রাত পোহালেই শুরু ভোটযুদ্ধ
নিজস্ব প্রতিবেদক
আর মাত্র কয়েক ঘন্টার অপেক্ষা। রাত পোহালেই শুরু হবে দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মর্যাদার লড়াই। দেশের ২৩৪টি পৌরসভায় প্রথমবারের মতো মেয়রপদে দলীয়ভাবে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে দেশের ২০টি রাজনৈতিক দল। তাই ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ ও বিএনপি তাদের প্রার্থীর বিজয় নিশ্চিত করে জনপ্রিয়তা প্রমাণে মরিয়া।
এদিকে ভোট গ্রহণের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। মঙ্গলবার কেন্দ্রে কেন্দ্রে পৌঁছে গেছে ব্যালট পেপার। সোমবার মধ্যরাত থেকে প্রচার-প্রচারণারও বন্ধ রয়েছে।
মেয়র পদে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হলেও কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত মহিলা আসনে ভোট হবে নির্দলীয়ভাবে। এ সুযোগে সাত বছর পর আওয়ামী লীগ, বিএনপির প্রার্থীরা নৌকা এবং ধানের শীষ নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছেন। এ অবস্থায় ভোটের দিন ঘিরে উৎসাহ-উদ্দীপনার পাশাপাশি শঙ্কাও বিরাজ করছে ভোটারদের মধ্যে।
কমিশনের তথ্য মতে, ২৩৪টি পৌরসভায় ১২ হাজার ১৭১ জন প্রার্থী রয়েছেন। এর মধ্যে মেয়র পদে ৯৪৫ জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৮ হাজার ৭৪৬ জন ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ২ হাজার ৪৮০ জন প্রার্থী হয়েছেন। ২৩৪টি পৌরসভায় ২৩৪টি মেয়র, ৭৩১টি সংরক্ষিত কাউন্সিলর ও ২ হাজার ১৯৩টি সাধারণ কাউন্সিলর পদ রয়েছে। এরই মধ্যে ৭ জন মেয়র, ৯৪ জন সাধারণ কাউন্সিলর ও ৪০ জন সংরক্ষিত কাউন্সিলরসহ মোট ১৪১ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছেন।
আওয়ামী লীগ-বিএনপির এ মর্যাদার লড়াইয়ে শান্তিপূর্ণ করতে মাঠে নেমেছে বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ব্যালট পেপার, ব্যালট বাক্সসহ সব ধরনের নির্বাচনী সামগ্রী বিশেষ নিরাপত্তায় ইতোমধ্যেই পৌঁছে যাবে কেন্দ্রে কেন্দ্রে।
এদিকে অবাধ ও সুষ্ঠু পৌর নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি রক্ষায় সব ধরনের প্রস্ততি সম্পন্ন করেছে ইসি। এরই মধ্যে নির্বিঘ্ন ভোটের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোটারদের নিশ্চিন্তে ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। তবে কিছু কিছু জায়গায় অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি ঘটে যাওয়ার বিষয়টিও উড়িয়ে দিচ্ছে না কমিশন। সেজন্য নির্বাচন প্রভাবমুক্ত, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে বহিরাগতদের এলাকা ছাড়ার নির্দেশ দিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে বৈধ অস্ত্রবহন ও প্রদর্শনে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। সহিংসতারোধে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে মেটাল ডিটেক্টরের মাধ্যমে চেকিংয়ের ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে। সেইসঙ্গে ভোটকেন্দ্রে কোনো ধরনের দাঙ্গা, সন্ত্রাস বা অনিয়ম সংঘটিত হলে কিংবা আইন ও বিধির কোনো ব্যত্যয় ঘটলে তাৎক্ষণিকভাবে সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে ইসি।
এ অবস্থায় পৌর নির্বাচনের নিরাপত্তায় ১ লাখ ১৭ হাজার ৩০৪ জন সদস্য মোতায়েন করা হচ্ছে। এর মধ্যে পুলিশ ৪৫ হাজার, বিজিবি ৯ হাজার ৪১৫ জন, র্যাব ৮ হাজার ৪২৪ জন, কোস্টগার্ড ২২৫ জন, অঙ্গীভূত আনসার ৪৯ হাজার ৭২৮ জন এবং ব্যাটালিয়ন আনসার ৪ হাজার ৫১২ জন। ঝুঁকিপূর্ণ প্রতিটি কেন্দ্রে ৮ জন অস্ত্রধারীসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ২০ জন সদস্য মোতায়েন থাকবে। আর সাধারণ কেন্দ্রে ৭ জন অস্ত্রধারীসহ ১৯ জন সদস্য থাকবেন। প্রতিটি পৌরসভায় সোমবার সকাল থেকে পুলিশ, র্যাব ও বিজিবির মোবাইল টিম টহল শুরু করেছে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সন্ত্রাসী ও অপরাধী ধরতে ইসির নির্দেশে সোমবার থেকে বিশেষ অভিযান শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী ২ হাজার ২৯ জন সন্ত্রাসী নির্বাচনী মাঠে সক্রিয় রয়েছে।
এছাড়া ভোটের আগমুহূর্তে রংপুর ও রাজশাহী বিভাগে বিশেষ দৃষ্টি রেখে প্রয়োজনে অতিরিক্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করতে বলেছে ইসি। দুই অঞ্চলে পুলিশের বিশেষ শাখার পক্ষ থেকে জঙ্গি হামলার বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বনের কথা জানানো হয়। পৌরসভা নির্বাচনে অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি মোকাবেলায় সোমবার মধ্যরাতের আগেই বহিরাগতদের নির্বাচনী এলাকা ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ইসির উপ-সচিব মো. সামসুল আলম রিটার্নিং কর্মকর্তাদের এ সংক্রান্ত নির্দেশনা পাঠিয়েছেন। স্বেচ্ছায় এলাকা না ছাড়লে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বলা হয়েছে।
আগামীকালের নির্বাচনে মেয়র পদে ৯৪৫ জনসহ মোট ১২ হাজার প্রার্থী এ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এতে প্রায় ৩ হাজার ৫৮২টি কেন্দ্রে ৬১ হাজার ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োজিত থাকবেন। প্রায় ৭২ লাখ ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পাবেন।