হুমকির মুখে ব্রিটিশ অর্থনীতি

Spread the love

economyনাজমিন আরাঃ
অবৈধ অভিবাসী ঠেকানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে গত ৭ মে’র নির্বাচনে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আসে কনজারভেটিভ পার্টি। নির্বাচনের অন্যতম এই ইস্যু নিয়ে প্রুতিশ্রুতি রক্ষায় অভিভাসন নিয়ন্ত্রনে আইনি যত আয়োজন সম্ভব তার সবটুকুই করতে চাইছে ডেভিড ক্যামেরন সরকার। শীঘ্রই নতুন একটি আইন পাশের মাধ্যমে অভিভাসীদের বসবাস ও আয়ের সব পথ বন্ধ করতে যাচ্ছে যুক্তরাজ্য। তবে কঠোর অবস্থান নেয়া সরকারের এ কড়াকড়ি আইন যুক্তরাজ্যের অর্থনীতির জন্য আদৌ সুফল বয়ে আনবে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিশ্লেষকদের মতে, জ্বালানী তেলের অস্বাভাবিক দরপতন, আন্তর্জাতিক স্টক মার্কেটে ধ্বসসহ নানা কারনে অর্থনৈতিক মন্দার হুমকিতে থাকা যুক্তরাজ্যের জন্য নতুন অভিভাসন নীতি মড়ার উপর খড়ার ঘা হিসেবে দেখা দিতে পারে।
bpঅভিভাসী প্রবেশে কড়াকড়ির ফলে প্রকৃত শ্রমমূল্য বেড়ে যাচ্ছে। যা সরাসরি উৎপাদন ও ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানীর ক্ষেত্রেও বিরূপ প্রভাব ফেলছে। ফলে জটিল আবর্তের মধ্যে পতিত হতে যাচ্ছে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি। এ বিষয়ে অর্থনীতি বিষয়ক বিশিষ্ট ব্রিটিশ সাংবাদিক জার্মি ওয়ার্ন অভিভাসন নীতির ফলে অর্থনৈতিক মন্দার আশংকা প্রকাশ করেছেন। দ্য টেলিগ্রাফে প্রকাশিত ‘অভিভাসন ছাড়া ভেঙ্গে পড়তে পারে ব্রিটিশ অর্থনীতি’ শীর্ষক প্রবন্ধে তিনি দাবি করেন, অভিভাসন নিয়ে ক্যামেরন লক্ষ্যভেদে ব্যর্থ হয়েছেন। অভিভাসন নিয়ন্ত্রনের মাধ্যমে সরকারের প্রত্যাশার সাথে বাস্তবতার দূরত্ব যোজন যোজন। গৃহীত নতুন পদক্ষেপের ফলে যুক্তরাজ্যের উন্নয়নে যে বহুমুখী দক্ষতাসম্পন্ন জনবল প্রয়োজন তার যোগান দিতে ব্যার্থ হচ্ছে সরকারের নীতি। এমনকি এসব কাজে ব্রিটিশ নাগরিকদের দক্ষ করে গড়ে তুলতে যে প্রশিক্ষণ প্রয়োজন তাও অপ্রতুল। দক্ষ জনশক্তির অভাবে বর্তমান শ্রমবাজারে যে সংকট তৈরি হয়েছে, তা নিরসনে বিপুল পরিমান প্রণোদনা প্রয়োজন। এমন পরিস্থিতিতে উন্নয়নের পরিবর্তে অর্থনৈতিক স্থবিরতারই লক্ষণ প্রকাশ পাচ্ছে।
oil_3227519bঅভিভাসন নিয়ন্ত্রণে ক্যামরনের প্রস্তাবগুলো ইতোমধ্যে বেশীরভাগ ইইউভুক্ত দেশ প্রত্যাখ্যান করেছে। ফলে ইউরোপিয় ইউনিয়নে যুক্তরাজ্যের থাকা না থাকা নিয়ে গণভোট অনিবার্য হয়ে উঠেছে। এমন পরিস্থিতিতে যুক্তরাজ্য যদি ইইউ থেকে বেরিয়ে যায়, তা দেশটির জন্য কতটা মঙ্গলজনক হবে তা নিয়েও বিতর্কের শেষ নেই। তবে এমন সিদ্ধান্ত যে দেশটির বহুজাতিক কোম্পানীগুলোর জন্য বড় হুমকি হয়ে দাড়াবে এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। এছাড়াও যুক্তরাজ্যের অভিভাসীদের বড় অংশ আসছে ইইউ’র বাইরে থেকে। অর্থ্যাৎ সমস্যার একটা বড় অংশ হচ্ছে ইইউ বহির্ভূত। ফলে যুক্তরাজ্যের ইইউ ত্যাগ সমস্যা সমাধানে কতটুকু ভূমিকা রাখবে বলা মুশকিল।
আরেকদিকে, শ্রমিক শ্রেনীর জন্য আইনে যতোটা কড়াকড়ি আছে, ধনীদের জন্য যেন ঠিক ততোটাই শিথিলতা। আর এসব বিত্তশালী অভিভাসী ক্ষুদ্র ব্যবসায়ের জন্য বিশাল হুমকি সরূপ।
2BC6071300000578-3215962-Demand_Theresa_May_said_EU_migrants_should_be_banned_from_Britai-a-52_1440979913073তাছাড়া, আইনের কঠোর প্রয়োগ শুধু বৈধ উপায়ে আগ্রহী অভিভাসীদেরই নিরুৎসাহিত করছে। অবৈধ পন্থায় যারা সীমান্ত পাড়ি দিচ্ছে তাদের রুখতে পারছেনা। ইরাক ও লিবিয়া তার সর্বোৎকৃষ্ট উদাহরন। আর সেটি বন্ধ করতে গেলে দেখা দিচ্ছে মানবিক বিপর্যয়। যা বৃটেনের বিদ্যমান মানবাধিকার আইনেরও পরিপন্থী। ফলে অর্থনৈতিক হুমকির সাথে সাথে বহি:বিশ্বে যুক্তরাজ্যের ভাবমূর্তিও ক্ষূন্ন হচ্ছে। বৃটেন সবসময়ই নিজেকে উদার ও মুক্ত অর্থনীতির দেশ হিসেবে দাবি করে। কিন্তু বর্তমান সরকারের অভিভাসন নীতি যেন স্ববিরোধীতার সামিল।
একথা কেউই বলছে না যে, অভিভাসনের জন্য সীমান্ত উন্মুক্ত করে দেয়া হোক। ইইউ কিংবা কারো জন্যই এটি উন্মুক্ত হওয়া উচিত নয়। তবে ক্যামেরন সরকারের প্রস্তাবনা অনুযায়ী অভিভাসন প্রকিয়ায় বাঁধ দেয়ার কথা বলা যতটা সহজ, সেটি বাস্তবায়ন ততোটা সহজসাধ্য নয়। আর যদি সেটা করাও হয়, তার জন্য অর্থনীতিকে যে বড় মূল্য দিতে হবে সেটাও সহজেই অনুমেয়।


Spread the love

Leave a Reply