২ মিলিয়ন পাউন্ড ঘুষ কেলেঙ্কারি
বাংলা সংলাপ রিপোর্ট
ঘুষ, দুর্নীতি আর ক্ষমতার অপব্যাবহারের অভিযোগ টাওয়ারহ্যামলেটস লেবার পার্টির বিরুদ্ধে । আর এ কেলেঙ্কারীর কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন নির্বাহী মেয়র জন বিগসের ডেপুটি হিসেবে কাজ করা কাউন্সিলার সিরিয়া খাতুন এবং কমার্শিয়াল রোডের আমানা বিজনেস সেন্টারের মালিক আবদুস শুকুর খালিসাদার। টাওয়ার হ্যামলেটস লেবারের খুবই ঘনিষ্ঠজন বলেও পরিচিত এই ব্যবসায়ী।ঘুষ কেলেঙ্কারীর এই গ্রুপের সাথে লেবার পার্টির আরও ৩ জন কাউন্সিলর জড়িত রয়েছেন যদিও তাদের নাম প্রকাশ করা হয়নি । তবে ওই ৩ জন কারা, কেনবা তাদের নাম প্রকাশ করা হয়নি এ নিয়ে নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে কমিউনিটিতে। টাওয়ার হ্যামলেটস “আলফা স্কয়ার” বহুতল ভবন নির্মাণের প্ল্যানিং পারমিশন পাইয়ে দেয়ার বিনিময়ে ২ মিলিয়ন পাউন্ড ঘুষ দাবি করেছিল তারা । ব্রিটেনের জনপ্রিয় পত্রিকা সানডে টাইমসের একটি রিপোর্টে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য বের হয়ে আসে । রিপোর্টের একটি রেকডিংও প্রকাশ করা হয়েছে,যেখানে ঘুষ কেলেঙ্কারির সব তথ্য প্রমান রয়েছে । এই অভিযোগ থেকে রেহাই পাচ্ছেন না নির্বাহী মেয়র জনবিগসও । টাওয়ারহ্যামলেটস ইন্ডিপেন্ডেন্ট গ্রুপ মেয়র বিগসের ব্যর্থতার দাবি তুলে অবিলম্বে তাকে পদত্যাগ করার আহবান জানায় । গত ১১ ডিসেম্বর এক সংবাদ সম্মেলন করে ইন্ডিপেন্ডেন্ট গ্রুপের মেয়র পদপ্রার্থী কাউন্সিলার অহিদ আহমেদ অভিযোগ তুলে বলেন, “লেবার কাউন্সিলরগন কিভাবে ঘুষ লেনদেনের মাধ্যমে অবৈধ পন্থায় এই বিরাট অংকের অর্থ পকেটস্থ করেছে, তা অতীতের সকল রেকর্ড হার মানিয়েছে। স্থানীয় লেবার বিজনেস ম্যানদের সাথে যোগাযোগে ৫শ মিলিয়ন পাউন্ডের কাজ পাইয়ে দিতে জন বিগস এর নাকের ডগায় কিভাবে ঘুষ এর লেনদেন করেছে তা, মিঃ জন বিগস অস্বীকার করলেও জনগণ বিশ্বাস করে এখানে তাঁরও গুপন সূত্র রয়েছে । কারণ , টাইমস এর রিপোর্ট এ বেরিয়ে এসেছে যে স্থানীয় ওই লেবার ব্যবসায়ি নির্বাহী মেয়র জন বিগস এর পক্ষে গোপনে কিভাবে দোতিয়ালি করেছেন ।
জানা যায়, ডেভেলপার কোম্পানির সাথে ঘুষ লেনদেনের কাজটির দায়িত্ব নিয়েছিলেন আবদুস শুকুর। এর আগে কাউন্সিলার সিরিয়া খাতুন আবদুস শুকুরকে ডেভেলপার কোম্পানির এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার সাথে পরিচয় করিয়ে দেন।
গত ১০ ডিসেম্বর রোববার টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলকে জড়িয়ে দুর্নীতির এই মহাপরিকল্পনার চিত্র সবিস্তারে তুলে প্রতিবেদন প্রকাশ করে সানডে টাইমস। গুরুতর এই দুর্নীতির পরিকল্পনা ফাঁস হওয়ার ঘটনায় লেবার পার্টিতে রীতিমত তোলপাড় তৈরি হয়েছে। প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, নির্বাহী মেয়র জন বিগসের ভূমিকা নিয়ে। ঘুষ দাবির বিষয়টি ডেভেলপার কোম্পানির পক্ষ থেকে মেয়র জন বিগসকে জানানো হলেও মেয়র এ বিষয়টি পুলিশকে জানাতে সময় নিয়েছেন কয়েকমাস। পরে অবশ্য সংশ্লিষ্ট ডেভেলপার কোম্পানির প্ল্যানিং আবেদনকে প্রত্যাখ্যান করে দেয়া হয়। যে কারণে লন্ডন মেয়র অফিস এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে বাধ্য হয়।
এসব ঘটনার কয়েক মাস পর মেয়র জন বিগস বিষয়টি তদন্তে একটি অ্যাকাউন্টিং ফার্মকে (ইওয়াই) নিয়োগ দেন। দুর্নীতির বিষয়ে পুলিশে না গিয়ে মেয়র অ্যাকাউন্টিং ফার্মের কাছে কেন গেলেন সেটিও একটি বিরাট রহস্য। ঘুষ নিয়ে আলাপের সময় মোট চারজন রাজনীতিক এ অর্থ পাবেন বলে উল্লেখ করা হয়। এ চারজন কারা, তা নিয়েও আছে বড় প্রশ্ন।
এ কেলেঙ্কারির ঘটনায় কোনো অর্থের লেনদেন হয়নি। কারণ ডেভেলপার কোম্পানি গোপনে সব কথা রেকর্ড করে এবং বিষয়টি মেয়র জন বিগসকে জানায়। পরবর্তীতে ওই গোপন রেকর্ডিং সানডে টাইমের কাছে ফাঁস করে দেয়া হয় যার ভিত্তিতে ঘটনার প্রায় দুই বছর পর গত রোববার বিরাট প্রতিবেদন প্রকাশ করে পত্রিকাটি।
টাওয়ার হ্যামলেটসের সাবেক ইন্ডিপেনডেন্ট মেয়র লুতফুর রহমানের বিরুদ্ধে লেবার পার্টি দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছিল। ভোট জালিয়াতিসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলে আদালতের মাধ্যমে লুতফুর রহমানকে অপসারণে বাধ্য করা হয়। কিন্তু লুতফুর রহমানের বিরুদ্ধে ঘুষ লেনদেনের কোনো অভিযোগ এখনও পাওয়া যায়নি।
লুতফুর রহমানকে অপসারণের সুযোগ নিয়ে লেবার দলের প্রার্থী জন বিগস ২০১৫ সালের জুনে মেয়র নির্বাচিত হন। নির্বাচনী প্রচারে তিনি টাওয়ার হ্যামলেটসকে দুর্নীতিমুক্ত করার প্রতিশ্রুতি বারবার উচ্চারণ করেন। অথচ নির্বাচিত হওয়ার কয়েক মাসের মধ্যেই জন বিগসের প্রশাসন এই ঘুষ লেনদেনের দফারফা শুরু করে বলে উঠে এসেছে টাইমসের প্রতিবেদনে যাতে ভূমিকা ছিলো জন বিগসের ডেপুটি কাউন্সিলার সিরিয়া খাতুন। টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, হংকং ভিত্তিক প্রপার্টি ডেভেলপার কোম্পানি ফার ইস্ট কনসোরটিয়াম কেনারি ওয়ার্ফের লাগোয়া এলাকায় আলফা স্কয়ার নামে একটি বহুতল ভবন নির্মাণের প্রস্তাব করে। ৫শ মিলিয়ন পাউন্ডের ওই প্রজেক্টে ৬শ ফ্ল্যাট, স্কুল, হোটেল এবং মেডিকেল সার্জারি নির্মাণের কথা। ভবনটি মোট ৬৫ তলা হওয়ার কথা।
২০১৫ সালে জুন মাসে ডেভেলপার কোম্পানি তাদের প্রথম আবেদনটি প্রত্যাহার করে নেয়। কারণ ওই আবেদনে স্থানীয় এলাকার উন্নয়ন সংক্রান্ত লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ঠিকমত মানা হয়নি। এরপর বিষয়গুলো সংশোধন করে দ্বিতীয় আবেদনটি করা হয়। ততদিনে লুতফুর রহমান মেয়র পদ থেকে অপসারিত হয়ে জন বিগস ক্ষমতায়। আর কাউন্সিলার সিরিয়া খাতুন হয়েছেন ডেপুটি মেয়র।
২০১৫ সালের ৩ আগস্ট ডেভেলপার কোম্পানি ফার ইস্ট কনসোর্টিয়ামের ইউকে প্রধান জন কোনোলি ডেপুটি মেয়র সিরিয়া খাতুনের সাথে ব্যক্তিগতভাবে বৈঠক করেন। সেখানে কাউন্সিলর হেনরি জোন্সও উপস্থিত ছিলেন। হেনরি জোন্সের সুপারিশে সিরিয়া খাতুন ফ্রিডম অব দ্য সিটি অব লন্ডন অ্যাওয়ার্ড পেয়েছিলেন। ফাঁস হওয়া দলিল অনুযায়ী কাউন্সিলার সিরিয়া খাতুন এই প্রজেক্টের পক্ষে মত দিচ্ছিলেন না। জন কনোলি মেয়র জন বিগসের সাথে দেখা করে তাঁর সংশোধিত প্রস্তাবটি দাখিল করেন।
এরপর সিরিয়া খাতুন জন কোনোলিকে দ্বিতীয় দফা সাক্ষাতের জন্য খবর পাঠান। ২৬ অক্টোবর তাদের দ্বিতীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে সিরিয়া খাতুন বেশ খুশি মনে আমানা সেন্টারের মালিক আবদুস শুকুরের সাথে কোনোলিকে পরিচয় করিয়ে দেন। বলেন, প্ল্যানিংয়ে যেসব সমস্যা রয়েছে সেগুলোর সমাধানে আবদুস শুকুর সাহায্য করতে পারবেন। আবদুস শুকুর প্ল্যানিং পারমিশন নিয়ে দিতে পারবেন বলেও ইঙ্গিত করেন তৎকালীন ডেপুটি মেয়র সিরিয়া। এই বৈঠকেও কাউন্সিলর হেনরি জোন্স উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকের এক ফাঁকে আবদুস শুকুর জন কোলোনিকে এক পাশে ডেকে নিয়ে যান। কফি খেতে খেতে তিনি খুব স্বাভাবিক ভঙ্গিতেই প্রস্তাব করেন যে, দুই মিলিয়ন পাউন্ড প্রিমিয়াম দিলে এই প্রজেক্ট পাশ হয়ে যাবে। চারজন রাজনীতিক সমান ভাগে এই অর্থ পাবেন। জন কোনোলি বলেন, তাঁর একজন কনসালটেন্ট বিষয়টি দেখভাল করবে।
এর ১০ দিন পর ৪ নভেম্বর ওই কনসালটেন্ট আবদুস শুকুরকে ফোন করেন। রেকর্ডার চালু করে দিয়ে আবদুস শুকুরের সাথে কথা বলেন তিনি। এ সময় শুকুর আবারও বলেন যে, দুই মিলিয়ন পাউন্ড দিলে প্রজেক্ট পাশ হয়ে যাবে। চারজন রাজনীতিক ওই অর্থ পাবেন। আর মাসে ১৫ হাজার পাউন্ড করে তাঁকে কনসালটেন্সি ফি দিতে হবে। তিনি দাবি করেন আরও প্রজেক্টের ক্ষেত্রে এমন লেনদেন হয়েছে। আর এসব কাজে তাঁকে দুতিয়ালির জন্য ব্যবহার করা হয়। শুকুর দাবি করেন, লেবার দলের এনইসি এবং শীর্ষ রাজনীতিকদের সাথেও তাঁর ভাল উঠাবসা আছে।
ওই কনসালটেন্ট শুকুরকে তাঁর প্রস্তাব লিখিত আকারে পাঠানোর অনুরোধ করেন। প্রায় ৫৮ মিনিটের ওই কথোপকথনের পুরোটাই রেকর্ড করে নেন ডেভেলাপার কোম্পানির কনসালটেন্ট।
শুকুর পরবর্তীতে ক্রিসেন্ট ইউকে ডেভেলাপমেন্ট নামের একটি কোম্পানির পক্ষে প্রস্তাব পাঠান। যাতে বলা হয়, প্ল্যানিং পারমিশনের বিনিময়ে ২ মিলিয়ন পাউন্ড ক্রিসেন্ট ইউকে ডেভেলাপমেন্ট কোম্পানিকে দিতে হবে। সানডে টাইমের রিপোর্ট মতে, শেষ পর্যন্ত কোনো ঘুষের লেনদেন অবশ্য হয়নি।
জন কোনোলি ২৬ নভেম্বর টাওয়ার হ্যামলেটসের নির্বাহী মেয়র জন বিগসের সাথে লিভারপুল স্টেশনের কাছে সাক্ষাত করেন এবং তাঁকে বিষয়টি অবহিত করেন।
ওই বছরের ডিসেম্বরে টাওয়ার হ্যামলেটসের প্ল্যানিং কর্মকর্তারা ফার ইস্ট কনসোর্টিয়ামের আলফা স্কয়ার নির্মাণের আবেদন প্রত্যাখান করার পরামর্শ দেন। প্ল্যানিং কর্মকর্তাদের এমন পরামর্শ লন্ডন মেয়র অফিসকে অবাক করে। গ্রেটার লন্ডন অথোরিটির এসিসটেন্ট ডাইরেক্টর স্টুয়ার্ট মারি জন কোলোনির কাছে লেখা এক চিঠিতে আলফা স্কয়ারের পক্ষে সমর্থন তুলে ধরেন এবং টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিল এর চাইতে বিতর্কিত প্রজেক্টে সমর্থন দিচ্ছে বলেও তিনি সমালোচনা করেন।
২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ফার ইস্ট কনসোরটিয়ামের আবেদন আনুষ্ঠানিকভাবে প্রত্যাখ্যান করে টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিল। প্রত্যাখ্যানের পক্ষে যুক্তি দেখায় মূল ভবনটি মাত্রাতিরিক্ত উচ্চতাসম্পন্ন এবং এটি এলাকায় কনজেশনের সৃষ্টি করবে।
এরপর তৎকালীন মেয়র বরিস জনসন বিশেষ ক্ষমতাবলে ওই প্রজেক্ট নির্মাণের অনুমতি দেন। প্রজেক্টটির কাজ আগামী বছর থেকে শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।
ফার ইস্ট কনসোর্টিয়াম এই ঘুষ দাবির বিষয়ে মেয়র জন বিগসের কাছে অভিযোগ করার প্রায় দুই বছর হয়ে গেছে। কিন্তু প্ল্যানিং পারমিশন প্রত্যাখ্যান করার পর ২০১৬ সালের এপ্রিলে বিষয়টি তদন্তের জন্য অ্যাকাউন্টিং ফার্ম ইওয়াইকে দায়িত্ব দেয় টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিল। তদন্তকারীরা তাদের রিপোর্টে বিষয়টি গুরুতর আখ্যায়িত করে ঘটনাটি পুলিশকে জানানোর পরামর্শ দেয়। প্রাথমিকভাবে কাউন্সিল একটি ফাইল সিরিয়াস ফ্রড অফিসে পাঠায়। ওই অফিস ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে সেটিকে ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সির কাছে হস্তান্তর করে। এখনো পর্যন্ত এ ঘটনায় কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি কিংবা যাদের নাম এসেছে তাদের জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়নি।
সানডে টাইমসের প্রশ্নের জবাবে আবদুস শুকুর দুই মিলিয়ন পাউন্ড দাবি করার কথা স্বীকার করেন। কিন্তু তিনি দাবি করেন, এটা কোনো অন্যায় প্রস্তাব ছিল না। তাঁর আইনজীবী বলছেন, শুকুর কোনো অন্যায় করেননি। কারণ কোনো চুক্তি ছাড়াই আলোচনা সমাপ্ত হয়েছে।
শুকুর স্বীকার করেন কাউন্সিলার সিরিয়া খাতুন তাঁকে জন কোনোলির সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর দাবি, এ ঘটনার সাথে কাউন্সিলার সিরিয়ার কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
এক বিবৃতিতে টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিল বলেছে, ইওয়াই (অ্যাকাউন্ডিং ফার্ম) এর তদন্তের ফলাফল একজন কিউসি মূল্যায়ন করেছেন এবং ফাইলটি সিরিয়াস ফ্রড অফিসে প্রেরণের পরামর্শ দিয়েছেন। সিরিয়াস ফ্রড অফিস সেটিকে তদন্তের জন্য ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সির কাছে হস্তান্তর করেছে। কাউন্সিল তদন্তের ফলাফল জানার অপেক্ষায় আছে।
ঘুষ কেলেঙ্কারির এই ঘটনা লেবার দলের সাম্প্রতিক অস্থিরতাকে নতুন করে স্মরণ করিয়ে দিল। সিরিয়া খাতুন হঠাৎ করেই কয়েক মাস আগে জন বিগসের কেবিনেট থেকে পদত্যাগ করেন। এর কিছুদিন পর র্যাচেল সন্ডার্সও ডেপুটি মেয়রের পদ থেকে পদত্যাগ করেন। সর্বশেষ সিরিয়া, সন্ডার্স এবং জশোয়া প্যাকসহ কয়েকজন কাউন্সিল নির্বাচনে প্রার্থী না হওয়ার ঘোষণা দেন। টাওয়ার হ্যামলেটস লেবারের এসব প্রভাবশালী নেতার সিদ্ধান্তের পেছনে আসল কারণ কি, তা নিয়ে পরিষ্কার কোনো ধারণা পাওয়া যায়নি।
মেয়র জন বিগসের বক্তব্য:
টাওয়ার হ্যামলেটসের মেয়র জন বিগস তার বিবৃতিতে বলেন, নির্বাচিত হবার পর থেকেই দূর্নীতি এবং খারাপ তৎপরতার বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি এবং কাউন্সিলের সকল সিদ্ধান্তে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্টার জন্য কাজ করছি। আলোচিত ঘটনাটি অতীতের খারাপ আচরনগুলোরই ধারাবাহিকতা এবং এসংক্রান্ত ঝুঁকি যে এখনো বিদ্যমান তাই আমাদের আরেকবার মনে করিয়ে দিলো।
মেয়র বলেন, অভিযোগ জানার পর আমি কাউন্সিলের সংশ্লিষ্ট কর্মতাদের বিষয়টি অবহিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য অনুরুধ করি এবং তারা আমার নির্দেশনা মোতাবেক পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহন করেন। কিন্তু দীর্ঘ ১৮ মাসেও পুলিশ তদন্ত সম্পন্ন করতে না পারায় আমি হতাশ। বিবৃতিতে জন বিগস আরো জানান, লিডার অব দ্যা লেবার গ্রুপ হিসাবে প্ল্যানিং কমিটিতে বিভিন্ন পরিবর্তন আনা হয়েছে এবং প্ল্যানিং প্রসেসে অতিরিক্ত মনোযোগ দিয়েছি। মেয়র বলেন, ঘটনাটি আমাদের আরেকবার মনে করিয়ে দিলো এখনো অনেক কাজ বাকী। তাই আগামী নির্বাচনটি হবে অতীতের বিশৃংখলায় ফিরে যাবার বিপরীতে লেবার পার্টির ভ্যালু এবং ডিসিপ্লিনের লড়াই।
টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের বক্তব্য :
২০১৫ সালে লিডারশীপ পরিবর্তনের পর থেকেই টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিল স্বচ্চছতা এবং সুশাসনকে প্রতিষ্ঠায় কাজ করে যাচ্ছে। এই লক্ষ্য অর্জনে কাউন্সিল যে ৩টি বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে আসছে এগুলো হচ্ছে হুইসালব্লোইং পলিসি (চাকুরী হারানোর ভয় ছাড়াই কাউন্সিল অফিসাররা যে কোন বেআইনী তৎপরতা প্রকাশ করতে পারবেন), সিদ্ধান্ত গ্রহনে স্বচ্ছতা এবং যে কোন ধরনের অভিযোগের বিরুদ্ধে স্বাধীন তদন্ত।
আলফা স্কয়ার এর প্ল্যানিং এপ্ল্যিকেশন বিবেচনার সময় কাউন্সিল বিন্দু পরিমান ছাড় দেয় নাই। ২০১৬ সালে ফেব্রুয়ারী মাসে তাদের আবেদন স্ট্যাট্রেজিক ডেভেলাপমেন্ট কমিটিতে প্রত্যাখাত হয়। ভোটাভুটিকালে কমিটির সদস্য মোট ৮ জন কাউন্সিলারের মধ্যে ৬ জন কাউন্সিলারই তাদের আবেদনের বিপক্ষে ভোট দেন এবং ২ জন অনুপস্থিত ছিলেন। এর আগে কাউন্সিল অফিসাররাও তাদের আবেদন প্রত্যাখানের জন্য সুপারিশ করেছিলেন।
পরবর্তীতে এব্যাপারে অভিযোগ কাউন্সিলের নজরে আসার পর কাউন্সিলের সাথে সম্পর্কিত নয় এমন একটি স্বাধীন তদন্ত সংস্থাকে এব্যাপারে প্রমাণ সংগ্রহের দায়িত্ব দেই। পরবর্তীতে একজন খ্যাতিমান কিউসি’র পরামর্শে তাদের প্রাপ্ত তথ্য সিরিয়াস ফ্রড অফিসে পাঠানো হয়। সিরিয়াস ফ্রড অফিস আরো তদন্তের জন্য তা ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সির কাছে রেফার করে। কাউন্সিল এখন এই তদন্তের ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করছে। এছাড়া ‘পুলিশের তদন্তকে ব্যাহত করতে পারে’- লিগ্যাল কাউন্সিলের এই পরিষ্কার পরামর্শের কারনে কাউন্সিল এই মুহুর্তে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ থেকে বিরত রয়েছে।
ইন্ডিপেনডেন্ট গ্রুপের সাংবাদিক্ সস্মেলন:
গত ১১ ডিসেম্বর সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় ঘুষ, দুর্নীতি আর ক্ষমতার অপব্যাবহার এর অভিযোগে লেবার পার্টির বিরুদ্ধে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদ প্রচারের আনিত অভিযোগের ভিত্তিতে, মেয়র জন বিগস এর পদ ত্যাগ এর দাবিতে টাওয়ার হাম্লেটস ইন্ডিপেন্ডেন্ট গ্রুপ এক জরুরী সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করেছে । ইন্ডিপেন্ডেন্ট গ্রুপ মনোনীত, সাবেক নির্বাহী মেয়র লুতফুর রহমান সমর্থিত ২০১৮ সালের নির্বাচনে মেয়র পদ প্রার্থী কাউন্সিলর অহিদ আহমদ স্বাগত বক্তব্যের পর ক্যানারি ওয়ারফের নিকট বর্তী দেশের দীর্ঘতম স্কাইক্রাপার টাওয়ার এর প্লানিং পারমিশন পাইয়ে দিতে, স্থানীয় লেবার কাউন্সিলরদের দুই মিলিওন পাউন্ড ঘুষ গ্রহণের যে ভিডিও সানডে টাইমস এ প্রকাশিত হয়েছে তার ভিত্তিতে বলেন, “লেবার কাউন্সিলরগন কিভাবে ঘুষ লেনদেনের মাধ্যমে অবৈধ পন্থায় এই বিরাট অংকের অর্থ পকেটস্থ করেছে, তা অতীতের সকল রেকর্ড হার মানিয়েছে। স্থানীয় লেবার বিজনেস ম্যানদের সাথে যোগাযোগে ৫শ মিলিয়ন পাউন্ডের কাজ পাইয়ে দিতে জন বিগস এর নাকের ডগায় কিভাবে ঘুষ এর লেনদেন করেছে তা, মিঃ জন বিগস অস্বীকার করলেও জনগণ বিশ্বাস করে এখানে তাঁরও গুপন সূত্র রয়েছে । কারণ , টাইমস এর রিপোর্ট এ বেরিয়ে এসেছে যে স্থানীয় ওই লেবার ব্যবসায়ি নির্বাহী মেয়র জন বিগস এর পক্ষে গোপনে কিভাবে দোতিয়ালি করেছেন । “ শিক্ষা, নিরাপত্তা আর হাউসিং সহ নানবিধ সমস্যার মুখে টাওয়ার হামলেট এ এমতাবস্থায় গুরুতর ঘুষ, দুর্নীতির অভিযোগে লেবার পার্টির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান কাউন্সিলর- মুস্তাকিম, কাউন্সিলর মাহবুব আলাম , কাউন্সিলর মাইউম , কাউন্সিলর গোলাম রাব্বানি সহ অনেকেই । একজন কিউসির পরা মর্শ অনুযায়ী সিরিয়াস ফ্রড অফিস দ্বারা যে তদন্ত শুরু হয়েছে, সেই তদন্তে সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে টাওয়ার হাম্লেটস ইন্ডিপেন্ডেন্ট গ্রুপ লিডার কাউন্সিলর অলিউর রহমান বলেন , দু র্নীতির অতীত অভিজ্ঞতা থেকে বলা যায় যে টাওয়ার হামলেটস লেবার পা র্টির মিথ্যা সহযোগিতার আশ্বাস জনগণ আর বিশ্বাস করেনা । তারা জানান টাওয়ার হামলেটস এর জনগণদের সত্য এবং নিষ্ঠার সাথে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে অন্যায় এবং কেলেঙ্কারিতে মেয়র মিঃ বিগস সহ সকল লেবার কাউন্সিলর সিরিয়াস ফ্রড অফিস কর্তৃক তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাদের কাউন্সিলরশিপ বাতিল বহাল রাখা হোক । অতীতের তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকে , তদন্তের ব্যাপারে মিঃ জন বিগস এর দেয়া আশ্বাস বানীর উপর টাওয়ার হামলেটস ইন্ডিপেন্ডেন্ট গ্রুপ এর কোন বিশ্বাস এবং আস্থা আর নেই বলেও জানান তারা । পরে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত সাংবাদিকরা বিভিন্ন প্রশ্ন করলে দলের নেতৃবৃন্দরা তার জবাব দেন।