জুলিয়ান আসঞ্জ: যে কারণে তার উপর ক্ষেপেছে একুয়েডর
বাংলা সংলাপ ডেস্কঃউইকিলিকস-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান আসঞ্জ ২০১২ সাল থেকে লন্ডনে একুয়েডর দূতাবাসে বসবাস করছিলেন।
ধর্ষণের অভিযোগে সুইডেনে একটি মামলা এড়াতে মি: আসঞ্জ একুয়েডরের কাছে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছিলেন।
তার দিক থেকে এই আশংকাও ছিল যে ব্রিটিশ পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে সুইডেনে পাঠানোর পর সেখান থেকে তাকে আমেরিকার হাতে তুলে দেয়া হতে পারে।
লন্ডনে একুয়েডর দূতাবাসের বাইরে সবসময় পুলিশ অবস্থান করতো যাতে মি: আসঞ্জ সেখান থেকে বের হলেই তাকে গ্রেফতার করা যায়।
কিন্তু সাত বছর পর একুয়েডর কেন মি: আসঞ্জকে ব্রিটিশ পুলিশের হাতে তুলে দিল।
মি: আসঞ্জ-এর উপর থেকে একুয়েডর কেন সমর্থন প্রত্যাহার করে নিয়েছে?লন্ডনে একুয়েডর-এর রাষ্ট্রদূত বৃহস্পতিবার স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডকে দূতাবাসে আমন্ত্রণ জানিয়ে জুলিয়ান আসঞ্জকে তাদের হাতে তুলে দেন।
এর আগে একুয়েডর সরকার মি: আসঞ্জ-এর রাজনৈতিক আশ্রয় বাতিল করে।
একুয়েডর-এর প্রেসিডেন্ট লেনিন মরেনো বলেছেন, জুলিয়ান আসঞ্জ-এর আচার-ব্যবহারের কারণে তাদের ধৈর্যের সীমা একেবারে শেষ প্রান্তে এসে ঠেকেছে।
সম্প্রতি ভ্যাটিকান সম্পর্কিত কিছু দলিলপত্র ফাঁস করে দেবার বিষয়টি উল্লেখ করেন একুয়েডর-এর প্রেসিডেন্ট। ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে এসব দলিলপত্র ফাঁস করা হয়।
একুয়েডর-এর প্রেসিডেন্ট বলেন, “এসব কাগজপত্র ফাঁস করার মাধ্যমে বিশ্ব নিশ্চিত হয়েছে যে উইকিলিকস-এর সাথে মি: আসঞ্জ-এর এখনো সম্পর্ক আছে এবং অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে তারা হস্তক্ষেপ করছে। “প্রেসিডেন্ট আরো অভিযোগ করেন, মি: আসঞ্জ লন্ডনে একুয়েডর দূতাবাসের নিরাপত্তা ক্যামেরা বন্ধ করে দিয়েছিল।
এছাড়া দূতাবাসের নিরাপত্তা সংক্রান্ত কাগজপত্র দেখা এবং নিরাপত্তারক্ষীদের সাথে বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েছিলেন মি: আসঞ্জ।
একুয়েডর-এর পররাষ্ট্রমন্ত্রী দেশটির সংসদে যে বক্তব্য দিয়েছেন সেখানেও তিনি বিষয়গুলো তুলে ধরেছেন।
সে বক্তব্যের বরাত দিয়ে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান বলেছে, মি: আসঞ্জ দূতাবাসের ভেতরে স্কেটবোর্ডিং করতেন এবং ফুটবল খেলতেন। এ নিয়ে তিনি দূতাবাসের কর্মকর্তাদের অবজ্ঞা করেছেন।
একুয়েডর দূতাবাস সাত বছর তাকে আশ্রয় দিলেও জুলিয়ান আসঞ্জ কোন কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতেন না।
বরং একুয়েডর দূতাবাসের কর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনেন যে তারা যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে তার উপর নজরদারী করছেন।
একুয়েডর-এর পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে দ্য গার্ডিয়ান আরো বলেছে, জুলিয়ান আসঞ্জকে দূতাবাসের ভেতরে রাখার জন্য একুয়েডর সরকারের প্রচুর অর্থ ব্যয় করতে হয়েছে।
দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সংসদে বলেছেন, ২০১২ থেকে সাত বছরে মি: আসঞ্জ-এর নিরাপত্তার জন্য প্রায় ৬০ লাখ ডলার খরচ করতে হয়েছে। এছাড়া আরো চার লাখ ডলার ব্যয় হয়েছে তার চিকিৎসা, খাবার এবং জামা-কাপড় বাবদ।
তাছাড়া জুলিয়ান আসঞ্জ-এর স্বাস্থ্য খারাপ হয়ে যাবার বিষয়টি একুয়েডর দূতাবাসের জন্য একটি বড় উদ্বেগের কারণ হয়েছিল। কারণ দূতাবাসের ভেতরে তাকে যথাযথ চিকিৎসা দেয়া সম্ভব হচ্ছিল না।
একুয়েডর-এর প্রেসিডেন্ট বলেছেন, ব্রিটিশ সরকার লিখিতভাবে নিশ্চয়তা দিয়েছে যে মি: আসঞ্জকে এমন কোন দেশের কাছে হস্তান্তর করা হবে না যেখানে তাকে নির্যাতন করা হতে পারে,অথবা মৃত্যুদণ্ড দেয়া হতে পারে।
মি: আসঞ্জ গ্রেফতার হবার মাত্র একদিন আগেই উইকিলকস বলেছে, তাদের সহ-প্রতিষ্ঠাতার লন্ডনে একুয়েডর দূতাবাসের ভেতরে ব্যাপক গুপ্তচরবৃত্তি করেছে।
দূতাবাসের ভেতরে মি: আসঞ্জ কী করতে পারবেন আর কী করতে পারবেন না – এসব নিয়ে একুয়েডর কর্তৃপক্ষ এবং জুলিয়ান আসঞ্জ-এর মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই বিরোধ চলছিল।
তবে দূতাবাসের ভেতরে ঠিক কী ঘটেছে সেটি পরিষ্কার নয়। তবে এনিয়ে জুলিয়ান আসঞ্জ-এর দিক থেকে ভিন্ন দাবিও আছে।