সালমান শাহর ১৯ তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

Spread the love

Salman-Shah-600x301বিনোদন ডেস্ক : বাংলাদেশিদের কাছে নায়ক শব্দের সমার্থক এখনও সালমান শাহ। তার মৃত্যুর দেড়যুগ পূর্ণ হল আজ ৬ সেপ্টেম্বর। ১৯৯৬ সালের এই দিনে চিরবিদায় নেন তিনি। তবে এখনও বিন্দুমাত্র ভাটা পড়েনি তার আকাশছোঁয়া জনপ্রিয়তায়। চরিত্র রূপায়ণে সাবলীলতা ও নৈপুণ্য এবং কেতাদুরস্ত মনোভাবের সমন্বয়ে সময়কে ছাপিয়ে যেতে পেরেছিলেন তিনি। তার চোখ, মুখ, চুলের ছাঁট আবহমান সুদর্শন পুরুষের সৌন্দর্যের প্রতীক।

১৯৭১ সালে সিলেট জেলায় অবস্থিত জকিগঞ্জ উপজেলায় জন্ম নেওয়া এই তারকার বাবার নাম কমর উদ্দিন চৌধুরী ও মাতা নীলা চৌধুরী। মা-বাবার বড় ছেলে ছিলেন সালমান শাহ। তার দাদার বাড়ি সিলেট শহরের শেখঘাটে আর নানার বাড়ি দারিয়া পাড়ায়। যে বাড়ির নাম এখন ‘সালমান শাহ হাউস’। সালমানের স্ত্রীর নাম সামিরা। খুলনা বয়রা মডেল হাইস্কুল শেষে ১৯৮৭ সালে ধানমন্ডির আরব মিশন স্কুল থেকে এসএসসি পাশ করেন সালমান। পরবর্তীতে আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজ থেকে এইচএসসি এবং মালেকা সায়েন্স কলেজ থেকে স্নাতক শেষ করেন তিনি।

‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ দিয়ে শুরু, এরপর মাত্র তিন বছরে ২৭টি ছবিতে অভিনয় করে অমর হয়ে গেছেন সালমান শাহ। মাত্র চার বছরের ক্যারিয়ারে এত হিট ছবি আর কোনো নায়ক দিতে পারেননি।

এর মধ্যে ১৪টিতেই তার নায়িকা ছিলেন শাবনূর। মৌসুমীর সঙ্গে বেশ কয়েকটি ছবিতে জুটি বাঁধেন তিনি। এ ছাড়া শাবনাজ, লিমা, শাহনাজ, শিল্পীর সঙ্গে জুটি বেঁধেছিলেন তিনি। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রভুবনে এই ক্ষণজন্মার আগমনটা অনেকটা ধূমকেতুর মতো।

সিলেটের শাহজালাল মাজারের পাশেই সালমানের সমাধি। তার কবরের সামনে এখনও প্রতিদিন ভিড় হয়। ১৬ বছরেও শোকের আগুনে ভাটা পড়েনি। নির্মাতারা বলেন, সালমানের বিকল্প দেড় যুগেও পাওয়া যায়নি। এসেছে অনেক, কিন্তু শেষ পর্যন্ত টিকে থাকতে পারছেন না কেউই।

সালমান শাহর মর্মান্তিক মৃত্যু এবং বাংলাদেশে তার প্রতিক্রিয়া ঠাঁই করে নিয়েছিল প্রভাবশালী আন্তর্জাতিক সাপ্তাহিক টাইম ম্যাগাজিনেও। টাইমের প্রতি সংখ্যায় আগের সপ্তাহটিতে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে ঘটেছে এমন কিছু ব্যতিক্রমী ও বিশেষ ঘটনা ছাপা হয় শহরের নাম উল্লেখ করে। ‘টক অব দ্য স্ট্রিটস’ শিরোনামের পাতায় স্থান পেয়েছিল সালমানের চিরবিদায়ের খবরের আলোড়ন সৃষ্টির খবর। মৃত্যুঞ্জয়ী সালমানের মৃত্যু নেই, হবেও না কোনোকালে। সালমান শাহর ১৮তম মৃত্যুবার্ষিকীতে বিনোদন বিভাগের পক্ষ থেকে রইলো তার প্রতি গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।

টুকিটাকি
* ১৯৮৫-৮৬ সালের দিকে হানিফ সংকেতের গ্রন্থনায় ‘কথার কথা’ নামে একটি ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান প্রচারিত হতো। এর কোনো একটি পর্বে ‘নামটি ছিল তার অপূর্ব’ নামের একটি গানের মিউজিক ভিডিও পরিবেশিত হয়। হানিফ সংকেতের স্বকণ্ঠে গাওয়া এই গান এবং মিউজিক ভিডিও দুটোই অনুষ্ঠানের জন্য বিশেষভাবে তৈরি হয়। একজন সম্ভাবনাময় তরুণ তার পরিবারের নানারকম ঝামেলার কারণে মাদকাসক্ত হয়ে মারা যায়, এই ছিল গানটির থিম। গানের প্রধান চরিত্র অপূর্বর ভূমিকায় অভিনয়ের মাধ্যমেই বিনোদন অঙ্গনে যাত্রা শুরু করেন সালমান।

* আবদুল্লাহ আল মামুনের প্রযোজনায় ‘পাথর সময়’-এ স্বল্প উপস্থিতির চরিত্রের মধ্য দিয়ে তিনি টিভি নাটকে অভিনয় শুরু করেন। তার অভিনীত আরেকটি ধারাবাহিক নাটক হলো ‘ইতিকথা’। একক নাটকগুলো হলো ‘আকাশছোঁয়া’, ‘দোয়েল’, ‘সব পাখি ঘরে ফেরে’, ‘সৈকতে সারস’, ‘নয়ন’, ‘স্বপ্নের পৃথিবী’। মজার বিষয় হলো, পরবর্তী সময়ে ‘স্বপ্নের পৃথিবী’ নামের একটি ছবিতেও দেখা গেছে তাকে।

* চলচ্চিত্র ও নাটকে অভিনয়ের পাশাপাশি বিজ্ঞাপনচিত্রেও মডেল হয়েছেন সালমান শাহ। এগুলো হলো মিল্ক ভিটা, জাগুয়ার কেডস, গোল্ড স্টার টি, কোকাকোলা, ফানটা।

* সালমান শাহর প্রকৃত নাম চৌধুরী সালমান শাহরিয়ার ইমন। চলচ্চিত্রে আসার পর তার পর্দা নাম রাখা হয় ‘সালমান শাহ। ব্যক্তিজীবনে ১৯৯২ সালের ১২ আগস্ট বিয়ে করেন তিনি। তার স্ত্রীর নাম সামিরা।

* ১৯৯৩ সালের রোজার ঈদে মুক্তি পায় ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ ছবিটি। সোহানুর রহমান সোহানের সালমান শাহ ও মৌসুমী অভিনীত ছবিটি রেকর্ড পরিমাণ ব্যবসা করে।

* ১৯৯৫ সালের শেষদিকে মুক্তিপ্রাপ্ত সালমান শাহ-লিমা জুটির অভিনীত ও জীবন রহমান পরিচালিত ‘প্রেমযুদ্ধ’ ছবিটির কথা সবাই জানে। এ ছবিতে আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের সুর ও সঙ্গীতে চিত্রনায়ক সালমান শাহ একটি গানের কণ্ঠ দেন। গানটির শিরোনাম ছিল ‘ও তুমি আমার জীবনে এক স্বপ্ন যেন’।
* জনপ্রিয়তা পাওয়ার পর সালমান শাহ একবার মুম্বাই গিয়েছিলেন। সেখানে বলিউড বাদশা শাহরুখ খানের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছিল তার।
সালমানকে নিয়ে নতুন আয়োজন
সালমান শাহর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ঢুলি কমিউনিকেশনস সপ্তাহব্যাপী চলচ্চিত্র প্রদর্শনের আয়োজন করছে। ৬ থেকে ১১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রাজধানীর বলাকা সিনেওয়ার্ল্ডে শুরু হবে ‘সালমান শাহ স্মরণ উৎসব-২০১৪’। সপ্তাহজুড়ে দেখানো হবে প্রয়াত এই অভিনেতার সাতটি জনপ্রিয় সাতটি ছবি। এর সঙ্গে আরও থাকছে তারকাদের উপস্থিতিতে সালমান শাহকে নিয়ে স্মৃতিচারণ। মৃত্যুকে শোক নয়, বরং সালমানের সৃজন উৎকর্ষতাকে অনুপ্রেরণায় পরিণত করে নতুন প্রজন্মের মধ্যে তার ব্যাপ্তি ছড়িয়ে দিতেই এ আয়োজন বলে জানিয়েছে ঢুলী কমিউনিকেশন্স।

এছাড়া আগামী ১৯ সেপ্টেম্বর সালমান শাহর জন্মদিনে বিকাল ৪টায় এফডিসি চত্বরে এক সাংস্কৃতিক উৎসব ও তারকা মেলার আয়োজন থাকছে। আয়োজন করছে সালমান শাহ স্মৃতি পরিষদ।

এক নজরে সালমান শাহ….

১. পুরো নাম : চৌধুরী সালমান শাহরিয়ার ইমন।

২. বাবা: কমর উদ্দীন চৌধুরী।

৩. মা: নীলা চৌধুরী

৪.ভাই-বোন : ২ ভাই।সালমানশাহ আর শাহরান

৫. স্ত্রী : ১৯৯২ সালের ১২ আগষ্ট ভালোবেসে বিয়ে করেন সামিরা কে।

৬. জন্ম : রবিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর , ১৯৭১।

৭.জন্মস্থান : সিলেটের জকিগঞ্জে।

৮. দাদার বাড়ি : সিলেট শহরের শেখ ঘাটে।

৯. নানার বাড়ি: সিলেটের দড়িয়া পাড়ায়।

১০.বর্তমানে বাড়ির নাম : ” সালমানশাহ হাউজ “।

১১.রাশি : বৃশ্চিক

১২.উচ্চতা : ৫ ফুট ৮ ইঞ্চি

১৩.অভিনীত ছবির সংখ্যা : ৪ বছরে অভিনীত ছবির সংখ্যা ২৭ টি।

১৪.প্রথম ছবি : সোহানুর রহমান সোহান পরিচালিত ” কেয়ামত থেকে কেয়ামত “।

১৫.ছবি মুক্তি : ১৯৯৩ সালের ২৫ মার্চ

১৬.প্রথম নায়িকা : মৌসুমী

১৭.সফল জুটি : সালমানশাহ-শাবনূর।

১৮.সবচেয়ে বেশি ছবি : শাবনূরের সাথে।(১৪ টি )

১৯.বিজ্ঞাপন : কোকাকোলা, মিল্কভিটা, জাগুরার কেডস, ফানটা।

২০.নাটক : সব পাখি ঘরে ফিরে, সৈকতে সারস, পাথর সময়, স্বপ্নের পৃথিবী

২১. শেষ ছবি : বুকের ভিতর আগুন

২২. শেষ ছবি মুক্তি : ১৯৯৭ সালের ৫ই সেপ্টেম্বর।

২৩ . যে বাসায় থাকতেন : নিউ ইস্কাটন রোডের, ইস্কাটন প্লাজার B এর ১১ ফ্লাটে।

২৪. মারা যান : শুক্রবার ৬ সেপ্টেম্বর, ১৯৯৬

২৫.যে হাসপাতালে নেয়া হয় : সালমানশাহ কে গলায় ফাঁস লাগানো অবস্থায় ফ্যানের সাথে ঝুলতে দেখা যায়।গলার রশি কেটে তাকে প্রথমে ” হলি ফ্যামিলি হসপিটালে ” নেয়া হয়।সেখানকার ডাক্তাররা ট্রিটমেন্ট করতে অপারগতা প্রকাশ করায় পরে ঢাকা মেডিকেলে নেয়া হয়।সেখানকার ডাক্তাররা তাকে মৃত ঘোষনা করেন।

২৬.কবর : সিলেটের পূন্য ভূমিতে হযরত শাহজালাল (রহ: ) এর মাজারের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন চিরসবুজ নায়ক সালমানশাহ।

২৭. ভক্তদের আত্মহত্যা : সালমানশাহর মৃত্যু শোক সহ্য করতে না পেরে বেশ কয়েক জন নারী ভক্ত আত্মহত্যা করেন।

২৮. তদন্ত রিপোর্ট: সালমানের মৃত্যুর তদন্ত রিপোর্ট আজ ও রহস্য জনক কারনে প্রকাশিত হয়নি।

২৯. স্মৃতিস্তম্ভ : যে মানুষ সিনেমা কে এতো কিছু দিলো তার জন্য বলতে গেলে কিছুই করেনি এফডিসি।স্মৃতিস্তম্ভ তো দূরে থাক।তাতে কি সালমানশাহ আছে প্রতিটি সিনেমা প্রেমীর অন্তরে।সেখান থেকে তাকে সড়ায় সাধ্য কার?

৩০. বর্তমান অবস্থা : সালমানশাহর ছোট ভাই বর্তমানে ইংল্যান্ড থাকেন।মা নীলা চৌধুরী সেখানেই বেশির ভাগ সময় থাকেন।মাঝে মাঝে বাংলাদেশে আসেন।বাকি সময়টুকু ঘর তালাবদ্ধ থাকে।তালাবদ্ধ ঘরটি যেন কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে, যেন বলছে ” কে তুমি উতসুক পথিক? থমকে দাঁড়াও! চোখ ভরে দেখে নাও এখানেই জন্মেছিলেন বাংলার চিরসবুজ নায়ক সালমানশাহ।”

সালমান শাহ অভিনীত যত ছবি
● কেয়ামত থেকে কেয়ামত (১৯৯৩)
● তুমি আমার (১৯৯৪)
● অন্তরে অন্তরে (১৯৯৪)
● সুজন সখী (১৯৯৪)
● বিক্ষোভ (১৯৯৪)
● স্নেহ (১৯৯৪)
● প্রেমযুদ্ধ (১৯৯৫)
● কন্যাদান (১৯৯৫)
● দেনমোহর (১৯৯৫)
● স্বপ্নের ঠিকানা (১৯৯৫)
● আঞ্জুমান (১৯৯৫)
● মহামিলন (১৯৯৫)
● আশা ভালোবাসা (১৯৯৫)
● বিচার হবে (১৯৯৬)
● এই ঘর এই সংসার (১৯৯৬)
● প্রিয়জন (১৯৯৬)
● তোমাকে চাই (১৯৯৬)
● স্বপ্নের পৃথিবী (১৯৯৬)
● সত্যের মৃত্যু নেই (১৯৯৬)
● জীবন সংসার (১৯৯৬)
● মায়ের অধিকার (১৯৯৬)
● চাওয়া থেকে পাওয়া (১৯৯৬)
● প্রেম পিয়াসী (১৯৯৭)
● স্বপ্নের নায়ক (১৯৯৭)
● শুধু তুমি (১৯৯৭)
● আনন্দ অশ্রু (১৯৯৭)
● বুকের ভেতর আগুন (১৯৯৭)


Spread the love

Leave a Reply