প্রচণ্ড ভূকম্পন, আতঙ্কের নগরী ঢাকা
অন্যান্য দিনের তুলনায় সোমাবার কিছুটা আগেভাগেই জেগে উঠেছে ঢাকা। ভোর ৫টার দিকে অধিকাংশ ঢাকাবাসির মনে হয়েছিল, কেউ বুঝি ধাক্কা দিয়ে ঘুম থেকে ডেকে তুলছে! তবে কোনো মানুষ নয়, প্রচণ্ড ঝাকুনি দিয়ে সবার ঘুম ভেঙে দিয়েছে ৬.৮ মাত্রার এক ভূমিকম্প।
সোমবার ভোর ৫টা ৭ মিনিটে ঢাকাসহ সারাদেশে তীব্র মাত্রার এ ভূমিকম্প অনুভূত হয়। এ সময় আতঙ্কে অনেকে হুড়মুড়িয়ে বাড়িঘর ছেড়ে বাইরে বেরিয়ে আসেন। তাঁদের চিৎকার-চেঁচামেচিতে ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়। প্রথমবার ভূকম্পনের আধ ঘন্টার মধ্যে আবরো ভূকম্পন হয়- এমন আতঙ্ক থেকে অনেকেই এক ঘন্টার বেশী সময় বাইরেই অবস্থান করেন। এমনকি ঘুমের ঘোরে আতঙ্ক এতটাই পেয়ে বসেছে, অনেকেই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সারাদিন বাইরে কাটাবার।
মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, উৎপত্তিস্থলে রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পের তীব্রতা ছিল ৬ দশমিক ৭। উৎপত্তিস্থল ভারতের মণিপুর রাজ্যের ইম্ফল থেকে ২৯ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে। এটি বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সীমান্ত-সংলগ্ন এলাকা।
মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা বলছে, ভারতের স্থানীয় সময় ভোর চারটা ৩৫ মিনিটে ভূমিকম্পটি আঘাত হানে।
ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তরের বরাত দিয়ে টাইমস অব ইন্ডিয়া অনলাইনের প্রতিবেদনে জানানো হয়, স্থানীয় সময় ভোর চারটা ৩৬ মিনিটে ভূমিকম্পটি আঘাত হানে। উৎপত্তিস্থল ইম্ফল থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরে টামেংলং জেলার নোনি গ্রামে।
ঢাকার আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে জানানো হয়, রাজধানীর আগারগাঁওয়ের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র থেকে ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ৩৫৩ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে অবস্থিত। জানা গেছে, ঢাকায় অনুভূত ভূ-কম্পনের মাত্রা ছিলো চারের কিছুটা বেশী। তবে, মাটির খুব বেশি গভীরে না হওয়ায় কম্পন বেশি অনুভূত হয়েছে।
ভূমিকম্পের মাত্রা বিবেচনায় বাংলাদেশে ক্ষয়ক্ষতির পরিমান কমই বলতে হবে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত, আতিঙ্কত হয়ে তাড়াহুড়া করে নামতে গিয়ে এবং আকষ্মিক প্রচণ্ড মানষিক উদ্বেগে হৃৎযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে চারজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া আহত হয়েছেন প্রায় ৩০ জন। এর মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলের ১৬ শিক্ষার্থীও রয়েছেন। নিহতরা হলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু হলের প্রধান বাবুর্চি খলিলুর রহমান (৬৫)। লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম উপজেলার ঘোনাবাড়ী এলাকার নূর ইসলাম কদু (৫০)। রাজধানী ঢাকায় হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শেষ বর্ষের ছাত্র আতিকুর রহমান (২২) নামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়। জামালপুরে নিহত অপর ব্যাক্তির বিস্তারিত পরিচয় তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি।
হতাহতের ঘটনা ছাড়াও রাজধানীর বংশালে একটি ছয়তলা ভবন আংশিক হেলে পড়েছে। এছাড়া শাখারি বাজারে একটি পুরাতন ভবনে ফাটলের খবর পাওয়া গেছে।
এদিকে, নেপাল এবং ভারতের অস্থিতিশীল প্রভাবে চলতি বছরে বড় ধরনের ভূমিকম্পের আশঙ্কা রয়েছে দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে। যার কেন্দ্রস্থল হতে পারে বাংলাদেশের খুব নিকটে। এর মধ্যে জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত সময়কে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ বলছেন ভূ-তত্ত্ব বিজ্ঞানীরা।
ভূ-তত্ত্ববিদরা বলছেন, ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশ। বার বার কড়া নাড়ছে মাঝারি ও ছোট আকারের ভূমিকম্প। মূলত টেকটনিক প্লেটের সংঘর্ষে ভূমিকম্প হয়। বাংলাদেশ এ ধরনের তিনটি প্লেটের মধ্যে অবস্থিত। এ ছাড়া দেশের মধ্যে থাকা চ্যুতি বা ফল্ট লাইনগুলো যে কোনো সময় ডেকে আনতে পারে ভয়াবহ ভূমিকম্প।
২০১৫ সালের অভিজ্ঞতা দেশের জন্য আশঙ্কাজনক বলে মন্তব্য করেছেন ভূ-তত্ত্ব বিজ্ঞানীরা। কারণ, বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৫ সালে কমবেশি ৩০ বারের মতো ভূমিকম্প অনুভূত হয়। এর মধ্যে বছরের শুরুতে অর্থাৎ জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত দেশে ভূমিকম্প অনুভূত হয় ২০ দফা। এবার বছরের প্রথম সপ্তাহেই ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। এপ্রিল পর্যন্ত কি হয়, সেটাই এখন ভূ-তত্ত্ব বিজ্ঞানীদের গবেষণার বিষয়।