পূর্ব লন্ডনে হাউজিং প্রতারনার দায়ে খাদিজা বেগমের ১৬ মাসের জেল ও ১শ ১১ হাজার পাউন্ড জরিমানা
বাংলা সংলাপ ডেস্ক: টাওয়ার হ্যামলেটসের বাসিন্দা খাদিজা বেগমকে হাউজিং প্রতারনার জন্য জেলদন্ড দেয়া হয়েছে এবং একই সাথে তার কাছ থেকে ক্ষতিপূরন উদ্ধার করা হয়েছে ১শ ৫ হাজার পাউন্ড। এছাড়া মামলা পরিচালনার ক্ষতিপূরন বাবদ প্রায় ৬ হাজার পাউন্ডও তার কাছ থেকে আদায় করা হয়েছে।
টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের স্পেশালিস্ট হাউজিং ফ্রড টিম সফল তদন্ত শেষে এব্যাপারে মামলা দায়ের করলে স্নেয়ার্সব্রুক ক্রাউনকোর্ট গত ৯ জানুয়ারী তার বিরুদ্ধে এই রায় দেন। উল্লেখ্য যে, খাদিজা বেগম ২০০২ সালে কাউন্সিল হাউজিং এর জন্য আবেদন করেন। এসময় তিনি ডিক্লারেশন পেপারে সাইন করে জানান যে, তার কোথাও কোন বাড়ী নেই এবং এবিষয়ে তার অবস্থার পরিবর্তন হলে তিনি তা কাউন্সিলকে অবহিত করবেন।
পরবর্তীতে ২০০৬ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে ইলফোর্ডে তিনি তার ভাইয়ের সাথে মিলে ৩৩৭,৫০০ পাউন্ড দিয়ে ৪ বেডরুমের একটি বাড়ী কিনেন এবং কাউন্সিলকে তা অবহিত করেননি। এর ৩ মাস পর অর্থ্ াজুন মাসে হোয়াইটচ্যাপেলের কলিংউড হাউজে কাউন্সিল থেকে বসবাসের জন্য একটি ফ্ল্যাট লাভ করেন। এসময়ও তিনি ইলফোর্ডে ভাইয়ের সাথে যৌথভাবে তার বাড়ী থাকার বিষয়টি চেপে যান।
উল্লেখ্য যে, একক অথবা যৌথভাবে অন্য কোথাও বাড়ী থাকলে কাউকে সোশাল হাউজিং বরাদ্দ দেয়ার বিধান নেই এবং এটা তিনি উল্লেখ করলে কলিংউডস্ট্রীটের ফ্ল্যাটটি তাকে বরাদ্দ দেয়া হতো না। পরবর্তীতে ২০১৬ সালে খাদিজা বেগম রাইট টু বাই আইনের অধীনে ডিসকাউন্টে কলিংউড হাউজের ফ্ল্যাটটি কেনার জন্য কাউন্সিলের কাছে আবেদন করেন। কাউন্সিলের বাড়ী কিনতে হলে অন্য কোথাও একক বা যৌথভাবে বাড়ী থাকলে রাইট টু বাই অধিকার প্রযোজ্য হয়না।
খাদিজা বেগমের রাইট টু বাই আবেদন পর্যালোচনাকালে কাউন্সিলের হাউজিং ফ্রড টিম আবিষ্কার করে যে ইলফোর্ডে যৌথনামে তার একটি বাড়ী রয়েছে এবং তিনি কখনোই তা কাউন্সিলকে জানাননি। কাউন্সিলের কাছে বিভিন্ন সময়ে দেয়া ইন্টারভিউ এবং ডিক্লারেশনে তিনি তা ধারাবাহিকভাবে অস্বীকার করেন। কাউন্সিলের হাউজিং ফ্রড টিম তাকে তথ্য প্রমাণসহ চ্যালেঞ্জ করলে ২০১৭ সালের জুন মাসে তিনি কাউন্সিল ফ্ল্যাটটি র্ফে দেন।
পরবর্তীতে বিষয়টি আদালতে নিয়ে যাওয়া হলে ২০১৯ সালের ৫ ডিসে“র থেমস ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে খাদিজা বেগম তার বিরুদ্ধে আনীত হাউজিং প্রতারনার অভিযোগ শিকার করে নেন এবং এর প্রেক্ষিতে খাদিজা বেগমকে এবছরের ৯ জানুয়ারী স্নেয়ার্সব্রুক ক্রাউনকোর্টে ১৬ মাসের সাসপেন্ডেড জেল দন্ড প্রদান করা হয়।
একই সাথে মামলার খরচ বাবদ তাকে প্রায় ৬ হাজার পাউন্ড প্রদানেরও নির্দেশ দেয়া হয়। এছাড়া তার কারনে দীর্ঘদিন অন্য একটি পরিবার সোশাল হাউজিং থেকে বঞ্চিত হয় এবং ঐ পরিবারকে অস্থায়ী হাউজিংয়ে রাখার কারনে কাউন্সিলের খরচ হওয়া ১শ ৫ হাজার পাউন্ড খাদিজা বেগমের কাছ থেকে ক্ষতিপূরনবাবদ উদ্ধার করা হয়। এব্যাপারে নির্বাহী মেয়র জন বিগস তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, দ্রুতবর্ধনশীল জনসংখ্যার কারনে টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলে সোশাল হাউজিং এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। খাদিজা বেগম সত্যিকথা বললে আরেকটি পরিবার উপকৃত হতো।
কাউন্সিলের বাড়ীটি তাকে বরাদ্দ দেয়া হতো না। ডেপুটি মেয়র এবং কেবিনেট মে“ার ফর হাউজিং কাউন্সিলার সিরাজুল ইসলাম বলেন, এই ঘটনাটি প্রমাণ করেছে একজনের প্রতারনার কারনে আরেকজন ভুক্তভোগী হয়। বিশেষকরে প্রায় ২০ হাজার পরিবার যেখানে অপেক্ষামান সেখানে এটা কোন ভিকটিমলেস ক্রাইম হতে পারে না। তিনি বলেন, আমি আনন্দিত যে, ১শ ৫ হাজারেরও বেশী ক্ষতিপূরন উদ্ধার হয়েছে। এজন্য সংশ্লিষ্ট টিমকে অভিনন্দন। তাদের পরিশ্রমের কারনেই এটা সম্ভব হয়েছে। প্রমাণ হয়েছে নিয়মিতভাবেই বিষয়গুলো পরীক্ষা নীরিক্ষা করা হয় এবং যারা আইন ভাঙ্গেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়।