হামাসের টানেল থেকে তিন জিম্মির মৃতদেহ উদ্ধার করেছে ইসরায়েলি সেনারা
ইসরায়েলি সৈন্যরা গাজা থেকে তিন জিম্মির মৃতদেহ উদ্ধার করেছে বলে জানিয়েছে ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্সেস বা আইডিএফ। যাদের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে তারা হলেন শানি লৌক, অমিত বুসকিলা এবং ইতজ্যাক গেলেরেন্টার।
আইডিএফ বলেছে, তাদের গত সাতই অক্টোবর হত্যা করে তাদের মৃতদেহ গাজায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী মৃতদেহ হামাসের একটি টানেলে পাওয়া গেছে।
গত অক্টোবর মাসে ইসরায়েলের অভ্যন্তরে ঢুকে নজিরবিহীন হামলায় ১২শ ইসরায়েলিকে হত্যা এবং ২৫২ জনকে জিম্মি করে নিয়ে গিয়েছিল হামাস।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সংবাদটিকে ‘হৃদয় বিদারক’ বলে অভিহিত করেছেন।
“আমরা আমাদের সব জিম্মিকে ফিরিয়ে আনবো, জীবিত এবং যারা মারা গেছেন,” তিনি বলেছেন।
আইডিএফ এক বিবৃতিতে বলেছে রাতভর এক অভিযানের সময় মৃতদেহগুলো উদ্ধার করা হয়। তারা বলেছে গাজায় যাদের আটক করা হয়েছে সেসব ‘সন্ত্রাসীদের জিজ্ঞাসাবাদে’ পাওয়া গোয়েন্দা তথ্যের ওপর ভিত্তি করে কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছে তারা।
তারা বলেছে যে তিনজনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে তাদের ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে নোভা উৎসবে যেখানে হত্যাকাণ্ড চালানো হয়েছিলো তার কাছেই একটি ইন্টারসেকশনে হত্যার পর মৃতদেহগুলো গাজায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো।
ওই উৎসবস্থলে ৩৬০ জনেরও বেশি মানুষকে হত্যা করা হয়েছিলো। এখনো ১২৫ জন জিম্মির হদিস মিলেনি। বাকীদের উদ্ধার করা হয়েছে কিংবা তাদের ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
জিম্মিদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে গড়ে ওঠা দি হোস্টেজ ফ্যামিলি ফোরাম বলেছে ঘোষণাটি শুনে তারা ‘নতমুখে এবং ভাঙ্গা হৃদয়ে’ গভীর দু:খ প্রকাশ করছে। তারা বলেছে ওই তিনজনকে হামাসের সন্ত্রাসীরা হত্যা করেছে।
নভেম্বরে হওয়া একটি চুক্তির আওতায় যুদ্ধবিরতি এবং ইসরায়েলি কারাগার থেকে ২৪০ জন ফিলিস্তিনি বন্দীর মুক্তির বিনিময়ে হামাস এ পর্যন্ত ১০৫ জন জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছে। তবে এটা এখনো পরিষ্কার নয় যে বাকী জিম্মিদের কতজন এখনো জীবিত রয়েছে।
আইডিএফ এর ঘোষণার পর হামাসের সামরিক শাখা বলেছে জিম্মিদের তারা ফেরত দিবে একমাত্র “আমাদের মানুষের জন্য একটি সম্মানজনক বিনিময় চুক্তি হওয়ার পর”।
যুদ্ধবিরতি এবং জিম্মিদের মুক্তির লক্ষ্যে কায়রোতে যে আলোচনা চলছিলো সেটি এখন থমকে আছে।
সাতই অক্টোবরের ওই হামলার পর ইসরায়েল গাজায় অভিযান চালায়। এতে ৩৫ হাজার মানুষ নিহত হয়েছে বলে হামাস নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক।
প্রায় ২২ লাখ ফিলিস্তিনি মানুষ এখন মারাত্মক খাদ্য সংকটে আছে এবং তাদের জরুরি আশ্রয় ও অন্য সহায়তা দরকার বলে জাতিসংঘ জানিয়েছে।
গাজায় অস্থায়ী বন্দরের মাধ্যমে ত্রাণ
মার্কিন সামরিক বাহিনী বলেছে গাজা উপকূলে ভাসমান পিয়ার ব্যবহার করে তাদের ত্রাণবাহী প্রথম জাহাজ গাজায় পৌঁছেছে।
শুক্রবার স্থানীয় সময় সকাল নয়টায় ত্রাণ নিয়ে সেখান থেকে ট্রাকগুলো বিভিন্ন দিকে যেতে শুরু করে।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক বলেছে ৮৪০০ প্লাস্টিক শেল্টার সরবরাহ করা হয়েছে।
এছাড়া ৫শ টন ব্রিটিশ সহায়তা আছে, যার মধ্যে তাঁবু, হাইজিন কিট এবং মালামাল তোলার গাড়ি যুক্তরাষ্ট্র নির্মিত ভাসমান টার্মিনাল দিয়ে গাজায় পৌঁছাবে।
অবশ্য তিনি বলেছেন মানবিক সংকট মোকাবেলায় সমুদ্র পথ ‘একমাত্র উপায় নয়’।
“আমাদের রাফাহ ক্রসিংসহ স্থলভাগের কিছু রুট খুলে দেয়া দরকার যাতে করে আরও ত্রাণ সহায়তা পৌঁছানো যায়,” বলেছেন তিনি।
যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন বলেছেন গাজার মানুষ দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে আছে এবং তাদের জরুরি সহায়তা দরকার- ইসরায়েলকে অবশ্যই স্থলভাগের রুটগুলো খুলে দিতে হবে যাতে প্রয়োজনীয় সহায়তা নিরাপদে সেখানে পৌঁছায়।
মি. সুনাক ও লর্ড ক্যামেরন প্রতিদিন পাঁচশ ট্রাক গাজায় প্রবেশের যে অঙ্গীকার ইসরায়েল করেছে তা পূরণের আহবান জানিয়েছেন।
ওদিকে শুক্রবার হোয়াইট হাউজ জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন কিরবি বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা সাইপ্রাসে পৌঁছেছে। “ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ এগুলো যাচাই করবে এবং এরপর জাহাজে করে সমুদ্রপথে গাজায় নেয়া হবে,” তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন।
তিনি রাফাহ ক্রসিং খুব গুরুত্বপূর্ণ এবং এটি দ্রুত খুলে দেয়া উচিত। ইসরায়েল গত সপ্তাহে এই ক্রসিং বন্ধ করে দিয়েছে।
তবে এই ক্রসিং বন্ধ করার জন্য ইসরায়েল ও মিশর পরস্পরকে দোষারোপ করেছে।
গাজা উপকূলে মার্কিন সেনাবাহিনী যে ভাসমান টার্মিনাল তৈরি করেছে তাতে প্রথমে নব্বইটি ট্রাকে মালামাল সরবরাহ করা হবে। তবে পরে এটি পুরোপুরি কার্যকর হলে ট্রাক সংখ্যা বেড়ে দেড়শ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।