লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জে ‘বাংলা বন্ড’, টাকায় আগ্রহ কেন
বাংলা সংলাপ ডেস্কঃ লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জে সোমবারের লেনদেন শুরুর মূহুর্তে ঘণ্টা বাজিয়ে অভিষেক হয়েছে ‘বাংলা বন্ডে’র।
আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের মুদ্রা টাকার সাথে যুক্ত এ ধরনের বন্ড এই প্রথম।
বাংলাদেশের বেসরকারি খাতে অর্থায়নের জন্য এক কোটি ডলারের সম-পরিমাণ এই বন্ড ইস্যু করেছে বিশ্বব্যাংকের সহযোগী সংস্থা আইএফসি (ইন্টারন্যাশনাল ফাইনান্স কর্পোরেশন) যারা উন্নয়নশীল দেশগুলোতে বেসরকারি খাতে ঋণ দেয়।
২০১৫ সালে বিদেশে বাংলাদেশের মুদ্রা টাকায় বন্ড ছাড়ার অনুমতি পায় আইএফসি। চার বছর পর বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ পূঁজি বাজারে সেই বন্ডের লেনদেন শুরু হলো আজ (সোমবার)।
তিন-বছর মেয়াদ বাংলা বন্ডে বিনিয়োগ হয়েছে এক কোটি ডলারের মত যা বাংলাদেশ টাকায় ঋণ দেওয়া হবে বাংলাদেশের প্রাণ কোম্পানির দুটো বিনিয়োগ প্রকল্পে।
তিন বছর মেয়াদী এই বন্ডে বিনিয়োগকারীরা প্রায় সাড়ে ছয় শতাংশ হারে সুদ পাবেন। প্রাণ কোম্পানিকে ঋণ দেওয়া হবে সাড় নয় শতাংশ হারে।
কেন এই বাংলা বন্ড
কিন্তু কেন বন্ড ছেড়ে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে বাংলাদেশের বেসরকারি খাতের জন্য ঋণের অর্থ জোগাড়ের প্রয়োজন হলো? এর ফলে লাভ হবে কী বাংলাদেশের?
বাংলা বন্ডের অভিষেক অনুষ্ঠানে ছিলেন বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী আ.হ.ম মুস্তাফা কামাল।
বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন, বাংলাদেশের শিল্প-কারখানায় দীর্ঘমেয়াদী ঋণ দেওয়া ব্যাংকগুলোর জন্য দিনকে দিন কষ্টকর হয়ে পড়েছে, ফলে সরকার বিকল্প বিনিয়োগের রাস্তা খুঁজতে চায়।
“প্রচুর পরিমাণে ঋণের টাকা অনাদায়ী পড়ে আছে। তাছাড়া, ব্যাংকগুলোকে স্বল্প সময়ের জন্য আমানত নিয়ে দীর্ঘমেয়াদী ঋণ দিতে হচ্ছে যেটা তাদের পক্ষে খুবই কষ্টকর।”
তিনি বলেন, বন্ড ছেড়ে বিনিয়োগ জোগাড় সারা বিশ্বেই একটি প্রচলিত পন্থা, বাংলাদেশে এখন সেই পথে পা দিচ্ছে।
মন্ত্রী বলেন, আইএফসি আগামী এক বছরে ১০০ কোটি ডলার মূল্যমানের বন্ড ছাড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। “ইতিমধ্যেই তিনশ থেকে চারশো মিলিয়ন ডলারের বন্ড নিয়ে তাদের সাথে আমাদের কথাবার্তা হচ্ছে।”
‘বিদেশ থেকে টাকা তোলার এখনই সুযোগ’
বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী মনে করেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির বর্তমান যে অবস্থা তাতে বিদেশ থেকে বিনিয়োগ আকর্ষণ করার সুযোগ তৈরি হয়েছে।
“আমাদের আর্থিক অবস্থা এখন অনেক মজবুত। সবচেয়ে বড় কথা যে সব বেঞ্চমার্কের ভিত্তিতে কোনো দেশের অর্থনীতির মূল্যায়ন তার অন্যতম হচ্ছে ঋণের পরিমাণ। বাংলাদেশে এখন জিডিপির তুলনায় ঋণের পরিমাণ মাত্রা ৩৪ শতাংশ যেটা পুরো বিশ্বের মধ্যে সর্বনিম্ন।”
মন্ত্রী বলেন, এই ‘ইতিবাচক’ বাস্তবতাকে কাজে লাগিয়ে বিদেশে থেকে ‘প্রতিযোগীতামূলক সুদে’ বেসরকারি বিনিয়োগ জোগাড়ের সুযোগ তৈরি হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি খাত বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ছিলেন বাংলা বন্ডের লিস্টিং অনুষ্ঠানে।
তিনি বলেন, এক কোটি ডলার দিয়ে সবে শুরু। টাকা বন্ড ছেড়ে বছরে ১০০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ বিনিয়োগ জোগাড়ের লক্ষ্যে কাজ চলছে। “আইএফসি আমাদের কথা দিয়েছে।”
জানা গেছে, যে পরিমাণ অর্থের বন্ড ছাড়া হয়েছিল, কেনার আগ্রহ ছিল তার চেয়ে ৩০ শতাংশ বেশি। কিনেছে বিদেশী প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা।
লন্ডনে বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনিম বিবিসিকে বলেন, প্রবাসী বাংলাদেশীরা যাতে বাংলা বন্ডে বিনিয়োগ করতে পারেন সে ব্যাপারে রোড-শো আয়োজনের মত পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য তিনি বাংলা বন্ডের ম্যানেজিং প্রতিষ্টানগুলোকে ( স্ট্যানচার্ট ব্যাংক এবং মেরিল লিঞ্চ) পরামর্শ দিচ্ছেন।
“প্রবাসীরা বিনিয়োগের সুযোগ খুঁজছে, এবং তারা কিনলে বন্ডের দামও বাড়বে।”
মুনাফা বেশি, তাই টাকায় বিনিয়োগে আগ্রহ
বিদেশে বন্ড ছেড়ে বাংলাদেশের বছরে জন্য একশ কোটি সমপরিমাণ ডলার যে আশাবাদ সালমান রহমান বা অর্থমন্ত্রী মুস্তাফা কামাল করেছেন, আইএফসি কর্মকর্তারা সে ব্যাপারে স্পষ্ট করে কিছু বলতে চাননি।
তবে আইএফসির সিনিয়র কর্মকর্তা কেশব গৌর বিবিসিকে বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং উঁচু হারে মুনাফা পাওয়ার সুযোগ নিয়ে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আগ্রহ রয়েছে।
“কোনো দেশের মুদ্রা যদি স্থিতিশীল হয় তাহলে তা লোভনীয় হবে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে সেটাই দেখা যাচ্ছে।”
তিনি বলেন, টাকা স্থিতিশীল, অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি হচ্ছে, মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে। বৈদিশিক মুদ্রার সাথে টাকার বিনিময় হার স্থিতিশীল
“এমন অবস্থা থাকলে যে কোনো বিনিয়োগকারী তার বিনিয়োগ থেকে ভালো মুনাফা পাবন। এখনকার বিশ্বে খুব কম জায়গাতেই বিনিয়োগ থেকে বড় মুনাফা আসে। সুতরাং ডলারে বিনিয়োগ না করে অনেক মানুষই টাকায় বিনিয়োগ করতে এগিয়ে আসবে।
তবে, মি. গৌর বলেন, সেই আগ্রহের মাত্রা কী হবে বা তা কতদিন থাকবে তা নির্ভর করবে কতগুলো বিষয়ের ওপর – বাংলাদেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা কতটা অব্যাহত থাকবে, অভ্যন্তরীণ সুদের হার কী হবে এবং কত ভালো বিনিয়োগ প্রকল্প সেখানে পাওয়া যাবে।
“এখনকার বিশ্বের বিনিয়োগের অভাব নেই, সমস্যা হচ্ছে ভালো প্রকল্প।”