ট ক্রিকেটেও ইংল্যান্ড এক ধরনের বিপ্লব ঘটাচ্ছে।
কোচ ব্রেন্ডন ম্যাককালাম ও অধিনায়ক বেন স্টোকস নতুন ধারার আক্রমণাত্মক টেস্ট ক্রিকেট খেলছে, যার নাম দেয়া হয়েছে ‘বাজবল’।
ইংল্যান্ড যে কারণে ভুগতে পারে
ক্রিকেট বিশ্লেষক সৈয়দ আবিদ হুসেইন সামি মনে করেন ইংল্যান্ডের এই ক্রিকেটাররা বাংলাদেশের কন্ডিশনে ভুগতে পারেন।
তবে জস বাটলারের কথা তিনি আলাদাভাবে বলেছেন, “জস বাটলার লো ব্যাট লিফটে খেলে এতে করে তার হাতে বিভিন্ন ধরনের শট থাকে যার নামও পাওয়া মুশকিল।”
“নিচু হয়ে আসা বল, ধীরগতির বল সহজেই তার ব্যাটে আসে। এ কারণে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগেও তিনি সফল একজন ব্যাটসম্যান,” বলেন মি. হুসেইন।
তিনি আলাদা করে মইন আলীর কথাও বলেছেন।
মইন আলী উপমহাদেশের কন্ডিশনে পরীক্ষিত ক্রিকেটার, যে কারণে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ, বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ বা পাকিস্তান সুপার লিগে তার কদর আছে।
এই দুজনকে থামাতে পারলে বাংলাদেশের ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জয়ের সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করেন এই বিশ্লেষক।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ক্রিকেট দল ২০১৪-১৫ মৌসুম থেকে ঘরের মাটিতে মাত্র একটি ওয়ানডে সিরিজ হেরেছে।
আর সেটি ২০১৬ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষেই।
ইংল্যান্ডকে হারাতে ‘কাটগ্রাস উইকেট’
বাংলাদেশের কোচ হিসেবে ফিরে নিজের প্রথম সংবাদ সম্মেলনেই চান্ডিকা হাথুরুসিংহে জানিয়েছেন ঘরের মাটিতে সুবিধা নেয়ার পক্ষে তিনি।
ঢাকার মাঠে চান্ডিকা হাথুরুসিংহে কাটগ্রাস উইকেট তৈরির সুপারিশ করেছেন বলে জানা গেছে।
এটাকে কাটা ঘাসের উইকেট বলছেন বিশ্লেষক ও ঘরোয়া ক্রিকেটার সৈয়দ আবিদ হুসেইন সামি।
তিনি বলেছেন, ঘাস কাটা থাকে এবং উইকেট যখন ভেজা থাকে তখন উইকেটের ওপর ঘাস ছিটিয়ে চট বেছানো হয় এবং রোলার দিয়ে কিউরেটর সেটাকে পিচের ওপর রোল করবেন।
এর ফলে উইকেটের ওপর একটা ঘাসের প্রলেপ পরে এবং এটা প্রাকৃতিক নয়। এটাকে ‘উইকেট কাস্টমাইজেশন’ বলা হয়ে থাকে ক্রিকেটের ভাষায়।
এর আগে ২০১৫ সালে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় বাংলাদেশ ও ভারতের ম্যাচে এমন উইকেট দেখা গিয়েছিল।
এটা উইকেটকে খানিকটা স্পঞ্জি করে তোলে।
সৈয়দ আবিদ হুসেইন সামি মনে করিয়ে দিলেন, সেই টেস্ট ম্যাচে ১৬ উইকেটের মধ্যে স্পিনাররা পেয়েছিলেন ১৪টি এবং ফাস্ট বোলার ভারুন আরন একটি, আর একটি উইকেট গিয়েছিল রান আউটে।
এই ধরনের উইকেটে বল একটু ধীর হয়ে আসে।
ইংল্যান্ড অনেক বেশি আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলে থাকে, এমন দলকে থামাতে এ ধরনের কৌশল হাতে নিয়েছেন হাথুরুসিংহে।
সৈয়দ আবিদ হুসেইন সামি বলেন, ইংল্যান্ড অনেক বেশি শট খেলে থাকে, তাদের থামানোর জন্যই এই ধরনের উইকেটের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এই ধরনের উইকেটকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে একটা ‘কমন বিষয়’ বলছেন এই বিশ্লেষক।
টাইগারদের একাদশ নিয়ে ‘কোনও সারপ্রাইজ নেই’
তাইজুল ইসলাম বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটে একজন গুরুত্বপূর্ণ ক্রিকেটার, যাকে অনেক কম সময়ই সীমিত ওভারের ক্রিকেটে দেখা যায়।
এবারের সিরিজে তাইজুল ইসলামকে স্কোয়াডে রাখা হয়েছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তিনটি ওয়ানডে ম্যাচেই তাকে দেখা যেতে পারে।
ক্রিকেট বিশ্লেষক মি. হুসেইনের মতে, “তাইজুল সীমিত ওভারের ক্রিকেটে তেমন আলোচিত ক্রিকেটার নন, কিন্তু তিনি লেন্থ বুঝে বল করতে পারেন এটা প্রমাণিত। এটাই হবে এই সিরিজে বাংলাদেশের একটা বাজি।”
চান্ডিকা হাথুরুসিংহে অবশ্য বলছেন, একাদশ নিয়ে ‘কোনও সারপ্রাইজ নেই’।
তবে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তাইজুল ইসলাম স্পেশালিস্ট বোলার হিসেবে দলে থাকতে পারেন।
সাকিব আল হাসান ও মেহেদী হাসান মিরাজের সাথে তাইজুল ইসলাম স্পিন আক্রমণ সামলাবেন।
ফাস্ট বোলার হিসেবে তাসকিন আহমেদ ও এবাদত হোসেন একাদশে থাকবেন।
তবে বাংলাদেশের উইকেট স্পঞ্জি হলে এর সুবিধা ইংল্যান্ডও নিতে পারে, বলছেন সৈয়দ আবিদ হুসেইন সামি।
তিনি মনে করেন ইংল্যান্ডের ভান্ডারে যথেষ্ট বোলার আছেন, “কন্ডিশন ইংল্যান্ডের জন্য চ্যালেঞ্জিং, তবে মইন আলী আছে, আদিল রাশিদ আছেন, রেহান আহমেদ আছেন।”
রেহান আহমেদ বাতাস ব্যবহার করতে পারেন ভালো, এই ধরনের কন্ডিশনে তিনি ভালো করতে পারবেন।
চান্ডিকা হাথুরুসিংহে ম্যাচ পূর্ববর্তী সংবাদ সম্মেলনে মনে করিয়ে দিয়েছেন, “ইংল্যান্ড বিশ্বের সেরা ফাস্ট বোলারদের নিয়ে বাংলাদেশে এসেছে”।
এই বোলাররা যেকোনও উইকেটে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারেন।
জফরা আর্চার যে গতিতে বল করেন তাতে উইকেটের সুবিধা খুব বেশি নেয়ার প্রয়োজন হয়না তার।
ইংল্যান্ডের স্কোয়াডে সব বিভাগে বিকল্প রয়েছে
ইংল্যান্ডের অধিনায়ক জস বাটলার দলটির উইকেট রক্ষক একই সাথে সীমিত ওভারের ক্রিকেটে দলটির সেরা ব্যাটসম্যান।
সাড়ে চার হাজার রানের মালিক বাটলার ১১৮ স্ট্রাইক রেটে ব্যাট করেন, গড় ৪১।
কাগজে কলমে পরিসংখ্যানের বাইরেও বাটলার যেকোনও প্রতিপক্ষের জন্য মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠতে পারেন, তিনি প্রথম ১০ ওভারে রানের গতি বাড়ান এবং পরবর্তীতে ইনিংস বড় করতে পারেন।
জস বাটলারের প্রথম সেঞ্চুরি পেতে লেগে গিয়েছিল দুই বছর, এখন তিনি ১১টি ওয়ানডে সেঞ্চুরির মালিক।
সর্বশেষ দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের তৃতীয় ম্যাচে করেছেন ১৩১, দ্বিতীয় ম্যাচে অপরাজিত ছিলেন ৯৪ রানে।
ইংল্যান্ডের আরেক ওপেনার জেসন রয়ের নামের পাশেও আছে ১১টি ওয়ানডে সেঞ্চুরি।
যার মধ্যে একটি বাংলাদেশের বিপক্ষে ২০১৯ বিশ্বকাপে ১৫১ রানের ইনিংস।
রয় ইংল্যান্ডের জাতীয় দলে জায়গা হারিয়েছিলেন গত বছর, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সেঞ্চুরি করে তিনি দলে জায়গা ফিরে পাচ্ছেন ধীরে ধীরে।
তার জায়গা নিতে অপেক্ষা করছেন ফিল সল্ট ও উইল জ্যাকস।
ইংল্যান্ডের স্কোয়াডটিকে ঈর্ষা করার মতো বলছেন হাথুরুসিংহে।
তিনি মনে করেন ইংল্যান্ড কিছু ক্রিকেটার নিয়ে আসতে পারেনি যারা নিউজিল্যান্ডে আছেন এবং বাকিরা পাকিস্তান সুপার লিগে খেলছেন।
তারপরও ইংল্যান্ড এমন একটা দল নিয়ে এসেছে যারা যেকোনও দলকে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারে।