প্রেসিডেন্টের গরীবের ভাউজ এবং হিরো আলমের মন্ত্রীত্বের খায়েশ
আহমেদ শামীম
প্রেসিডেন্ট আব্দুল হামিদ একজন রশিক মানুষ। বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন অনন্য উচ্চতায়। প্রেসিডেন্টের মতো রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আসনে অধিষ্ঠিত থাকার পরও তাঁর জীবনযাপন অতি সাধারণ এবং কথাবার্তায়ও থাকেনা তেমন গাম্ভীর্যতা । তিনি যা বলেন এর বেশিরভাগই থাকে হাস্যরসে ভরপুর । রাষ্ট্রীয় প্রটোকলের ফাঁকফোঁকর গলিয়ে তিনি সহজ সরল হৃদয়কাড়া বক্তব্যে তুলে ধরেন সমাজের নানাবিদ অসঙ্গতির কথা । অনেক সময় হাসিমুখে তিনি সমাজ রাষ্ট্রে সুপ্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিদেরও নাস্তানাবুদ করেন অবলীলায় । রাজনীতি এবং রাজনীতিকদের বিরুদ্ধে সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে দেয়া তাঁর বক্তব্য বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছে বোদ্ধা মহলে ।
জীবনের সিংহভাগ সময় ধরে রাজনীতির পুরোভাগে থাকা সর্বমহলে গ্রহণযোগ্য এ মহান রাজনৈতিক নেতা রাজনীতিতে জড়িত অনেককে তুলোধুনো করেছেন মধুর সুরে । তিনি রাজনীতিকে তুলনা করেছেন তাঁর এলাকার ভাউজ- এর সাথে। ভাউজ মানে গরীবের বৌ তথা সকলের ভাবী ! এই ভাউজের ঘর নাকি সবার জন্য থাকে খোলা । রাজনীতিও এখন ভাউজ হয়ে যাওয়ায় যে কেউ যে কোন সময় ঢুকে নেতা বনে যান । কোন আদর্শ কিংবা যোগ্যতার প্রয়োজন হয় না । ব্যবসায়ী, শিক্ষক, আমলা, পুলিশ অফিসার,ডাক্তার- ইঞ্জিনিয়ার কেউ বাদ যাননা; রিটায়ার্ড করে সবাই রাজনীতিতে প্রবেশ করেন । তিনি পুলিশ অফিসারদের প্রসঙ্গে বলেন, রাজনীতিবিদরা রাজপথে মিছিল মিটিং করলে যারা প্যাদানি দেন, তারাই আবার রিটায়ার্ড করে রাজনীতিতে ঢুকে আবার ঐ রাজনীতিকদের পাশে বসেন । প্রেসিডেন্ট অনুযোগ করে বলেন, এখন আমি যদি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হতে চাই, তবে আমাকে কর্তৃপক্ষ চাকরি দেবে না; কিংবা ডাক্তার- ইঞ্জিনিয়ার হতে গেলে বলবে আপনার কোন যোগ্যতা- অভিজ্ঞতা নেই । তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, যদি অন্য কোন পেশায় যে কারো পক্ষে ঢোকা না যায়, তবে রাজনীতিতে কেন সবাই ঢুকে যাবে অবাধে ? তিনি ছাত্রত্ব শেষে সরাসরি রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হতে আগ্রহীদের প্রতি আহবান জানান।
প্রাজ্ঞ র্জানীতিক প্রেসিডেন্ট আব্দুল হামিদের বক্তব্য নিয়ে এত কথার কারণ হচ্ছে হালের আলম । রাজনীতিতে প্রবেশ করে সে এমপি-মন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে । এক সময়কার সিডি – ক্যাসেট বিক্রেতা এবং বর্তমানে ক্যাবল সংযোগকারী হিরো আলমের শিক্ষাগত যোগ্যতা হচ্ছে সপ্তম শ্রেণী পর্যন্ত । সে ইতিমধ্যে দু দু বার ইউপি সদস্য পদে নির্বাচন করে পরাজিত হয়েছে । এখন সে এমপি পদে প্রতিদ্বন্দ্ব্তিার জন্য একটি বড় দল থেকে মনোনয়নপত্র কিনেছে । সম্প্রতি বহুল প্রচারিত একটি জাতীয় দৈনিকে এক সাক্ষাৎকারে হিরো আলম বলেছে, সে আশাবাদী তার দল তাকে এমপি প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করবে এবং তার দল জয়ী হয়ে সরকার গঠন করলে সে হবে মন্ত্রী !
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, একজন সপ্তম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ুয়া ব্যক্তি কি করে এমপি-মন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন দেখে ? সংসদ যদি আইন প্রতিষ্ঠার কেন্দ্র হয়ে থাকে তাহলে আইনের প্রতি নূন্যতম জ্ঞান থাকা ব্যক্তিরাই তো এর সদস্য হওয়ার দাবী রাখেন । তাই প্রেসিডেন্টের ভাষায় বলতে হয়, রাজনীতি গরীবের ভাউজ হয়ে যাওয়ায় এখন যে কেউ যে কোন দল থেকে মনোনয়ন কিনে এমপি-মন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন দেখতে পারে । রাজনীতি এখন আর আদর্শ কিংবা নীতির গন্ডিতে আবদ্ধ নয়; টাকার কাছে পদানত। চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী, কালো টাকার মালিক, মাদক ব্যবসায়ী, ঘুষখোর, সুদখোর, অশিক্ষিত-গন্ডমুর্খদের দখলে চলে যাচ্ছে রাজনৈতিক অঙ্গণ । এদের খপ্পর থেকে রাজনীতিকে পরিত্রাণ না দিলে অসাধু নেতৃত্বের জিম্মিদশা থেকে দেশ-জাতির মু্ক্িত পাওয়া অসম্ভব হয়ে যাবে এক সময়, হয়তো সেদিন আর খুব বেশি দূরে নয় ! ( লেখকঃ নিউজ এডিটর,বাংলা সংলাপ)