অঙ্গদানে ধর্মীয় বিশ্বাসকে অন্তর্ভুক্ত করলো যুক্তরাজ্য
বাংলা সংলাপ ডেস্কঃঅঙ্গদানের ক্ষেত্রে সম্ভাব্য দাতার ধর্মীয় বিশ্বাস বিবেচনায় নিতে নতুন একটি ধারা যোগ করার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাজ্য। দেশটির রাষ্ট্রীয় অর্থায়নে চলা স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ বৃহস্পতিবার এই ঘোষণা দিয়েছে। অঙ্গদান করতে নিবন্ধিত হওয়ার ক্ষেত্রে এই বিশ্বাস বিবেচনায় নেওয়া হবে। দক্ষিণ এশীয় ও কৃষ্ণাঙ্গ বংশোদ্ভূত অঙ্গ দাতাদের বিশ্বাস এটা তাদের সংস্কৃতি এবং ধর্মের বিরুদ্ধে যাচ্ছে- এমন ধারণা সামনে আসায় এই পরিবর্তন আনা হয়েছে বলে জানিয়েছে যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস (এনএইচএস)।
ইন্সটিটিউট অব হেলথ রিসার্চ এর পরিচালক এবং জনস্বাস্থ্য বহুমুখীকরণের প্রফেসর গার্চ রাধা বলেন, অঙ্গ দানের ক্ষেত্রে ধর্মীয় স্বীকৃতি নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে বিশ্বাসের ঘোষণা একটি ইতিবাচক অগ্রগতি। ‘বিশ্বাস সংযুক্তকরণ এবং অঙ্গদান কর্ম পরিকল্পনার’ এই লেখক বলেন, এর মাধ্যমে ধর্ম এবং বিশ্বাসের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে অঙ্গদান কিভাবে এগিয়ে নেওয়া যায় তা নিয়ে এনএইচএস’র কর্মীরা দাতাদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলতে পারবে।
সম্প্রতি এক আলোচনার পর তালিকাভুক্ত অঙ্গদাতা হিসেবে নিবন্ধনে অন্তর্ভূক্ত করতে এশীয় এবং কৃষ্ণাঙ্গ মানুষদের আরও উৎসাহিত করতে বিশেষ প্রয়োজনীয়তার অনুভব করে এনএইচএস। এছাড়া সিদ্ধান্ত নিয়ে তাদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলারও দরকার পড়ে।
আনুষ্ঠানিক তথ্য অনুযায়ী ২০১৭ সালে নিজেদের আত্মীয়দের অঙ্গদানে সম্মত হয়েছে মাত্র ৪২ শতাংশ এশীয় এবং কৃষ্ণাঙ্গ পরিবার। মোট জনগোষ্ঠীর ৬৬ শতাংশ পরিবার এ ধরণের দানে সম্মত। রোগী এখন কিডনি প্রতিস্থাপনের অপেক্ষায় থাকা এক তৃতীয়াংশেরও বেশি মানুষ কৃষ্ণাঙ্গ, এশীয় এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের। যুক্তরাজ্যের বৈষম্য নিরসন বিষয়ক মন্ত্রী জ্যাকি দোয়েল-প্রাইস বলেন, এই গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতির ফলে যখন মানুষ তাদের অঙ্গদানের সিদ্ধান্ত নিবন্ধন করবে তখন মানুষ আত্মবিশ্বাস পাবে যে তাদের বিশ্বাস বিবেচনায় নেওয়া হবে।
এনএইচএস জানিয়েছে, চলতি বছরের মে মাসে কৃষ্ণাঙ্গ এবং এশীয় সম্প্রদায়ের ১৮ বছরের বেশি বয়সী এক হাজার ৩৪ জন প্রাপ্তবয়স্কের সরাসরি সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে জরিপ চালিয়ে এই প্রবণতা খতিয়ে দেখা হয়। নমুনা নেওয়ার সময়ে বয়স, লিঙ্গ এবং বৃহত্তর ভূতাত্ত্বিক অঞ্চলের ভারসাম্য রক্ষা হয়। এর মধ্যে ২৭ শতাংশ জানিয়েছে অঙ্গদান তাদের বিশ্বাস এবং সংস্কৃতির বিরোধী।
এনএইচএস’র রক্ত এবং সঞ্চালন বিভাগের অন্তবর্তী প্রধান নির্বাহী স্যালি জনসন বলেন, ‘যুক্তরাজ্যের বেশির ভাগ ধর্ম এবং বিশ্বাসই অঙ্গদান সমর্থন করে। কিন্তু আমরা বিশ্বাস করি যে একজন ব্যক্তির বিশ্বাস ও ধর্ম অঙ্গদান করা বা না করার সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তিনি বলেন, এনএইচএস’র রক্ত ও সঞ্চালন বিভাগ সব ধর্ম বিশ্বাসের নেতৃবৃন্দ, ধর্ম বিশ্বাসী নয় এমন গ্রুপগুলো, হাসপাতালের পরিচালক সবার মধ্যেই সচেতনতা তৈরি এবং আগের বাধা দূর করার বিষয়ে প্রতিশ্রুতিশীল।
সম্প্রতি ইংল্যান্ডজুড়ে চলা অঙ্গদান বিষয়ক আলোচনার ক্ষেত্রে ব্রিটিশ সরকারের প্রতিক্রিয়া হিসেবে সর্বশেষ অগ্রগতি এসেছে। যদি একজন সম্ভাব্য দাতা তার পরিবারের সঙ্গে বা যথাযথ ব্যক্তির সঙ্গে এনএইচএসকে কথা বলতে অনুরোধ করে তাহলে একজন বিশেষজ্ঞ নার্স এই ইস্যুতে তার আত্মীয়দের সঙ্গে কথা বলবেন। তখন ধর্ম সংক্রান্ত ইস্যু যেমন সমাহিত কোথায় করা হবে বা বিশেষ কোনও রীতি অনুসরণ করতে হবে কিনা সেসব নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হলে পারিবারের সদস্যদের সঙ্গে ওই নাস আলোচনা করে অঙ্গদানটি সম্পন্ন করতে সম্ভাব্য ভালো উপায়টি বেছে নেবেন।