হিযবুত তাহরীর বৃটেন কর্তৃক আয়োজিত “ইসলামী বিশ্বব্যবস্থার প্রত্যাবর্তন” শীর্ষক আন্তর্জাতিক অনলাইন সম্মেলন সফলভাবে সম্পন্ন

Spread the love

বাংলা সংলাপ ডেস্কঃ আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহর جل جلاله অশেষ রহমতে হিযবুত তাহরীর, বৃটেন গত শনিবার ৩১শে অক্টোবর ২০২০ তারিখে “ইসলামী বিশ্বব্যবস্থার প্রত্যাবর্তন” (Return of the Islamic World Order) শিরোনামে একটি আন্তর্জাতিক অনলাইন সম্মেলনের আয়োজন সফলভাবে সম্পন্ন করে। উক্ত সম্মেলনটিতে উপস্থিত ছিলেন ২০০০ এর অধিক সংখ্যক মানুষ। অনুষ্ঠানটির বিভিন্ন পর্যায়ে বক্তারা দূনিয়াব্যাপী বিবিধ সমস্যা ও এর ইসলামিক সমাধান তুলে ধরেন। তাঁরা বলেন, পুঁজিবাদী ধর্মনিরপেক্ষ ব্যবস্থা এইসব সমস্যার সমাধানে ব্যর্থ হয়েছে শুধু তাই নয় বরং এইসব সমস্যার গোড়ায় রয়েছে এই পুঁজিবাদী ধর্মনিরপেক্ষ ব্যবস্থা। যা পৃথিবীর প্রতিটি কোনায় মানুষের জীবনকে করে তুলেছে দুর্বিষহ এবং দিনের পর দিন এই পৃথিবীকে করে তুলছে মানুষের বসবাসের অযোগ্য।
সম্মেলনের শুরুতে ফ্রান্সের ইসলাম বিদ্ধেষী কার্যক্রম নিয়ে আলোচনা করা হয়। এবং নবী صلى الله عليه وسلم এর অবমাননার প্রেক্ষিতে মুসলিম বিশ্বের রাষ্ট্রপ্রধানদের নির্বাক ভূমিকা পালনের কঠোর সমালোচনা করা হয়। বক্তারা বলেন, মুসলিম রাষ্ট্রপ্রধানরা তাদের পদাধিকার বলে এই ঘৃণ্য কাজের উপযুক্ত জবাব দেয়া তো দূরে থাক বরং তাদের কেউ কেউ ফ্রান্সের এই কার্যক্রমের নীরব সমর্থক এবং অন্যরা কিছু অন্তঃসারশূন্য বক্তব্যের মাধ্যমে এটাই প্রমানে ব্যস্ত যে তাদের পশ্চিমের দালাল হওয়া ছাড়া আর কোন যোগ্যতা নেই।
বাস্তবতা হচ্ছে, বর্তমান বিশ্বে ইসলামী জীবনব্যবস্থাকে মিডিয়াতে ক্রমাগত আক্রমণ করা হচ্ছে, পশ্চিমা রাজনীতিবিদরা প্রতিনিয়ত ইসলামী মূল্যবোধকে কটাক্ষ করছে, মুসলিম উম্মাহ গণহত্যার শিকার হচ্ছে এবং আমাদের প্রাণের প্রিয় নবী صلى الله عليه وسلم কে অবমাননা করা হচ্ছে বাক স্বাধীনতার নামে। কিন্তু এত সবকিছুর পরও মুসলিমদেরকে বলা হচ্ছে তারা যেন কোন প্রতিক্রিয়া না দেখায়। সম্মেলনের বক্তারা বলেন, মুসলিমরা এইসব জুলুম কখনো মেনে নিবেনা এবং স্মরণ করিয়ে দেন কিভাবে অতীতে খিলাফত রাষ্ট্র এইধরণের জুলুম ও অবমাননার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছিল।
সম্মেলনের শেষে সবাই এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয় যে, পুরো বিশ্ব এই নীতিবিবর্জিত পুঁজিবাদী ব্যবস্থার অবসান চায় ও একটি অবশ্যম্ভাবী পরিবর্তনের অপেক্ষায় প্রহর গুনছে। এবং একমাত্র সম্পূর্ণ ইসলামিক জীবনব্যবস্থার বাস্তবায়নের মাধ্যমেই সম্ভব এই অন্যায় ও অত্যাচার থেকে মুক্তি পাওয়া। অপরদিকে এটি কোনোভাবেই কাম্য নয় যে, আমরা আমাদের শক্তি ও সামর্থ এই ক্ষয়িষ্ণু পুঁজিবাদী ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখার জন্য ব্যয় করি।
আর নবুঅতের আদলে খিলাফত প্রতিষ্ঠার কাজ করা হচ্ছে ইসলামের জন্য কাজ করা। আমরা যদি অন্য কোন ব্যাপারে আমাদের সময় ও শক্তি ব্যয় করি তাহলে তা শুধু এই জুলুম ও অত্যাচারকে দীর্ঘায়িত করবে। নবী মুহাম্মাদ صلى الله عليه وسلم পুরো মানব জাতির জন্য রহমত স্বরূপ পাঠানো হয়েছিল। তিনি আমাদেরকে একটি সত্য ও ন্যায়পরায়ণ জীবনের পথপ্রদর্শন করে গেছেন, যার মাধ্যমে রাষ্ট্রের সকল নাগরিকের তত্ত্বাবধান করা হয়। নবী صلى الله عليه وسلم এর সেই পথনির্দেশনা অমান্য করা ও ইসলামী শরীয়াহর বাস্তবায়নকে অগ্রাহ্য করা একটি মারাত্মক অপরাধ। মুসলিম বিশ্বের রাষ্ট্রপ্রধানরা এই কাজকে উপেক্ষা করার অপরাধে অপরাধী এবং তাদেরকে এই বিশ্বাসঘাতকতার জবাবদিহি করতে হবে।
ধর্মনিরপেক্ষ উপনিবেশবাদীরা এই পৃথিবীকে দারিদ্রতা ও মহামারীর অতল গহ্বরে ঠেলে দিয়েছে। এবং মুসলিমরাই পারে এই জরাজীর্ন পৃথিবীকে আলোকময় সমৃদ্ধির পথে নিয়ে যেতে ও একটি নতুন যুগের সূচনা করতে। আর এই পথে একমাত্র বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে মুসলিম বিশ্বের শাসকরা, যারা পশ্চিমের দেয়া সুযোগ সুবিধা হারানোর ভয়ে ভীত।
আমাদের মনে রাখা উচিত রবিউল আওয়াল মাসে নবী صلى الله عليه وسلم এর জন্ম ও ইসলামের ইতিহাসের অন্যতম ঘটনা হিজরত সম্পন্ন হয়েছিল। আর এই ইতিহাস বদলে দেয়া হিজরতের মাধ্যমেই আল্লাহর দ্বীন দুনিয়ার বুকে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। হিজরতের পূর্বে মদীনাবাসীরা মুহাম্মাদ صلى الله عليه وسلم কে নবী হিসেবে মেনে নেয় কিন্তু তিনি صلى الله عليه وسلم যখন মদিনাতে প্রবেশ করেন তখন তাঁকে একজন শাসক ও নবী হিসেবে গ্রহণ করা হয়। হিজরতের পূর্বে মুহাম্মাদ صلى الله عليه وسلم একজন নবী হিসেবে কুরাইশ বংশের সামাজিক মূল্যবোধের সমালোচনা করছিলেন। কিন্তু হিজরতের পরে নবী صلى الله عليه وسلم সমাজে ইসলামের মূল্যবোধ ও আইন কানুনের বাস্তবায়ন করেন। ইসলাম একটি দ্বীন হিসেবে তার পথ পরিক্রমায় সমাজের অসঙ্গতি, অন্যায়-অবিচারকে শনাক্ত করার পর্যায় থেকে এইসব সমস্যার সমাধান প্রদানের পর্যায়ে প্রবেশ করে। এবং সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে প্রতিষ্ঠার কারণে ইসলামের হুকুম আহ্কামগুলো বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করা সম্ভবপর হয়। উমর رضي الله عنه বলেন: “হিজরত সত্য ও মিথ্যার মাঝে পরিষ্কার ব্যবধান করে দিয়েছে, তাই হিজরত থেকে তারিখ গণনা শুরু কর।”
আমাদের অবশ্যই নবী صلى الله عليه وسلم ও সাহাবা رضي الله عنهم দের এই সংগ্রাম ও ত্যাগকে সম্মান জানানো উচিত। আর এটা শুধু তাঁদের গল্প বলার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলে চলবেনা বরং আমাদেরকে তাদের পদক্ষেপ অনুসরণ করতে হবে। এবং আমাদের সম্মুখে উপস্থিত সমস্যায় তাঁরা رضي الله عنهم কি ধরণের পদক্ষেপ নিতেন সে বিষয়ে চিন্তা করতে হবে।
যখন পারস্যের সম্রাট জিজ্ঞেস করেছিলেন নবী صلى الله عليه وسلم এর সাহাবী রাবি ইবন আমীর رضي الله عنه কে, তিনি কি জন্য এসেছেন? তিনি বলেছিলেন: “মানুষদের সৃষ্টির দাসত্ব করা হতে মুক্ত করে শুধু স্রষ্টা তথা আল্লাহর جل جلاله দাসত্বে নিয়োজিত করার জন্য ও ধর্মের নামে যে জুলুমের বেড়াজাল তৈরী হয়েছে তা ছিন্ন করে কেবল ইসলামের ন্যায়-বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য আমাদের প্রেরণ করা হয়েছে। আমরা মানুষকে এই দুনিয়ার সংকীর্ণতা থেকে বের করে এই পৃথিবী ও আখিরাতের বিশালতায় নিয়ে যেতে চাই।”


Spread the love

Leave a Reply