৫০,০০০ অবৈধ বাংলাদেশিকে ফেরৎ নিতে বৃটেনের চাপ

Spread the love

Over-600000-British-White-People-Leave-London-in-the-Last-Decadeবাংলা সংলাপ ডেস্কঃ  বৃটেনজুড়ে থাকা প্রায় ৫০ হাজার ‘অবৈধ’ বাংলাদেশিকে দেশে ফেরাতে চাপ বাড়ছে। একই রকম চাপ আসছে ইতালি, ফ্রান্স, জার্মানিসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে। এতদিন বিষয়টি নিয়ে কর্মকর্তা পর্যায়ে আলোচনা হলেও সামপ্রতিক সময়ে এটি নীতিনির্ধারণী ফোরামে আলোচিত হচ্ছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও লন্ডনস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বৃটিশ হোম অফিসের অভিবাসন বিষয়ক মন্ত্রী জেমস ব্রোকেনশায়ারের সদ্য সমাপ্ত ঢাকা সফর এ আলোচনায়  নতুন মাত্রা যোগ করেছে। বৃটিশ মন্ত্রী অন্য বিষয়ের সঙ্গে অবৈধভাবে বৃটেনে যাওয়া কিংবা দেশটিতে বৈধভাবে প্রবেশের পর ‘অবৈধ’ হয়ে পড়া বাংলাদেশিদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে দেশে ফেরানোর তাগিদ দিয়ে গেছেন।
ঢাকা সফরকালে পররাষ্ট্র, স্বরাষ্ট্র ও আইনমন্ত্রীসহ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিনিধিদের সঙ্গে তার বৈঠক হয়েছে। একাধিক বৈঠকে বৃটিশ মন্ত্রী উদ্বেগের সঙ্গে বিষয়টি তুলেছেন জানিয়ে বৈঠক সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা  বলেন, সফরকালে মন্ত্রীকে বলা হয়েছে, কেবল বৃটেন নয়, বিশ্বের যে কোনো অঞ্চলে অবৈধভাবে বসবাসকারী নাগরিকদের দেশে ফেরানোর নীতি রয়েছে বাংলাদেশের। যদি তারা প্রকৃত অর্থে বাংলাদেশি হন অবশ্যই তাদের সরকারি উদ্যোগে দেশে ফেরত আনা হবে। তাদের ‘নাগরিকত্ব’ নিশ্চিত হওয়ার একটি প্রক্রিয়া রয়েছে জানিয়ে ওই কর্মকর্তা বলেন, বৃটেনের তরফে যাদেরকে ‘বাংলাদেশি’ বলা হচ্ছে তাদের নাগরিকত্ব যাচাই-বাছাইয়ের কাজটি আগে করতে চায় ঢাকা। এজন্য দেশটির হোম অফিসের ধারাবাহিক সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর এমনকি মিয়ানমার থেকেও সামপ্রতিক সময়ে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক অবৈধ বাংলাদেশিকে সরকারি খরচে দেশে ফেরানো হয়েছে উল্লেখ করে পররাষ্ট্র দপ্তরের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা গতকাল বলেন, রোহিঙ্গা শরণার্থী ছাড়াও মিয়ানমারের কয়েক লাখ নাগরিক দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশে রয়েছে। বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে মিয়ানমারের অনেক নাগরিক মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাড়ি জামিয়েছে। এরা দেশে-বিদেশে বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে যুক্ত। ভিন দেশী ওই লোকজনের অপকর্মের কারণে বিদেশে থাকা লাখ লাখ বাংলাদেশিকে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। কিন্তু এতদসত্ত্বেও মিয়ানমারে অবৈধভাবে যাওয়া বাংলাদেশিদের কোনোরকম শর্ত ছাড়াই দেশে ফিরিয়ে এনেছে সরকার।
লন্ডনস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনের এক কর্মকর্তা  বলেন, বাংলাদেশের অভিবাসন নীতিসহ পুরো পরিস্থিতি বৃটিশ সরকারের বিবেচনায় তুলে ধরা হয়েছে। তারাও বাংলাদেশ সরকারের সদিচ্ছার বিষয়টি অনুধাবন করেন জানিয়ে ওই কর্মকর্তা বলেন, অবৈধ অভিবাসন ঠেকাতে বৃটেনে ক্ষমতাসীন বর্তমান নেতৃত্বের একটি নির্র্বাচনী অঙ্গীকার রয়েছে। এ নিয়ে বহুবার বাংলাদেশসহ নন  ইউরোপিয়ান দেশগুলোকে তাগিদ দেয়া হয়েছে। অনেক এলাকায় ধরপাকড়ও হয়েছে। কিন্তু তারপরও এটি না কমায় সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর রাজনৈতিক বা নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ে আলোচনার উদ্যোগ নিয়েছে বৃটেন। ওই কর্মকর্তার সরবরাহ করা তথ্য মতে গত ২০১১ সালে বৃটেনে সর্বশেষ শুমারি হয়। সেখানে বৈধ-অবৈধ মিলে প্রায় ৫ লাখ বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত রয়েছেন বলে জানিয়েছিল দেশটি। সেই সময়ে প্রায় ৫ ভাগের কম অর্থাৎ ২০-২২ হাজার অবৈধ বাংলাদেশী ছিলেন। ২০১১ সালে পর গত ৫ বছরে বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত নাগরিকদের সংখ্যা যেমন বেড়েছে, তেমনি অবৈধদের সংখ্যাও উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ওই সংখ্যা এখন ৫০ হাজারের বেশি হবে জানিয়ে ওই কর্মকর্তা বলেন, বৃটেনের বাংলাদেশিদের একটি ইতিবাচক ভাবমূর্তি রয়েছে। দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের দীর্র্ঘদিনের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। কিন্তু সামপ্রতিক সময়ে অবৈধ অভিবাসীদের বিষয়টি ওই সম্পর্কে এক ধরনের অস্বস্তি তৈরি করেছে। লন্ডন মিশনের ওই কর্মকর্তা বলেন, বৃটিশ সরকার বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ ও উগ্রপন্থা দমনে অতি সমপ্রতি একটি জাতীয় কৌশলপত্র তৈরি করেছে। সেখানে সন্ত্রাস ও উগ্রপন্থার সঙ্গে সংঘবদ্ধ অপরাধ এবং অবৈধ অভিবাসানের একটি যোগসূত্র খোঁজা হয়েছে। যদিও বৃটেনের বৈধ নাগরিকদের উগ্রপন্থার মধ্যে ঝুঁকে পড়ার বিষয়ে বিশ্বব্যাপী সমালোচনা রয়েছে। সৌজন্যে – মানব জমিন


Spread the love

Leave a Reply