২০ ফেব্রুয়ারি থেকে ‘দ্রুত ও সহজ’ পদ্ধতিতে ভিসা দেবে ব্রিটেন

Spread the love

বাংলা সংলাপ ডেস্ক: আগামী মাস থেকে ব্রিটেন বিজ্ঞানী, গণিতবিদ আর গবেষকদের দ্রুততম সময়ে ভিসা দেয়ার নতুন এক ব্যবস্থা চালু করতে যাচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন জানিয়েছেন, গ্লোবাল ট্যালেন্ট ভিসা নামে নতুন এই ভিসা ব্যবস্থা চালু হবে ২০শে ফেব্রুয়ারি থেকে।

এই ভিসা পাওয়ার ক্ষেত্রে যোগ্যতার শর্ত হলো – বিজ্ঞান, গণিত ও বিভিন্ন ক্ষেত্রে যারা বর্তমানে গবেষণার কাজ করছেন এবং যে প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন, সেটি যদি ব্রিটিশ কোন স্বীকৃত কর্তৃপক্ষের অনুমোদিত হয়, তাহলে তিনি এ ভিসা পাবেন।

বরিস জনসন বলেছেন, তিনি নিশ্চিত করতে চেয়েছিলেন যে “বিশ্বের সবচেয়ে মেধাবী মানুষদের জন্য যুক্তরাজ্যের দরজা খোলা।”

অন্য দুটো প্রধান রাজনৈতিক দল লেবার পার্টি এবং লিবারেল ডেমোক্রেটিকরা অবশ্য এই পরিকল্পনার বাস্তবায়ন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে।

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন

এ বিষয়ক ঘোষণায় মি. জনসন বলেন, “বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারে যুক্তরাজ্যের গৌরবজনক ইতিহাস রয়েছে। কিন্তু তাতে নেতৃত্ব দেয়া এবং ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য আমাদের মেধাবী মানুষ খুঁজে বের করা এবং গবেষণায় বিনিয়োগ চালিয়ে যেতে হবে।”

তিনি আরো বলেন, “এখন যেহেতু আমরা ইইউ ছাড়তে যাচ্ছি, তাই আমি সবাইকে জানিয়ে দিতে চাই যে বিশ্বের সবচেয়ে মেধাবী মানুষদের জন্য যুক্তরাজ্যের দরজা খোলা। তাদের আইডিয়াকে বাস্তবে রূপ দিতে আমরা আমাদের সমর্থন চালিয়ে যেতে প্রস্তুত।”

এর আগে গত মাসে মি. জনসনঘোষণা করেছিলেন যে সারা পৃথিবীর “বিজ্ঞানীদের চুম্বকের মত আকর্ষণ” করা হবে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রীতি প্যাটেল এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন।

তবে গ্লোবাল ট্যালেন্ট ভিসার অধীনে বছরে কত মানুষকে ভিসা দেয়া হবে, তা জানানো হয়নি।

শি অনউরা
শি অনউরা

এর আগে এ সংক্রান্ত যে ব্যবস্থা ছিল তাতে বছরে অনুর্ধ্ব দুই হাজার ভিসা দেয়া হতো।

লিব-ডেমরা বলছে, আগের ব্যবস্থায় কখনোই দুই হাজার লোককে ভিসা দেয়া হতো না এবং নতুন ব্যবস্থা বৈপ্লবিক কোন পরিবর্তন আনবে না।

দলটির মুখপাত্র ক্রিস্টিন জার্ডাইন বলছেন, “কোন ভিসার নাম বদলে দিলেই এবং নির্দিষ্ট একটি সংখ্যার সীমারেখা তুলে দিলেই তাকে সিরিয়াস কোন পরিকল্পনা বলা যায় না।”

ফেব্রুয়ারিতে চালু হওয়ার পর ভিসা আবেদন যাচাই ও প্রদানের কাজটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বদলে ইউকে রিসার্চ অ্যান্ড ইনোভেশন এজেন্সি বা ইউকেআরআই করবে।

এই প্রতিষ্ঠানটি গবেষণা খাতে সরকারি অর্থায়ন দেখভাল করে।

এর ফলে যোগ্য প্রার্থীদের আবেদন দ্রুত যাচাই এবং পুরো ভিসা প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা সম্ভব হবে।

যুক্তরাজ্যের বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণায় যুক্ত দুই লক্ষ ১১ হাজার মানুষের অর্ধেকই ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বাসিন্দা।

ব্রিটিশ ল্যাবে কাজের জন্য এখন তাদের ভিসা নেওয়ার দরকার হয় না।

যুক্তরাজ্য এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যকার অবাধ চলাচলের স্বাধীনতা এ মাসের শেষে অর্থাৎ ৩১শে জানুয়ারি শেষ হতে চলেছে।

অস্ট্রেলিয়ায় এখন যেমন পয়েন্ট-ভিত্তিক ভিসা সিস্টেম চালু রয়েছে, ব্রিটেন তেমনি একটি ব্যবস্থা ২০২১ সাল থেকে চালু করবে বলে জানানো হয়েছে।

ইতিবাচক বার্তা

ব্রেক্সিটের ফলে আন্তর্জাতিক কর্মসূচিগুলোতে যুক্তরাজ্যের অংশগ্রহণ কমে যাবে কিনা, সে নিয়ে নানা রকম আলোচনা রয়েছে।

কিন্তু তার মধ্যে নতুন এই কর্মসূচি যুক্তরাজ্যভিত্তিক গবেষণা প্রকল্পে বিশ্বের সেরা বিজ্ঞানী এবং গণিতজ্ঞকে ব্রিটেন নিয়ে আসতে পারবে বলে সরকার দাবি করছে।

ব্রেক্সিটের ফলে ব্রিটেনের মেধাবীদের একটি বড় অংশ যুক্তরাজ্য ছেড়ে চলে যাবেন এমন আশংকায় দেশটির গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে যারা ভিসা প্রক্রিয়া দ্রুত ও সহজতর করার জন্য লবি করে আসছিলেন, এই সিদ্ধান্তকে তাদের একটি জয় হিসেবে দেখা হচ্ছে।

বিশেষ করে, যেহেতু এই প্রক্রিয়ায় ইউকেআরআই যুক্ত থাকবে এবং বিশেষ প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতিকে যোগ্যতা হিসেবে গণ্য করা হবে, সে কারণে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে আলাদা করে কারো বৈজ্ঞানিক গবেষণার কাজটি যাচাই করতে হবে না।

ব্রিটেনের বৈজ্ঞানিক গবেষণা নিয়ে কাজ করে এমন প্রতিষ্ঠানগুলো, যেমন রয়্যাল সোসাইটি এবং রয়্যাল অ্যাকাডেমি অব ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মত প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে।

গত বছর বিবিসি নিউজ রিপোর্ট করেছিল যে ব্রেক্সিটের পর সরকারের প্রধান চিন্তার বিষয়গুলোর একটি হবে বিজ্ঞান ও গবেষণা।

চলতি বছরের মার্চে যখন নতুন জাতীয় বাজেট ঘোষণা হবে, তখন এ খাতে বেশ কয়েকশো’ কোটি পাউন্ড বিনিয়োগ বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।

ছায়া শিল্পকৌশল সংক্রান্ত বিভাগের মুখপাত্র শি অনউরা সরকারের বাড়তি পরিকল্পনাকে স্বাগত জানিয়েছেন।

তবে তিনি সতর্ক করে বলেছেন, “বৈজ্ঞানিক উদ্ভাবনের বিষয়টি বিজ্ঞান নিয়ে শীর্ষ গবেষক বা বিজ্ঞানীর কাছ থেকে নাও আসতে পারে, সেটা এই পরিকল্পনায় ভাবা হয়নি। নতুন ভিসা নিয়মের এই বিষয়টিকে পুরোপুরি বোঝার ঘাটতি থাকতে পারে।”

শি অনউরা বলেন, “এরাসমাস স্কিম বন্ধ করা এবং এশিয়া ও আফ্রিকার বিজ্ঞানীদের ভিসা দেয়া বন্ধ করা—বৈজ্ঞানিক গবেষণার ক্ষেত্রে এগুলোর নেতিবাচক প্রভাবের কথা মনে রাখতে হবে।”

তবে লিব-ডেম পার্টি মনে করিয়ে দিয়েছে, গবেষণার ক্ষেত্রে ধারাবাহিকতা একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার, যে কারণে ইইউ-এর সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজের বিষয়টি মাথায় রেখে এগুতে হবে।


Spread the love

Leave a Reply