জোরপূর্বক বিয়ে দেয়ার অভিযোগ বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ কিশোরীর মায়ের বিরুদ্ধে
বাংলা সংলাপ ডেস্কঃ বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ এক কিশোরী অভিযোগ করেছেন, সিলেটে তার মা তাকে জোর করে বিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছেন এবং সেজন্য তিনি তার মায়ের বাড়ি থেকে অন্য জায়গায় আত্নগোপনে গেছেন।
টেলিফোনে ঐ কিশোরী বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, জোরপূর্বক বিয়ে থেকে বাঁচতে তিনি পালিয়ে বেড়াচ্ছেন এবং ঢাকায় ব্রিটিশ হাইকমিশনসহ বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ করে তিনি এ ব্যাপারে সহযোগিতা চেয়েছেন।
এদিকে তার মা মেয়ে নিখোঁজ হয়েছে বলে অভিযোগ তুলে স্থানীয় থানা পুলিশের কাছে সাধারণ ডায়েরি বা জিডি করেছেন।
পুলিশ সেই জিডির অভিযোগ তদন্ত করছে বলে জানিয়েছে।
ব্রিটেনে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কম্যুনিটিতে মেয়েদের জোর করে বিয়ে দেয়ার প্রবণতার বিরুদ্ধে আন্দোলন করেন, এমন একজন মানবাধিকারকর্মী আকলিমা বিবি বলেছেন, ঐ কিশোরীর নিরাপত্তার জন্য ঢাকায় ব্রিটিশ দূতাবাসের সাথে যোগাযোগ করা হচ্ছে।
ব্রিটিশ এই কিশোরীর বাবা বহুবছর আগে সিলেট থেকে লন্ডন গিয়ে ব্রিটেনের নাগরিকত্ব পেয়েছিলেন।
বাবার সুবাদেই ওই কিশোরী ব্রিটেনের নাগরিকত্ব পান। তবে তার মা সিলেটে তাদের গ্রামের বাড়িতেই বসবাস করেন।
কয়েকবছর আগে কিশোরীর বাবাও বাংলাদেশে ফিরে গিয়ে সেখানে বসবাস করছেন।
আর ১৫ বছর বয়সী ঐ কিশোরী স্থানীয় একটি স্কুলে লেখাপড়া করেন।
অভিযোগকারী অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় আমরা তার নাম ব্যবহার করছি না।
মায়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ
ঐ কিশোরীর বক্তব্য: “আমার আম্মু আমাকে জোর করে বিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছেন। কিন্তু আমার বয়স পনেরো। সেজন্য আমি মায়ের বাড়ি থেকে অন্য জায়গায় গিয়ে আত্নগোপনে আছি।
“আমি ব্রিটিশ নাগরিক। তাই সাহায্যের জন্য ঢাকায় ব্রিটিশ হাইকমিশিনসহ বিভিন্ন জায়গায় যোগাযোগ করেছি। আমি এখন লন্ডনে যেতে চাই। আমার সাহায্য প্রয়োজন,” বিবিসি বাংলাকে বলেছেন ঐ কিশোরী।
মায়ের বিরুদ্ধে জোর করে বিয়ে দেয়ার অভিযোগ এনে ঐ কিশোরী প্রথমে স্থানীয় একজন সমাজকর্মীর সাহায্য নেন।
সেই সমাজকর্মী শারমিন আকতার জানিয়েছেন, অভিযোগ পাওয়ার পর তিনি কিশোরীকে নিয়ে সিলেটে ব্রিটিশ কনস্যুলেট অফিসে গিয়ে সাহায্য চাইলে তাদের ঢাকায় ব্রিটিশ হাইকমিশনে যোগাযোগ করতে বলা হয়।
তখন শারমিন আকতার ঐ কিশোরীর বক্তব্য বা অভিযোগের ব্যাপারে লন্ডনে বসবাসকারী একজন মানবাধিকারকর্মী আকলিমা বিবির সাথে যোগাযোগ করেন।
লন্ডনের সেই মানবাধিকার কর্মীর সহায়তায় তারা ঢাকায় ব্রিটিশ হাইকমিশনে যোগাযোগ করে সাহায্য চেয়েছেন এবং তাতে আশ্বাস পেয়েছেন।
শারমিন আকতার বলছেন, “মেয়েটা আমাকে বলেছে, ওর মা ১০ লাখ টাকা নগদ, ১৫ লাখ টাকা কাবিন, ২০ভরি স্বর্ণ এবং কিছু জমি নিয়ে তাকে বিয়ে দিতে চায়।”
মিজ আকতার জানিয়েছেন, কিশোরী তার কাছে এসব অভিযোগ করলে সাহায্যের জন্য তারা ব্রিটিশ হাইকমিশনে যখন যোগাযোগ করেন, তখন ব্রিটিশ হাইকমিশন থেকে কিশোরীর বক্তব্য নেয়া হয় টেলিফোন কনফারেন্সের মাধ্যমে।
নিখোঁজের অভিযোগে জিডি
অন্যদিকে, ব্রিটিশ ঐ কিশোরীর মা পিয়ারা বেগম সিলেটে একটি থানায় মেয়ে নিখোঁজ এই অভিযোগে জিডি করেছেন।
যে সমাজকর্মীর সাহায্য নিয়েছেন ঐ কিশোরী, সেই সমাজকর্মীর বিরুদ্ধেই পিয়ারা বেগম তার মেয়েকে লুকিয়ে রাখার অভিযোগ করেছেন জিডিতে।
পিয়ারা বেগম বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, তার মেয়েকে ঐ সমাজকর্মী ও তার ছেলে মিলে লুকিয়ে রেখেছে গত ২৫শে এপ্রিল থেকে।
কিন্তু তিনি জোর করে বিয়ে দেয়ার চেষ্টার তার মেয়ের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
জিডির অভিযোগের তদন্ত
কিশোরীর মায়ের জিডির ভিত্তিতে ঐ কিশোরী এবং সাহায্যকারী সমাজকর্মীকে খোঁজা হচ্ছে বলে স্থানীয় পুলিশ জানিয়েছে।
সিলেটের সংশ্লিষ্ট উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা বা ইউএনও নীলিমা রায়হানা বলেছেন, প্রশাসন এখনও ঘটনার তদন্ত করেনি।
তবে তিনি পুলিশের কাছে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ঐ ঘটনা সম্পর্কে বলেন, মেয়েটি তার বাবা মার সাথে গ্রামে এক দেড় বছর ধরে বসবাস করছে বলে তিনি জানতে পেরেছেন।
তিনি আরও বলেন, “আমি ওসি (সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) সাহেবের কাছে জানতে পেরেছি যে, মেয়েটির অন্য কোন ছেলের সাথে সম্পর্ক ছিল এবং মেয়েটি সেই ছেলেকে বিয়ে করতে চেয়েছে।
“ছেলের মা এটাকে সুযোগ হিসাবে নিতে চেয়েছে, যেহেতু মেয়েটির ব্রিটিশ পাসপোর্ট আছে,” বলছেন নীলিমা রায়হানা।
থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার বরাত দিয়ে ইউএনও নীলিমা রায়হানা আরও উল্লেখ করেন, “ওসি সাহেবের বক্তব্য হচ্ছে, ছেলের মা-ই ঐ মেয়েকে লুকিয়ে রেখেছে।”
তবে, একইসাথে তিনি বলেন, মেয়ের মা যে জোরপূর্বক বিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে, সেটাও এর একটা কারণ হতে পারে।
এদিকে, প্রশাসন, পুলিশ এবং মায়ের পক্ষ থেকে যেসব বক্তব্য দেয়া হচ্ছে, তা অস্বীকার করেছেন ঐ কিশোরী।
লন্ডন থেকে মানবাধিকার কর্মী আকলিমা বিবিও বলেছেন, এখন ঐ কিশোরী এবং তাকে সাহায্যকারীদের নিয়ে অসত্য বক্তব্য তুলে ধরা হচ্ছে।
তিনি জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল সহ বিভিন্ন সংগঠন মেয়েটির নিরাপত্তার ব্যাপারে ঢাকায় ব্রিটিশ হাইকমিশনের সাথে যোগাযোগ করছে।
বিষয়টিতে ব্রিটিশ হাইকমিশন থেকে এখনও কোন বক্তব্য দেয়া হয়নি।