ইউক্রেন উত্তেজনা: যুদ্ধের আশংকায় পালাচ্ছে বিদেশিরা, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে রাশিয়াকে বৈঠকে বসার অনুরোধ
বাংলা সংলাপ ডেস্কঃ সীমান্তে উত্তেজনা এবং যুদ্ধের আশংকার মধ্যে ইউক্রেনের সরকার রাশিয়া এবং একটি গুরুত্বপূর্ণ ইউরোপীয় নিরাপত্তা গোষ্ঠীর মধ্যে জরুরী বৈঠকের আহ্বান জানিয়েছে।
ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্রো কুলেবা বলেছেন, রাশিয়া কেন সীমান্তে এতো সৈন্য জড়ো করছে, সেটি ব্যাখ্যা করার জন্য তারা বার বার আনুষ্ঠানিক অনুরোধ জানালেও রাশিয়া তা প্রত্যাখ্যান করেছে।
তিনি বলেন, এর পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে রাশিয়ার পরিকল্পনা আসলে কী, তা স্বচ্ছভাবে ব্যাখ্যা করার জন্য আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে একটি বৈঠকের অনুরোধ জানানো হয়েছে।
রাশিয়া বার বার বলছে, ইউক্রেনে কোন অভিযান চালানোর পরিকল্পনা তাদের নেই, যদিও তারা এক লাখের বেশি সৈন্য ইউক্রেনের সীমান্তে জড়ো করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ধারণা, রাশিয়া ‘যে কোন সময়’ ইউক্রেনে বোমা হামলা শুরু করতে পারে। এরই মধ্যে এক ডজনেরও বেশি দেশ তাদের নাগরিকদের ইউক্রেন ছাড়ার আহ্বান জানিয়েছে।
লন্ডনে ইউক্রেনের রাষ্ট্রদূত ভাদিম প্রিসটাইকো যদিও বিবিসির সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, তার দেশ যেন নেটো জোটে যোগ না দেয় বলে রাশিয়ার যে দাবি, সেটির ব্যাপারে তাদের অবস্থান ‘নমনীয়’ যাদও পরে তিনি এই অবস্থান থেকে সরে গেছেন।
যদি ইউক্রেন সত্যি এরকম কোন ঘোষণা দেয়, সেটি হবে রাশিয়ার জন্য এক বড় ছাড়।
মিস্টার প্রিসটাইকো অবশ্য পরে আরেকটি সাক্ষাৎকারে বলেন, নেটো জোটে যোগ দেয়ার ব্যাপারটি ইউক্রেনের সাংবিধানিক অঙ্গীকার। আর ইউক্রেন নেটো জোটে যোগ দেয়ার জন্য তৈরি কিনা, সেই সিদ্ধান্তের ভার নেটো সামরিক জোটের ওপর।
ইউক্রেন এরই মধ্যে অর্গানাইজেশন ফর সিকিউরিটি এন্ড কো-অপারেশন ইন ইউরোপ (ওএসসিই) নামের ইউরোপীয় নিরাপত্তা সংস্থাকে রাশিয়ার সঙ্গে বৈঠকের অনুরোধ জানিয়েছে। ইউক্রেন চায়, রাশিয়া এই বৈঠকে ব্যাখ্যা করুক কেন তারা সীমান্তে এত সৈন্য জড়ো করেছে।
‘ভিয়েনা দলিল’ নামে যে চুক্তি আছে, তাতে ওএসসিই’র যে কোন সদস্য অন্য যে কোন সদস্যের সামরিক তৎপরতার তথ্য জানতে চাইতে পারে। রাশিয়াও এই চুক্তি স্বাক্ষরকারী দেশ।
ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্রো কুলেবা বলেন, “ওএসসিই’র সীমানার মধ্যে অখণ্ড নিরাপত্তার যে কথা রাশিয়া বলে, সেটাকে যদি তারা সত্যিই গুরুত্ব দেয়, তাহলে সামরিক তৎপরতার স্বচ্ছতার ব্যাপারে দেয়া অঙ্গীকার তাদের পূরণ করতে হবে, যাতে করে উত্তেজনা কমানো যায় এবং সবার জন্য নিরাপত্তা বাড়ানো যায়।”
এদিকে রাশিয়া আক্রমণ করতে পারে বলে যে আতংক ছড়ানো হচ্ছে, তার সমালোচনা করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির যেলেনস্কি। তিনি বলেন, সামনের কয়েকদিনে রাশিয়া আক্রমণ চালানোর পরিকল্পনা করছে এমন কোন প্রমাণ তিনি এখনো দেখেননি।
রবিবার তিনি টেলিফোনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে প্রায় এক ঘণ্টা কথা বলেন। হোয়াইট হাউজ জানায়, প্রেসিডেন্ট বাইডেন ইউক্রেনের প্রতি সমর্থনের কথা পুর্নব্যক্ত করেছেন এবং দুই নেতাই ‘কূটনীতি এবং সংঘাত এড়ানোর চেষ্টা অব্যাহত’ রাখার ব্যাপারে একমত হয়েছেন।
এই টেলিফোন আলাপের ব্যাপারে ইউক্রেনের দিক থেকে দেয়া বিবৃতিতে বলা হয়, প্রেসিডেন্ট যেলেনস্কি যুক্তরাষ্ট্রকে তাদের অব্যাহত সমর্থনের জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন। আলাপের শেষ পর্যায়ে তিনি প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে ইউক্রেন সফরে আমন্ত্রণ জানান। তবে এই আমন্ত্রণের ব্যাপারে হোয়াইট হাউজ কোন মন্তব্য করেনি।
শনিবার প্রেসিডেন্ট বাইডেন এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের মধ্যেও এক ঘণ্টা ধরে টেলিফোনে কথা হয়েছে। তবে এই আলোচনায় সামনে এগুনোর কোন পথ খুঁজে পাওয়া যায়নি।
এদিকে সংঘাত এড়ানোর একটি কূটনৈতিক সমাধান খুঁজতে জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শোলৎজ আজ কিয়েভে প্রেসিডেন্ট যেলেনস্কি এবং কাল মঙ্গলবার মস্কোতে প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করবেন বলে কথা রয়েছে।
গত ডিসেম্বরে ওলাফ শোলৎজ জার্মানির নতুন নেতা হিসেবে আঙ্গেলা মেরকেলের কাছ থেকে দায়িত্ব নেন। তিনি রাশিয়াকে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন যে ইউক্রেনে কোন অভিযান চালানো হলে রাশিয়াকে মারাত্মক অর্থনৈতিক পরিণতি ভোগ করতে হবে। অন্যান্য পশ্চিমা দেশ এবং নেটো মিত্ররাও এর আগে একই হুঁশিয়ারি দিয়েছে।
তবে মিস্টার শোলৎজের এই উদ্যোগে কোন অগ্রগতির সম্ভাবনার ব্যাপারে বার্লিনের সরকারি কর্মকর্তারা ততটা আশা দেখছেন না।
এদিকে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনও রাশিয়াকে ‘যুদ্ধের দ্বারপ্রান্ত থেকে ফিরিয়ে আনতে’ নতুন করে কূটনৈতিক আলোচনা চালানোর পরিকল্পনা করছেন।
ওয়াশিংটনে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেক সালিভান বলেছেন ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার অভিযান যে কোন দিন শুরু হয়ে যেতে পারে।
তিনি বলেন, রাশিয়া যাতে ‘ইউক্রেন প্রথম আগ্রাসন চালিয়েছে’ এরকম কোন ‘মিথ্যে অজুহাতে’ সর্বাত্মক অভিযান শুরু করতে না পারে, সেজন্যে যুক্তরাষ্ট্র সেখানকার পরিস্থিতির ওপর কড়া নজর রাখছে।
রাশিয়া বলছে, ইউক্রেন সীমান্তে তারা কেন সৈন্য মোতায়েন করেছে, সেটা তাদের ব্যাপার, কারণ এটা তারা করছে নিজেদের দেশের মধ্যে। রবিবার রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ইউরি উশাকভ বলেন, একটি রুশ অভিযান আসন্ন বলে যেসব হুঁশিয়ারি যুক্তরাষ্ট্র দিয়ে চলেছে, তা ‘হিস্টিরিয়ার চূড়ান্ত।’