সার্বজনীন স্বাভিমানের সুউচ্চ সোপান: মেষপালকের মানবাধিকার ইস্তেহার
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ কর্তৃক গৃহীত ১৯৪৮ সালের সার্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণাপত্রর (Universal Declaration of Human Rights) মধ্যদিয়ে প্রতি বছর ১০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক বা বিশ্ব মানবাধিকার দিবস পালিত হয়ে আসছে বিশ্বের প্রায় ২১০টি দেশে। এই ঘোষণাপত্রটি আজ বিশ্বের প্রায় ৫০০টি ভাষায় অনূদিত।এই ঘোষণাপত্রকে মানুষের মানবাধিকারের রক্ষাকবজ ও দলিল হিসেবে বিবেচনা করা হয়, যা বিশ্বের প্রতিটি মানব সন্তানের অবিচ্ছেদ্য অধিকারগুলির ঘোষণা দেয়। এই ঘোষণাপত্রে উল্ল্যেখিত অধিকারগুলোর জাতি হিসাবে বর্ণ, ধর্ম, লিঙ্গ, ভাষা, রাজনৈতিক বা অন্যান্য মতামত, জাতীয় বা সামাজিক অবস্থান, ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে প্রতিটি মানুষ অধিকারী।
কোভিড-১৯ এর কারণে বিশ্বে অসংখ্য সমস্যার সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলছে দারিদ্র্তা, অসমতা, বর্ণ বৈষম্য, নানা অজুহাতে শ্রমিক ছাঁটাই এবং ক্রমবর্ধমান মানবাধিকার লঙ্ঘনের এক অনন্য হিড়িক। জাতিসংঘ কোভিড-১৯ এর প্রভাব কাটিয়ে উঠার জন্য এবং মানবাধিকারের অগ্রগতি নিশ্চিত করণের লক্ষ্যে যেকোন ধরণের বৈষম্য দূরীকরণে পরস্পরের মধ্যে অসমতা চিহ্নিত করার, পরস্পরের মধ্যে অংশগ্রহণ ও সংহতি প্রকাশের, এবং টেকসই উন্নয়নের কথা বলে। জাতিসংঘ (United Nation) আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য ঠিক করেছে “অধিকার পুনুরুদ্ধারে-মানবাধিকারের পক্ষে দাঁড়ান(Recover Better – Stand Up for Human Rights)”
১২১৫ সালে প্রণীত ম্যাগনা কার্টার (The Magna Carta) মাধ্যমে পাশ্চাত্য দেশ হিসেবে সর্ব প্রথম ইংল্যান্ড মানুষের অধিকারের কথা বলেছে এবং রাজাকে আইনের অধীন করেছে। পরবর্তীতে ১৬২৮ সালের পিটিশন অফ রাইট (The Petition of Right) আরেক ধাপ এগিয়ে জনগণের অধিকার নির্ধারণ করে। ১৭৭৬ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা ঘোষণাপত্রের (The United States Declaration of Independence) মাধ্যমে মানুষের জীবনের অধিকার, স্বাধীনতা, সুখের অধিকারের কথা বলা হয়েছে। এর কিছুদিন পরেই ১৭৮৯ সালে ফ্রান্স কর্তৃক প্রণীত মানবাধিকার এবং নাগরিক ঘোষণাপত্রের (The Declaration of the Rights of Man and of the Citizen) মাধ্যমে স্বীকার করা হয় যে – সমস্ত নাগরিক আইনের আওতায় সমান। ১৯৪৮ সালে জাতিসংঘ (United Nations) কর্তৃক সার্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণাপত্রের দ্বারা প্রত্যেকটি মানুষের ৩০টি অধিকারের কথা উল্ল্যেখ করা হয়, এবং সেই বছর থেকেই প্রতি বছরের ১০ই ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস পালিত হয়ে আসছে বিশ্বের অগণিত দেশে।
কেন এই মানবাধিকার দিবস? মানবাধিকার ঘোষণার লক্ষ্য হলো জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে পৃথিবীর সমস্ত মানুষের জীবনযাত্রার একটি সাধারণ মান প্রতিষ্ঠা করা, এবং এই পৃথিবীর নাগরিক হিসেবে প্রত্যেকেই তার দাবিদার। জাতিসংঘের সমস্ত সদস্য দেশগুলিকে তাদের জনগণের জীবনযাত্রার সেই মানদণ্ডের নিশ্চয়তা বিধানে সচেষ্ট হতে উৎসাহিত করা হয়। কিন্তু, এটি সত্যি যে কাগজে কলমে জীবনযাত্রার মান, বর্ণবৈষম্য দূরীকরণ ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার কথা বলা হলেও আজও পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে সেই উত্তর আফ্রিকার দেশ আলজেরিয়া ও মিসরের কারাগার থেকে শুরু করে এশিয়ার অনেক দেশেও বিচার বহির্ভুত ও ন্যায়বিচার বঞ্চিত হত্যাকাণ্ড ও নিরপরাধের কারাভোগ বেড়েই চলেছে।
মানুষের অধিকারের কথা বলতে গিয়ে বর্ণবৈষম্য দূরীকরণ আন্দোলনের পথিকৃত মার্টিন লুথার কিং তার স্বপ্নের কথা বলেছেন (I have a Dream) ১৯৬৩ সালের এক ঐতিহাসিক ভাষণে।পাশাপাশি মানুষের অধিকার নিশ্চিতকরণে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউমান রাইটস ওয়াচসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা কাজ করে যাচ্ছে, রাখছে জোরালো ভূমিকাও। তবুও মানুষের অধিকার এখনও অধরাই রয়ে গেলো।
গত ৮০০ বছর আগে সর্বপ্রথম ইংল্যান্ড ম্যাগনা কার্টার মাধ্যমে মানুষের অধিকারের কথা বলা শুরু করে, অথচ আজ থেকে প্রায় ১৫০০ বছর আগে মক্কার মরুভুমিতে চড়েবেড়ানো এক মেষপালক এনে দিয়েছিলন মানবাধিকারহীন সমাজে মানুষের মৌলিক অধিকারের সাংবিধানিক নিশ্চয়তা। আমেরিকান লেখক মাইকেল এইচ হার্ট (Michael H. Hart) তার সাড়া জাগানো The 100: A Ranking of the Most Influential Persons in History বইতে সর্বাগ্রে স্থান দিয়েছেন মেষপালকের, আর সেই মেষপালক, মুহাম্মাদ (সঃ) মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায়, নিপীড়িত ও দুর্বলদের রক্ষায়, অত্যাচারী ও দুষ্ট লোকের হাত থেকে দুস্থদের অধিকার আদায় করার ও উপযুক্ত ব্যাক্তিদের কাছে তাদের অধিকার ফিরিয়ে দেয়ার জন্য মানব ইতিহাসের প্রথম মানবাধিকার সংস্থা “হিলফুল ফুজুল” গঠন করেন অল্প সংখ্যক তরুণ যুবকদের সমন্বয়ে। পরবর্তীতে বিশ্ব মানবাধিকারের মূর্ত প্রতীক নবী মুহাম্মদ (স) তার হজ্জের ভাষণে মানবাধিকারের ঐতিহাসিক নীতিমালা ঘোষণা করেন, যাকে বলা হয় মানবাধিকারের প্রথম সনদ। এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে তিনি এই বার্তাই দেশ বাসীকে দিয়েছিলেন যে, জাতি ও রাষ্ট্রের স্থায়িত্ব ও স্থিতিশীলতা নির্ভর করে মানবাধিকারের উপর, যেই রাষ্ট্রে মানুষের অধিকারের নিশ্চয়তা আছে, সেই রাষ্ট্র স্থিতিশীল ও স্থায়ী।
আজকের পশ্চিমাবিশ্ব রাসূল (স) এই মানবাধিকারের থিওরী অনেক আগেই উপলব্ধি করে তারা জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় কার্যকরী আইন ও নীতিমালা প্রণয়ন, এবং তাদের সংবিধানে সংযোজন ও বাস্তবায়নে যথেষ্ট উদারতার পরিচায়ক, অন্যদিকে মুসলিম বিশ্ব সেখানে একেবারেই নিশ্চুপ। গবেষণায় দেখা যায় বিশ্বের সমস্ত নামকরা মানবাধিকার সংস্থাগুলোর জন্ম পাশ্চাত্যের দেশসমূহে এবং এই সংস্থাসমূহ জনমানবের অধিকার রক্ষায় খুবই কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। পাশাপাশি এই দেশসমূহ মানুষের মৌলিক মানবাধিকার রক্ষার ক্ষেত্রে খুবই সচেতন। আর মুসলিম অধ্যুষিত দেশসমূহ মানুষের মানবাধিকার লঙ্ঘন, একনায়কতন্ত্র ও স্বৈরশাসন প্রয়োগে যেন সিদ্ধহস্ত।
এইতো মাত্র কিছুদিন আগে (জুন ২০২০) মার্কিন নির্বাচনের প্রচারণার সময়ে মার্কিন যুক্তরাস্ট্রের মিনিয়াপলিস অঙ্গরাজ্যে শেতাঙ্গ পুলিশ অফিসার ডেরেক চৌভিনের(Derek Chauvin) দ্বারা কৃঞ্চাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েডকে (George Floyd) হত্যার পর বিশ্বজুড়ে ব্ল্যাক লাইভ ম্যাটার্স আন্দোলন দেশে-বিদেশে জাতীয় শিরোনামে রূপ নেয়, এবং আন্তর্জাতিক বিশ্বকে নাড়া দেয়।প্রায় ১৫ থেকে ২৬ মিলিয়ন মানুষ এই আন্দলোনের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে। খোদ মার্কিন পুলিশ সদস্যরাও তাদের সম্মতি প্রকাশ করে। এই আন্দলোনটি পরিচালনা করে Black Lives Matter Global Network Foundation নামক সংস্থা, যারা মূলত আন্তর্জাতিক এবং নিয়মতান্ত্রিক বর্ণবাদ নির্মূল এবং পুলিশী মানবাধিকার লঙ্ঘন ও এর প্রতিরোধের বিপক্ষে। অন্যদিকে প্রায় সমসাময়িক কালে বাংলাদেশে ওসি প্রদীপ কর্তৃক সাবেক সেনা কর্মকর্তা মেজর সিনহাকে হত্যা এবং সিলেটে এস আই আকবর কর্তৃক নিরাপরাধ রায়হানকে হত্যা করা হলেও সরকার দৃশ্যত তেমন উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালনে ব্যর্থ হয়। পাশাপাশি সাধারণ জনগণও এই সমস্ত হত্যাকান্ডকে অন্যান্য হত্যাকাণ্ডের মতোই স্বাভাবিকভাবে মেনে নেয় এবং ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় পুলিশী নির্যাতনের বিরুদ্ধে জনমত তৈরী করা থেকে বিরত থাকে।
বিংশ এবং একবিংশ শতাব্দীতে মানবাধিকার সংগঠনগুলো মানুষের সমতার অধিকার, বর্ণবৈষম্য দূরীকরণ, মানুষে মানুষে ভেদাভেদ দূরীকরণ, জীবন রক্ষার অধিকার, স্বাধীনতা এবং ব্যক্তিগত সুরক্ষার অধিকার, নির্যাতন ও অবমাননাকর আচরণ থেকে মুক্তির অধিকার, আইনের সমতার অধিকার, সুষ্ঠু ও ন্যায় বিচারের অধিকার, গোপনীয়তার অধিকার, বিশ্বাস ও ধর্মের স্বাধীনতার, নারী স্বাধীনতার, আবার মতামতের অধিকার নিয়ে কাজ করে থাকে বা এই সমস্ত অধিকারগুলো প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করে চলেছে।
প্রায় দেড়হাজার বছর আগে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব, আইনজ্ঞ, মানবাধিকার নেতা, ও রাষ্ট্র নায়ক নবী মুহাম্মদ (স) অধিকার বঞ্চিত আইয়্যামে জাহিলী যুগের অবসান ঘটিয়ে মানুষের মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন। তিনি অন্ধকার যুগের অবসান ঘটিয়ে দুর্বল ও অত্যাচারিতের অধিকার প্রতিষ্ঠা করে নুতুন এক ভোরের সূচনা করেছিলেন। অনিতা রায় (Anita Rai, Muhammad: Uncovering the True Story) নামক বইতে বলেছেন – “নবী মুহাম্মদের ধর্মের দিকে আহ্বানের পদ্ধতি ছিল খুবই স্পষ্ট ও সহজবোধ্য। তিনি আইন করেছিলেন যেখানে অনগ্রসর, অসহায়, গরিব, ধনী, বর্ণ ও লিঙ্গ সবাই সমান আল্লাহর দৃষ্টিতে। তাই সেখানে কোনো বৈষম্য থাকবে না”।
নবী মুহাম্মদ(সঃ) ১০ম হিজরীর যিলহজ মাসের ৯ তারিখে আরাফার ময়দানে এক ঐতিহাসিক ভাষণ দেন যাকে বিদায় হজ্জের ভাষণ বলে আখ্যায়িত করা হয়। সেই বক্তব্যে তিনি অত্যন্ত চমকপ্রদ ভাবে প্রায় ২৫টির মতো মানুষের মৌলিক মানবাধিকার, জীবন ঘনিষ্ঠ উপদেশ এবং নির্দেশনা দেন, যা আজও বিশ্ববাসীর নিকট মানবাধিকার রক্ষায় প্রেরণার বাতিঘর হয়ে আছে। এর মধ্যে বর্ণ বৈষম্য বিলুপ্তিকরন, নারীর অধিকার নিশ্চিত করা, অর্থনৈতিক বৈষম্য দূরীকরণ, অসমতা দূরীকরণ; কি নেই?
বর্ণবৈষম্যের বিলুপ্তি – “সমস্ত মানবজাতি আদম ও হাওয়া (আ) থেকে সৃষ্টি হয়েছে।কোন আরব অনারবের উপর শ্রেষ্ঠত্ব রাখেনা এবং কোন অনারব আরবের চেয়ে শ্রেষ্ঠত্ব রাখেনা, এবং ধার্মিকতা ও সৎকর্ম সম্পাদন ব্যতীত কোনো শ্বেতাঙ্গ কৃষ্ণাঙ্গের উপর এবং কোনো কৃঞ্চাঙ্গ শ্বেতাঙ্গর উপর শ্রেষ্ঠত্ব পাবেনা। বর্ণবৈষম্য দূরীকরণে এলিট কুরাইশদের বিরুদ্ধে মানবতার নবীর (স) সেই সাহসী ভূমিকা ইতিহাসে আজও দেদীপ্যমান।
নাগরিকত্বের ভিত্তিতে, ভাষার ভিত্তিতে, রঙের কারণে, লিঙ্গের জন্য, মানুষের আকৃতির কারণে, এলাকার ভিত্তিতে, বংশের ভিত্তিতে, শিক্ষার কারণে, নেতৃত্বের কারণে, অর্থনৈতিক কারণে, বয়সের ভিত্তিতে, সক্ষমতার কারণে, সুস্থতার-অসুস্থতার জন্য, গোত্র বংশের কারণে, পারিবারিক ঐতিহ্যের কারণে, ধর্মের কারণে, প্রতিশোধ-প্রতিহিংসার অসারতার জন্য, মাতৃত্তের জন্য অর্থাৎ মানব জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্র থেকে বৈষম্য দূরীকরণের কথা তিনি মুহাম্মদ (স) সর্ব প্রথম উচ্চারণ করেন। আজ বিংশ/একবিংশ শতাব্দীতে এসে মানুষ নিজ নিজ অধিকার বুঝে পাওয়ার জন্য, বৈষম্য বিলুপ্তির জন্য আন্দোলন সংগ্রাম করছে। ইসলামে বৈষম্য দূরীকরণের যে বানী উচ্চারিত হয়েছে তা শুধু মুসলিমরাই স্বীকার করে তা কিন্তু নয়, বরং ভিন ধর্মের লোকেরাও ইসলামের বৈষম্য দূরীকরণের অবস্থান অকপটে বলে থাকেন। ঠিক তেমনই একজন প্রফেসর ভেগলেয়ারি (Professor Vaglieri) তার An Interpretation of Islam নামক গ্রন্থে বলেছেন “ইসলাম মানুষের মধ্যে সমতা বিধান করে। কোন মুসলিম অন্য মুসলিম থেকে তার জন্মের জন্য বা অন্য কোন কারনে পৃথক বা শ্রেষ্ঠ হবে না বরং তার খোদাভীরুতা, তার ভালো কর্ম, তার ন্যায়নীতি ও প্রজ্ঞার জন্যই পৃথক বলে বিবেচিত হবে।”
আজকের পৃথিবী বৈষম্য দূরীকরণের যে আন্দোলন করছে তা যেন ইসলামের সেই শাশ্বত বানী -সমস্ত মানবজাতি এক আদম ও হাওয়া (আ) থেকে সৃষ্টি; তারই পুনর্কথন মাত্র।
নারীর অধিকার ও স্বাধীনতা – আরবের অন্ধকার যুগের অবসান ঘটিয়ে এক নতুন সূর্যোদয়ের সূচনা করেন মানবতার ইতিহাসের প্রথম মানবাধিকার আন্দোলের অগ্রদূত মুহাম্মাদ (সঃ)। আরবের কালো অধ্যায়ের কথা মানুষ আজও ভুলেনি যেখানে নারীকে জীবন্ত কবর দেওয়া হতো, যেখানে ছিলোনা নারীর কোনো অধিকার। সেই কালো অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটিয়ে নারীকে মানুষ হিসেবে তারও অধিকার আছে, একটা জীবন আছে, বাঁচার অধিকার আছে, আছে শিক্ষা, সুস্বাস্থ্য ও চিকিৎসা পবার অধিকার, ব্যবসা করার অধিকার, আছে চাকরির অধিকার, রয়েছে সম্মান প্রাপ্তির অধিকার, আছে সম্পত্তির অধিকার, রয়েছে কথা বলার অধিকার, রয়েছে পছন্দের অধিকার, রয়েছে মতামত দেয়ার অধিকার, নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিকার পাওয়ার অধিকার এমনকি বিবাহ বিচ্ছেদের অধিকার। ইসলামই সর্বপ্রথম স্বীকার করে মানুষ হিসেবে পুরুষের পাশাপাশি নারীরও অধিকার, সম্মান ও মর্যাদা রয়েছে।পৃথিবীতে আজও অনেক সমাজ, শ্রেণী-গোষ্ঠী ও ধর্ম রয়েছে যেখানে নারীর অধিকার অস্বীকৃত বা অবহেলিত, অথবা শুধু কাগজেই আছে বাস্তবে নেই।
স্কটিশ ইতিহাসবিদ ও প্রাচ্যবিদ স্যার এইচ এ আর গিব (Sir H A R Gibb) তার Whither Islam নামক গ্রন্থে বলেছেন যে, ‘অতীতের ইসলামী সমাজে নারীদের অধিকার ও স্বাধীনতার গ্যারান্টি দেওয়ার দুর্দান্ত ট্র্যাক রেকর্ড রয়েছে। তাঁর মতে, ইসলামই একমাত্র ধর্ম যা মহিলাদেরকে সমতা প্রদানের একটি সফল রেকর্ড করেছে এবং ইসলাম এখনও বিবাদী গোষ্ঠীসমুহ এবং ধর্মচারণকে একত্রিত করার ক্ষমতা রাখে’।
তদুপুরি বিভিন্ন নারীবাদী সংগঠনগুলো স্বাধীনতা ও অধিকার আদায়ের নামে নিজেদেরকে বিধি বহিঃর্ভূত কার্যকলাপে জড়িয়ে প্রকারান্তে নিজেরদেরই সম্মান ও মর্যাদাহানী করে থাকে, শুধু তাই নয় বরং নারীর সত্যিকার অধিকার হৃদয়ঙ্গম করতে নিজেদের অসাড়তা ও দেউলিয়াত্ব প্রকাশ করে থাকে।
মানবধিকারহীন সমাজে নিজ অধিকার অর্জনে, নৈতিক সমাজ বিনির্মানে, বঞ্চিতের অধিকার পুনরুদ্ধারে আমাদেরকে ফিরে যেতে হবে মেশপালকের সেই ইস্তেহারের কাছে আর সেখানে নিজেকে ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তুলে, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে এক অনন্য সুন্দর সমাজ গড়ার লক্ষ্যে প্রতিজনের সার্বজনীন মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা হউক ২০২১ সালের প্রত্যয়।