ব্রিটেনে “জাতীয় জরুরি অবস্থায়”নতুন বিধিনিষেধগুলি কী কী জেনে নিন …
বাংলা সংলাপ ডেস্কঃ করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে জনজীবনে কঠোর নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দিয়েছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী।
এগুলোর মধ্যে মানুষ শরীরচর্চার জন্য দিনে এক বার বের হতে পারবে, “অতি জরুরি প্রয়োজনে” কাজে যাওয়া-আসা করতে পারবে, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি কিনতে পারবে এবং স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সেবা নিতে যেতে পারবে।
জরুরি নয় এমন পণ্যের দোকান-পাট বন্ধের নির্দেশ দেয়া হয়েছে এবং একসাথে বসবাস করে না এমন ক্ষেত্রে দুই জনের বেশি মানুষ এক সাথে জমায়েত হওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
যুক্তরাজ্যে মৃতের সংখ্যা ৩৩৫ জনে পৌঁছেছে।
মানুষ যদি নির্দেশনা মেনে না চলে তাহলে পুলিশ তাদের বাধ্য করতে পারবে, জরিমানা করতে এবং সমাবেশ ভেঙ্গে দিতে পারবে, ডাউনিং স্ট্রিট থেকে এক টেলিভিশন ভাষণে এমনটা জানান প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন।
মিস্টার জনসন বলেন, দেশ “জাতীয় জরুরি অবস্থার” মুখে পড়েছে এবং জাতীয় স্বাস্থ্য সেবা-এনএইচএস-কে রক্ষা করতে এবং প্রাণ বাঁচাতে বাড়িতে থাকাটা দরকার।
তিনি জানান, অন্তত তিন সপ্তাহ এই নিষেধাজ্ঞা থাকবে এবং এটি প্রতিনিয়তই মূল্যায়ন করা হবে।
সরকারিভাবে জানানো হয় নিচের চারটির যেকোন একটি অবস্থা হলেই কেবল বাড়ির বাইরে বের হওয়া উচিত। এগুলো হলো…
•খাবার ও ওষুধের মতো অতি জরুরি পণ্যের দরকার হলে বের হওয়া যাবে। তবে কেনাকাটার জন্য যত কম সম্ভব বাইরে বের হওয়া উচিত।
•হাঁটা, দৌড়ানো কিংবা সাইকেল চালানোর মতো একটি শরীরচর্চার জন্য দিনে একবার বের হওয়া যাবে। এগুলো একা করাটাই ভাল কিংবা যার সাথে বাস করেন তার সাথে করা যাবে।
•সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন এমন কোন ব্যক্তির চিকিৎসা সেবা বা অন্য কোন সেবা দেয়ার লক্ষ্যে। যেমন, প্রয়োজনে ১৮ বছরের কম শিশুদের তাদের বাড়িতে পৌঁছে দেয়া। বিভিন্ন ক্ষেত্রের কর্মীরা কিংবা যাদের শিশুরা ঝুঁকিতে রয়েছেন বলে শনাক্ত করা হয়েছে তারা সন্তানদের স্কুলে নিয়ে যেতে পারবে।
•কাজে যাওয়া-আসা করা। তবে যে ক্ষেত্রে বাড়িতে বসে কাজ করা সম্ভব নয় শুধু সেসব কর্মীরাই এই সুযোগ পাবেন।
উপরের নির্দেশনাগুলো মেনে চলার সময়ও বাড়ি থেকে বাইরে যথাসম্ভব কম সময় কাটানো উচিত এবং যাদের সাথে তারা বাস করেন না এমন মানুষদের সাথে দুই মিটার দূরত্ব বজায় রাখা উচিত।
এছাড়া সব ধরণের সামাজিক কর্মকাণ্ড সরকার নিষিদ্ধ করেছে যার মধ্যে রয়েছে বিয়ে, ব্যাপ্টিজম ও অন্যান্য অনুষ্ঠান। তবে শেষকৃত্য করা যাবে।
যেসব ব্যবসা দরকারি নয় সেগুলো বন্ধ থাকবে। যার মধ্যে রয়েছে:
•রেস্তোরাঁ, ক্যাফে এবং কর্মক্ষেত্রের ক্যান্টিন- তবে খাবার পৌঁছে দেয়া এবং কিনে নিয়ে যাওয়া যাবে।
•সুপারমার্কেট এবং অন্য যেকোন দোকান যেখানে খাবার বিক্রি করা হয়, যেমন মার্কেটের স্টল
•ফার্মেসির মতো “হেলথ শপ”
•পেট্রোল স্টেশন, গ্যারেজ এবং গাড়ি ভাড়া দেয়ার ব্যবসা
•বাই-সাইকেলের দোকান
•হোম এন্ড হার্ডওয়্যার শপ
•লন্ড্রি ও ড্রাই ক্লিনিং
•পেট শপ
•সংবাদসূত্র এবং পোস্ট অফিস
•ব্যাংক
অন্যান্য বিভিন্ন সংস্থা যেমন লাইব্রেরি, জরুরি নয় এমন দোকান-পাট, খেলার মাঠ, বাইরে থাকা ব্যায়ামাগার এবং প্রার্থনালয় বন্ধ থাকবে।
শরীরচর্চার জন্য পার্কগুলো খোলা থাকবে কিন্তু মানুষ সংঘবদ্ধ হতে পারবে না।
নির্দেশনায় বলা হয়, কমিউনিটি সেন্টারগুলো খোলা থাকবে কিন্তু সেগুলো শুধু জরুরি স্বেচ্ছাসেবা বা জনগণের সেবায় ব্যবহার করা যাবে যেমন ফুড ব্যাংক বা গৃহহীন মানুষদের জন্য সেবা।
হোটেল, হোস্টেল, ক্যাম্পসাইট এবং ক্যারাভান পার্কগুলোও বন্ধ থাকবে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, করোনাভাইরাস আক্রান্ত যেকোন ব্যক্তি মাত্র ৫ দিনের মধ্যে আড়াই জনকে আক্রান্ত করতে পারে। তার মানে হচ্ছে ওই এক ব্যক্তির কারণে ৩০ দিনের মধ্যে চারশ মানুষ আক্রান্ত হতে পারে।
যদি একজন ব্যক্তি তার সামাজিক উপস্থিতি অর্ধেক কমিয়ে দেন তাহলে ৩০ দিনের মধ্যে তার থেকে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা নেমে আসে ১৫ জনে।
‘বাস্তব চ্যালেঞ্জ’
পুলিশ বাহিনী বলছে যে, তারা ব্যাপক হারে ফোন কল পাচ্ছে। যেখানে লোকজন নতুন নির্দেশনার আওতায় কী কী রয়েছে সে বিষয়ে সুস্পষ্ট তথ্য জানতে চাইছে।
নর্দাম্পটনশায়ার পুলিশের প্রধান কনস্টেবল নিক অ্যাডেরলি জনগণকে সতর্ক করে বলেছেন, তারা যাতে তার বাহিনীর ফোন লাইনে অতিরিক্ত ফোন করে তা বিকল করে না রাখে।
জাতীয় পুলিশ প্রধানদের কাউন্সিলের চেয়ার মার্টিন হেউইট বলেন, নতুন নিয়ম বাস্তবায়ন করতে সরকার এবং অন্যান্য সংস্থার সাথে মিলে কাজ করছেন তারা।
কিন্তু মেট্রোপলিটন পুলিশ ফেডারেশনের চেয়ারম্যান কেন মার্শ বলেন, লন্ডন জুড়ে পুলিশ কর্মকর্তাদের একটা বড় অংশের মধ্যে অসুস্থতা দেখা দিয়েছে। যার কারণে নতুন নির্দেশনা বাস্তবায়ন “আসলে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দেবে”।
“আমরা এটা নিয়ে কাজ করছি, কিন্তু আমি নিশ্চিত নই যে, এটা বাস্তবায়নে পর্যাপ্ত সম্পদ আমাদের রয়েছে কিনা,” তিনি বলেন।