হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ায় চাপের মুখে যুক্তরাজ্যের এমপি টিউলিপ
যুক্তরাজ্যের নগরমন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিক বেশ চাপে পড়েছেন। এই লেবার এমপি ইতিমধ্যেই লন্ডনে একটি সম্পত্তি থেকে আয় সংক্রান্ত তথ্য নিবন্ধন করতে ব্যর্থ হওয়ার জন্য তদন্তের অধীনে রয়েছেন। বর্তমানে বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে তার পারিবারিক সংযোগ টিউলিপকে নতুন করে চাপের মুখে ফেলেছে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশটিতে ১৫ বছরের কর্তৃত্ববাদী শাসনের পর সোমবার ভারতে পালিয়ে আসা হাসিনা হলেন টিউলিপের খালা। বাংলাদেশে সপ্তাহব্যাপী ছাত্র-নেতৃত্বাধীন বিক্ষোভ দমাতে সরকারি দমন পীড়নে ৪০০ জনেরও বেশি লোক মারা যায় । ৭৬ বছর বয়সী আওয়ামী লীগ নেত্রী বাধ্য হন দেশ ছাড়তে। এই জল্পনা শুরু হয় তিনি হয়তো যুক্তরাজ্যে আশ্রয় চাইতে পারেন। বিশ্ব মানবাধিকার সংগঠনগুলো হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে হত্যা ও গুমসহ গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছে। ২০১৫ সাল থেকে হ্যাম্পস্টেড এবং হাইগেটের এমপি সিদ্দিকের বাংলাদেশ সরকারের কোনো কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার কোনো প্রমাণ নেই। কিন্তু যুক্তরাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ শহর লন্ডনের মন্ত্রী হিসেবে নতুন লেবার সরকারে তার ভূমিকা তদন্তের আওতায় এসেছে। যদিও সিদ্দিক বাংলাদেশের পরিস্থিতি বা তার খালার পরিস্থিতি সম্পর্কে প্রকাশ্যে মন্তব্য করেননি।
প্রশ্ন উঠছে
এনমেটেনা অ্যাডভাইজারি-এর প্রতিষ্ঠাতা এবং ফরেন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের একজন ফেলো ম্যাক্স হেস বলেছেন, ‘টিউলিপ বেশ কিছুদিন ধরেই যুক্তরাজ্যের এমপি।এখন বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী তাঁর কাছে আশ্রয় নিলে বিষয়টি খুব খারাপ দিকে মোড় নেবে। এটি লেবারকে ভবিষ্যতে সমস্যায় ফেলতে পারে। ‘২০১৯ সালে, চ্যানেল ৪ – এর একটি তদন্তে প্রমাণ মিলেছে যে আওয়ামী লীগের ইউকে শাখা সিদ্দিকের পুনঃনির্বাচনকে সমর্থন করার জন্য একটি প্রচারণা চালাচ্ছিল। দুইবার যুক্তরাজ্যের এমপি নির্বাচিত করতে সাহায্য করার জন্য আওয়ামী লীগকে সিদ্দিকের ধন্যবাদ দেওয়ার ভিডিও প্রকাশ করেছে চ্যানেল ৪। ২০১৩ সালে ক্রেমলিনে ভ্লাদিমির পুতিনের সাথে তার খালা হাসিনার ছবিতে টিউলিপকেও দেখা গেছে। পলিটিকো লেবারের সদর দফতরকে প্রাক্তন বাংলাদেশি সরকার এবং এর সাথে সিদ্দিকের সম্পর্ক প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করেছিল, কিন্তু কোনও প্রতিক্রিয়া পায়নি। বর্তমানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের সাথে তার যোগসূত্র সহকর্মী লেবার এমপিদের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি করতে পারে। বাংলাদেশি যোগসূত্র রয়েছে এমন আরেক এমপি রূপা হক সোমবার সোশ্যাল মিডিয়ায় হাসিনার শাসনকে ‘কর্তৃত্ববাদী শাসন’ বলে অভিহিত করেছেন। বৃটেনের পররাষ্ট্র সচিব ডেভিড ল্যামি সাম্প্রতিক ঘটনাবলী নিয়ে জাতিসংঘের তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন।
গত ৫ জুলাই লেবার যুক্তরাজ্যের সরকারে আসার পর সিদ্দিক এই প্রথম নয় যে চাপের মুখে পড়েছেন। তিনি লন্ডনের একটি অ্যাপার্টমেন্টের মালিকানা প্রমাণ করতে ব্যর্থ হওয়ার পর সংসদের তদন্তকারী দলের মুখোমুখি হন। এমপিদের জন্য প্রয়োজনীয় ২৮ দিনের মধ্যে একটি থিয়েটার শোতে কেন তাকে চারটি টিকিট উপহার দেওয়া হয়েছিল তাও জানাতে তিনি ব্যর্থ হন । বৃহস্পতিবার প্রকাশিত একটি রায়ে সংসদীয় কমিশনার ঘটনাগুলিকে ‘সম্ভাব্য নিয়ম লঙ্ঘন’ বলে উল্লেখ করেও সিদ্দিকের যুক্তি মেনে নিয়েছেন যে এগুলো ‘প্রশাসনিক ত্রুটি’ ছিল। সিদ্দিক ‘অজান্তে নিয়ম লঙ্ঘনের’ জন্য ক্ষমা চেয়ে নিয়েছেন এবং কমিশনারকে আশ্বস্ত করেছেন যে এরকম ঘটনা ভবিষ্যতে ঘটবে না।
তবে শহরের তিনজন ব্যক্তিত্ব যারা লেবার উপদেষ্টা এবং মন্ত্রীদের সাথে নিয়মিত দেখা করেন তারা দেয়ালের লিখনে বিশ্বাস করেন। নির্বাচনের পরের দিনগুলোতে সিদ্দিককে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়। কিন্তু অর্থনৈতিক বিষয়ে তার অভিজ্ঞতা কম এবং বিরোধীদের অভিযোগ তিনি সংস্থাগুলোর সাথে দেখা করার জন্য প্রস্তুত ছিলেন না। একটি বিনিয়োগ সংস্থার একজন প্রভাবশালী লবিস্ট যিনি লেবার কর্মকর্তাদের সাথে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছেন । নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেছেন, ‘সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো সরকারকে কিছু সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করতে পারে। কারণ অনেকেই চায়নি টিউলিপ অর্থ মন্ত্রণালয়ের সচিব পদে আসুক। এর পিছনে কোনো উদ্দেশ্য রয়েছে। ‘একজন পাবলিক অ্যাফেয়ার্স এক্সিকিউটিভ যিনি নিয়মিত ট্রেজারি আধিকারিকদের সাথে দেখা করেন, তাকে একজন লেবার উপদেষ্টা নাকি বলেছিলেন – তার খালাকে বাংলাদেশে ক্ষমতাচ্যুত করার আগে সিদ্দিক নাকি ‘কিছু করার জন্য’ ছয় মাস সময় পেয়েছিলেন।
যখন এই দাবিটি ট্রেজারির কাছে রাখা হয়েছিল তখন একজন মুখপাত্র বলেছিলেন: “আমরা অনুমানের ওপর কোনো মন্তব্য করতে চাই না ।”
সূত্র : পলিটিকো