বাংলাদেশে উদ্বেগ-আতঙ্ক : ৭ দিনে শতাধিক হামলা, আহত ৬৩৩, গ্রেপ্তার ৭১৬
বাংলা সংলাপ ডেস্কঃনির্বাচনকে সামনে রেখে উদ্বেগ আর আতঙ্ক বাড়ছে। প্রচার শুরুর দিন থেকে বিরোধী প্রার্থী ও তাদের কর্মী-সমর্থকদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটছে। বাধা দেয়া হচ্ছে প্রচারণায়। এ পর্যন্ত বেশ কয়েকজন প্রার্থী হামলায় আহত হয়েছেন। আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠন এবং পুলিশের বিরুদ্ধে এসব হামলার অভিযোগ উঠেছে। হামলা হয়েছে প্রধান বিরোধী জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন ও বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের গাড়িবহরে। বিএনপির কয়েকজন সিনিয়র নেতাও নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছেন।
প্রচারণার শুরুর পর গত সাত দিনে এমন শতাধিক হামলার ঘটনা ঘটে অন্তত ৪৫টি জেলায়।
বিএনপি সূত্রের দাবি দেশের প্রায় সব জেলাতেই হামলা ও বাধার ঘটনা ঘটেছে। হামলা হয়েছে দুই শতাধিক। এতে আহত হয়েছেন সহস্রাধিক নেতাকর্মী।
জাতীয় নির্বাচনের আগে এমন ঘটনাকে নজিরবিহীন বলছেন নির্বাচন বিশ্লেষকরা। সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন সাম্প্রতিক নির্বাচনগুলোতে এর আগে এমন পরিস্থিতি দেখা যায়নি। এটাকে নজিরবিহীন বলা যায়। কারণ নির্বাচনের দিন বা দুই একদিন আগে-পরে সংঘাত সহিংসতার ঘটনা ঘটে থাকে। এবার প্রচারণা শুরুর পর থেকেই হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। এতে ভোটার এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্বেগ আর আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
এদিকে খোদ রাজধানীতেই বাধা ও হামলার শিকার হচ্ছেন বিরোধী প্রার্থীরা। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও তার স্ত্রী আফরোজা আব্বাস হামলার শিকার হয়েছেন। নির্বাচনী প্রচারণায় বাধার মুখে পড়েন ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা আ স ম আবদুর রব ও মাহমুদুর রহমান মান্না।
ফ্রন্টের অন্যতম নেতা অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরীর প্রচারেও হামলা করা হয়েছে। আমাদের প্রতিনিধিদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী ঢাকাসহ এ পর্যন্ত ৪৫টি জেলায় হামলা ও প্রচারণায় বাধা দেয়ার শতাধিক ঘটনা ঘটেছে। ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মী ও পুলিশের হামলায় এ পর্যন্ত আহত হয়েছেন অন্তত ৬৩৩ জন নেতাকর্মী। রাজনৈতিক হামলায় নিহত হয়েছেন ২ জন। নিহত দুইজনই আওয়ামী লীগের কর্মী। নোয়াখালী ও ফরিদপুরে পৃথক ঘটনায় ২ মৃত্যু নিয়ে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ এসেছে। আওয়ামী লীগের দাবি বিএনপি কর্মীদের হামলায় তাদের মৃত্যু হয়। গত এক সপ্তাহে গ্রেপ্তার হয়েছেন অন্তত ৭১৬ জন। মামলা হয়েছে সহস্রাধিক নেতাকর্মীর নামে। গত ১১ই ডিসেম্বর নির্বাচনী প্রচারণার দ্বিতীয় দিনে ১৮ জেলায় হামলার ঘটনা ঘটে।
এদিন ঠাকুরগাঁওয়ে হামলার শিকার হন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তার গাড়িবহরে হামলা চালানো হয়। ১২ই ডিসেম্বর ১৭টি জেলায় হামলার ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় আহত হন ১৩১ জন নেতাকর্মী। ঢাকায় হামলার শিকার হন বিএনপি মহিলা দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আফরোজা আব্বাস। চট্টগ্রামে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীদের প্রচারণার পাশাপাশি গাজীপুরে বিএনপি প্রার্থী তানভীর আহমেদ সিদ্দিকীর গাড়িবহরে হামলা চালানো হয়। ১৩ই ডিসেম্বর দেশের প্রায় ৩০টি জেলার বিভিন্ন এলাকায় হামলার ঘটনা ঘটে। এই দিন ইউএনও’র সভাকক্ষের ভেতর নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের বিএনপি মনোনীত প্রার্থী আজহারুল ইসলাম মান্নানের ওপর হামলা চালায় পৌর ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ইকরামুল হাসান ওরফে রনি বিল্লাহ। একই দিনে নিজ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার হন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক গাজীপুর-৫ আসনের প্রার্থী ফজলুল হক মিলন।
১৪ই ডিসেম্বর মিরপুর বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা অর্পণ শেষে ফেরার পথে হামলার শিকার হন ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন। সিরাজগঞ্জে পুলিশের গুলিতে আহত হন জেলা বিএনপির সভাপতি ও সিরাজগঞ্জ-২ আসনের বিএনপি প্রার্থী রুমানা মাহমুদ।
১৫ই ডিসেম্বর নির্বাচনী প্রচারণার ৬ষ্ঠ দিনে নোয়াখালীতে গুলিবিদ্ধ হন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক মাহবুব উদ্দিন খোকন। রাজধানীর সেগুনবাগিচা এলাকায় প্রচারণা চালানোর সময় হামলার শিকার হন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। আবার চট্টগ্রামে ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম শরিক দল লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) প্রার্থী কর্নেল অলি আহমেদের ছেলে ওমর ফারুকের ওপর হামলা করে এবং বাঁ হাতের আঙ্গুল কেটে দেয়। হামলা হয় পটুয়াখালী-৩ আসনের বিএনপি প্রার্থী গোলাম মওলা রনির স্ত্রীর গাড়িবহরে, ঐক্যফ্রন্টের নেতা ও গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরীসহ আরো অনেকের ওপর।
এই দিনে ১৯ জেলায় হামলার ঘটনা ঘটে এবং আহত হন দেড় শতাধিক নেতাকর্মী। গতকালও অন্তত ১৮টি স্থানে হামলার শিকার হন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকরা। হামলা বা প্রচারণায় বাধা দেয়া হয়েছে এমন জেলার মধ্যে আছে চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, ঢাকা, মুন্সীগঞ্জ, নোয়াখালী, ফরিদপুর, ঠাকুরগাঁও, নরসিংদী, বগুড়া, ময়মনসিংহ, পটুয়াখালী, মেহেরপুর, রাজশাহী, যশোর, ঝিনাইদহ, মাগুরা, মানিকগঞ্জ, পাবনা, ঝালকাঠি, কুষ্টিয়া, সুনামগঞ্জ, শেরপুর, মৌলভীবাজার, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, খাগড়াছড়ি, ভোলা, রংপুর, রাজবাড়ী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ফেনী, চাঁদপুর, সাতক্ষীরা, ফরিদপুর, মাদারীপুর, গাজীপুর, বাগেরহাট, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, রাঙ্গামাটি ও চুয়াডাঙ্গা।
হামলা সংঘর্ষ অব্যাহত
নির্বাচনী প্রচারণায় হামলা ও বাধার ঘটনা বাড়ছেই। শুরুতে শুধু বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীদের প্রচারে হামলা ও বাধা দেয়া হলেও গত কয়েকদিন ধরে স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ অন্যান্য দলের প্রার্থীদের প্রচারণায়ও হামলার ঘটনা ঘটছে। হামলায় আক্রান্ত হচ্ছে প্রার্থীরাও। অনেকস্থানে হামলায় সহযোগিতা ও প্রচারে বাধার অভিযোগ আসছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে। গতকালও অন্তত ১৮টি স্থানে বিরোধী প্রার্থীদের প্রচারণায় হামলার ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে কোথাও কোথাও দুইপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষও হয়েছে। বিস্তারিত আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে।
নরসিংদীতে ড. মইন খানের ওপর হামলা
নরসিংদী-২ আসনে পাঁচদোনা এলাকায় বিএনপির প্রার্থী ড. আব্দুল মঈন খানের নির্বাচনী প্রচারণায় ফের হামলা চালিয়েছে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টায় গণসংযোগের সময় এ হামলা করা হয়। এতে বিএনপির অন্তত ৫০ জন নেতাকর্মী আহত হন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পুলিশের উপস্থিতিতে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা গুলি ছুড়তে ছুড়তে রামদা, চাইনিজ কুড়াল, চাপাতি, হকিস্টিক ও লাঠিসোঁটা নিয়ে অতর্কিত হামলা করে। সন্ত্রাসীরা ড. মঈন খানের ওপর হামলা চালালে বিএনপিকর্মীরা মানবঢাল তৈরি করে ড. মঈন খানকে রক্ষা করেন। এ সময় ড. মঈন খানের গাড়িচালক ও সহকারীকে মারধর করে মারাত্মক আহত করে। এ ঘটনায় গুরুতর আহতদের নরসিংদী ও ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
সেনবাগে ফারুকের প্রচারণায় হামলা: নোয়াখালীর সেনবাগে গতকাল সকালে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও নোয়াখালী-২ আসনের প্রার্থী জয়নুল আবদীন ফারুকের গাড়িবহরে হামলা করেছে দুর্বৃত্তরা। গতকাল সকাল ১০টায় জয়নুল আবদিন ফারুকের নেতৃত্বে শহীদ মিনারে ফুল ও বিজয় মিছিলের প্রস্তুতিকালে এই হামলার ঘটনা ঘটে। গুরুতর আহত হয়েছেন, উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম আজাদ ও উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদকসহ আহত হয়েছে ২০ জন।
হামলা পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে ফারুক জানান, সকালে বিজয় দিবস উপলক্ষে প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে তিনি উপজেলা সদরে ফুল দিতে যান। এ সময় সেনবাগ বাজারের সন্নিকটে রাস্তার ওপর তাদের গাড়িবহরে এ হামলা চালানো হয় এমপি মোর্শেদ আলমের নির্দেশে।
কোম্পানীগঞ্জে দিলদার সেলিমের গাড়িতে হামলা, ভাঙচুর: সিলেটের কোম্পানীগঞ্জে বিএনপি প্রার্থী দিলদার হোসেন সেলিমের গাড়িতে হামলা হয়েছে। গতকাল সন্ধ্যায় উপজেলার নোয়াগাঁও এলাকায় এ হামলার ঘটনা ঘটে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, সন্ধ্যায় শারপিন, নারায়ানপুর, পাড়ুয়া এলাকায় গণসংযোগ করে সিলেট ফিরছিলেন দিলদার হোসেন সেলিম। এ সময় কয়েকজন যুবক এসে তার গাড়িতে হামলা চালায়। তারা ইটপাটকেল ছুড়ে দিলদার সেলিমের জিপগাড়ির গ্লাস ভেঙে ফেলে।
লক্ষ্মীপুরে ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থীর গণসংযোগে হামলা: লক্ষ্মীপুর-১ রামগঞ্জ আসনে ২০ দলীয় জোট প্রার্থী শাহদাত হোসেন সেলিমের গণসংযোগে হামলার ঘটনা ঘটেছে। ২০ দলীয় জোট প্রার্থী শাহাদাত হোসেন সেলিম জানান, গতকাল বিকালে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে জামতলী বাজার ও আশপাশ এলাকায় গণসংযোগে করছিলাম। এ সময় প্রতিপক্ষ প্রার্থী আনোয়ার হোসেন খাঁনের নৌকা মার্কার সমর্থক সন্ত্রাসী বাহিনীর ৩০-৪০টি মোটরসাইকেল মহড়া দিয়ে এসে গণসংযোগে হামলা ও গুলি চালায়। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ডা. মামুন আহমেদের বাড়িতে হামলা ও কেন্দ্রীয় যুবদল নেতা ইমাম হোসেনের বাড়িতে বেশ কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এ সময় ছাত্রদল নেতা জোবায়ের হোসেন ও সম্রাটসহ আহত হয়েছে পাঁচজন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে এড়িয়ে যান রামগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. তোতা মিয়া।
রাঙ্গামাটিতে হামলা, সংঘর্ষ: রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়িতে শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে বাঘাইছড়ি পৌর বিএনপির সভাপতি নিজামউদ্দিন বাবু ও হুমায়ুন রশীদসহ উভয়পক্ষের ২১ জন আহত হয়েছেন। তাদেরকে খাগড়াছড়ি হাসপাতালে আশঙ্কাজনক অবস্থায় চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এদিকে, সন্ধ্যায় রাঙ্গামাটি শহরে আওয়ামী লীগ-বিএনপির নেতাকর্মীদের মুখোমুখি সংঘর্ষে অন্তত ১১ জন আহত হয়েছেন। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, গতকাল সন্ধ্যা পৌনে ৬টার সময় ভেদভেদী বাজারে আওয়ামী লীগ-বিএনপি উভয়পক্ষের নির্বাচনী মিছিল মুখোমুখি হলে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। রাঙ্গামাটি কোতোয়ালি থানার অফিসার ইনচার্জ মীর জাহেদুল হক রনি জানিয়েছেন, ঘটনার পরপরই অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
বিজয়নগরে বিএনপি প্রার্থীর হামলা: ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর ও বিজয়নগর) আসনে বিএনপি প্রার্থী খালেদ হোসেন মাহবুব শ্যামলের গাড়িতে হামলা করা হয়েছে। গতকাল সকাল সাড়ে ১১টার দিকে বিজয়নগর থানার সামনেই হামলার এ ঘটনা ঘটে। হামলায় জেলা যুবদলের সাবেক আহ্বায়ক মনির হোসেন, ছাত্রদল নেতা মোকাররম হোসেন, প্রার্থীর ব্যক্তিগত সহকারী হারুন মিয়া গুরুতর আহত হন। বিএনপি নেতাকর্মীরা জানান, স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করে ফেরার সময় শ্যামলের গাড়িতে হামলা চালানো হয়। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রেজাউল কবির বলেন, বিএনপির প্রার্থীর গাড়িতে কয়েকজন যুবক ঢিল ছুড়েছেন আমরা বিষয়টি শুনেছি। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে।
গৌরনদীতে যুবদল নেতার বাড়িতে হামলা: বরিশালের গৌরনদী উপজেলার ধানডোবা গ্রামে যুবদলের সাবেক কেন্দ্রীয় সদস্য রফিকুল ইসলাম কাজলের বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর করেছে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এ সময় হামলাকারীরা ব্যাপক ভাঙচুর চালায়।
৩০শে ডিসেম্বরের নির্বাচনের আগেই কাজলকে এলাকা ছাড়তে হবে বলে তার পরিবারের সদস্যদের হুমকি দেয়া হয়। রফিকুল ইসলাম কাজল জানান, স্থানীয় আওয়ামী লীগের দেড় শতাধিক সশস্ত্র ক্যাডার ৫০-৬০টি মোটরসাইকেল যোগে শনিবার দিবাগত রাত ১০টার দিকে পুরো ধানডোবা গ্রামে সশস্ত্র মহড়া দিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। এরপর তারা আমার বাড়িতে গিয়ে বসতঘরে হামলা চালায়। রফিকুল ইসলাম কাজল বরিশাল-১ (গৌরনদী-আগৈলঝাড়া) আসনের বিএনপির মনোনীত প্রার্থী এম. জহির উদ্দিন স্বপনের নির্বাচনী কার্যক্রম পরিচালনার অন্যতম সমন্বয়ক। এ ব্যাপারে গৌরনদী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. গোলাম সরোয়ার বলেন, ঘটনা মৌখিকভাবে শুনেছি। লিখিত অভিযোগ দিলে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
শাহজাদপুরে বিএনপির নেতার বাড়িতে হামলা: গতকাল সকালে শাহজাদপুর উপজেলার জালালপুর ইউনিয়নের চ্যাংটার চর মহল্লায় বিএনপির এক নেতার বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও কর্মীদের মারপিট করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এলাকাবাসী জানায়, সকাল ৮টা ও ৯টা দুই দফায় জালালপুর উপজেলার সৈয়দপুর গ্রামের আওয়ামী লীগের সমর্থক সালামের নেতৃতে ১৪-১৫ সন্ত্রাসী বিএনপি নেতা হেলাল উদ্দিনের বাড়িতে হামলা চালায়। এ সময় হেলাল উদ্দিনসহ পরিবারের সদস্যদের মারধর করা হয়।
চকরিয়ায় আওয়ামী লীগের নির্বাচনী অফিসে হামলা: কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার ইলিশিয়া- ঢেমুশিয়া ব্রিজ এলাকায় গতকাল সকাল ১১টায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীর নির্বাচনী অফিসে গুলিবর্ষণ, হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এজন্য বিএনপিকে দায়ী করেছেন। এ ঘটনায় ঢেমুশিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি গিয়াস উদ্দিন মেম্বারসহ অন্তত ২০ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছে। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. বখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরী।
টাঙ্গাইলে লতিফ সিদ্দিকীর গাড়িবহরে হামলা: টাঙ্গাইলে স্বতন্ত্রপ্রার্থী আদুল লতিফ সিদ্দিকীর গাড়িতে হামলা করেছে তারই একসময়ের শিষ্য আওয়ামী লীগের প্রার্থী হাসান ইমাম খান সোহেল হাজারীর কর্মী-সমর্থকরা। গতকাল টাংগাইল-২ কালিহাতী আসনের গোহালিয়া ইউনিয়নের সড়াতৈল এলাকায় প্রচারণার সময় তার গাড়িবহরে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এতে তার ব্যক্তিগত গাড়িসহ আরো তিনটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। এ সময় ইট পাটকেলের আঘাতে কয়েকজন নেতাকর্মী আহত হয়।
বাগেরহাটে এমএ সালামের গাড়িতে হামলা: বাগেরহাট-২ আসনে বিএনপি প্রার্থী এমএ সালামের গাড়িবহরে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় এমএ সালামসহ ১০ জন আহত হয়েছেন। হামলাকারীরা অন্তত আটটি গাড়ি ভাঙচুর করেছে। গতকাল বেলা ১২টা নাগাদ এ হামলার ঘটনা ঘটে। বিএনপি প্রার্থী এমএ সালাম জানান, আহতদের মধ্যে গুরুতর আটজনকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
নাটোরে দুলুর স্ত্রীর নির্বাচনী প্রচারণায় হামলা: নাটোরে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুর স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন ছবির নির্বাচনী প্রচারণায় হামলা চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। শহরের স্টেশন বাজারে গণসংযোগকালে নাটোর-২ আসনের বিএনপির প্রার্থী সাবিনা ইয়াসমিন ছবির ওপর হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। হামলায় তিন বিএনপিকর্মী আহত হয়েছেন। গতকাল বেলা ২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। হামলায় আহতরা হলেন- যুবদলের জেলার সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক শরিফুল ইসলাম মুকুল, নীচাবাজার এলাকার আব্দুল ওয়াদুদ তনু ও উত্তর বড়গাছা এলাকার ফিরোজ শেখ।
ছাবিনা ইয়াসমিন ছবি বলেন, শনিবার আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী শফিকুল ইসলাম শিমুল আমাকে নির্বিঘ্নে প্রচারণার আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু আজ তার সমর্থকরা হামলা চালিয়েছে। এ ব্যাপারে নাটোর সদর সার্কেলের অতিরিক্তি পুলিশ সুপার আবুল হাসানত বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেছে। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মানিকগঞ্জে জাপা প্রার্থীর ওপর হামলা: মানিকগঞ্জ-২ আসনে জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী এসএম আবদুল মান্নানের প্রচারণায় হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় প্রচারণায় থাকা ছয়টি গাড়ি ভাঙচুর করেছে হামলাকারীরা। এ ঘটনায় গতকাল নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ দিয়েছেন প্রার্থীর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান সমন্বয়ক ক্যাপ্টেন (অব.) মো. আবদুল খালেক।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, শনিবার আবদুল মান্নান ৬টি গাড়িবহরসহ গণসংযোগ হরিরামপুর উপজেলা সদরে গেলে ২৫-৩০ জন সন্ত্রাসী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। এ সময় তারা প্রার্থী আবদুল মান্নানের সঙ্গে থাকা নেতাকর্মীদের মারধর করে গাড়ি ভাঙচুর করে। হামলাকারীদের মারধরে সাংবাদিক শুভঙ্কর পোদ্দার মারাত্মকভাবে আহত হন। হামলাকারী হিসেবে হরিরামপুর থানা যুবলীগের আহ্বায়ক মিলটন, সদস্য শুভ মল্লিক, টিপু দেওয়ান, যুগ্ম আহ্বায়ক রজ্জব, বয়রা ইউনিয়নের ছাত্রলীগের সভাপতি ফরিদ মেম্বার, বয়রা ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের মেম্বার আনোয়ারসহ অজ্ঞাত ২৫-৩০ জনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
গাংনীতে ধানের শীষের নির্বাচনী ক্যাম্প ভাঙচুর: গাংনী উপজেলার তেঁতুলবাড়ীয়া ইউনিয়নের সহড়াতলা গ্রামে ধানের শীষের নির্বাচনী ক্যাম্প ভাঙচুর করেছে দুর্বৃত্তরা। শনিবার রাতে ওই ক্যাম্প ভাঙচুর করার ঘটনা ঘটেছে। তেঁতুলবাড়ীয়া ইউনিয়নের পাঁচ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি ফরমান আলী জানান, কয়েকদিন যাবৎ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ধানের শীষের নির্বাচনী ক্যাম্পটি বন্ধ করার জন্য আমাদের চাপ সৃষ্টি করে আসছিল।
চান্দিনায় সংঘর্ষে আহত ৯: কুমিল্লার চান্দিনায় ধানের শীষ প্রতীকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থী ড. রেদোয়ান আহমেদ এবং নৌকা প্রতীকের আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী অধ্যাপক আলী আশরাফের সমর্থিত নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ ঘটে। শনিবার বিকালে উপজেলার বরকরই ইউনিয়নের ফতেহপুর বাজার এলাকায় এই সংঘর্ষের ঘটনায় ৯ জন আহত হয়েছে। এ ঘটনায় আওয়ামী লীগকর্মী সালাউদ্দিন বাদী হয়ে বিএনপি ও এলডিপির ৩৩ নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত নামা ১২ জনকে আসামি করে থানায় মামলা করেন।
ময়মনসিংহে উঠান বৈঠকে বাধা: ময়মনসিংহ-২ আসনে ধানের শীষের প্রার্থীর উঠান বৈঠক পুলিশি বাধায় পণ্ড হয়ে যায়। জানা গেছে, গতকাল ময়মনসিংহ-২ আসনের তারাকান্দা উপজেলার ভালকি গ্রামে তারাকান্দা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোতাহার হোসেন তালুকদারের বাড়িতে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বিএনপির প্রার্থী শাহ শহীদ সারোয়ার এতে উপস্থিত ছিলেন। তারাকান্দা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোতাহার হোসেন তালুকদার জানান, উঠান বৈঠক চলাকালে পুলিশি বাধায় নেতাকর্মীরা ছত্রভঙ হয়ে যায়। অভিযোগ অস্বীকার করে তারাকান্দা থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আবুল খায়ের জানান, বিএনপির নির্বাচনী বৈঠকে পুলিশ যায়নি। ওই রাস্তা দিয়ে পুলিশ ভ্যান যাওয়ার সময় নেতাকর্মীরা পালিয়ে যায়।