‘আপনারা মামলা করেন, আমরা যা করার করব, প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্যের পর ব্যারিস্টার মইনুলের বিরুদ্ধে মামলা এবং গ্রেপ্তার’
বাংলা সংলাপ ডেস্কঃসাংবাদিক মাসুদা ভাট্টিকে কটূক্তি করার অভিযোগে মানহানির মামলায় জামিনে থাকা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন জামিন পেলেও, তাঁর বিরুদ্ধে আরো মামলা হতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ছাড়া তিনি এ বিষয়ে নারী সংগঠনগুলোকে প্রতিবাদ জানানোর আহ্বান জানিয়েছেন। শেখ হাসিনার এমন মন্তব্যের পর ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা এবং ইতিমধ্যে গ্রেপ্তারও করা হয়।
আজ সোমবার গণভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।
সম্মেলনে তৎক্ষণাৎ ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের জামিন পেয়ে যাওয়া এবং এ ঘটনায় সরকারদলীয়দের নিশ্চুপ ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন করা হয়। এ ছাড়া এ ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মনোভাবও জানতে চান এক নারী সাংবাদিক।
উত্তরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেখুন যখন একটা মামলা হয়, ওই ভদ্রলোক সকাল বেলায় উচ্চ আদালতে আশ্রয় নিয়ে বসে থাকে। তো স্বাভাবিকভাবেই সেখানে বিচার বিভাগ, সেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গিয়ে হামলা করতে পারে না। গ্রেপ্তার করে আনতে পারে না। তারপর সেখানে তিনি আগাম জামিন চেয়েছেন এবং কোর্ট তাঁকে জামিন দিয়ে দিয়েছেন এবং তাও কি পাঁচ মাসের। বরং আপনারা সেখানে গিয়ে জিজ্ঞাসা করেন, যে যিনি এ রকম একটা জঘন্য কথা বললেন, একজন নারী সাংবাদিককে প্রকাশ্যে। সারা বাংলাদেশ কেন, বিশ্ব দেখেছে যে কীভাবে তিনি এই নারী সাংবাদিকের বিরুদ্ধে কথা বললেন। এরপরে কীভাবে? ঠিক আছে এটা কোর্টের ইচ্ছা এখন যদি জামিন দেন আমাদের কিছু করার নাই। সেক্ষেত্রে আমি বলব, আমাদের নারী সাংবাদিকরা আপনারাই বা কী করেছেন? একজনের বিরুদ্ধে বলেছে, একটা মামলা না হয় হয়েছে। আরো তো মামলা হতে পারে এবং এর প্রতিবাদও আপনারা করতে পারেন। আপনারা প্রতিবাদ করেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যা করার করবে। আপনারা মামলা করেন, আমরা যা করার করব। জামিন পেয়েছে ঠিক আছে, মামলা আরো করতে ব্যবস্থা নিতে তো আপত্তি নাই। সে যে এখন কোথায় ইন্দুরের গর্তে চলে গেছে। দেখেন। হ্যাঁ, ব্যবস্থা নিতে হবে।’
প্রতিবাদ করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার মেয়ে সংগঠনগুলা কই? সব প্রতিবাদ করবা।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘উনি আবার পাল্টা মামলা করলেন। শিবিরের অনুষ্ঠানে উনি যে বক্তৃতা দিয়েছিলেন। ঐটা খুঁজে বের করেন। জামায়াত যে সমর্থন করে না, সেটা সে কি করে বলবে? সে যে শিবিরের মিটিংয়ে গিয়ে কথা বলেছে, আপনজন বলেছে, কাছের লোক বলেছে। এটাই তো বড় প্রমাণ।’
এ সময় ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনকে নিয়ে সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘উনার গুণের কোনো শেষ নাই। উনি গেছিলেন ব্যারিস্টারি পড়তে। তো ব্যারিস্টারি পাস করে তিনি আসার পর, চাচা (তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া) দেখলেন উনার ছেলে আসছেন সাহেব হয়ে। বাঙালি খাবার খেতে পারেন না। আফসোস করে চাচি বলছেন যে, ছেলে তো বাঙালি খাবার খেতে পারে না। সেই যুগের ১০০ টাকা দিয়ে বাবুর্চি নিয়ে আসা হলো। তিনি বিলেতে গিয়ে ব্যারিস্টারি শিখেছিলেন ঠিকই। ইংরেজদের ভদ্রতাটা, এটিকেটটা শিখে আসেন নাই। ওই কাকের ময়ূরপুচ্ছ লাগানোর মতো। আরো জানি। পরে বলব।’
গত ১৬ অক্টোবর একাত্তর টেলিভিশনের টক শো ‘একাত্তর জার্নাল’-এ ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনকে সাংবাদিক মাসুদা ভাট্টি প্রশ্ন করেন, ‘আপনার কাছে আমার একটি প্রশ্ন আছে। সেটি হচ্ছে যে বলা হচ্ছে যে আপনি এই ঐক্য প্রক্রিয়ায় বা যুক্তফ্রন্ট বলছে, ঐক্যফ্রন্ট, এই ঐক্যফ্রন্টে আপনি যে হিসেবে উপস্থিত থাকেন, আপনি বলেছেন আপনি একজন নাগরিক হিসেবে উপস্থিত থাকেন। কিন্তু অনেকেই, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বলা হচ্ছে যে আপনি জামায়াতের প্রতিভূ হয়ে ওখানে উপস্থিত থাকেন। এটি একটি প্রশ্ন। আপনি কি আসলেই জামায়াতের প্রতিনিধি হয়ে ওখানে উপস্থিত থাকেন কি না। এক নম্বর প্রশ্ন। আর দুই নম্বর প্রশ্ন হচ্ছে…।’
এই বক্তব্যের সঙ্গে সঙ্গে রেগে গিয়ে ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন বলেন, ‘আপনার দুঃসাহসের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ দিচ্ছি। আপনি চরিত্রহীন বলে আমি মনে করতে চাই। আমার সঙ্গে জামায়াতের কানেকশনের কোনো প্রশ্নই নাই। আপনি এই প্রশ্ন করেছেন, আমার জন্য অত্যন্ত বিব্রতকর। অন্য প্রশ্ন করেন। শিক্ষিতা ভদ্র মহিলা হিসেবে অন্য প্রশ্ন করেন।’
এরপর সঞ্চালক মিথিলা ফারজানা বলেন, ‘ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন, আমি অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি যে সকলেই আমার সম্মানিত অতিথি। তাঁদেরকে ব্যক্তিগত আক্রমণ কেউই করতে পারেন না। উনি প্রশ্ন করেছেন যেটি।’
এ সময় ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন বলেন, ‘আমাকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করা হচ্ছে। আমাকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করা হচ্ছে যে আমি জামায়াতের লোক। আপনি সেটা বন্ধ করেন না কেন?’
মাসুদা ভাট্টিকে প্রকাশ্যে সরাসরি অনুষ্ঠানে চরিত্রহীন বলায় দেশজুড়ে সমালোচনার সৃষ্টি হয়। পরে এ মন্তব্যের জন্য ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন ব্যক্তিগতভাবে মাসুদা ভাট্টির কাছে ফোন করেন এবং লিখিতভাবে ক্ষমা চেয়েছেন। কিন্তু মাসুদা ভাট্টি তাঁকে ক্ষমা করেননি। ওই বক্তব্যকে কেন্দ্র করে গতকাল দুপুরে ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম আসাদুজ্জামান নূরের আদালতে মানহানির মামলা করেন মাসুদা ভাট্টি। আদালত ব্যারিস্টার মইনুলের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।
পাশাপাশি মইনুলের একই বক্তব্যকে কেন্দ্র করে গতকাল সকালে তাঁর বিরুদ্ধে জামালপুরের আদালতে ২০ হাজার কোটি টাকার মানহানির মামলা করেন যুব মহিলা লীগের জামালপুর শাখার আহ্বায়ক ফারজানা ইয়াসমীন লিটা। আদালত সে মামলা আমলে নিয়েও ব্যারিস্টার মইনুলের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন।
মানহানির ওই দুই মামলায় ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনকে গতকাল বিকেলে পাঁচ মাসের জন্য আগাম জামিন দেন বিচারপতি মুহাম্মদ আবদুল হাফিজ ও বিচারপতি মহি উদ্দিন শামীমের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ। ওই আগাম জামিন স্থগিত চেয়ে আজ আদালতে আবেদন করেছে রাষ্ট্রপক্ষ।
এদিকে, ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের কাছে ক্ষমা চাওয়ার জন্য দৈনিক আমাদের অর্থনীতির নির্বাহী সম্পাদক মাসুদা ভাট্টিকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এস এম জুলফিকার আলী জুনু। আজ তিনি এ নোটিশ পাঠান।