টাওয়ার হ্যামলেটস রেফারেন্ডাম বিতর্কঃ মেয়রাল সিস্টেমের পক্ষে ভোট চান লুৎফুর রহমান

Spread the love

বাংলা সংলাপ ডেস্কঃ আগামী বৃহস্পতিবার সারা দেশের লোকেরা স্থানীয় নির্বাচনে ভোট দিবেন। লন্ডনের মেয়র এবং জিএলএর পদে তাদের পছন্দ করার পাশাপাশি, টাওয়ার হ্যামলেটসের বাসিন্দাদের কীভাবে তারা ভবিষ্যতে এই বারা পরিচালনা করতে চান তা জানতে চাওয়া হবে। গণভোটে জিজ্ঞাসা করা হবে যে কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীদের সরাসরি নির্বাচিত মেয়র ও মন্ত্রিসভা কাঠামো অথবা লিডারশীপ পদ্ধতি রীতিতে পরিবর্তন করা উচিত কিনা।

সাবেক মেয়র লুতফুর রহমান টাওয়ার হ্যমলেটসবাসীকে মেয়রাল সিস্টেমের পক্ষে ভোট দেওয়ার আহবান জানিয়েছেন। তিনি প্রতিটি স্ট্রিটে ক্যাম্পেইন করে জনসাধারনের কাছে মেয়রাল সিস্টেমের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরছেন ।

টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের ওয়েবসাইট ব্যাখ্যা করেছে: “দুটি সংস্করণের মধ্যে প্রধান পার্থক্য হ’ল মেয়র সকল স্থানীয় নির্বাচক দ্বারা সরাসরি নির্বাচিত হন, যেখানে কাউন্সিলরদের মধ্যে একজন নেতা নির্বাচিত হন।”
লিডিং টুগেদার’ ক্যাম্পেইনের আওতায় টাওয়ার হ্যামলেটসের লেবার, লিবারেল ডেমোক্র্যাটস, কনজারভেটিভ এবং গ্রিন পার্টির রাজনীতিকরা মেয়র পদ্ধতি বিলোপের পক্ষে একযোগে প্রচার চালাচ্ছেন।
বেথনাল গ্রিন অ্যান্ড বো আসনের বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত এমপি রুশনারা আলী এবং বারার বর্তমান মেয়র জন বিগস নিজেও এই প্রথা বিলোপের পক্ষে।

অন্যদিকে ইয়েস ফর মেয়র ব্যানারের আওতায় মেয়র সিস্টেম বহাল রাখার পক্ষে মাঠে নেমেছেন সাবেক মেয়র লুতফুর রহমান। মেয়রাল সিস্টেম চালুর পর তিনি ছিলেন প্রথম নির্বাহী মেয়র। মিঃ রহমান ইয়েস ফর মেয়র ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন । তার সাথে যোগ দিয়েছেন বারার ব্যবসায়ী ও কমিউনিটি নেতৃবৃন্দ । ১০ বছর আগে বারার ভোটাররা এভাবে একটি গণভোটের মাধ্যমে মেয়রাল সিস্টেম চালু করেছিলেন ,তখন বর্তমান লিডিং টুগেদার ক্যাম্পেইনাররা মেয়রাল সিস্টেমের পক্ষে ক্যাম্পেইন করেছিলেন , আজ ১০ বছর পর এসে তারাই আবার মেয়রাল সিস্টেমের বিপক্ষে দাঁড়িয়েছেন ,এই প্রশ্ন বারার অনেক বাসিন্দার ।

লিডিং টুগেদার ক্যাম্পেইনাররা চাইছেন, সরাসরি ভোটে মেয়র নির্বাচনের পদ্ধতি বিলোপ করে তার জায়গায় কাউন্সিলে ‘লিডার ও ক্যাবিনেট’ পদ্ধতি চালু করলে নির্বাচিত কাউন্সিলারদের হাতে প্রকৃত ক্ষমতা থাকবে এবং ক্ষমতার সুষম বণ্টন সম্ভব হবে।

মূলত একজন নির্বাহী মেয়র থাকলে বারার কাউন্সিলাররা আর পাদপ্রদীপের আলোতে থাকতে পারেন না। সবার মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠেন একজন মেয়র।

আসলেই কি তাদের এই যুক্তি যুক্তিযুক্ত ? বলেছিলেন একজন বাসিন্দা । তিনি বলেন মূলত লুতফুর রহমান যাতে ফিরতে না পারেন সেলক্ষ্যে
টাওয়ার হ্যামলেটস মোড়লদের এটি একটি রাজনীতিক খেলা। মিঃ রহমানের বিরুদ্ধে নির্বাচন করতে আইনী কোন বাধ্যবাধকতা না থাকায় এবং তাঁর বিরুদ্ধে আনীত কোন অভিযোগ প্রমানিত না হওয়ায় তিনি আবার নির্বাচন করবেন বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন , যেকারনে টাওয়ার হ্যামলেটস রাজনীতিক মোড়লরা একত্রিত হয়ে মেয়রাল সিস্টেম তুলে দিতে চান ।

অন্যদিকে,এই প্রস্তাবের বিপক্ষে মাঠে নেমেছেন প্রথম সরাসরি ভোটে নির্বাচিত সাবেক মেয়র লুৎফুর রহমান। ব্যারোনেস পলা উদ্দিনের মতো কিছু রাজনীতিক, কমিউনিটি নেতা এবং ব্যবসায়ী তাকে সমর্থন দিচ্ছেন।

নির্বাচনকে সামনে রেখে ভোটারদের দরজায় যাচ্ছেন সাবেক মেয়র লুতফুর রহমান, মেয়র পদ্ধতি বিলোপ হলে টাউন হলে বসে এক দল কাউন্সিলার গোপনে একজনকে ‘লিডার’ বানাবেন। তখন ক্ষমতা চলে যাবে পর্দার আড়ালে । ফলে”সাধারণ জনগণ নয়, লিডারকে খুশি রাখতে হয় স্বল্প সংখ্যক কিছু কাউন্সিলার এবং নেতাকে … টাউন হলে বসে ব্যক্তি-বিশেষের রাজনীতি করতে হয়,” লিখেছেন মিঃ রহমান।

মেয়র প্রথা বিলোপ সমর্থনকারী সাবেক লেবার কাউন্সিলার হেলাল উদ্দিন আব্বাস বললেন ব্যাপারটা মোটেও সেরকম না। তিনি বিবিসিকে বলেছেন, “জনগণের কাছে দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করতে এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ করতে হলে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ জরুরি।”তার যুক্তিঃ সরাসরি ভোটে নির্বাচিত কাউন্সিলাররাই জনগণের প্রকৃত প্রতিনিধি। ভোটারদের ভালমন্দের দায়দায়িত্ব তাদেরই। ভোটাররা যদি চান পরবর্তী নির্বাচনে তাকে বাদ দিতে পারেন।
“কিন্তু একজন মেয়রকে সিদ্ধান্ত নিতে হয় এককভাবে, যেখানে ভুল করার সুযোগ থাকে। এ কারণেই এটা বেশ অগণতান্ত্রিক। এখানে যথেষ্ট চেক অ্যান্ড ব্যালেন্স নেই,” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।

জন বিগস, বর্তমান টাওয়ার হ্যামলেটস মেয়রঃ

বর্তমান মেয়র টাওয়ার হ্যামলেটস জন বিগস, যিনি একজন নেতা এবং মন্ত্রিসভা কাঠামোর পরিবর্তনের পক্ষে তর্ক করছেন; সাবেক মেয়র লুৎফুর রহমান, যিনি মেয়র মডেলকে সমর্থন করছেন, এবং কাউন্সিলর অ্যান্ড্রু উড, যিনি গণভোটের বিষয়ে একটি পিটিশন চালু করেছিলেন, ব্যর্থতাকে ব্যালট পেপারে থাকার জন্য তৃতীয় বিকল্প – কমিটি সিস্টেমের পক্ষে ব্যর্থ হয়ে আহ্বান জানিয়েছিলেন। এই ৬ মে টাওয়ার হ্যামলেটসের ভোটারদের জিজ্ঞাসা করা হবে যে কাউন্সিলটি সরাসরি নির্বাচিত মেয়র, বা কোনও নেতা এবং মন্ত্রিসভা দ্বারা পরিচালিত হবে কিনা । আমার মতে, এবং আমি মেয়র হওয়ার পর উপভোগ করেছি, কিন্তু লিডার এবং মন্ত্রিপরিষদ মডেল একটি কাউন্সিল চালানোর চেষ্টা করা, পরীক্ষিত এবং সফল উপায়। এ কারণেই আমি প্রস্তাব দিয়েছিলাম যে আমরা এটিতে ফিরে যাওয়ার বিষয়ে গণভোট করব। সাবেক মেয়র, যাকে পদ থেকে সরানো হয়েছিল, তিনি মেয়র ব্যবস্থায় কী ভুল হতে পারে তা দেখিয়েছিলেন। প্লাস বেশিরভাগ কাউন্সিল একটি ছাড়াই পুরোপুরি ভাল পরিচালনা করে। এখন আমরা কাউন্সিলটি পুনরুদ্ধার করেছি এবং স্থিতিশীল করেছি, আমি মনে করি এটি পুরানো সিস্টেমে ফিরে যাওয়ার সুযোগ।
যদি ভোটাররা মেয়র ব্যবস্থা রাখতে চান তবে আমরা এটি নিয়ে কাজ করব, তবে বেশিরভাগ কাউন্সিলের পক্ষে লিডার এবং মন্ত্রিপরিষদ ভালভাবে কাজ করে।
এজন্য আমি মন্ত্রিপরিষদ ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে লিডিং টুগেদার প্রচারকে সমর্থন করছি।

লুৎফুর রহমান, প্রাক্তন টাওয়ার হ্যামলেটস মেয়রঃ

৬ মে, ভোটাররা একটি গুরুত্বপূর্ণ গণভোটের মুখোমুখি হবেন। মেয়র ব্যবস্থার বিরোধীরা মিডিয়াতে মিত্রদের সমর্থন নিয়ে একটি তীব্র প্রচারণা নিযুক্ত করে আমার সম্পর্কে এটি একটি গণভোট তৈরি করার চেষ্টা করেছে।
তারা দাবি করেছিল যে আমি অপরাধী দুর্নীতির জন্য দোষী হয়েছি। এটি একটি মিথ্যা. এই দাবীগুলি একটি নির্বাচন ট্রাইব্যুনালের সাথে সম্পর্কিত, অপরাধের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা নেই, হাইকোর্টের দ্বারা লর্ড জাস্টিস লয়েড জোনস এবং মিঃ জাস্টিস সাপারস্টোন বলেছিলেন যে এই সিদ্ধান্তগুলি “অপরাধমূলক অপরাধের সন্ধানের জন্য নয়”।
আমার বিরোধীরা এই দুর্গন্ধের বিষয়টি এড়িয়ে যেতে বাধ্য করে যে আমার প্রশাসন ঐতিহাসিক অর্জন করেছে, বর্তমান লেবার প্রশাসনের অধীনে কাউন্সিলের ভয়াবহ অবস্থার বিপরীতে যেটি ফ্রন্টলাইন পরিষেবাগুলি হ্রাস করেছে, কাউন্সিল ট্যাক্স বৃদ্ধি করেছে এবং বঞ্চিত অংশগুলিতে রাস্তা বন্ধ রেখেছে। ইস্ট এন্ড, লকডাউন বিধিনিষেধের মধ্যে ইতিমধ্যে লড়াই করা স্থানীয় ব্যবসায় পঙ্গু করছে।
আমাদের ইতিবাচক তৃণমূল প্রচার এই বিষয়টিকে তুলে ধরেছে যে একজন নির্বাচিত মেয়রের সাথে সাথে, বাসিন্দারা দ্বি-দলীয় ব্যবস্থাকে ভেঙে ফেলতে পারে যা প্রায়শই টাওয়ার হ্যামলেটসে অগ্রগতিকে বাধা দেয়।
একজন হাই-প্রোফাইল মেয়র ইস্ট এন্ডে বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে পারে। মেয়র হিসাবে আমি বেশিরভাগ সামাজিক আবাসন তৈরি করেছি এবং বর্তমানে নির্মাণাধীন পুরাতন রয়্যাল লন্ডন হাসপাতালের ভবনে পপলার বাথ এবং আমাদের ল্যান্ডমার্ক টাউন হল পুনরায় চালু করার মতো লক্ষণীয় প্রকল্পগুলি নির্মাণ করেছি।
আমরা আমাদের তরুণদের মধ্যে বিনিয়োগ করেছি, একটি প্রতিস্থাপন শিক্ষা রক্ষণাবেক্ষণ ভাতা (ইএমএ) প্রকল্প নিয়ে এসেছি এবং স্কুলের ফলাফল বাড়ার সাথে সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্সারিগুলি চালু করেছি।
এটি কেবলমাত্র মেয়র ব্যবস্থার কারণে এবং টাওয়ার হ্যামলেটসের লোকদের প্রচুর চেতনার কারণে সম্ভব হয়েছিল।
আপনার ক্ষমতা রাখুন, আপনার ভোট রাখুন।

একজন নির্বাচিত মেয়র জন কল্যানে বড় বড় সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা রাখেন,কারন তিনি বিশাল ভোট নিয়ে এবং জনগনের কাছে আগাম প্রতিশ্রূতির তালিকা দিয়েই নির্বাচিত হন। কোনো প্রজেক্ট বা ভালো কাজ বাধার মুখে পড়লে মেয়র ক্ষমতা রাখেন, প্রয়োজনে আইনি চ্যালেন্জের মাধ্যেমে কাজটি নিশ্চিত করার। নির্বাচিত মেয়রকে আপনি সামনা সামনি দেখতে পাবেন ।তিনি জনগনের কাছে জবাব দেন, তাদের দরজায় যান ।আর আপনি যদি মনে করেন, নির্বাচিত মেয়র সমাজ-কমিউনিটির দিকে ভালো করে নজর দেননি, তাকে নির্বাচনের মাধ্যমে সরিয়ে দিতে পারবেন। কিন্তু মেয়র সিস্টেমটা রাখতে হবে, যাতে সেই মেয়র নির্বাচনের ক্ষমতা আপনার হাতে থাকে। কিন্তু লিডারশীপ সিস্টেমে সামান্য কিছু নেতা, পার্টি বা কাউন্সিলারকেই খুশী করতে হয়। টাউন হলে বসে ব্যক্তি বিশেষের রাজনীতি করতে হয়। কিন্তু মেয়রের অগ্রাধিকার হয় সকল জনগন।

মিঃ রহমান বলেন চার বছরের জন্য নির্বাচিত মেয়রের ম্যানেফেস্টো বা প্রতিশ্রুতি কাউন্সিলের এজেন্ডা হিসেবে বাস্তবায়ন হয়। এই মেয়র পদ্ধতি কমিউনিটির যে কাউকে এবং ভবিষ্যত প্রজন্মকে রাজনীতি এবং নির্বাচনে আগ্রহী করে। এ কারনে ১০ বছর আগে আপনারা প্রায় ৬২ হাজার ভোট দিয়ে এই সিস্টেম এনেছিলেন। কোভিড ১৯ এই কঠিন সময়ে-এ ৩৫০ হাজার পাউন্ড খরচ করে এই সিস্টেম নিয়ে আবারো প্রশ্ন তুলে রেফারেন্ডাম দেয়ার কোনো যুক্তি নেই। যেখানে কাউন্সিল অনেক জরুরী সেবা দিতে পারছেনা।
কোভিডের কারনেএবং প্রচারনার অভাবে আমরা বেখেয়ালে যদি এই গুরুত্ত্বপূর্ন দায়িত্ব পালনে সচেতন না থাকি, তাহলে বারায় নির্বাচিত মেয়র সিস্টেম হাত ছাড়া করবো। এর মানে হচ্ছে যাকে ইচ্ছে মেয়র নির্বাচিত করার দায়িত্ব আর আপনাদের হাতে থাকবে না। টাউন হলে বসে কিছু কাউন্সিলার গোপনে একজন লিডার বানাবেন, তিনিই চালাবেন বারা।
৬ মে-এর রেফারেন্ডামে আপনাকে ভোট দিতে হবে-আপনি কী মেয়রাল সিস্টেমের পক্ষে, যেটি বর্তমান সিস্টেম, যেখানে মেয়র এবং ক্যাবিনেট কাউন্সিল পরিচালনা করেন। না, আপনি লিডারশীপ মডেলের পক্ষে-যেখানে লিডার এবং ক্যাবিনেট কাউন্সিল চালান। আমি জোরালো ভাষায় বলতে চাই-ভোটের মাধ্যমে একজন মেয়র নির্বাচিত করার সিস্টেম জারি রাখুন। মনে রাখবেন ভোট আপনার জন্য একটি আমানত।

তিনি আরও বলেন, আপনারা চারদিকে দেখুন, একজন নির্বাচিত মেয়র স্ব স্ব এলাকার জন্য অনেক ভালো কাজ করতে পারেন। বড় বড় পরিকল্পনা বাস্তবায়নে তার যথার্থ ক্ষমতা থাকে। লন্ডন সিটি, লন্ডনের চারটি বারাসহ মানচেষ্টার, লিভারপুল এবং বড় বড় সিটি যেমন নিউ ইয়র্ক, প্যারিস কিংবা ঢাকা সব খানে রয়েছেন নির্বাচিত মেয়র। নির্বাচিত মেয়র মানে-জনগনের ক্ষমতা। আপনারাই সিদ্ধান্ত নেবেন কে হবে আপনাদের মেয়র। কাউকে পছন্দ না হলে তাকে আপনারা বাদ দেবেন, কিন্তু সিস্টেমটা রাখবেন।
২০০৮ ও ২০০৯ সালে লেবার পাটি থেকে আমি কাউন্সিল লিডার ছিলাম। প্রথবার মাত্র ১৫জন এবং ২য় বার ১৮/১৯ জন কাউন্সিলার আমাকে সমর্থন করেন। আমি বেশীরভাগ ক্ষেত্রে পার্টি এবং কাউন্সিলারদের কাছে দায়বদ্ধ ছিলাম। কিন্তু ২০১০ সালে আমি ১ম বার মেয়র নির্বাচিত হই প্রায় ২৫ হাজার ভোটে আর ২০১৪ সালে প্রায় ৩৮ হাজার ভোটে। এতেই প্রমান হয় নির্বাচিত মেয়র কত বিশাল জনসমর্থন নিয়ে ও দায় দায়িত্ব নিয়ে নির্বাচিত হন। আর এ কারনে তাকে সব সময় জনগনের আশা আকাংখার প্রতিফলন ঘটাতে হয়। আমিও আমার কাউন্সিলার এবং ক্যাবিনেট মেম্বারদের সহযোগিতায় সবচেয়ে বেশী হাউজিং নির্মানের জন্য দেশ সেরা হিসেবে পুরস্কৃত হয়েছিলাম। এডুক্যাশনে ইউকের মধ্যে অনন্য ভূমিকা ছিলো আমাদের টিমের। ড্রাগ এবং ক্রাইমের বিরুদ্ধে লড়তে সব সময় অতিরিক্ত পুলিশ নিয়োগ করেছি আমরা। ছিলো আরো নানা কল্যানকর কাজ। এই সাফল্য ছিলো শুধুমাত্র নির্বাচিত মেয়র হিসেবে আলাদা কিছু ক্ষমতা থাকায়। প্রধানতম কিছু সাফল্যের তালিকা আপনারা আলাদা ভাবে পড়তে পারবেন।

এই নির্বাচিত মেয়র সিস্টেম কোনো একজনের জন্য নয়। এটা এই বারার সব মানুষের জন্য। এই সমাজ-কমিউনিটির ভবিষ্যত প্রজন্মের নেতৃত্বের জন্য। ব্যক্তিগত বিষয়ে একটু বলতে চাই, জীবনে কাউন্সিলার, লিডার এবং দু বারের মেয়রসহ মোট ৮টি নির্বাচন করেছি। সবগুলোতেই বিজয়ী হয়েছি স্ব যোগ্যতা এবং সবার সমর্থন-দোয়ায়। কিন্তু ২০১৪ সালে ৩৮ হাজার ভোটে ২য় বারের মতো মেয়র নির্বাচিত হলেও- কতিপয় ব্যাক্তির মামলা এবং মাত্র একজন ডিপুটি জাজের ( সিভিল/ ইলেকশন ট্রাইবুনালের কমিশনার) রায়ে আমাকে কীভাবে মেয়র পদ থেকে সরতে হয়, তা আপনারা খুব ভালো জানেন। শেষ পর্যন্ত চার চারটি পুলিশি তদন্তে কিছুই খুজে পাওয়া যায়নি। প্রায় ৩ বা ৪ মিলিয়ন পাউন্ড খরচ এবং খুঁটিনাটি ক্ষতিয়ে দেখে-পুলিশ বিশাল বিবৃতি দিয়ে বলেছে, তারা আমার বিরুদ্ধে অগ্রসর হওয়ার মতো কেনো প্রমান পায়নি এবং সব তদন্ত বাতিল করেছে। আমি নীতিবান সব কর্মকর্তার কাছে কৃতজ্ঞ।

এতো চ্যালেনজ এবং বিপদের পরও সমাজ-কমিউনিটির আন্তরিক সমর্থনে একটু কমতি হয়নি। বরং বেড়েছে। এ কারনে আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি-জনগনের সাথেই থাকবো ।আপনারাই আমাকে শক্তি ও সাহস দিচ্ছেন। আপনাদের অনুপ্রেরনা থাকার পরও কিছু মানুষের অপতপরতার কারনে আমি থেমে যেতে পারিনা। আমি ইতিমধ্যে মেয়র সিস্টেমের পক্ষের ক্যাম্পেইনে সক্রিয় হয়েছি। এতে বিভিন্ন পর্যায়ের সাধারন মানুষ এবং নেতারা যোগ দিচ্ছেন। ইয়েস ফর মেয়র ক্যাম্পেইনে আপনাদেরও সমর্থন আশা করছি।

মেয়র, না লিডার

ব্রিটেনের স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় দু’টি পদ্ধতি প্রায় একই। দু’টিই কার্যত নির্বাহী প্রশাসন। একটি কাউন্সিলের বাজেট, কর ইত্যাদি নির্ধারিত হয় কাউন্সিলারদের পূর্ণাঙ্গ বৈঠকে। একটি নির্বাহী কমিটি কাউন্সিলের দৈনন্দিন প্রশাসন পরিচালনা করেন। বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী, প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত মেয়রই বারার সর্বেসর্বা। তিনি ও তার উপদেষ্টা ক্যাবিনেট টাওয়ার হ্যামলেটসের সব বিষয়ে নেতৃত্ব দান করেন।
তিনি তার কর্মকাণ্ডের জন্য ভোটারদের কাছে দায়বদ্ধ থাকেন। অন্যদিকে, ‘লিডার ও ক্যাবিনেট’ পদ্ধতিতে ভোটে নির্বাচিত কাউন্সিলাররা তাদের মধ্য থেকে একজনকে ‘লিডার’ বা নেতা নির্বাচিত করেন। লিডার একটি ক্যাবিনেট তৈরি করেন। এখানে পার্থক্যটা হচ্ছে, মেয়রকে অপসারণ করতে চাইলে পরবর্তী নির্বাচন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। আর কাউন্সিলাররা চাইলে অনাস্থা ভোট এনে নেতৃত্বে রদবদল ঘটাতে পারেন।
ব্রিটেনের কাউন্সিল রাজনীতির ওপর একজন বিশ্লেষক, ভিনসেন্ট ক্যারল ব্যাটালিনো এক নিবন্ধে লিখছেন, প্রশাসনের সংস্কৃতিতে কোন পরিবর্তন না করে শুধু শাসন ব্যবস্থার পরিবর্তন করলেই যে সব সমস্যার সমাধান হবে এমন কোন নিশ্চয়তা নেই। ক্যাবিনেট পদ্ধতি হলেই তা বেশি গণতান্ত্রিক হবে সেটা যেমন ঠিক না, তিনি লিখছেন, আবার মেয়র হলেই যে কেউ একনায়কে পরিণত হবে সেটাও ভুল ধারণা। দু’টি পদ্ধতিই কাউন্সিলে দুর্বল বিরোধীদলের কণ্ঠস্বরকে স্তব্ধ করে দিতে সক্ষম।

লুৎফুর রহমান: শেষ টিকেটের যাত্রী
মেয়র প্রশ্নে এই গণভোট সাবেক মেয়র লুৎফুর রহমানের রাজনৈতিক জীবনের বাঁচা-মরার লড়াই। অপপ্রচার এবং দুর্নীতির অভিযোগ মাথায় নিয়ে ২০১৪ সালে তাকে মাঠ ছাড়তে হয়েছিল। এখন এই গণভোটের মধ্য দিয়ে তিনি ভোটের রাজনীতিতে ফিরে আসার পথ খুঁজছেন। আর সেজন্যেই তিনি গড়ে তুলেছেন একটি প্ল্যাটফর্ম – ইয়েস ফর মেয়র টিএইচ (টাওয়ার হ্যামলেটস) মি. রহমান পরবর্তী মেয়র নির্বাচনে তিনি প্রার্থী হবেন কি-না এই প্রশ্নের সরাসরি কোন জবাব তিনি কোথাও দেননি। শুধু এটুকই বলেছেন, পুরো ব্যাপারটা নির্ভর করবে মেয়র প্রথার অবসানের প্রস্তাব ভোটাররা নাকচ করে দেন কি-না, তার ওপর। টাওয়ার হ্যামলেটসের ভোটাররা যদি বিশ্বাস করেন মেয়র প্রথা তাদের জন্য সুফল বয়ে আনছে এবং এই ব্যবস্থা তারা বহাল রাখতে চান, তাহলে সেটা হবে লুৎফুর রহমানের জন্য সুখবর। তখন পরীক্ষিত সমর্থক গোষ্ঠীর ওপর ভর করে তিনি নির্দলীয় প্রার্থী হিসেবে আবার লড়তে পারবেন।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, কিন্তু যদি মেয়র প্রথা বাতিল হয়ে যায় এবং ‘লিডার ও ক্যাবিনেট’ প্রথা আবার ফিরে আসে তাহলে মি. রহমানের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ অনেক বেশি কঠিন হয়ে পড়বে।


Spread the love

Leave a Reply