‘ মানবিক বিপর্যয়ের ক্ষুদ্রতম বলি’

Spread the love

2BEA558700000578-3221090-image-a-239_1441290844060বাংলা সংলাপ রিপোর্ট
বিশ্ব মানবাধিকারের সূতিকাগার ইউরোপেও এখন পদে পদে বিপন্ন হচ্ছে মানবতা।তা না হলে একটি অবুঝ কোলের শিশু সাগরের পাড়ে উত্তাল পানিতে ভেসে উঠলো- তারপরেও ইউরোপের বিশ্ব নেতাদের টনক নড়লোনা। কতোটুকু টুকরো টুকরো আর পানিতে তলিয়ে গেলে এই নেতাদের টনক নড়বে, বিবেকে দাগ কাঠবে- সেটা এখন বড় প্রশ্ন।
সিরিয়া সহ আফ্রিকার দেশে দেশে যে নারকীয় সন্ত্রাস আর ধবংসলিলা চলছে, এই মানুষগুলো সেখানে কি করে বাঁচবে? বাঁচার তাগিদে যার যা আছে, তাই নিয়ে এক কাপড়ে এরা ইউরোপের উদ্দেশ্যে সাগরের উত্তাল জোয়ার বাঁধা পেরিয়ে ছুটে আসছে।এতোটুকু আশায়, মানবাধিকারের নেতারা অসহায় মানুষগুলোর সাহায্যে এগিয়ে আসবে।
আসাদের মতো স্বৈরাচারদের হয় সামলাও, নাহলে অসহায় নিরীহ মানুষগুলোকে আশ্রয় দেও।জাতিসংঘ সহ সবাই বলছে এদের প্রতি একটু সদয় হও- অথচ এরা আজ নীরব। বিশ্বের বড় নেতা ওবামা, ডেভিড ক্যামেরন এরা আজ নিরব আর নানা কৌশলী খেলায় মত্ত। ইউরোপের মধ্যে একমাত্র ব্যতিক্রম অ্যাঞ্জেলা মার্কেল। ইউরোপের দরজা এই অসহায় মানুষদের জন্য সীমিত হলেও খুলে দেয়ার কথা বলছেন।
2BE7BD2500000578-3219553-image-m-9_1441199108070আজকে সাগরের পানিতে ভেসে উঠা শিশুটির ছবি প্রকাশ করে ব্রিটিশ দৈনিক ইন্ডিপেন্ডেট লিখেছে, আমরা জানি এমন ছবি প্রকাশ সঠিক নয়, কিন্তু আমরা বাধ্য। ডেভিড ক্যামেরন ও ব্রিটেনের জন্য এই ছবি বলছে, আর নয়, এখন এক্ট করার সময়।
লেবার দলের নেতৃত্ব প্রতিদ্বন্ধিতাকারী ইওভেট কোপার গতকাল বলেছিলেন, ব্রিটেনের ১০,০০০ রিফিউজি গ্রহণ করা উচিৎ আর আজকে এই ছবি দেখে বলছেন এখনই আমাদের কাজ করা উচিৎ, আর সময় ক্ষেপন নয়, এখন কোন পলিসি নয়।
এখন পর্যন্ত ডেভিড ক্যামেরন তার দলীয় কৌশল আর পলিসি নিয়েই আছেন। এখনো কি এই ব্রিটিশ নেতার হ্নদয়ে দাগ কাটবেনা? লিবডেম পার্টির টিম ফারান সাহসিকতার সাথে তাই বলেছেন, আর সময় নয়, এখনই ডেভিড ক্যামেরনের জন্য এটা ওয়েক-আপ কল।টাইম টু এক্ট নাও।
এখন পর্যন্ত কনজারভেটিভ নেতৃত্ব কোন বিবৃতি দেয়নি। একজন মা যখন সর্বশেষ ভাবে চেস্টা চালিয়ে যাচ্ছে ডুবন্ত নৌকার পাটাতন ধরে হলেও নিজ সন্তানটিকে উচু করে ধরে বাচিয়ে রাখতে, তখনো যখন নিরুপায় হয়ে শিশু সন্তানটি সাগরের পানিতে ভেসে যাচ্ছে আর সেই ছবি দেখার পর আর কি অপেক্ষা করার সময় আছে, হে ডেভিড ক্যামেরন- গণতন্ত্রের পূজারী এবার জেগে উঠো- এবার কিছু একটা করো।
2BF0CC5B00000578-3219553-image-a-18_1441292875371ব্রিটেনের নতুন সকাল কি এই অসহায় শিশু আর মানুষগুলোর পাশে আশার আলো হয়ে উঠতে পারেনা ? অবশ্যই পারে- সেজন্যে চাই একটুখানি উদ্যোগ- ডেভিড ক্যামেরন এবার একটা কিছু হলেও করবেন- এমন আশাই করি এই সকালে।
টালমাটাল ইউরোপ:
বাংলা সংলাপ ডেস্কঃ অভিবাসী আগমন ¯্রােতে টালমাটাল অবস্থা বিরাজ করছে গোটা ইউরোপ জুড়ে।কোন অবস্থাতেই সামাল দেয়া যাচ্ছে না অভিবাসীদের। দুদিন ধরে হাজার দুয়েক অভিবাসীকে রাজধানী বুদাপেস্টের আন্তর্জাতিক ট্রেন স্টেশনে আটকে রেখেছে হাঙ্গেরি। জরুরি বৈঠক করেছে গ্রিসের মন্ত্রিসভা।
ইউরোপমুখী অভিবাসীদের স্রোত অব্যাহত রয়েছে। গ্রিসে কমবেশি ১২ ঘণ্টার ব্যবধানে পৌঁছেছে আরও ৪ হাজার ৩০০ অভিবাসী। এই অভিবাসীদের অন্যতম চূড়ান্ত গন্তব্য জার্মানি বলেছে, ঘণ্টায় দেশটিতে ঢুকছে ১০০ জনের বেশি।
হাঙ্গেরি গত মঙ্গলবার থেকে পূর্ব বুদাপেস্টের আন্তর্জাতিক কেলেটি স্টেশন বন্ধ করে দিয়েছে। সেখানে আটকা পড়েছে অন্তত দুই হাজার অভিবাসন-প্রত্যাশী। সেখানে আটকে পড়া মানুষ বিক্ষোভ করে। বিক্ষোভ চলাকালে অনেকেই ‘স্বাধীনতা, স্বাধীনতা’ বলে চিৎকার করে। অনেকে ট্রেনের টিকিট উঁচিয়ে ধরে।
এ ছাড়া গত মঙ্গলবার রাতে ও বুধবার সকালে দুই দফায় দুটি জাহাজে করে এথেন্সের পাইরিস বন্দরে আসে ৪ হাজার ২০০ অভিবাসী। গ্রিসের লেসবস দ্বীপ থেকে এসব মানুষ এথেন্সে আসে। বন্দর পুলিশ বলেছে, বিপজ্জনকভাবে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেওয়া এসব অভিবাসন-প্রত্যাশীর বেশির ভাগই মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের। অনেক অভিবাসীর জন্যই এথেন্স হচ্ছে ইউরোপীয় ধনী দেশগুলোতে ঢোকার প্রথম দ্বার। তাদের লক্ষ্য এথেন্স থেকে হাঙ্গেরিতে পৌঁছানো। সেখান থেকে অস্ট্রিয়া, জার্মানিসহ ধনী দেশগুলোতে যাওয়ার চেষ্টা করে তারা।
এথেন্সের পাইরিস বন্দরে আসা এক সিরীয় শিক্ষক ইসহাম বলেন, ‘আমাদের আপনাদের সাহায্য করতে হবে। আমরা মানুষ।’
2BEEB0C000000578-3219553-Aylan_Kurdi_three_pictured_before_he_died_when_an_overcrowded_di-m-9_1441283115286এ বছরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত ১ লাখ ৬০ হাজার অভিবাসী গ্রিসে এসেছে। দেশটিতে গত বছর আসা অভিবাসীর চেয়ে এই সংখ্যা অনেক বেশি। গ্রিসের সরকার বলেছে, অভিবাসীদের স্রোত সামলানোর মতো সক্ষমতা তাদের নেই। তারা এ জন্য আন্তর্জাতিক সহায়তা চেয়েছে। বিদ্যমান পরিস্থিতির আলোকে গ্রিসের অন্তর্বর্তী মন্ত্রিসভার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এদিকে উত্তর ইতালির বোলজানো প্রদেশ কর্তৃপক্ষ গতকাল বলেছে, তারা জার্মানির অনুরোধে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের চাপ কমাতে অস্ট্রিয়া সীমান্তে লোকজনের পরিচয় যাচাই কার্যক্রম চালু করতে প্রস্তুত।
2BEE977A00000578-0-image-m-14_1441288143579এদিকে জার্মানির পুলিশ বলেছে, প্রতি ঘণ্টায় ১০০ জনেরও বেশি অভিবাসী সে দেশে ঢুকেছে। মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত ঘণ্টায় গড়ে ১০৯ জন অবৈধ অভিবাসীকে নিবন্ধন করা হয়েছে বলে জানায় পুলিশ। ট্রেনে বোঝাই হয় এসব মানুষ যাচ্ছে মিউনিখে। মঙ্গলবার ৩ হাজার ৭০৯ জন জার্মানিতে পৌঁছেছে। চলতি সপ্তাহে জার্মানিতে ঢোকা অভিবাসীদের গড় সংখ্যার দ্বিগুণ এটি। এদের বেশির ভাগই ট্রেনে হাঙ্গেরি থেকে অস্ট্রিয়া হয়ে মিউনিখে পৌঁছাচ্ছে।
ইউরোপের সবচেয়ে জনবহুল ও সবল অর্থনীতির দেশ জার্মানি এবারের অভিবাসীদের প্রধান গন্তব্যস্থল। এ বছর এ পর্যন্ত ১ লাখ ২৫ হাজার অবৈধ অভিবাসী দেশটিতে গেছে। গত বছর এ সংখ্যা ছিল ৫৭ হাজার।
চ্যানেল টানেল দিয়ে পার হতে গিয়ে প্যারিস থেকে লন্ডনগামী ইউরোস্টার ট্রেন মঙ্গলবার রাতে আটকে থাকে। ট্রেন লাইনের ওপর বেশ কিছুসংখ্যক অভিবাসী থাকায় ট্রেন থামিয়ে দেওয়া হয়। তুরস্ক থেকে ছোট নৌকায় গ্রিসে যাওয়ার পথে ১২ জন অভিবাসন-প্রত্যাশী গতকাল মারা গেছে। এদের বেশির ভাগই সিরীয় নাগরিক বলে মনে করা হচ্ছে। এ ছাড়া মঙ্গলবার রাতে অস্ট্রিয়ায় একটি গাড়ির ভেতর থেকে ২৪ জন আফগানকে উদ্ধার করা হয়। তারা শ্বাসরুদ্ধ হযে মৃত্যুর ঝুঁকিতে ছিল।


Spread the love

Leave a Reply