অ্যালকোহলে নির্ভরশীল পুরুষরা স্ত্রীকে নির্যাতন করে বেশি

Spread the love

বাংলা সংলাপ ডেস্কঃ যেসব পুরুষরা অ্যালকোহল কিংবা মাদকের উপর নির্ভরশীল থাকে, অন্যদের তুলনায় নারীদের উপর পারিবারিক নির্যাতন চালানোর আশঙ্কা তাদের ছয় থেকে সাত গুণ বেশি থাকে। নতুন এক গবেষণায় উঠে এসেছে এমন তথ্য।

পিএলওএস-মেডিসিন নামে একটি অনলাইন জার্নালে প্রকাশিত গবেষণাটি ১৬ বছর ধরে সুইডেনে হাজার হাজার মেডিকেল রেকর্ড এবং পুলিশের তথ্য বিশ্লেষণ করে তৈরি করা হয়েছে।

এতে আরো বলা হয় যে, যেসব পুরুষের মানসিক অসুস্থতা বা আচরণগত সমস্যা রয়েছে তাদেরও সঙ্গীর প্রতি সহিংস হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। তবে এদের সবগুলোই মদ্যপান বা মাদক ব্যবহারের কারণে হয়েছে বলে গবেষণায় উল্লেখ করা হয়নি।

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক সিনা ফজল যিনি এই গবেষণার নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি বলেন যে, এই গবেষণার ফলাফল থেকে বোঝা যায় যে, উন্নত অষুধ এবং অ্যালকোহল চিকিৎসা সেবার মান উন্নয়ন এবং অপরাধীদের উপর নজরদারি বাড়িয়ে পারিবারিক নির্যাতন কমিয়ে আনা সম্ভব।

বিবিসি নিউজকে অধ্যাপক ফজল বলেন, “দোষীদের জন্য যে চিকিৎসা কর্মসূচিগুলো ছিল সেগুলো আজ পর্যন্ত খুব একটা কার্যকর হয়নি। আর এটি ঝুঁকির বিষয়গুলো সম্পর্কে মানসম্মত নথির অভাবকেই প্রতিফলিত করে।”

গবেষণায়, ১৯৯৮ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র, সুইডেন এবং লন্ডনের কিংস কলেজের বিশেষজ্ঞরা, ১ লাখ ৪০ হাজার পুরুষ যারা মদ্যপান কিংবা মাদক ব্যবহারজনিত সমস্যায় ভুগে চিকিৎসা নিয়েছেন তাদের তথ্য বিশ্লেষণ করেছেন।

গবেষকরা দেখেছেন যে, এদের মধ্যে অনেকেই পরবর্তীতে তাদের স্ত্রী, নারীবন্ধু কিংবা সাবেক নারী সঙ্গীকে হুমকি, আক্রমণ, কিংবা যৌন নির্যাতনের জন্য গ্রেফতার হয়েছেন।

তারা দেখেছেন যে, অ্যালকোহলে নির্ভরশীল ১.৭ ভাগ পুরুষ এ ধরণের অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছেন- যা একই পরিমাণ এবং বয়সের অন্য পুরুষদের তুলনায় ৬ গুণ বেশি।

মাদক ব্যবহারকারী পুরুষদের মধ্যে একই ধরণের অভিযোগ গ্রেফতার করা হয়েছে ২.১ ভাগ পুরুষকে। যা স্বাভাবিকের তুলনায় ৭ গুন বেশি।

যেখানে সন্দেহাতীতভাবেই, অ্যালকোহল এবং মাদক গ্রহণের সাথে পারিবারিক নির্যাতনের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে সেখানে এই গবেষণাকে সতর্কতার সাথে গ্রহণ করা উচিত, বলেন ইংল্যান্ড ও ওয়েলসের ভিকটিম কমিশনার ডেম ভেরা বাইর্ড।

তিনি বলেন: “অনেক অপরাধী যারা মদ্যপ অবস্থায় পারিবারিক নির্যাতন চালায়, স্বাভাবিক অবস্থায়ও তারা সহিংস এবং আধিপত্য বাদী হয়।”

“তবে অনেক পারিবারিক নির্যাতনকারীর যেহেতু অ্যালকোহল বা মাদকের সমস্যা থাকে না তাই পারিবারিক নির্যাতন প্রতিরোধ কর্মসূচী থেকে নজর সরিয়ে শুধু মদ্যপান এবং মাদকের অপব্যবহারের দিকে মনোযোগ দেয়াটা ঠিক হবে না।”

মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার সাথে সম্পর্ক কী?

গবেষকরা এক্ষেত্রে “সহোদরদের মধ্যে তুলনা” শুরু করেছেন এটা দেখতে যে, অ্যালকোহল এবং মাদক গ্রহণকারীদের পারিবারিক নির্যাতনের ক্রমবর্ধমান আশঙ্কাকে অন্যভাবে যেমন পারিবারিক ইতিহাস ও জিনগত কারণ দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায় কিনা।

তারা দেখেছেন যে, যারা অ্যালকোহল বা মাদক নির্ভরশীল তাদের মধ্যে এই আশঙ্কা, তার অন্য ভাই-বোন যারা এটি গ্রহণ করেন না তাদের তুলনায় বেশি থাকে।

“অ্যালকোহল এবং মাদকের ব্যবহার মানুষের প্রশমন করার ক্ষমতাকে কমিয়ে দেয়, যার কারণে এক পর্যায়ে সে কাছের সঙ্গীর সাথে সমস্যা সমাধানে সহিংসতাকে ব্যবহার করে,” গবেষণায় বলা হয়।

এক কিশোর বিয়ার খাচ্ছে

এতে, মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা এবং পারিবারিক কলহ ও নির্যাতনেরও সংশ্লিষ্টতা খুঁজে পেয়েছেন গবেষকরা। তারা দেখেছেন যে, যারা অ্যাটেনশন ডেফিসিট হাইপারঅ্যাকটিভিটি(এডিএইচডি), পারসোনালিটি ডিসঅর্ডার এবং চরম বিষণ্ণতায় ভোগেন তাদের এসব অপরাধে গ্রেফতার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

“যাদের মানসিক সমস্যা রয়েছে তারা তাদের মানসিক সমস্যার জটিল উপসর্গ থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায় হিসেবে অ্যালকোহল এবং মাদককে ব্যবহার করে,” গবেষণায় বলা হয়।

“এজন্যই অ্যালকোহল এবং মাদক জনিত সমস্যা অন্য মানসিক সমস্যা তৈরির ক্ষেত্রে প্রস্তুত করে যা পরবর্তীতে গিয়ে পারিবারিক নির্যাতনে রূপ নেয়।”


Spread the love

Leave a Reply