অক্সফোর্ডের করোনা টীকার অগ্রগতি কতটুকু!
বাংলা সংলাপ ডেস্কঃকরোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি আবিস্কৃত টীকার ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা চলছে। রোববার বৃটেনের ব্যবসা বিষয়ক মন্ত্রী অলোক শর্মা জানিয়েছেন, এই টীকার প্রথম পর্যায়ের পরীক্ষা সফলতার সঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছে। এরই মধ্যে সরকার জানিয়েছে, পরীক্ষায় সফল প্রমাণিত হলে সেপ্টেম্বরের মধ্যে পুরো বৃটেনে এই টীকার তিন কোটি ডোজ পাওয়া যাবে। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি আবিষ্কৃত টীকার নাম সিএইচএডিওএক্সওয়ানএনসিওভি-১৯ (এর উচ্চারণ চ্যাডক্স ওয়ান)। সুস্থ মানুষকে কার্যকরভভাবে করোনা ভাইরাস থেকে সুরক্ষা দিতে পারে কিনা তার পরীক্ষা শুরু হয়েছে গত ২৪শে এপ্রিল থেকে।
কিভাবে এই পরীক্ষা কাজ করছে
ক্লিনিক্যালি পরীক্ষার জন্য গবেষকরা অক্সফোর্ড, সাউদাম্পটন, লন্ডন এবং ব্রিস্টলের ল্যাবরেটরির জন্য ১১০২ জন স্বেচ্ছাসেবীকে বাছাই করেছেন। তাদের ওপর এই টীকার অথবা মেনিনজাইটিস টীকার প্রকৃত একটি ডোজ প্রয়োগ করা হয়েছে।
১০ জন স্বেচ্ছাসেবকের একটি ছোট্ট গ্রুপের ওপর চার সপ্তাহের ব্যবধানে দুই ডোজ টীকা প্রয়োগ করা হচ্ছে।
অংশগ্রহণকারী কারা
এসব স্বেচ্ছায় অংশগ্রহণকারীর বয়স ১৮ থেকে ৫৫ বছরের মধ্যে। আগেই পরীক্ষা করে নিশ্চিত করা হয়েছে তাদের শরীরে কোভিড-১৯ ভাইরাস নেই। এ ছাড়া স্বেচ্ছাসেবীদের বাছাই করা হয়েছে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী, অন্তঃসত্ত্বা নন এবং বুকের দুধ পান করান না এমন নারী বা পুরুষকে। এ ছাড়া তাদের ওপর আগে কোনো রকম পরীক্ষা করা হয়নি এবং করোনা ভাইরাসের অন্য কোনো ওষুধ প্রয়োগ করেননি শরীরে।
এই টীকা কিভাবে কাজ করে
অন্য টীকার অভিজ্ঞতার ওপর ভিত্তি করে বিজ্ঞানীরা এই পরীক্ষাধীন টীকার ডোজ নির্ধারণ করেছেন। পরীক্ষার শেষ পর্যায়ের আগে স্বেচ্ছাসেবকরা জানতে পারবেন না তাদের দেহে চ্যাডক্স ওয়ান টীকা নাকি মেনিনজাইটিস টীকা দেয়া হয়েছে।
স্বেচ্ছাসেবীরা কি করবেন?
স্বেচ্ছাসেবী এসব ব্যক্তিকে দেয়া হয়েছে একটি ইলেকট্রনিক ডায়রি। ওষুধটি প্রয়োগের পর সাত দিন তাদের শরীরে যেসব লক্ষণ দেখা দেবে তা এতে লিপিবদ্ধ করতে হবে। পরবর্তী তিন সপ্তাহও তাদেরকে একই কাজ করতে হবে। এ সময়ে ফলোআপ ভিজিটে গবেষকরা নতুন করে স্যাম্পল বা নমুনা সংগ্রহ করবেন। তা পরীক্ষা করে স্বেচ্ছাসেবীর লিপিবদ্ধ করা লক্ষণের সঙ্গে মিলাবেন। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, যদি কোনো স্বেচ্ছাসেবীর মধ্যে এই গবেষণাকালে কোভিড-১৯ এর লক্ষণ ধরা পড়ে তাহলে তারা ক্লিনিক্যাল একটি টিমের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবেন, যারা নির্ধারণ করবেন ওই স্বেচ্ছাসেবী করোনায় আক্রান্ত কিনা। যদি দেখা যায়, ওই স্বেচ্ছাসেবী গুরুত্বর অসুস্থ তাহলে তাকে আরও চেকআপের জন্য হাসপাতালে ভর্তি করা হবে।
কখন জানা যাবে এই টীকা কাজ করছে কিনা
করোনা ভাইরাস বা কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়েছেন কিনা তা নির্ধারণ করা গবেষকদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। যে পরিমাণ স্বেচ্ছাসেবীর ওপর পরীক্ষা চালানো হয়েছে তার মধ্যে কতজন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন তা জানার চেষ্টা করবেন গবেষকরা। যদি দেখা যায় সংক্রমণের মাত্রা অনেক বেশি তাহলে গবেষকরা আরো কয়েক মাস সময় নিতে পারেন। হতে পারে তা ৬ মাস পর্যন্ত। বৃটেনে রোববার পর্যন্ত করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন কমপক্ষে ২ লাখ ৪৩ হাজার মানুষ। ওইদিন সকাল ৯টায় রিপোর্ট করা হয় যে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ৩১৪২ জন।
এই টীকায় কি আছে
সাধারণ ঠান্ডাজনিত ভাইরাস অ্যাডেনোভাইরাস, যা শিম্পঞ্জিকে সংক্রমিত করে, তার একটি দুর্বল সংস্করণ হলো চ্যাডক্স ওয়ান। এটাকে আরো আধুনিকায়ন করে তৈরি করা হয়েছে সিএইচএডিওএক্সওয়ানএনসিওভি-১৯। এর নামও দেয়া হয়েছে চ্যাডক্স ওয়ান।