ব্রেক্সিট কার্যকরকে প্রাধান্য দিয়ে কনজারভেটিভের নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা
বাংলা সংলাপ ডেস্কঃ ক্ষমতায় ফিরলে আগামী বছরের ৩১ জানুয়ারি ব্রেক্সিট (ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাজ্যের বিচ্ছেদ) কার্যকর করবেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। আজ রোববার কনজারভেটিভ দলের নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণাকালে ব্রেক্সিট কার্যকর করাকেই বেশি প্রাধান্য দিয়েছেন জনসন।
জনসন বলেন, ব্রেক্সিট নিয়ে গত কয়েক বছর ধরে যে বিতর্ক, বিলম্ব এবং বিভাজন বিরাজ করছে, তার সমাধান ছাড়া দেশকে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব নয়। দ্রুত ব্রেক্সিট সংকটের সমাধান করে যুক্তরাজ্যের পূর্ণ সক্ষমতা কাজে লাগাতে দেশকে এগিয়ে নিতে চান তিনি। একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় ফিরলে ২৫ ডিসেম্বরের আগেই ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এর সঙ্গে সম্পাদিত বিচ্ছেদ বিল (ব্রেক্সিট চুক্তি) পার্লামেন্টের অনুমোদনের জন্য উত্থাপন করবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
পার্লামেন্টে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকায় এবং নিজ দলের আইনপ্রণেতাদের একটি অংশের বিরোধিতায় গত তিন বছরেও ব্রেক্সিট কার্যকর করতে পারেনি ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভরা। দুই দফা ব্রেক্সিট কার্যকরের দিনক্ষণ রক্ষায় ব্যর্থ হয়ে পদত্যাগে বাধ্য হন সাবেক প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে। নতুন প্রধানমন্ত্রী জনসন ৩১ অক্টোবর বিচ্ছেদ কার্যকর করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনিও পার্লামেন্টে ব্রেক্সিট চুক্তি পাসে ব্যর্থ হন। ফলে ব্রেক্সিটের দিনক্ষণ তৃতীয় দফা পিছিয়ে যায়। নতুন তারিখ ২০২০ সালের ৩১ জানুয়ারি। তাই ব্রেক্সিট নিয়ে সংসদের অচলাবস্থা কাটাতে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় ফেরার লক্ষ্যে আগামী ১২ ডিসেম্বর মধ্যবর্তী নির্বাচনের পথ বেছে নিয়েছেন বরিস জনসন।
শুরু থেকেই এ নির্বাচনকে ব্রেক্সিট কার্যকর করার লড়াই হিসেবে রূপ দেওয়ার চেষ্টা করেছে কনজারভেটিভ পার্টি। ২০১৬ সালে ব্রেক্সিট গণভোটে দেশের মানুষ যে রায় দিয়েছে, তা কার্যকরের পক্ষে একমাত্র কণ্ঠ হিসেবে নিজেদের উপস্থাপন করছে। এ নির্বাচনে তাদের মূল স্লোগান ‘গেট ব্রেক্সিট ডান’ (আসুন ব্রেক্সিট কার্যকর করি)।
বিপরীতে প্রধান বিরোধী দল লেবারের বামপন্থী নেতা জেরেমি করবিন জনকল্যাণমূলক উদার রাষ্ট্র গড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে দারিদ্র্য ও অর্থনৈতিক বৈষম্যের মতো বিষয়গুলোকে সামনে নিয়ে এসেছেন। ফলে নির্বাচনকে ব্রেক্সিটময় রাখার কনজারভেটিভের কৌশল ইতিমধ্যে ধাক্কা খেয়েছে। যে কারণে করবিনকে মোকাবিলায় নির্বাচনী ইশতেহারে জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা, শিশুসেবা, শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণে বড় ধরনের বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি যুক্ত করতে বাধ্য হয়েছে।
প্রতিবার নির্বাচনে বড় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান এবং ধনী শ্রেণির জন্য কর হ্রাসসহ নানা সুবিধা ঘোষণা করলেও এবার সেটি মুখেও আনেনি। বরং প্রধানমন্ত্রী জনসন করপোরেশন ট্যাক্স হ্রাসের যে প্রতিশ্রুতি ইতিপূর্বে দিয়েছিলেন, তা আপাতত কার্যকর করবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন।
দলটি ২০৫০ সালের মধ্যে দেশকে কার্বন নিঃসরণমুক্ত করার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করবে। এ জন্য বাড়ি-ঘরের দৈনন্দিন জ্বালানি ব্যবস্থা পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তিতে রূপান্তর করতে ৬ দশমিক ৩ বিলিয়ন পাউন্ড অনুদানের ঘোষণা দিয়েছে।
করবিনের লেবার পার্টি অবশ্য ২০৩০ সালের মধ্যেই দেশকে কার্বন নিঃসরণমুক্ত করতে চায়। এ জন্য ২৫০ বিলিয়ন পাউন্ডের পরিবেশ তহবিল গঠনের ঘোষণা দিয়েছে তাঁরা।
কনজারভেটিভ দলীয় রাজনীতিক চ্যান্সেলর সাজিদ জাভিদ বলেন, তাঁদের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণের অর্থ কোথা থেকে আসবে এর পূর্ণাঙ্গ হিসাব ইশতেহারে দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, প্রতিশ্রুতিগুলো পূরণে কিছু ঋণের প্রয়োজন হবে। তবে পার্লামেন্টের ৫ বছরের মেয়াদ শেষে রাষ্ট্রের সার্বিক দেনা কমে আসবে।