ব্রেক্সিট চুক্তিতে ইইউ নেতাদের স্বাক্ষর
বাংলা সংলাপ ডেস্ক: যে বিচ্ছেদ ঘিরে গত তিন বছরের অধিক সময় ধরে তুলকালাম চলল, এখন অনেকটা নীরবেই ঘটে চলেছে সেই বিচ্ছেদের আয়োজন। যুক্তরাজ্যের সঙ্গে বিচ্ছেদ কার্যকরের চুক্তিতে (ব্রেক্সিট চুক্তি) আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাক্ষর করেছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) শীর্ষ দুই নেতা—ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট আরসুলা ভনডার লিয়ন ও ইউরোপিয়ান কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট চার্লস মাইকেল। ৩১ জানুয়ারি ইউরোপের কেন্দ্রীয় সময় মধ্যরাতে (যুক্তরাজ্যে রাত ১১টা) ঘটছে আলোচিত এই বিচ্ছেদ।
আজ শুক্রবার ব্রাসেলসে ইউরোপা ভবনে কোনো রাখঢাক ছাড়াই তাঁরা বহুল আলোচিত এই বিচ্ছেদ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে চার্লস মাইকেল বলেন, ‘নিশ্চিতভাবে অনেক কিছুই বদলে যাবে। কিন্তু আমাদের বন্ধুত্ব টিকে থাকবে। অংশীজন এবং মিত্র হিসেবে আমরা নতুন অধ্যায় শুরু করতে যাচ্ছি।’
অন্যদিকে এক টুইট বার্তায় ভনডার লিয়ন বলেন, ‘চার্লস মাইকেল এবং আমি মাত্র ইইউর সঙ্গে যুক্তরাজ্যের বিচ্ছেদ চুক্তিতে স্বাক্ষর করলাম। এতে ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টে চুক্তিটি অনুমোদনের পথ উন্মুক্ত হলো।’
এখন যুক্তরাজ্যের পক্ষে চুক্তিতে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাক্ষর করবেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের সাংবিধানবিষয়ক কমিটি ৬০০ পৃষ্ঠার এই চুক্তিটি অনুমোদন করে। আগামী বুধবার (২৯ জানুয়ারি) ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টে চুক্তিটির চূড়ান্ত অনুমোদন হওয়ার কথা।
২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত গণভোটে যুক্তরাজ্যের মানুষ ইইউ জোট ছাড়ার পক্ষে মত দেয়। সমঝোতার ভিত্তিতে এই বিচ্ছেদ কার্যকর করতে সাড়ে তিন বছর ধরে উভয় পক্ষকে বহু কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। কাঙ্ক্ষিত ব্রেক্সিট চুক্তি সম্পাদনে ব্যর্থ হওয়ায় পদত্যাগে বাধ্য হন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে। উত্থান ঘটে ব্রেক্সিটপন্থী নেতা বরিস জনসনের। ক্ষমতার মেয়াদ শেষ হওয়ায় বিদায় নেন ইইউর দুই প্রভাবশালী নেতা জ্যঁ ক্লদ ইংয়কার এবং ডোনাল্ড ট্রাস্ক। চুক্তি সম্পাদনে ইইউর পক্ষে এই সমঝোতায় নেতৃত্ব দেন ইইউ কূটনীতিক মিশেল বার্নিয়ে। আজ চুক্তি স্বাক্ষরের যে ছবি প্রকাশিত হয়েছে সেখানে দুই নেতার পেছনে বার্নিয়েকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে।
চুক্তি অনুযায়ী ৩১ জানুয়ারি ইইউর সঙ্গে যুক্তরাজ্যের দীর্ঘ ৪৬ বছরের সম্পর্কের অবসান ঘটছে। দেনা-পাওয়া চুকাতে যুক্তরাজ্য ৩৩ বিলিয়ন পাউন্ড প্রদান করবে। তবে চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থা হিসেবে বাণিজ্যসহ বিদ্যমান অন্যান্য সম্পর্ক বজায় থাকবে। কিন্তু ইইউতে যুক্তরাজ্যের কোনো আসন আর থাকছে না। অর্থাৎ ৩১ জানুয়ারির পর জোটের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় ব্রিটিশরা আর অংশ নিতে পারবেন না।
এই চুক্তিতে যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত ইইউ নাগরিক এবং ইইউভুক্ত দেশে অবস্থানরত ব্রিটিশ নাগরিকদের অধিকার সুরক্ষা, আয়ারল্যান্ড সীমান্ত ব্যবস্থাপনার মতো জটিল বিষয়গুলোতে একমত হয়েছে উভয় পক্ষ। চুক্তির পাশাপাশি এক যৌথ রাজনৈতিক ঘোষণাপত্রে বাণিজ্য, নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন বিষয়ে দ্রুত নতুন সম্পর্ক গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়েছে।
তবে এখনো চুক্তিবিহীন বিচ্ছেদের ঝুঁকি রয়ে গেছে। কেননা, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন অন্তর্বর্তীকালীন সময়ের মেয়াদ না বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। আইন করে মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়টি নিষিদ্ধ করেছেন তিনি। ইইউ নেতারা বলছেন, মাত্র ১১ মাসে ভবিষ্যৎ সম্পর্ক নিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ চুক্তি প্রায় অসম্ভব। যুক্তরাজ্য মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির যে আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করেছে, সেটির বিষয়েও সন্দিহান ইইউ নেতারা।
২৫ ফেব্রুয়ারি ইইউ নেতারা ভবিষ্যৎ সম্পর্ক নির্ধারণের বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেবেন। এরপরই যুক্তরাজ্যের সঙ্গে ভবিষ্যৎ সম্পর্ক নির্ধারণের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু হবে।