৪ লাখ টাকায় চুক্তি করে শ্রমিক লীগ নেতার নির্দেশে চট্টগ্রামে বিআরটিসি’র ৪ বাসে আগুন

Spread the love

শনিবার রাতে চট্টগ্রামের হাটহাজারীর নতুনপাড়ার বিআরটিসি বাস ডিপোতে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। আগুনে ডিপোর দুইটি বাস পুড়ে ছাই হয়ে যায়। একই সঙ্গে আরও  দুইটি বাসের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এ ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে দেখা যায়, সোহেল রানা নামে এক যুবক ডিপোতে আগুন দিয়েছে। সোহেলকে আটকের পর সে জানায়, বায়েজিদ থানা শ্রমিক লীগের সভাপতি দিদারুল আলমের নির্দেশে এবং  ৪ লাখ টাকার লোভে এই আগুন লাগানো হয়। ২২শে জুলাই সোমবার বিকাল ৫ টার দিকে নতুনপাড়ার বালুছড়া এলাকা থেকে দিদারুল আলমকে গ্রেপ্তার করে চট্টগ্রাম জেলা গোয়েন্দা পুলিশ। মামলা দায়েরের পর দিদার ও সোহেলকে কারাগারে পাঠানো  হয়েছে। আটক দিদারুল আলম হাটহাজারী উপজেলার চিকনদণ্ডি ইউনিয়নের মাহবুবুল আলমের পুত্র। আর সোহেল রানা জয়পুরহাটের মৃত আশরাফ আলীর পুত্র। দিদার এক সময় বিআরটিসি’র ঠিকাদার ছিলেন।রুবেল নামে বিআরটিসি’র এক ঠিকাদারকে হত্যার ঘটনায় তার ঠিকাদারি বাতিল হয়। সেই মামলায় কারাগার থেকে বের হওয়ার পর আবারো বিআরটিসি’র লাইসেন্স পেতে চেষ্টা করছিলেন তিনি। আর  গ্রেপ্তার সোহেল রানা এক সময় বিআরটিসি বাস ডিপোর কর্মচারী ছিলেন। পরে চাকরি চলে যাওয়ার পর লেগুনা চালাতেন। আর  দিদারের অনুসারী বলে পরিচিত ছিলেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অগ্নিকাণ্ডের পর পুলিশ ও বিআরটিসি  কর্তৃপক্ষ সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে তা পর্যালোচনা করেন। সেখানে দেখা যায়, সোহেল নামে এক যুবক আগুন দিচ্ছে। পরে তাকে আটক করা হলে আগুন দেয়ার কথা স্বীকার করেন। পরে তাকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। সূত্র জানায়, আটক সোহেল পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে, শ্রমিক লীগ নেতা দিদারের নির্দেশে ৪ লাখ টাকা চুক্তিতে তিনি ডিপোর বাসে আগুন দিয়েছেন। পরে বালুছড়া বাজারের ব্যক্তিগত অফিস থেকে দিদারকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ অফিসে বসে বিভিন্ন অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করতেন দিদারুল আলম।
চট্টগ্রামের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আওলাদ হোসেন মোহাম্মদ জুনাইদের কাছে দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে সোহেল রানা বলন, তিনি নতুনপাড়া এলাকায় লেগুনা চালাতেন। প্রায় ১৫ দিন আগে তার লেগুনা চালানো বন্ধ হয়ে যায়। এতে তিনি আর্থিক সংকটে পড়েন। এরপর তিনি শ্রমিক লীগ নেতা দিদারের কাছ থেকে কয়েকবার আর্থিক সহযোগিতা নেন। এরমধ্যে শনিবার বেলা  আড়াইটার দিকে দিদার তাকে ডাক দিয়ে বাস পোড়ানোর প্রস্তাব দেন। পাঁচটি বাস পুড়ালে ৪ লাখ টাকা দেয়া হবে বলে জানান। টাকার লোভেই তিনি ডিপোতে আগুন দেন।
বিআরটিসি চট্টগ্রামের ম্যানেজার অপারেশন জুলফিকার আলী মানবজমিনকে জানান, রাতের অন্ধকারে ডিপোর বাসে আগুন দেয়ার ঘটনায় প্রথমে সোহেল নামের একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে দিদার নামে আরও একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। আগুনে দু’টি গাড়ি পুড়ে ছাই হয়েছে। আর দু’টি গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই ঘটনায় মামলা হয়েছে।
হাটহাজারী থানার ওসি তদন্ত নুরুল আলম মানবজমিনকে বলেন, বিআরটিসি ডিপোতে আগুন দেয়ার ঘটনায় দিদার ও সোহেল নামে দুইজনকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তাদের জন্য রিমান্ড চাওয়া হবে। এই বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মহানগর শ্রমিক লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হাবিবুর রহমান হাবিব মানবজমিনকে বলেন, স্থানীয় কাউন্সিলরের সঙ্গে দিদারের দ্বন্দ্ব ছিল। মনে হচ্ছে- সেই দ্বন্দ্বের জেরে তাকে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে ফাঁসানো হয়েছে। তবে জাতীয় শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি সফর আলী বলেন, দিদারুল আলম স্বঘোষিত নেতা। তিনি শ্রমিক লীগের কেউ নন। তিনি সংগঠনের নাম বিক্রি করে অপকর্ম করছেন। তিনি শ্রমিক লীগের পদধারী নেতা- তার কোনো বৈধ কাগজপত্র দেখাতে পারবেন না।


Spread the love

Leave a Reply