স্রোতের বিপরীতে কিছু কথামালা
বাচ্চারা যখন ছোট থাকে, তখন সবসময় মা বাবাকে কাছে চায়, মা বাবার সান্নিধ্য তাদের পুলকিত করে. সন্তান বড় হয়ে গেলে চাইলে ও আর কাছে পাওয়া যায় না. এই সময়টা তাদের দেহ মন ভালোভাবে তৈরি হয়, এই সময় আমরা থাকি দূরে, আর আমরা যখন টাকা পয়সা সম্মান অর্জন করে বাচ্চাদের কাছে আসি, তখন তারা চলে যায় আমাদের থেকে দূরে, তখন আমাদের আর তাদের দরকার পড়েনা ।
আমরা যখন বুঝি তখন সময় বড় বে-রহম আমাদের জন্য!
মানুষের দিকে হাঁসিমুখে তাকানো নাকি সদকা, তাহলে বাচ্চা আর পরিবারকে সময় দেয়া কতটুকু ইবাদত, এটা জানতে কি মুফতি হওয়া প্রয়োজন?
আমরা বাংলা, বাংলাদেশ আর বাঙালি জাতি উদ্ধারে ব্যস্ত. কিন্তূ আমাদের বাচ্চাদের দুবাই এ হলিডে যাওয়ার লোভ দেখালে ও এক কলম বাংলা লেখানো কিংবা বাংলা টিভি আধা ঘন্টার জন্য দেখাতে পারি না. কিন্তূ আমরা বাংলাদেশি সমিতির নেতা! ঘরে নেতাগিরির কোন দাম নেই, বাহিরে আলতাব আলী পার্ক কিংবা বাংলা টিভি কিন্তূ গরম রাখি আমরা!
একজনকে জিজ্ঞেস করলাম ভাই আপনার বাচ্চা কি বাংলা বা সিলেটি কথা বলে, বাংলা টিভি দেখে কিংবা বাংলাদেশে যাবে আপনি মারা যাবার পরে.মনে হলো উনার পেটে বোমা মেরে একটি কথা বের করা যাবে না! উনি নিরুত্তর হয়ে রইলেন!
কযেকদিন ধরে চ্যারিটির জন্য টাকা দেয়ার অনুরোধ শুনতে শুনতে অস্থির. এক গ্রামে ৪/৫ টা হোয়াটস আপ গ্রুপ কিংবা সংগঠন. সবাই দুস্থদের জন্য টাকা তুলছেন. ভাই এক গ্রামে বা থানাতে এত গ্রুপ এর কি দরকার? এক সাথে দিলে কি হয়? আবারো মুখ বন্ধ!
ভাই আপনি তো রাষ্ট্রের দয়াতে এদেশে চলেন, আপনার শরীরে সামর্থ থাকার পরে ও কাজ না করে জনসেবা করে বেড়াচ্ছেন. এই ভাবে জেনে শুনে বুঝে রাষ্ট্রের কাঁধে উঠে গেলেন, এই টাকাটা কি হালাল? এই দান কি কবুল হবে? নিজে বিচারকের আসনে একবার বসে নিজের বিচার করে দেখেন? এর চেয়ে একটু কষ্ট করে পরিশ্রম করে, কাজ করে ও বৌ বাচ্চাদের সময় দেয়া কি সওয়াবের কাজ হবে না!!
এর জন্য মুফতি মেনক হতে হয়! দূর মিয়া খালি জ্ঞানের কথা বলেন বলে লোকটি সরে পড়লো!
নিজের খালাতো ভাই অন্ধ কিংবা বিধবা মামাতো বোন সন্তান নিয়ে অসহায়. এক টাকা তাঁদের দিয়ে ৯ টাকা টিভি কিংবা অন্য প্রতিষ্ঠানে দিলাম মারহাবা পাওয়ার আশায়. হক তো অসহায় এই ভাই বোনের ৯ টাকা পাবার, টিভি বা সংগঠনের এক টাকা. কিন্তূ আপনি করলেন উল্টোটা।
আপনি আমার মতো লাল মিয়া কিংবা কালা মিয়াকে এটা সেটা বলে বোঝ দিলেন, ওপারে আমার আপনার মালিককে কিভাবে বোঝ দিবেন?
এক লোক বাংলাদেশে একটি স্কুল এ একটি গেট দিলেন. গেট এর খরচ ২ লক্ষ টাকা, আর এর প্রচার বাবদ খরচ দেড় লক্ষ টাকা! আবার উনি কিন্তূ রাষ্ট্রের দয়াতে চলেন এদেশে.
সবাইকে এক পাল্লাতে মাপবো না , বিলেত থেকে সাড়ে তিন কোটি টাকা দিয়ে ৭টি মসজিদ করে দিয়েছেন, কিন্তু নিজের এলাকার অনেকেই জানে না তিনি দিয়েছেন. এরকম মানুষ ও বিলেতে আছেন. কিন্তু দুঃখজনক হলে ও সত্যি পাল্লাটা গেট ওয়ালার দিকে ই ভারী!
আবার আশার আলো ও দেখি. অনেককে দেখেছি সারাদিন স্বামী স্ত্রী দুজন কাজ করেন, হালাল রুজির চেষ্টা করাটা ও যে এবাদত তাদের দেখলে বুঝা যায়. বৌ বাচ্চাদের সময় দেন এবং নিরবে দান ও করেন. কিন্তু এই সব গেট ওয়ালাদের ভয়ে উনারা সমাজে সামনে আসেন না।
কারণ তাঁরা মনে করেন শুধু হালাল খাওয়া টা জরুরি না, হালাল আয় করাটা ও অত্যাবশ্যকীয়, চ্যারিটি তো অনেক পরের কথা. তাঁদের দিলের মধ্যে ভয় যে হারাম খেলে তো রক্ত মাংস ও হারাম হবে, তাহলে কি হারাম শরীরে নামাজ রোজা কবুল হবে!
করোনা তে চট করে মানুষ মারা যাচ্ছেন, কার কখন ডাক আসে বলা মুশকিল! শুনা যাচ্ছে বিলেতে করোনার তৃতীয় স্রোতে আরো ৫০ হাজার মানুষ ভেসে যেতে পারেন মৃত্যু নামক চরম সত্যকে আলিঙ্গন করে.
এর আগে আগে নিজেদের মধ্যে এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজা কি জরুরি নয়???
কোনটা জরুরি বাচ্চাদের সময় দেয়া নাকি, দেশ ও জাতি উদ্ধার করা! হালাল রুজি করা গুরুত্বপূর্ণ নাকি পরের ধোনে পোদ্দারি করা চালিয়ে যাওয়া উচিৎ. আমরা সবাই কম বেশি দোষী কিন্তূ সময় কম, তাড়াতাড়ি উত্তর খোঁজা জরুরি!!