ভোট জালিয়াতি সত্ত্বেও বাংলাদেশকে বৃটেনের বিপুল অংকের সহায়তা
বাংলা সংলাপ ডেস্কঃগত সপ্তাহে সরকার ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য ভোট কারচুরি করেছে এমন হতাশা সত্ত্বেও বাংলাদেশকে আয়কর দাতাদের দেয়া অর্থের ২০ কোটি পাউন্ডের বেশি সহায়তা অব্যাহত রাখবে বৃটেন। বৃটিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রী এ কথা বলেছেন। ‘স্ট্রেংদেনিং পলিটিক্যাল পার্টিসিপেশন’ প্রজেক্টের জন্য ১ কোটি ৬০ লাখ পাউন্ড সহ বিশাল মাপের এই অর্থ সহায়তা দিতে যাচ্ছে বৃটেন। এর উদ্দেশ্য হলো, স্থানীয়ভাবে নির্বাচনী পর্যবেক্ষণকে উৎসাহিত করা ও নাগরিক সমাজের দাবিÑ অধিক স্বচ্ছ রাজনীতির প্রতি সমর্থন দেয়া।
বাংলাদেশে নির্বাচনের দিনে সংঘর্ষে কমপক্ষে ১৭ জন নিহত হয়েছেন। বিরোধী দলের শত শত নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ব্যালটবাক্স ভর্তি করা হয়েছে। সরকারের বিরুদ্ধে ভোট দেয়ার শাস্তি হিসেবে গণধর্ষণ করা হয়েছে চার সন্তানের এক মাকে।নির্বাচনে ২৯৮টি আসনের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ ২৮৮টি আসনে জয় পেয়েছে, যা মোট ভোটের শতকরা ৯৬ ভাগ। এর ফলে টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসেছে তার সরকার। এমন জয়ের পর তদন্তের আহবান জানিয়েছে বৃটেন, ইউরোপিয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্র।
বৃটেনের এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় প্রতিমন্ত্রী মার্ক ফিল্ড বলেছেন, নির্বাচনে ভয়ভীতি ও বেআইনি সহিংসতার বিষয়ে তিনি নিন্দা জানান। এছাড়া নির্বাচনের দিনে এতগুলো মানুষের মৃত্যুতে তিনি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। তবে তিনি বলেছেন, বাংলাদেশ ও এর ১৬ কোটি মানুষের সঙ্গে বৃটেনের রয়েছে ব্যাপক ও গুরুত্বপূর্ণ অংশীদারিত্ব। কারণ, উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাংলাদেশী বা বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত বসবাস করেন বৃটেনে। বাংলাদেশী মানুষের কাঙ্খিত অধিক স্থিতিশীল, সমৃদ্ধ ও ভবিষ্যত গণতন্ত্রের প্রতি তিনি বৃটেনের অব্যাহত সমর্থনের কথা জানান।
বৃটেন যে ১ কোটি ৬০ লাখ ডলার সহায়তা দিয়েছে বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে উৎসাহিত করতে বা বিস্তার লাভ করতে, তা পাচ্ছে বেসরকারি সংগঠনগুলো বা এনজিও। এর উদ্দেশ্য হলো রাজনৈতিক সহিংসতা কমিয়ে আনা ও আন্তঃদলীয় শান্তিপূর্ণ বিতর্ক আয়োজন করা। এ ছাড়া যেসব পদক্ষেপ রয়েছে তাতে দেশের সুশাসন শক্তিশালী হবে।
৩০শে ডিসেম্বরে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বৃটেন একটি বিবৃতি দেয়। তাতে বলা হয়েছিল, বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির নেত্রী খালেদা জিয়া জেলে রয়েছেন। তিনি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারছেন না। এ ছাড়া বাংলাদেশের নির্বাচন পর্যবেক্ষণে একটি পূর্ণাঙ্গ পর্যবেক্ষক মিশন পাঠাতে ব্যর্থ হওয়ার জন্য ইউরোপিয় ইউনিয়নের সমালোচনা করা হয় তাতে।
আগেভাগেই পূর্বাভাস দেয়া হয়েছিল যে শেখ হাসিনা বিজয়ী হবেন। কিন্তু পূর্বে কখনো অনুমানও করা হয় নি এতটা কাছাকাছি ফল আসবে। এতে প্রাপ্ত ফল ছিল সুস্পষ্টভাবে ত্রুটিপূর্ণ (ইনঅ্যাকুরেট)। আর তাতে বাংলাদেশে উন্নয়ন তহবিলের এত বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ নিয়ে প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। ইন্সটিটিউট ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের রিসার্স ফেলো সম্মানিত ভাষ্যকার নাউমি হোসেন ইউরোপিয় ইউনিয়নের একটি বিবৃতির উপহাস করেছেন। ওই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সহিংসতা নির্বাচনকে বিঘিœত করেছে এবং ভোট হয়েছে কলঙ্কিত।
তিনি টুইটে লিখেছেন: কলঙ্কিত। চমৎকার শব্দ বাছাই এবং পশ্চিমাদের কাছ থেকে অত্যন্ত ভদ্র উপদেশ। এটা হলো থাপড়ানোর চেয়ে কার্যকর এক কৌশল। বাংলাদেশ সরকার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে, ইসলামপন্থি উগ্রবাদকে মোকাবিলা করছে এবং আসুন তাদেরকে দেখাই যে ফলাফলের জন্য আন্তর্জাতিক সহায়তা আসছেÑ ফলে তারা কোনো কিছুই কেয়ার করেন না।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া বিষয়ক পরিচালক ব্রাড এডামস বলেছেন, নির্বাচনের আগের সময়টা বিরোধীদের ওপর সহিংসতা ও ভীতি প্রদর্শনের সময় হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে।
বৃটিশ সরকার তার জাতীয় প্রবৃদ্ধির শতকরা ০.৭ ভাগ বৈদেশিক সহায়তা হিসেবে খরচ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এ অংক গত বছর ছিল এক কোটি ৪০ লাখ পাউন্ড।
(লন্ডনের বহুল প্রচারিত দ্য ডেইলি মেইলের অনলাইন সংস্করণে প্রকাশিত লেখার অনুবাদ)