কেন অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকা ব্যবহারে কোন সমস্যা নেই

Spread the love

বাংলা সংলাপ ডেস্কঃ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন থেকে রক্ত জমাট বেঁধে যাওয়ার সত্যতা সম্পর্কে কোন প্রমাণ নেই এবং কোন দেশের কোভিড-১৯এর এই টিকা দেয়া বন্ধ করা উচিত নয়।

যেসব দেশ তাদের টিকাদান কার্যক্রম স্থগিত করেছে তাদের মধ্যে রয়েছে বুলগেরিয়া, ডেনমার্ক এবং নরওয়ে।

গতকাল থাইল্যাল্ডে অ্যাস্ট্রাজেনেকার কোভিড-১৯ টিকা দেয়ার কার্যক্রম শুরুর কথা ছিল। কিন্তু ডেনমার্ক ও নরওয়েসহ কয়েকটি দেশে রক্ত জমাট বাধার মতো পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়ার খবর আসার কারণে থাইল্যান্ড তাদের এই টিকা দেবার কার্যক্রম স্থগিত করে দেয়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একজন মুখপাত্র শুক্রবার জানান রক্ত জমাট বাঁধার সাথে এই ভ্যাকসিনের কোন সম্পর্ক নেই।

মুখপাত্র মার্গারেট হ্যারিস বলেন অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা “খুবই ভাল ভ্যাকসিন” এবং এর ব্যবহার বন্ধ করা উচিত নয়।

ইউরোপের প্রায় পঞ্চাশ লাখ মানুষ ইতোমধ্যেই অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা গ্রহণ করেছেন।

ইউরোপে ভ্যাকসিন নেবার পর রক্ত জমাট বাঁধা বা “থ্রম্বোএমবলিক ইভেন্ট”এর লক্ষণ পাওয়া গেছে মাত্র প্রায় ৩০টি ক্ষেত্রে। ইতালিতে ৫০ বছর বয়স্ক এক ব্যক্তি ডিপ ভেইন থ্রম্বোসিস হয়ে মারা গেছেন এমন খবরও এসেছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) এই সব খবর তদন্ত করে দেখছে। মিস হ্যারিস বলেছেন নিরাপত্তা নিয়ে এধরনের যে কোন প্রশ্ন উঠলেই হু সবসময়ই সেটা তদন্ত করে দেখে।

তবে এই টিকার সাথে যেসব স্বাস্থ্য সমস্যার খবর দেয়া হয়েছে তার কোন যোগাযোগ আগে জানা যায়নি, তিনি বলেন।

ডেনমার্ক, আইসল্যান্ড, নরওয়ে এবং থাইল্যান্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা দেয়া স্থগিত করার পর একই সিদ্ধান্ত নেয় বুলগেরিয়া। ইতালি এবং অস্ট্রিয়া সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসাবে এই টিকার নির্দিষ্ট কিছু ব্যাচ ব্যবহার না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকার থেকে যেসব পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার খবর দেয়া হয়েছে টিকার সাথে তার কোন যোগাযোগ নেই বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে

“ইউরোপীয়ান মেডিসিন্স এজেন্সি অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিনের নিরাপত্তা নিয়ে সবরকম সন্দেহ যতক্ষণ না নাকচ করে দিচ্ছে, ততক্ষণ টিকাদান বন্ধ রাখার নির্দেশ আমি দিয়েছি,” বলেছেন বুলগেরিয়ার প্রধানমন্ত্রী বয়কো বরিসফ।

ইউরোপীয়ান মেডিসিন্স এজেন্সি হল ইউরোপীয় ইউনিয়নের ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থা। তারা ইতোমধ্যেই বলেছে যে এই টিকা থেকে রক্ত জমাট বাঁধার কোন কারণ তারা পায়নি। তারা আরও বলেছে যে যারা এই ভ্যাকসিন নিয়েছে তাদের মধ্যে যে সংখ্যক মানুষের এই লক্ষণ দেখা গেছে তা সাধারণ জনসংখ্যার অনুপাতে বেশি নয়।

অ্যাস্ট্রাজেনেকা বলেছে ক্লিনিকাল ট্রায়ালের সময় এই টিকা নিরাপদ কি না তা নিয়ে ব্যাপক পরিসরে গবেষণা ও পরীক্ষা চালানো হয়েছে।

যুক্তরাজ্য, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া এবং মেক্সিকোসহ অন্যান্য দেশ জানিয়েছে তারা ভ্যাকসিন দেবার কর্মসূচি স্থগিত করছে না।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যেখানে বিশাল সংখ্যক মানুষকে দ্রুত ভ্যাকসিন দেয়ার কার্যক্রম চালানো হচ্ছে, সেখানে ভ্যাকসিনের সাথে যোগসূত্র নেই এমন কারণে কারো কারো অসুস্থ হয়ে পড়ার ঘটনা ঘটবে।

অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা দান স্থগিত করার কারণ এটা নয় এই ভ্যাকসিন অনিরাপদ। অল্প কিছু মানুষ সম্প্রতি টিকা নেবার পর কেন তাদের রক্ত জমাট বাঁধার ঘটনা ঘটেছে বিশেষজ্ঞদের তা খতিয়ে দেখতে সময় দেবার জন্য টিকাদান সাময়িকভাবে স্থগিত রাখা হয়েছে।

টিকা নেবার অল্পক্ষণের মধ্যে যদি কারো কোন অসুস্থতা দেখা যায়, তাহলে এমন প্রশ্ন আসাটাই স্বাভাবিক যে ওই ভ্যাকসিনের সাথে এর কোনরকম সম্পর্ক আছে কি না।

তবে এই লক্ষণের সাথে ভ্যাকসিনের কোন সম্পর্ক আছে বা এর জন্য এই টিকা দায়ী এন কোন ইঙ্গিত বা তথ্যপ্রমাণ নেই।

ব্রিটেনে, এক কোটি ১০ লাখ মানুষ ইতোমধ্যেই অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ নিয়েছে এবং এই টিকা নেওয়ার কারণে অতিরিক্ত মৃত্যুর বা রক্ত জমাট বাঁধার কোন ঘটনা ঘটেনি। ইউরোপের ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থাও এই ভ্যাকসিনের ব্যবহার নিরাপদ বলে একে সমর্থন করেছে এবং বলেছে এই টিকার সুফল খুবই স্পষ্ট। কোভিড প্রাণঘাতী হতে পারে এবং ভ্যাকসিন প্রাণ বাঁচাতে পারে।

জার্মানির স্বাস্থ্য মন্ত্রী জেন্স স্পাহন বলেছেন যেসব দেশ এই টিকা দেবার কর্মসূচি স্থগিত করেছে, তাদের পদক্ষেপের সাথে তিনি একমত নন।

“আমরা এই টিকা সম্পর্কে যতটা জানি, তাতে ঝুঁকির থেকে এই ভ্যাকসিনের উপকারিতা অনেক বেশি,” তিনি বলেছেন।

ইউরোপে টিকাদান কর্মসূচি আংশিকভাবে ভ্যাকসিন সরবরাহে বিলম্বের কারণে হোঁচট খাবার পর যখন গতি পেতে শুরু করেছে তখন কিছু দেশ সাময়িকভাবে টিকা কার্যক্রম স্থগিত করাটা একটা ধাক্কা।

ইউরোপে টিকাদান নিয়ে সবশেষ ঘটনায় অস্ট্রিয়ার চাান্সেলার সেবাস্টিয়ান কুর্জ অভিযোগ করেছেন যে ইইউ তার সদস্য দেশগুলোর মধ্যে করোনাভাইরাস টিকার ন্যায্য বন্টন করছে না। তিনি বলেছেন জনসংখ্যার হিসাবে টিকা বন্টনের বিষয়টিতে ইইউর সদস্য দেশগুলোর মধ্যে মতৈক্য হয়েছিল।

তিনি বলেছেন ইউরোপীয় কমিশনের মাধ্যমে সমন্বিতভাবে ভ্যাকসিন কেনার বদলে ইউরোপের কোন কোন দেশ এখন টিকা উৎপাদনকারীদের সাথে সরাসরিভাবে যোগাযোগ করে আলাদা চুক্তি করছে।

জার্মানির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানুয়ারি মাসে স্বীকার করেছিল যে, দেশটি গত সেপ্টেম্বর মাসে তিন কোটি ফাইজার বায়োনটেক টিকা কেনার আলাদা চুক্তি সই করেছে।

ইউরোপে করোনার পরিস্থিতি
সম্প্রতি কয়েক মাসে ইউরোপে সংক্রমণ নিম্নমুখী থাকার পর এখন আবার ভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ফ্রান্স, ইতালি, পোল্যান্ড এবং তুরস্কে গত কয়েক সপ্তাহে সংক্রমণ বেড়েছে।

পুরো ইতালিতে ৩ থেকে ৫ই এপ্রিল ইস্টারের সময় দেশটিতে সবচেয়ে কঠোর লকডাউন জারি করা হচ্ছে। পুরো দেশ এই তিনদিন সম্পূর্ণ লকডাউনে থাকবে।

ইতালির বেশিরভাগ জায়গায় সোমবার থেকে কঠোর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হচ্ছে। করোনাভাইরাসের ”নতুন ঢেউ” আসার পর সংক্রমণ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে দেশটি।

ইতালিতে মোট মৃত্যুর সংখা সোমবার এক লাখে পৌঁছেছে। ব্রিটেনের পর ইতালিতেই কোভিড-১৯এ সর্বাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। কর্মকর্তারা বলছেন ভাইরাসের নতুন ধরন ছড়িয়ে পড়ার পর সংক্রমণের হার বৃদ্ধি পাচ্ছে।


Spread the love

Leave a Reply