হ্যারি কেইনে সওয়ার ইংলিশ স্বপ্ন
বাংলা সংলাপ ডেস্কঃবিশ্বকাপ শুরুর আগে হয়তো খোদ রাশিয়ান সমর্থকরাও আশা করেনি তাদের দেশ খেলবে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে। দ্বিতীয় রাউন্ডে স্পেনের মতো দলের মুখোমুখি হওয়ার পর তাদের বিদায় ছিল সময়ের ব্যাপার। কিন্তু সব সমীকরণকে মিথ্যে প্রমাণ করে সেই রাশিয়া আজ কোয়ার্টার ফাইনালে। সোচির কোয়ার্টার ফাইনালে আজ তাদের প্রতিপক্ষ ক্রোয়েশিয়া। অপরদিকে সামারা অ্যারিনায় সুইডেনের বিপক্ষে অপর কোয়ার্টার ফাইনালে মাঠে নামবে ইংল্যান্ড। সোচিতে বাংলাদেশ সময় রাত ১২টায় রাশিয়া-ক্রোয়েশিয়া একং সামারায় রাত ৮টায় শুরু হবে ইংল্যান্ড সুইডেন ম্যাচ।
গতকাল মস্কো, নিজনি, সামারাতে বৃষ্টি হয়েছে সারাদিন। থেমে থেমে বৃষ্টির কারণেই হঠাৎ করে এই শীতের আগমন। ঠাণ্ডাই নাকি বেশি ভালো লাগে রাশিয়ানদের। এই সময়টাতে মদ খেয়ে বুঁদ হয়ে থাকে রুশরা। ক্রোয়েশিয়াকে হারিয়ে ঠাণ্ডা উদযাপনের প্রস্তুতিও নিয়ে রেখেছে তারা। তাদের বিশ্বাস স্পেনকে হারিয়ে যে দল কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছে। তারা অবশ্যই ক্রোয়েশিয়াকে হারাতে পারবে। এই বিশ্বাস জন্মেছে রাশিয়ান কোচ স্তানিস্লাভ চেরিসভের। তিনি মনে করেন তার দলের আরও ভালো খেলার সামর্থ্য আছে। বিশ্বকাপের আগে অনেক সমালোচনা হয়েছে চেরিসভকে নিয়ে। তার অধীনে গেলো দুই বছরে খেলা সবক’টি ম্যাচে হেরেছে রাশিয়া। বিশ্বকাপের প্রস্তুতি ম্যাচেও সুবিধা করতে পারেনি ফিফা র্যঙ্কিংয়ে ৭০ নম্বরে থাকা দলটি। কি যাদুর কাঠিতে বদলে গেছে রাশিয়া ক্রোয়েশিয়া ম্যাচের আগে স্তানিস্লাভ চেরিসভ বলেন, আসলে এই দলটি দীর্ঘদিন ধরে একসঙ্গে খেলেছে। বিশ্বকাপের আগের ম্যাচগুলো হারলেও আমরা খারাপ ফুটবল খেলেনি। ওদের প্রতি আমার আস্থা ছিলো। জানতাম সময়মতো ঠিকই ওরা জ্বলে উঠবে। তাই হয়েছে। প্রতিপক্ষ ক্রোয়েশিয়াকে নিয়ে চেরিসভ বলেন, ওদের বেশকিছু ভালো মানের ফুটবলার আছেন। যারা ইউরোপে খেলে থাকেন। বিশেষ করে লুকা মদরিচ। ও বিপজ্জজনক খেলোয়াড় আর্জেন্টিনার বিপক্ষে তা প্রমাণ করেছে। এ ম্যাচে ওর প্রতি আমার বিশেষ নজর থাকবে। এই ম্যাচের কৌশল ভিন্ন হবে উল্লেখ্য করে এই রাশিয়ান কোচ বলেন, স্পেন ছোট ছোট পাসে খেলে আস্তে আস্তে আক্রমণ যায়। ওরা সবাই এক সঙ্গে উপরে উঠে নামা করে। কিন্তু ক্রোয়েশিয়া একটু ডিফেন্সিভ ফুটবল খেলে দ্রুত আক্রমণে ওঠে। এ বিষয়টি মাথায় রেখেই আমি গত তিনদিনে দলকে প্রস্তুত করেছি। এদিকে স্পেন জয়ের রেস এখনও কাটেনি বলে দাবি করছেন দলের অন্যতম সেরা স্ট্রাইকার আর্তেম জিউবা। তার মতে এ রকম বড় দলের বিপক্ষে জয় ভালো খেলা ছাড়া যে ভাগ্যের হাতও লাগে। ক্রোয়েশিয়া ম্যাচেও ঈশ্বরের এমন পরশ পান এই রুশ তারকা। এদিকে সকালে মস্কোতে অনুশীলন সেরে দুপুরের বিমানে সোচি পৌঁছেছে স্বাগতিক রাশিয়া। সোচির ফিস্ট স্টেডিয়ামে শেষবারের মতো ক্রোয়েশিয়া বধের প্রস্তুতি সারে স্বাগতিকরা।
বিশ্বকাপের শুরুতে ক্রোয়েশিয়াকে বলা হচ্ছিল ‘কালো ঘোড়া’। কিন্তু কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে তারা প্রমাণ করেছে বিশ্বকাপ জয়ের জন্যেই রাশিয়ায় এসেছেন তারা। গ্রুপ পর্বে টানা তিন ম্যাচ জয় এবং দ্বিতীয় রাউন্ডে ডেনমার্কের বিপক্ষে ঐতিহাসিক পেনাল্টি শুট আউটে জয়, সবমিলিয়ে ক্রোয়েশিয়ার বিশ্বকাপ জয়ের সামর্থ্য আছে বলে মনে করেন ক্রোয়েট ফুটবলার ভিদা। বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে স্বাগতিক রাশিয়ার মুখোমুখি হবে তারা। ’৯৮ সালের সেমিফাইনালিস্টরা আরো একবার বিশ্বকাপের শেষ চারে যাওয়ার স্বপ্নে বিভোর। ‘সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে আমরা ডেনমার্ককে হারিয়েছি। ঈশ্বর চাইলে আমরা বিশ্বকাপ ট্রফি জিততেও পারবো।’ ভিদার মনপ্রাণ জুড়ে এখন কেবলই রাশিয়া বধের স্বপ্ন। ‘আমরা এখন চাপমুক্ত হয়ে খেলব। অবশ্যই আমাদের প্রধান কাজই এখন রাশিয়াকে হারানো। আমরা শেষ পর্যন্ত যেতে চাই। আমরা খুব কাছেই আছি। এখনই থেমে যাওয়ার কোনো পরিকল্পনানেই আমাদের।’ রাশিয়ার সবকটি ম্যাচ মনদিয়ে দেখেই এই ম্যাচের কৌশল নির্ধারণের কথা জানান ক্রোয়েট কোচ জ্লাতকো দালিচ। রাশিয়া স্বাগতিক দল। দারুণ খেলার পাশাপাশি ভরা স্টেডিয়ামের সমর্থন নিয়ে তারা এ পর্যন্ত এসেছে। তাদের বিপক্ষে সেরাটা না দিয়ে জয় সম্ভব না। আমার টার্গেট থাকবে নির্ধারিত সময়ে গোল বের করে ম্যাচটি নিজেদের করে নেয়া।
ইংল্যান্ডের আছে তারকা সুইডেনের টিম স্পিরিট
এদিকে হঠাৎ করে আলোচনায় আসা ইংল্যান্ডকে এখনই ফাইনালে দেখতে শুরু করেছেন অনেকে। জার্মানির কিংবদন্তী ফুটবল লোথার ম্যাথিউসের মতে ইংল্যান্ডের দলটা অনেক তরুণ ও গতিশীল, আর সঙ্গে আছেন হ্যারি কেইনের মতো দুর্দান্ত স্ট্রাইকার। তারা নিজেদের সীমাবদ্ধতা ও শক্তি সম্পর্কে বেশ ভালোভাবেই জানে, যা তাদের ভয়ডরহীন ফুটবল খেলতে সাহায্য করছে।’ এসব যুক্তিই ইংল্যান্ডকে ফাইনালে দেখছেন সাবেক এই তারকা ফুটবলাররা। তবে সুইডেনকে হারানোর আগে এসব নিয়ে একদমই কথা বলতে চাইলেন দলের ইংল্যান্ডের কোচ সাউথগেট।
ইংল্যান্ডের এত পরিপূর্ণ ফুটবল আগে দেখা যায়নি। গোটা দলই দারুণ ছন্দে। তার কারণ তরুণ তুর্কীতে ভর্তি ইংল্যান্ড দল। লিনগার্ড, ডেলে আলি, স্টারলিং, ট্রিপিয়েরদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে হ্যারি কেনের অভিজ্ঞতা আছে সাউথগেটের কৌশল। সবকিছু মিলেই দারুণ ছন্দময় ফুটবল খেলছে ইংল্যান্ড। গ্রুপ পর্বেও শেষ ম্যাচে বেলজিয়ামের সঙ্গে হারলেও নকআউট পর্বে শ্বাসরুদ্ধকর এক ট্রাইব্রেকারে কলম্বিয়াকে হারিয়ে ১২ বছর পর কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করে তারা। ১২ বছর পরের এই কোয়ার্টার ফাইনালের দিকে নজর দিয়ে সাউথগেট বলেন, আমরা টাইব্রেকারের গেরো খুলতে পারছিলাম না। নকআউট পর্বে সেটা করেছি। এখন লক্ষ্য সুইডেনকে হারিয়ে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করা। এ কারণে এই ম্যাচেও হ্যারি কেনের কাছে গোল আশা করছেন সাউথগেট।
ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগে সেরা সব কোচের অধীনে নিয়মিত খেলাও ইংলিশ খেলোয়াড়দের বিশ্বকাপে সেটা খেলতে সাহায্য করছে বলে দাবি করছেন সুইডেনের কোচ জেন অ্যান্ডারসন। পৃথিবীর অন্যতম সেরা লীগে খেলে থাকেন ইংল্যান্ডের বেশির ভাগ ফুটবলার। যা তাদের এই ভালো খেলতে সাহায্য করছে। তাই বলে তার দল এই ম্যাচে ইংল্যান্ডকে ছেড়ে কথা বলবে এমন কিন্তু নয়। ‘হয়তো আমার দলে স্ট্রারলিং কিংবা হ্যারি কেনের মতো বড় তারকা নেই। কিন্তু আমার আছে টিম স্পিরিট যা দিয়ে আমি দুর্দান্ত খেলতে থাকা সুইজারল্যান্ডকে নকআউপ পর্বে হারিয়েছি। আশা করছি। আজও টিম স্পিরিট দিয়ে ইংল্যান্ডকে বধ করতে পারবো।