ম্যানচেস্টারে বিমানের অফিস কেন ?
বাংলা সংলাপ ডেস্কঃ যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টার বিমানবন্দরে বিমান চলাচল বন্ধ রয়েছে ৭ বছরের বেশি সময় ধরে। অথচ অফিস রয়েছে। রয়েছে স্টাফও। বেতন-ভাতা দেয়া হচ্ছে সরকারি কোষাগার থেকেই। অলাভজনক এবং লোকসানী বিমান কার্যালয়ের অফিসটি শহরের ব্যয়বহুল পোর্টল্যান্ড স্ট্রিটে। একজন রিজিওনাল ম্যানেজারসহ সেখানে কাজ করেন পাঁচজন কর্মকর্তা। বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বেসরকারি বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় কমিটি। কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী।
সম্প্রতি সংসদীয় কমিটির বৈঠকে প্রশ্ন তুলে বলা হয়, ম্যানচেস্টার বিমানবন্দরে বিমান চলাচল বন্ধ থাকার পরও কী কারণে সেখানে বিমানের একটি অফিস রয়েছে। একইসঙ্গে তাতে কি পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি হয়েছে তা জানাতে বলা হয়েছে।
বিষয়টিকে বিস্ময়কর বলে জানিয়েছে সংসদীয় কমিটি। কমিটির সদস্যরা মানবজমিনকে বলেন, ম্যানচেস্টারে বিমান অফিসের প্রতি মাসের সরাসরি বিক্রয় মাত্র ১৫ থেকে ২০ হাজার পাউন্ডের মতো। যদিও ওই অফিসের খরচই আছে মাসে ১২ হাজার পাউন্ডের বেশি। ১৯৭৭ সালে প্রতিষ্ঠিত এ অফিসটি থেকে অর্থাৎ গত ৪০ বছরের ইতিহাসে অত্যন্ত অলাভজনক কিংবা লোকসানি প্রতিষ্ঠান হিসেবেই পরিচিতি পেয়েছে। কমিটি জানিয়েছে, ম্যানচেস্টার অত্যন্ত ব্যয়বহুল শহর। তাই ওই এলাকায় এরকম প্রতিষ্ঠান থাকার কোন যৌক্তিকতাও নেই। যেখানে ম্যানচেস্টারস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশন ব্যয় কমাতে এবং কমিউনিটির স্বার্থে শহরের বাইরে নিয়েছে হাইকমিশনের কার্যালয়, সেখানে একটা লোকসানি প্রতিষ্ঠানের অফিস ব্যয়বহুল এলাকায়ই রাখা হয়েছে। কর্মকর্তারা অফিসে যাচ্ছেন আর আসছেন।
এদিকে সংসদীয় কমিটির এ ধরনের প্রশ্নের জবাব দিয়েছে বিমান কর্র্তৃপক্ষ। তারা অফিসটি রাখার পক্ষে নানা যুক্তি তুলে ধরেন। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস লিমিটেডের কোম্পানি সেক্রেটারি কাজী আতিকুর রহমান সংসদীয় কমিটিকে দেয়া লিখিত যুক্তিতে বলেছেন, বিমান ১৯৭৭ সাল থেকে ম্যানচেস্টার স্টেশনের কার্যক্রম শুরু করে একটি অফ-লাইন স্টেশন হিসেবে এবং এর বাণিজ্যিক কার্যক্রম অদ্যবধি চালিয়ে যাচ্ছে। ১৯৯৪ সালের ১৭ জানুয়ারি বিমান প্রথমবারের মতো ম্যানচেস্টার অপারেশন শুরু করে ৩টি ফ্লাইট পরিচালনা করে ট্রায়াল ভিত্তিতে। পরবর্তীতে ২০০৬ সালের জুলাই থেকে ২০০৭ সালের মার্চ পর্যন্ত ম্যানচেস্টার ফ্লাইট পরিচালনা করা হয়। এরপর ২০০৭ সালের এপ্রিল থেকে ২০১১ সালের অক্টোবর পর্যন্ত বিমান বহরে উড়োজাহাজ স্বল্পতার কারনে ম্যানচেস্টার ফ্লাইট পরিচালনা স্থগিত থাকে। লিখিত বক্তব্যে তিনি জানান, ২০১১ সালের নভেম্বর থেকে আবারও ২০১২ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ম্যানচেস্টারে ফ্লাইট পরিচালনা করা হয়। ২০১২ সালের অক্টোবর থেকে অদ্যবধি উড়োজাহাজ স্বল্পতার কারনে ম্যানচেস্টারে ফ্লাইট পরিচালনা স্থগিত করা হয়েছে। কিন্তু ম্যানচেস্টার বিমান অফিস থেকে এজেন্ট এবং সরাসরি যাত্রীদের নিকট টিকেট বিক্রিয় কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। রিপোর্টে যুক্তি তুলে ধরে তিনি জানান, ম্যানচেস্টার উত্তর যুক্তরাজ্য হিসেবে পরিচিতি। বিডি কমিশনের হিসাব অনুযায়ী, দেড় লাখেরও বেশি বাংলাদেশি/ব্রিটিশরা এ অঞ্চলে বসবাস করে।
তুলনামুলকভাবে অপারেটিং খরচ, গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং চার্জ হিথ্রো এয়ারপোর্টের তুলনায় যথেষ্ট কম। যুক্তরাজ্যের উত্তর অংশে স্থানীয় সম্প্রদায় এবং বাংলাদেশ ভিত্তিক যুক্তরাজ্যের বাসিন্দারা দীর্ঘদিন ধরে ম্যানচেস্টার থেকে সরাসরি ফ্লাইট দাবি করে আসছে। রাজস্ব প্রসঙ্গে তিনি জানান, ম্যানচেস্টার বিমান অফিস ১৯৭৭ সাল থেকে অদ্যবধি তার বিক্রয় কার্যক্রম চালিয়ে আসছে এবং মানচেস্টার বিমান অফিস তার নিজস্ব আয় থেকে সমস্ত খরচ বহন করার পরও বিমানকে অসাধারণ রাজস্ব প্রদান করে আসছে। রিপোর্টে তিনি ২০১২-১৩ অর্থ বছর থেকে ২০১৮-১৯ অর্থ বছর পর্যন্ত হিসাব তুলে ধরেন। পরে বলেন, ম্যানচেস্টার স্টেশনে বিমান অফিস থাকায় বিমানের ক্ষতি হয়নি বরং অফ লাইন স্টেশন হিসেবে বিমানের রাজস্বের পক্ষে ইতিবাচক অবদান রেখেছে। যুক্তি তুলে ধরে তিনি আরও জানান, লন্ডন ফ্লাইটের রুট অনুসারে ২৫০-৩০০ আসনের মধ্যে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কমপক্ষে সাপ্তাহিক ২টি ফ্লাইট অপারেশন শুরু হলে ম্যানচেস্টার দ্বারা আরও আয় করার সুযোগ রয়েছে। তিনি জানান, ফ্লাইট টেকসই এবং সর্বোচ্চ চাহিদার সঙ্গে ফ্লাইট চালানোর ক্ষেত্রে আমাদেরকে সিক্স ফ্রিডম যাত্রীকে আকর্ষন করার জন্য ঢাকা টু ব্যাংকক, সিসিইউ, কেটিএম, এসআইএন এবং কুয়ালালামপুর থেকে অবিলম্বে সংযোগ করতে হবে। রিপোর্টের শেষে তিনি জানান, বার্মিংহাম থেকে হিথ্রোর দুরত্ব ১১৪ মাইল এবং ম্যানচেস্টার থেকে হিথ্রোর দুরত্ব ১৯৭ মাইল। ম্যানচেস্টার যুক্তরাজ্যের উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত। ম্যানচেস্টার থেকে ফ্লাইট পরিচালনার কথা বিবেচনা করলে তা সমস্ত উত্তর যুক্তরাজ্য কভার করবে। অর্থাৎ ইউকে মিডল্যান্ড, বার্মিংহাম যেখানে ম্যানচেস্টার এবং বার্মিংহাম এর মধ্যে দুরত্ব মাত্র ৮৪ মাইল। সংসদীয় কমিটি বিমানের ওই যুক্তিতে সন্তুষ্ট নয় বলে জানিয়েছে। পাশাপাশি আর্থিক হিসাবের বিষয়টি যাচাই-বাছাই করার ঘোষণা দিয়েছে। কমিটির সদস্যরা বলেন, বিমান নিয়ে কমিটির কাছে অভিযোগের শেষ নেই।
অনেকেই আমাদের জানিয়েছেন-বিমান যেন একটা তুঘলকি শাসন ব্যবস্থার সাক্ষী। কেউ কিছু করতে পারে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পর্যন্ত বিভিন্ন সময় এ নিয়ে প্রচন্ড ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। বিমান কি এভাবেই চলতে থাকবে। বিমান নামক অসুস্থ হাতির হাত থেকে কবে মুক্ত হবে বাংলাদেশ? বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স হল বাংলাদেশের একমাত্র সরকারি এয়ারলাইন্স। বাংলাদেশি পতাকাবাহী এই বিমানটি প্রধানত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, ঢাকা থেকে কার্যক্রম পরিচালনা করে। এছাড়াও, শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, চট্টগ্রাম এবং ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, সিলেট থেকেও এর কার্যক্রম পরিচালিত হয়। আন্তর্জাতিক রুটে যাত্রী এবং মালামাল পরিবহনের পাশাপাশি আভ্যন্তরিন সেবাও প্রদান করে থাকে। বিশ্বের প্রায় ৪২টি দেশের সঙ্গে এর আকাশ সেবার চুক্তি থাকলেও মাত্র ১৬টি দেশে এর কার্যক্রম পরিচালনা করে।