তাফিদার চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়ার রায়ে আপিল করবে না এন এইচ এস
বাংলা সংলাপ ডেস্কঃ যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশি পরিবারের সন্তান পাঁচ বছর বয়সী তাফিদা রাকিবের চিকিৎসা অব্যাহত রাখার পক্ষে দেশটির হাইকোর্ট যে রায় দিয়েছেন, তার বিরুদ্ধে আপিল করবে না বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এর ফলে বাবা-মার ইচ্ছা অনুযায়ী তাফিদাকে ইতালি নিয়ে আরও চিকিৎসার ব্যবস্থা করার ক্ষেত্রে আর কোনো আইনি বাধা রইল না।
মস্তিষ্কের জটিল সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে গত ৯ ফেব্রুয়ারি থেকে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন সে। তাফিদার জেগে ওঠার সম্ভাবনা নেই—এমন যুক্তিতে পূর্ব লন্ডনের রয়্যাল লন্ডন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তার লাইফ সাপোর্ট খুলে নিয়ে জীবনের অবসান ঘটাতে চায়। কিন্তু তাফিদার মা-বাবা নিজস্ব খরচে মেয়েকে ইতালির জেনোয়ার গ্যাসলিনি চিলড্রেন হসপিটালে নিয়ে চিকিৎসা করাতে চান। এ নিয়েই যুক্তরাজ্যের হাইকোর্টে শুরু হয় আইনি লড়াই।
গতকাল বৃহস্পতিবার আদালত মা-বাবার চাওয়ার পক্ষে রায় দেন। কিন্তু এর বিরুদ্ধে আপিলের উদ্যোগ নিয়েছিল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সে অনুযায়ী আজ শুক্রবার আপিল শুনানির জন্য আদালতের দিনক্ষণও নির্ধারিত ছিল। কিন্তু আজ সকালে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, তারা আপিল করবে না।
রয়্যাল লন্ডন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা অ্যালেস্টেয়ার চেশার এক বিবৃতিতে বলেন, ‘জেনারেল মেডিকেল কাউন্সিলের বিধি মোতাবেক তাফিদার বিষয়ে স্বতন্ত্র সিদ্ধান্ত জানার জন্য আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। চিকিৎসা বিজ্ঞান এবং মানবিক নৈতিকতার ভারসাম্য বিবেচনায় নিয়ে আদালত রায় দিয়েছেন। সতর্ক বিবেচনার পর আমরা এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
অ্যালেস্টেয়ার চেশার বলেন, ‘তাফিদা যত দিন আমাদের রোগী হিসেবে থাকবে তত দিন আমাদের চিকিৎসক ও নার্সরা তাকে সম্ভাব্য সর্বোচ্চ মানের চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাবে। পরিবার যদি বিকল্প কোনো চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে চায় আমরা তাদের সাহায্য করব।’
তাফিদার মা সেলিনা রাকিব প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের আর আদালতে দৌড়াতে হবে না—এটা একটা বড় মুক্তি। আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই তাঁরা তাফিদাকে ইতালি নিয়ে যেতে চান।
তাফিদার বাবা মোহাম্মদ রাকিব (৪৫) এবং মা সেলিনা রাকিব (৩৯)। তাঁদের বাড়ি সিলেটের শিবগঞ্জে। যুক্তরাজ্যে এই পরিবারের বসবাস পূর্ব লন্ডনের নিউহ্যাম এলাকায়।
তাফিদার চিকিৎসা অব্যাহত রাখার এ আইনি লড়াই যুক্তরাজ্যে বেশ আলোড়ন তোলে। কেননা এ মামলার রায়ের ওপর নির্ভর করছিল সন্তানের মঙ্গল বিবেচনায় কার সিদ্ধান্ত প্রাধান্য পাবে—বাবা-মা, নাকি রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষের।
দেশটিতে সন্তানের প্রতি বাবা-মায়ের দায়িত্বের বিষয়টি আইনে নির্দিষ্ট করে দেওয়া আছে। ১৯৮৯ সালের চিলড্রেন অ্যাক্ট অনুযায়ী, সন্তানের ভালো-মন্দের বিষয়ে বাবা-মা প্রায় সব সিদ্ধান্তই নিতে পারেন। এমনকি চিকিৎসার বিষয়টিও বাবা-মায়ের অনুমোদনের ওপর নির্ভর করে। কিন্তু সন্তানের প্রতি বাবা-মায়ের এমন অধিকার সকল ক্ষেত্রে একচ্ছত্র নয়। যদি কোনো রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষ মনে করে যে, বাবা-মায়ের সিদ্ধান্ত সন্তানের জন্য মঙ্গলজনক নয় এবং বাবা-মায়ের সঙ্গে সমঝোতায় ব্যর্থ হয়, তবে কর্তৃপক্ষ আদালতে যেতে পারে। তখন আদালত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেয় যে, সন্তানের জন্য কোনটি মঙ্গলজনক।