ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ‘ডিফেন্সই হবে অফেন্স’
বাংলা সংলাপ ডেস্কঃ‘অ্যাটাক ইজ দা বেস্ট ডিফেন্স’ – যুগে যুগে অনেক খেলাতেই শৌর্যের প্রতীক মনে করা হয় এই কথাকে। তবে প্রতিপক্ষ যখন সত্যিই প্রবল শৌর্যময়, তাকে নিষ্ক্রিয় করতে শক্তির চেয়ে বেশি জরুরি কৌশল। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সেই পথই বেছে নিচ্ছে বাংলাদেশ। মূল পরিল্পনায় থাকছে রক্ষণ।
রঙিন পোশাকে ইংলিশ ক্রিকেটে বাঁক বদলে যাওয়ার মুহূর্তটির সঙ্গে জড়িয়ে আছে বাংলাদেশের নাম। গত বিশ্বকাপে বাংলাদেশের বিপক্ষে হেরেই গ্রুপ পর্ব থেকে ছিটকে গিয়েছিল ইংল্যান্ড।
ক্রিকেটের জন্ম যেখানে, ওয়ানডে ক্রিকেটের জন্ম যে দেশে, দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ার পর তারা বের করে সামনে এগোনোর উপায়। বিশেষ করে ট্রেভর বেলিস কোচ হওয়ার পর খোলনলচে পাল্টে ফেলেন দলের। শুরুটা হয়, চিরায়ত ইংলিশ মানসিকতাকে বিসর্জন দিয়ে, ছুঁড়ে ফেলা হয় ভয়ডরের ক্রিকেট।
সেই মানসিকতার সঙ্গে যোগ হয় স্কিল। দুইয়ে মিলিয়ে বদলে যাওয়া ইংল্যান্ড চমক উপহার দিতে থাকে প্রতিনিয়ত। তিনশ ছাড়ানো বা তিনশ রান তাড়া করা তাদের কাছে হয়ে ওঠে ছেলেখেলা। প্রতিনিয়ত বাড়তে থাকে সীমানা। ছাড়িয়ে যায় চারশ। দলীয় ৪৪৪ রানের বিশ্বরেকর্ড গড়ে ফেলে। সেই রেকর্ডকে নিজেরাই পেছনে ফেলে গড়ে ৪৮১ রানের নতুন রেকর্ড। রান তাড়ায় কোনো স্কোরই নিরাপদ নয় তাদের সামনে।
শুরুতে উইকেট পড়ুক বা মাঝে, কিংবা ঝটপট হারাক কয়েকটি উইকেট, আগ্রাসী মানসিকতার সঙ্গে তারা আপোস করেন না একটুও। বিপর্যয় থেকেও অনেকবার বড় স্কোর হয়েছে এই মানসিকতার সৌজন্যে।
সেই ইংল্যান্ড শনিবার কার্ডিফে মুখোমুখি হবে বাংলাদেশের। গত বিশ্বকাপের পর নিজেদের মাটিতে বাংলাদেশ আরেকবার হারিয়েছিল ইংল্যান্ডকে। তবে কঠিন কন্ডিশনে ওয়ানডে সিরিজটি জিতেছিল ইংল্যান্ডই।
বাংলাদেশ দলে নেই তুমুল গতিময় বোলার বা ভীতি জাগানিয়া কেউ। নেই লেগ স্পিনার বা আক্রমণাত্মক কেউ। দল হিসেবে খেলা ও বোলিং করাই দলের শক্তি। সীমিত সামর্থ্যের এই বোলিং আক্রমণকে ছোট মাঠে তুলোধুনো করতে চাইবে ইংল্যান্ড নিশ্চিতভাবেই।
বাংলাদেশ দলের সেটি না জানার বা বোঝার কারণ নেই। নিজেদের সীমাবদ্ধতা, প্রতিপক্ষের শক্তির জায়গা, সব ভাবনায় নিয়েই দল ঠিক করছে কৌশল। অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা জানালেন, সেই কৌশলের বড় অংশ জুড়ে থাকছে রক্ষণে জোর দিয়ে ইংলিশদের আক্রমণের পরিকল্পনায় ব্যাঘাত ঘটানো।
“ওরা অনেক শক্তি নিয়ে আমাদের আক্রমণ করবে, এটা খুবই স্বাভাবিক। অন্যান্য বড় দলের সঙ্গে ওরা করে থাকে এটা, আমাদের হয়তো আরও বেশি করবে। স্কিল দিয়ে বলুন বা শরীরী ভাষা দিয়ে। আমাদেরও সেটা আটকানোর পরিকল্পনা করতে হবে। অন্যান্য দলের সঙ্গে যত আক্রমণই করি, ইংল্যান্ডের সঙ্গে বেশি আক্রমণ করতে গেলে উল্টো ফল হওয়ার শঙ্কা বেশি থাকবে। কারণ ওরা শুরু থেকে শেষ, সবসময় আক্রমণ করে। ডিফেন্সই এখানে ভালো আক্রমণ।”
“আমাদের তাই মনে হয়, ইংল্যান্ড যে ধরনের ক্রিকেট খেলে, ওদের সঙ্গে ডিফেন্সই অফেন্স হবে। ওরা শেষ চার বছরে যে কোনো অবস্থায়ই আক্রমণাত্মক মানসিকতায় থাকে। সবসময় চায় সাড়ে তিনশ বা চারশ রানের কাছাকাছি করতে, যেন অন্য দলের সুযোগ না থাকে। আমাদেরও আলোচনা হয়েছে যে ইংল্যান্ড সবসময় আগ্রাসী থাকবে, তো ওদের ক্ষেত্রে ডিফেন্স অনেক সময় অফেন্স।”
ইংল্যান্ডে যে ধরনের উইকেটে খেলা হয়, আউটফিল্ড যত গতিময়, বেশিরভাগ মাঠ যতটা ছোট, তাতে তিনশ রান তাড়া করা খুব কঠিন নয়। বাংলাদেশ দল ভাবছে সেভাবেই। আক্রমণের চেষ্টায় ইংলিশদের ফাঁদে ফেলা যাবে, বিশ্বাস মাশরাফিদের। আর তিনশর আশেপাশে ইংল্যান্ডকে থামাতে পারলে থাকবে সুযোগ।
“ইংল্যান্ডে তিনশ রান করলেও সবসময় সুযোগ থাকে তাড়া করার। কোনো বোলার ওভারপ্রতি ছয় রান দিয়ে গেলেও ভালো বোলিং। সেটা করতে গিয়ে একটি-দুটি উইকেট ওদের পড়লেও আমরা আক্রমণে যেতে পারব। ইংল্যান্ড অবশ্যই আক্রমণ করবে, আমাদের মানসিকভাবে শক্ত থাকতে হবে। আমরা কিভাবে ওদের শক্তির জায়গায় না নিয়ে দুর্বলতার জায়গা কতটা কাজে লাগাতে পারি, সেই চেষ্টা করতে হবে।”