বাংলাদেশে আওয়ামী রাজত্বঃ যুবলীগ নেত্রীর ১২৯ দিনের হোটেল বিলই ৩ কোটি ২৩ লাখ টাকা

Spread the love

বাংলা সংলাপ ডেস্কঃ টানা ৪ মাস ৯ দিন গুলশানের একটি পাঁচ তারকা হোটেলের চারটি কক্ষ (একটি প্রেসিডেনশিয়াল স্যুটসহ) ভাড়া নিয়েছিলেন শামীমা নূর পাপিয়া। গত বছরের ১৩ অক্টোবর থেকে চলতি বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত হোটেলটির কক্ষ ভাড়া, খাবার, আনুষঙ্গিক খরচসহ তিনি মোট বিল পরিশোধ করেছেন ৩ কোটি ২৩ লাখ টাকা। প্রতিদিন হোটেলের বিল বাবদ গড়ে খরচ করেছেন আড়াই লাখ টাকা। রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে পাপিয়া এই তথ্য দিয়েছেন বলে তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান।

তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জিজ্ঞাসাবাদে পাপিয়া বলেছেন, গত বছরের ১২ সেপ্টেম্বর তাঁকে গুলশানের একটি পাঁচ তারকা হোটেলে খেতে নিয়ে যান যুব মহিলা লীগের এক নেত্রী। সেখানকার পরিবেশ দেখে তিনি মুগ্ধ হন। পরে আরেক দিন স্বামী মফিজুর রহমান ওরফে সুমনকে নিয়ে তিনি (পাপিয়া) হোটেলটির ভিআইপি স্যুটে থাকা-খাওয়াসহ বিভিন্ন খরচ সম্পর্কে জানতে যান। এরপর গত ১৩ অক্টোবর ওই পাঁচ তারকা হোটেলের চারটি স্যুট ভাড়া নেন। টানা ১২৯ দিন তিনি ও তাঁর সহযোগীরা বিভিন্ন সময়ে হোটেলটিতে অবস্থান করেন। ২২ ফেব্রুয়ারি ৩ কোটি ২৩ লাখ টাকা বিল পরিশোধ করে হোটেল ছেড়ে চলে যান তাঁরা। একটি গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন তাঁদের অনুসরণ করছেন, এটি বুঝতে পেরেই হোটেল ছেড়ে দেন তাঁরা।

হোটেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, একটি স্যুটের প্রতিদিনের ভাড়া ৫০ হাজার টাকার বেশি। আর পাপিয়া জিজ্ঞাসাবাদে বলেছেন, হোটেলের বিল একসঙ্গে নয়, বিভিন্ন সময়ে পরিশোধ করেছেন নগদ টাকায়।

অবশ্য বিমানবন্দর থানায় র‍্যাব-১-এর সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার মো. সাইফুল ইসলামের করা মামলায় বলা হয়, পাপিয়া ও সুমন গুলশানের পাঁচ তারকা হোটেলের ৪টি স্যুট ভাড়া নিয়ে মোট ৫১ দিন থেকেছেন। এতে তাঁদের বিল হয় ২ কোটি ৮ লাখ ৯২ হাজার টাকা। পাপিয়া হোটেলের কর্মীদের প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা বকশিশ দিতেন। অর্থের উৎস সম্পর্কে তাঁরা জিজ্ঞাসাবাদে র‍্যাবকে জানান, দীর্ঘদিন ধরে পাপিয়া ও সুমন দম্পতি অস্ত্র, মাদক, চোরাচালান, জাল নোটের কারবার, চাঁদাবাজি, তদবির-বাণিজ্য, জায়গাজমি দখল-বেদখল ও অনৈতিক বাণিজ্যের মাধ্যমে অর্থবিত্তের মালিক হন।

গুলশানের একটি পাঁচ তারকা হোটেলের প্রেসিডেনশিয়াল স্যুটসহ চারটি কক্ষ ভাড়া নিয়েছিলেন পাপিয়া।

পাপিয়া নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদে থাকা অবস্থায় বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার সময় ২২ ফেব্রুয়ারি হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আটক হন। ধরা পড়ার পর তাঁকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়।

রাজধানীর বিমানবন্দর থানায় করা মামলায় পাপিয়া ও তাঁর স্বামী সুমনকে ১৫ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গতকাল ছিল রিমান্ডের ষষ্ঠ দিন। এদিকে বিমানবন্দর থানায় করা জাল মুদ্রা ও অর্থ পাচারের মামলায় পাপিয়ার ব্যক্তিগত সহকারী সাব্বির ও কাজী তায়্যিবাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গতকাল পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। প্রথম দফায় পাঁচ দিনের রিমান্ড শেষে গতকাল তাঁদের আদালতে হাজির করে আবার রিমান্ডের আবেদন করে ডিবি।

তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জিজ্ঞাসাবাদে পাপিয়া বলেছেন, তিনি যে অবস্থানে পৌঁছেছিলেন, তাতে তাঁর মনে হয়েছিল, কেউ তাঁর কিছু করতে পারবে না। পেছন ফিরে তাকানোর সময় শেষ হয়ে গেছে। এত টাকা অবৈধভাবে আয় করলেও তিনি কখনো কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) নেননি। আর ব্যাংকে টাকা রাখলে তাঁকে বার্ষিক কর দিতে হবে। সে কারণে ব্যাংকে খুব বেশি টাকা রাখতেন না এবং আয়কর দেওয়ার বিষয় নিয়ে কখনো চিন্তা করেননি।

পাপিয়ার বিরুদ্ধে করা তিনটি মামলার তদন্ত তদারকি কর্মকর্তা ডিবির (উত্তর) উপকমিশনার মশিউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, অনেকের সঙ্গেই পাপিয়া ছবি তুলেছেন, ফোনে কথা বলেছেন। তাই বলে তাঁরা সবাই অপরাধী হবেন, এমনটা নয়। পাপিয়ার অপরাধ কর্মকাণ্ডের নেপথ্যে কারা, আসল সত্য কী, তা উদ্‌ঘাটনের চেষ্টা চলছে।


Spread the love

Leave a Reply