করোনাভাইরাস: আসলেই কি আমেরিকার ষড়যন্ত্র ?
বাংলা সংলাপ ডেস্ক: চীনে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবকে কেন্দ্র করে ওয়েব দুনিয়ায় নানা ধরণের ষড়যন্ত্র তত্ত্ব ও ভুল তথ্য ছড়িয়ে পড়ছে, কিন্তু রাশিয়ায় এ ধরণের তত্ত্ব ও তথ্য প্রাইম টাইম বা মূল সংবাদ অনুষ্ঠানেও ছড়িয়ে পড়ছে।
যেকোনো বিষয়ে ক্রমাগত চাপ সৃষ্টি করা বা খোঁচা দেয়ার ক্ষেত্রে রাশিয়ার টেলিভিশন অনন্য: যাদের অন্যতম লক্ষ্য থাকে পশ্চিমা এলিটদের, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রকে দোষারোপ করা।
দেশটির প্রধান একটি টেলিভিশন নেটওয়ার্ক চ্যানেল ওয়ান, ভ্রেমিয়া বা ‘সময়’ নামে সন্ধ্যায় তাদের মূল সংবাদ অনুষ্ঠানের মধ্যে করোনাভাইরাসের ষড়যন্ত্র তত্ত্ব প্রচারের একটি আলাদা সময় বা স্লট বরাদ্দ করেছে।
যেখানে প্রতিবেদন তৈরির ধারাও বেশ অস্পষ্ট। দেখে মনে হবে যে তারা হয়তো ষড়যন্ত্র তত্ত্বের ভ্রান্ত ধারণা অপসারণ করছে, কিন্তু দর্শকদের মধ্যে তারা এমন একটি অনুভূতি দেয় যে, এতে হয়তো কিছুটা সত্যও থাকতে পারে।
ভ্রেমিয়ায় সম্প্রতি সবচেয়ে অযৌক্তিক যে তত্ত্বটি প্রচার করা হয়েছে তা হলো, করোনাভাইরাসের ‘করোনা’ শব্দটি নিয়ে। ল্যাটিন এবং রাশিয়ান-দুই ভাষাতেই করোনা শব্দের অর্থ মুকুট, তারা তাদের প্রতিবেদনে বলছে, এর থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, ডোনাল্ড ট্রাম্প এর সাথে কোনভাবে জড়িত।
আর এর কারণ হচ্ছে, তিনি সুন্দরী প্রতিযোগিতায় সভাপতিত্ব করেছেন এবং বিজয়ীদের হাতে মুকুট তুলে দিয়েছেন।
মূলত বিজ্ঞানীরা ভাইরাসের এমন নামকরণ করেছেন এগুলোর মুকুটের মতো আকারের কারণে, কিন্তু ভ্রেমিয়ার উপস্থাপক ট্রাম্পের জড়িত থাকার সম্ভাবনা এখনই বাতিল করে দেয়ার বিষয়ে সতর্ক করেছেন।
তিনি বলেন, “আপনি হয়তো বলবেন নির্বোধের মতো শোনাচ্ছে, এবং আমি আপনার সাথে একমতই হতাম যদি এটা আমাদের প্রতিবেদকের প্রতিবেদনে না থাকতো।
“জাতিগত বায়ো-ওয়েপন বা জৈবিক মারণাস্ত্র”
প্রতিবেদনে সহযোগী যেসব ভিডিও দেখানো হয় তাতে এটা স্বীকার করা হয় যে, মুকুটের এই তত্ত্ব “আজগুবি বা বানোয়াট”, কিন্তু একপাক্ষিকভাবে এমন একজন বিশেষজ্ঞের মতামত নেয়া হয় যিনি বলেন যে, চীনের করোনাভাইরাস কৃত্রিমভাবে বানানো হয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো কিংবা আমেরিকার ওষুধ কোম্পানিগুলো এর জন্য দায়ী।
প্রতিবেদনে ক্রেমলিনের মিডিয়া এবং কর্মকর্তাদের ছড়ানো কিছু পুরনো ও মিথ্যা তথ্য আবারো তুলে ধরা হয়। যাতে বলা হয়, জর্জিয়াতে যুক্তরাষ্ট্রের একটি পরীক্ষাগার রয়েছে যেখানে মানুষের উপর জৈবিক অস্ত্রের পরীক্ষা করা হয়।
এর পর চ্যানেল ওয়ানের প্রতিবেদক অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া কিছু ষড়যন্ত্র তত্ত্ব থেকে কিছু বক্তব্য তুলে ধরেন যেখানে বলা হয় যে, নতুন করোনাভাইরাস শুধু এশিয়ার মানুষদের আক্রান্ত করে এবং এটা এক ধরণের “জাতিগত বায়ো ওয়েপন বা জৈবিক মারণাস্ত্র।”
তিনি স্বীকার করেন যে, ওই তথ্য ভুল প্রমাণিত করার সুস্পষ্ট প্রমাণ রয়েছে। কিন্তু পরামর্শ হিসেবে তিনি বলেন: “যেসব বিশেষজ্ঞরা এ বিষয়ে মন্তব্য করতে যথেষ্ট সতর্ক থাকেন, তারাও এই সন্দেহকে উড়িয়ে দিচ্ছেন না।”
ভ্রেমিয়া পোকাসহেট (সময় বলে দেবে) নামে চ্যানেল ওয়ানের প্রধান রাজনৈতিক আলোচনা অনুষ্ঠানে করোনাভাইরাস নিয়ে ষড়যন্ত্র তত্ত্ব প্রচুর পরিমাণে থাকে। সংবাদ অনুষ্ঠানের তুলনায় এখনে আরো বেশি খোলাখুলি আলোচনা হয়।
তবে মূলভাব থাকে এটাই যে, বিভিন্ন ধরণের পশ্চিমা উপাদান – যেমন ওষুধ কোম্পানি, যুক্তরাষ্ট্র বা এর সংস্থাগুলো কোন না কোন ভাবে ভাইরাস তৈরিতে এবং তা ছড়িয়ে পড়তে সহায়তা করেছে, বা এটা নিয়ে অন্তত আতঙ্ক ছড়াতে সহায়তা করেছে।
এর উদ্দেশ্য হিসেবে তাদের প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে যে, “বড় বড় ফার্মা বা ওষুধ কোম্পানিগুলো” করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক তৈরি করে বড় ধরণের মুনাফা হাতিয়ে নিতে চায়, আর যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেত্রে বলা হচ্ছে, চীনের মতো ভূ-রাজনৈতিক প্রতিযোগীকে দুর্বল করতে এর অর্থনীতিতে আঘাত হানতে চাইছে তারা।
কর্মকর্তাদের রক্ত পরীক্ষা
টেলিভিশনের স্ক্রিন থেকে দৃষ্টি সরালে, বোঝা যায় যে, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব রাশিয়ার কর্মকর্তাদের মধ্যে মারাত্মক উদ্বেগ তৈরি করেছে।
চীনের সাথে রেল এবং বিমান চলাচল কমিয়ে আনা হয়েছে, এবং চীন থেকে ফেরত নেয়া রুশ নাগরিকদের সাইবেরিয়ার একটি হাসপাতালে দুই সপ্তাহের জন্য কোয়ারিন্টিনে রাখা হয়েছে।
করোনাভাইরাস থেকে মুক্তি পেতে মস্কোতে অবস্থিত একটি গির্জায় বিশেষ প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
ভাইরাস আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে দেশটির শীর্ষ পর্যায়েও।
রাশিয়ার দৈনিক ভেদোমস্তি তাদের প্রতিবেদনে বলছে, প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাওয়া সবার তাপমাত্রা পরীক্ষা করা হচ্ছে, যাকে মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ “সতর্কতামূলক পদক্ষেপ” বলে উল্লেখ করেছেন।