পেনাল্টিতে গোল দিতে না পারায় ইংল্যান্ডের তিন ফুটবলারকে বর্ণবাদী গালিগালাজ
বাংলা সংলাপ রিপোর্টঃ ইতালির বিরুদ্ধে ইউরো ২০২০ এর ফাইনালে পরাজয়ের পর ইংল্যান্ডের তিন জন কৃষ্ণাঙ্গ ফুটবলার অনলাইনে ব্যাপক বর্ণবাদী আক্রমণের শিকার হয়েছেন। গতরাতের খেলায় পেনাল্টি শুট-আউটে ইতালির কাছে ইংল্যান্ড ৩-২ গোলে হেরে যায়।
ইংল্যান্ডের তিন খেলোয়াড়- জেডন স্যাঞ্চো, মার্কাস র্যাশফোর্ড এবং বুকায়ো সাকা পেনাল্টিতে গোল দিতে ব্যর্থ হন। এরপর থেকে অনলাইনে তাদের তীব্র সমালোচনার পাশাপাশি নানা ধরণের বর্ণবাদী গালি-গালাজের শিকার হতে হচ্ছে।
ম্যানচেস্টারে ফুটবলার মার্কাস র্যাশফোর্ডের একটি ম্যুরাল বা দেয়ালচিত্রও গতরাতের পরাজয়ের পর বিকৃত করে দেয়া হয়েছে।
ইংল্যান্ড ইউরো ২০২০ এর ফাইনালে পৌঁছানোর পর গত সাড়ে পাঁচ দশকের মধ্যে এই প্রথম কোন বড় টুর্ণামেন্টের শিরোপা জিতবে বলে আশাবাদ তৈরি হয়েছিল। এই খেলা নিয়ে ইংল্যান্ডে রীতিমত উন্মাদনা সৃষ্টি হয়। যদি ইংল্যাণ্ড ফাইনালে জিততে পারে, তাহলে যেন একদিন সাধারণ ছুটি দেয়া হয়, সেরকম দাবিও তোলা হচ্ছিল।
কিন্তু গতরাতের খেলায় মাত্র দুই মিনিটের মধ্যে ইংল্যান্ড প্রথম গোল দিয়ে জয়ের আশাবাদ তৈরি করলেও শেষ পর্যন্ত জয় হয় ইতালির।
দ্বিতীয়ার্ধে ইতালি গোলটি শোধ করে খেলায় সমতা ফিরিয়ে আনলে, বাড়তি তিরিশ মিনিটের খেলাতেও ফলাফল ছিল অমীমাংসিত।
পেনাল্টি শুট-আউটে শেষ পর্যন্ত ইতালি ৩-২ গোলে ম্যাচ জেতে। ইংল্যান্ডের তিন জন কৃষ্ণাঙ্গ খেলোয়াড় – জেডন স্যাঞ্চো, মার্কাস র্যাশফোর্ড এবং বুকায়ো সাকা পেনাল্টিতে গোল দিতে ব্যর্থ হন। এর পর থেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় তাদের বর্ণবাদী গালি-গালাজ করা শুরু হয়।
ম্যানচেস্টারে ফুটবলার মার্কাস র্যাশফোর্ডকে সন্মান জানাতে তার যে ম্যুরাল তৈরি করা হয়েছিল, গতরাতের পরাজয়ের পরপরই সেটিতে হামলা চালিয়ে তা বিকৃত করে দেয়া হয়।
পুলিশ জানিয়েছে, তারা এরই মধ্যে এসব বর্ণবাদী আচরণের তদন্ত শুরু করেছে। লন্ডনের মেট্রোপলিটন পুলিশ বলেছে, এগুলো সহ্য করা হবে না।
ফুটবলার মার্কাস র্যাশফোর্ড ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে খেলেন। তিনি ব্রিটেনে দরিদ্র পরিবারের স্কুল শিশুদের জন্য বিনামূল্য খাবার দেয়ার জন্য গত বছর যে প্রচারণা চালান – তা ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছিল। এই অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে মার্কাস র্যাশফোর্ডকে এমবিই খেতাব পর্যন্ত দেয়া হয়।
জ্যামাইকান বংশোদ্ভূত জেডন স্যাঞ্চো জার্মান লীগে খেলেন সেখানকার ক্লাব বোরুশিয়া ডর্টমুণ্ডের হয়ে। আর নাইজেরিয়ান বংশোদ্ভূত বুকায়া সাকা খেলেন ইংল্যান্ডের আর্সেনাল ক্লাবে।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন এবং ইংল্যান্ডের ফুটবল এসোসিয়েশন ফুটবলারদের এই বর্ণবাদী গালাগালির নিন্দা করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেছেন, ইংল্যান্ডের এই ফুটবল টিমকে সোশ্যাল মিডিয়ায় বর্ণবাদী গালিগালাজের পরিবর্তে বরং বীর হিসেবে প্রশংসা করা উচিত। যারা এরকম আচরণের জন্য দায়ী, তাদের লজ্জা থাকা উচিত।
ইংল্যান্ডের ফুটবল এসোসিয়েশন বলেছে, তারা অনলাইনে তিনজন খেলোয়াড়ের বিরুদ্ধে এই বর্ণবাদী আচরণে সাংঘাতিকভাবে আহত বোধ করছে।
ফুটবল এসোসিয়েশন বলেছে, যারা এরকম আচরণের জন্য দায়ী, তাদেরকে যেন সম্ভাব্য কঠোরতম সাজা দেয়া হয়।
এফএ আরও বলেছে, “ফুটবলে বর্ণবৈষম্য দূর করতে আমরা সাধ্যমত চেষ্টা চালিয়ে যাব। তবে আমরা সরকারকে অনুরোধ করবো দ্রুত ব্যবস্থা নিতে এবং এজন্যে যথাযথ আইন তৈরি করতে। কারণ অনলাইনে এরকম গালাগালির সত্যিকারের প্রভাব পড়ে বাস্তব জীবনে।”
সোশ্যাল মিডিয়া কোম্পানিগুলোকে দায়িত্ব নিতে হবে, এবং যারা এরকম আচরণ করছে তাদের নিষিদ্ধ করতে হবে।”
অনলাইনে খেলোয়াড়দের বিরুদ্ধে এরকম বর্ণবাদী আক্রমণ থামাতে কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় সোশ্যাল মিডিয়া কোম্পানিগুলোও সমালোচনার মুখে পড়েছে। গত এপ্রিল মাসে বেশ কয়েকটি ফুটবল ক্লাব এবং অনেক খেলোয়াড় এর প্রতিবাদে চারদিনের জন্য সোশ্যাল মিডিয়া বয়টক করেন।
ফেসবুক এক বিবৃতিতে বলেছে, তারা সম্প্রতি এধরণের আচরণের বিরুদ্ধে তাদের ইনস্টাগ্রাম প্ল্যাটফর্মে কঠোর কিছু ব্যবস্থা নিয়েছে।
ফেসবুক বলেছে, “যারা ইংল্যান্ডের ফুটবলারদের এভাবে গালাগালি করেছে, তাদের মন্তব্য এবং একাউন্ট আমরা বেশ দ্রুত মুছে ফেলেছি। যারা নিয়ম ভঙ্গ করছে তাদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ অব্যাহত রাখবো।”