ক্যানসারের ওষুধ হবে ডিম
বাংলা সংলাপ ডেস্কঃগবেষকেরা জানিয়েছেন, তাঁরা জিন সম্পাদনার মাধ্যমে এমন এক প্রকার মুরগি জন্ম দিতে সক্ষম হয়েছেন, যা আর্থ্রাইটিস (বাত বা অস্থিসন্ধির প্রদাহ) কিংবা ক্যানসারের ওষুধসমৃদ্ধ ডিম পাড়তে সক্ষম! এসব মুরগির ডিমই হবে মানুষের ওষুধ! এই যুগান্তকারী গবেষণাটি করেছেন যুক্তরাজ্যের এডিনবরা শহরের জৈবপ্রযুক্তি কোম্পানি রজলিন টেকনোলজিসের একদল বিজ্ঞানী। এই ওষুধ প্রচলিত কারখানায় উৎপাদিত ওষুধের চেয়ে ১০০ গুণ কম খরচে উৎপাদন করা সম্ভব হয়েছে বলে তাঁরা জানিয়েছেন। গবেষকদের বিশ্বাস, তাঁদের এই গবেষণা থেকে পরবর্তী সময়ে ওষুধের বাণিজ্যিক চাহিদার জোগান দেওয়া সম্ভব।
গবেষণাটির নেতৃত্ব দিয়েছেন ড. লিসা হেরন। তিনি বলেন, জিন পরিবর্তনের ফলে মুরগির কোনো স্বাস্থ্যগত সমস্যা তাঁরা দেখতে পাননি। ওষুধসমৃদ্ধ ডিম পাড়তে গিয়ে তাদের কোনো সমস্যাতেও ভুগতে হয়নি। অন্য সব স্বাভাবিক মুরগির মতোই ডিম পেড়েছে এসব মুরগি। উল্টো ফার্মের মুরগির তুলনায় একটু বেশি চঞ্চল হয়েছে তারা। লম্বা একটি খাঁচায় তাদের রাখা হয়েছে। তাদের খাবার ও পানি দেওয়া থেকে দৈনিক যত্ন-আত্তির জন্য উচ্চ প্রশিক্ষিত বিশেষজ্ঞ দল নিয়োজিত রয়েছে।
Eprothom Aloমানবশরীরে অনেক রোগই হয় শরীর যখন প্রাকৃতিকভাবে নির্দিষ্ট রাসায়নিক পদার্থ বা প্রোটিন পর্যাপ্ত মাত্রায় তৈরি করতে পারে না। এ ধরনের রোগ ওষুধ প্রয়োগে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। সেসব ওষুধে সংশ্লিষ্ট প্রোটিনটি দেওয়া থাকে। ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলো এসব প্রোটিন বিভিন্ন সংশ্লেষ পদ্ধতির মাধ্যমে তৈরি করে, যার উৎপাদন ব্যয় অনেক বেশি। ড. হেরন ও তাঁর সহকর্মীরা এই বিপুল ব্যয় কমাতে মুরগির শরীরে একটি মানবজিন প্রতিস্থাপন করেন। এর ফলে মুরগিটি মানুষের শরীরে উৎপাদিত প্রোটিন উৎপাদনে সক্ষম হয়। মুরগির ডিএনএ ডিমের সাদা অংশে এসব প্রোটিন জমা করতে নির্দেশ দেয়।
ডিমের হলুদ অংশ আলাদা করার পর ড. হেরন দেখলেন, সাদা অংশে অনেক বেশি পরিমাণে প্রোটিন উৎপাদন করা সম্ভব হয়েছ। গবেষক দল তাঁদের গবেষণায় দুটি বিশেষ প্রোটিনের ওপর জোর দেন। রোগ প্রতিরোধব্যবস্থার জন্য এই দুটি প্রোটিন অত্যাবশ্যকীয়। একটি শক্তিশালী ভাইরাস প্রতিরোধী ও ক্যানসার প্রতিরোধী আইএফএনআলফা২এ প্রোটিন। আরেকটি দেহের ক্ষতিগ্রস্ত টিস্যু পুনর্গঠনে থেরাপির কাজ করতে সক্ষম ম্যাক্রোফেজ-সিএসএফ প্রোটিন।
ওষুধের একটি ডোজ তৈরির জন্য তিনটি ডিমই যথেষ্ট বলে জানান গবেষকেরা। জিন সম্পাদিত এসব মুরগি প্রতিবছর ৩০০টি পর্যন্ত ডিম পাড়তে সক্ষম বলে জানান তাঁরা।
বিজ্ঞানীরা এর আগে জিন পরিবর্তন ঘটিয়ে এমন ছাগল, খরগোশ ও মুরগি তৈরি করেছিলেন, যাদের উৎপাদিত দুধ বা ডিমের মাধ্যমে প্রোটিন থেরাপি সম্ভব হয়েছিল। তবে জিন প্রকৌশল করা সেসব প্রাণী বেশি সংখ্যায় জন্ম দেওয়া সম্ভব হয়নি তখন। আর সেসব অনেক ব্যয়বহুলও ছিল।