হামাসের রিসাইকেলড রকেটে ইসরাইলি মিসাইল কুপোকাত
পবিত্র মাস রামাদানের শেষ ভাগে লাইলাতুল কদরের রাত্রে নামাজরত অবস্থায় ফিলিস্তিনের নিরস্র মানুষের উপর ইসরাইলের বর্বর হামলা, হত্যাযজ্ঞ ও আক্রমণ গোটা বিশ্ববাসী এবং তাদের বিবেককে নাড়া দিয়েছে সমভাবে। ফিলিস্তিনের ২৪৮জন শাহাদাত বরন করলেন, যার মধ্যে ৬৬জনই শিশু, এছাড়াও প্রায় ১৯০০জন আহত এবং প্রায় ৭২০০০ লোক বসতবাড়ি থেকে উচ্চ্ছেদ হয়েছে। অন্যদিকে মাত্র ১২জন ইসরাইলি মৃত্যুবরণ করলো যার মধ্যে ৩ জন আবার ভিন দেশি, ২ জন থাইনাগরিক আর ১ জন ভারতের নাগরিক। প্রায় দুই সপ্তাহের টানা আক্রমণ ও পাল্টা আক্রমণের পর অবশেষে ইসরাইল যুদ্ধ বিরতির ঘোষণা দেয়। ইতিহাসে হামাস ও ইসরাইলের মধ্যকার এবারের যুদ্ধ সবচেয়ে শক্তিশালী যুদ্ধ হিসেবেই স্মরণীয় হয়ে থাকবে। আগামীদিনের পররাষ্ট্রনীতি ও যুদ্ধনীতি নির্ধারণে দুনিয়াজুড়ে চলছে এই যুদ্ধের চুলচেরা বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনা।
১. পাশ্চাত্য মোড়লদের নীরবতা, পক্ষান্তরে জনগনের সরব স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদ: যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিলান্ড, ব্রাজিল, নেদারল্যান্ড ও ভারতসহ আরো অনেক পশ্চিমা দেশসমূহ ইসরাইলের পক্ষালম্বন করলেও সেই দেশের সাধারণ জনগণের সম্পূর্ণ সাপোর্ট ছিল নিরস্র ফিলিস্তিনের পক্ষে।এইতো কয়েকদিন আগে যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে UN Resolution এ ১৫৬:২২ ভোটের ব্যাবধানে ইসরাইলের বিপক্ষে ভোট পরে। পশ্চিমাদেশ থেকে শুরু করে এশিয়া ও আফ্রিকার প্রায় প্রতিটি দেশের সর্বস্তরের জনগন ফিলিস্তিনের পক্ষে মিছিল, মিটিং, বিক্ষোভ সমাবেশ করে ক্ষ্যান্ত হয়নি, বরং নিজেরা অর্থ সংগ্রহ করে নিকটস্থ ফিলিস্তিন দূতাবাসে প্রেরণ করে যেমন আর্থিক সহায়তা করেছে ঠিক তেমনি ফিলিস্তিনকে নৈতিক সাপোর্ট দিয়েছে এবং বলেছে We Stand For Palestine, হে ফিলিস্তিনবাসী তোমরা একা নও, আমরাও আছি তোমাদের সাথে।
২. এক কাতারে সামিল সমগ্র ফিলিস্তিন: বিগত দিনে ফিলিস্তিনের অভ্যান্তরে নানা বিভাজন থাকলেও, এই প্রথমবারের মতো হামাস, গাজা, পশ্চিমতীর, জেরুজালেম সহ উল্লেখযোগ্য সমস্ত এলাকার ও জনগনের মধ্যে হামাস এই কথা প্রমান করতে বা বুঝাতে সক্ষম হয়েছে যে; আর বিভাজন নয়, আমরা যদি বিভাজিত থাকি তাহলে, ইসরাইল থেকে কখনো স্বাধীন ফিলিস্তিনকে মুক্ত করতে পারবো না বরং দিনের পর দিন, বছরের পর বছর মার খেয়ে যাবো আর নিজেদের ভূমি হারাতেই থাকবো। তাই ফিলিস্তিনবাসী নিজেদের মধ্যকার ভুল বুঝাবুঝি, বিভেদকে গুড বাই বলে একসাথে ইসরাইলের বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছিল। তাঁদের মধ্যকার ঐক্য, সংহতি, সুদৃঢ় মনোবলের কারনে তারা আজ পেয়েছে বিজয় ।
৩. আন্তর্জাতিক চাপ ও আমেরিকার ইউটার্ন: এবারের যুদ্ধে আমেরিকা প্রথম দিকে ইসরাইলকে প্রত্যেক্ষ ভাবে সাপোর্ট দেয়ার জন্য মাঠে নেমেছিল ইহুদীপন্থী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের অস্র বিক্রির নেশায় মত্ত হয়ে উঠেছিল। যুদ্ধবাজ প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী Benjamin Netanyahu (নেতানিয়াহু) কে ফোন ও টুইট করে আশ্স্বস্ত করেছিল এই বলে যে, ইসরাইলের নিজেদের আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে, হোয়াইট হাউস বলেছিল- The US President spoke with Israeli Prime Minister Netanyahu, reaffirmed his strong support for Israel’s right to defend itself against rocket attacks from Hamas and other terrorist groups in Gaza, and condemned these indiscriminate attacks against Israel. তার এই কথা ছিলো ইসরাইলকে যুদ্ধে উস্কে দেয়ার মতোই। আর একইসাথে খুব ঠান্ডা মাথায় ফিলিস্তিনের আত্মরক্ষার অধিকারকে চেপে যায় তার মতো করে সব মোড়লরাই। তার এই এক চোখা নীতি ও বক্তব্য খোদ আমেরিকার সাধারণ জনগণকে আরো বেশী ফিলিস্তিনের পক্ষে কথা বলতে, বিক্ষোপ প্রদর্শন করতে উদ্ভুদ্দ ও উৎসাহিত করে। অন্যদিকে Ilhan Abdullahi Omar (ইলহান ওমর) ও Rashida Harbi Tlaib (রাশিদা তায়িব) এর ফিলিস্তিনের পক্ষে শক্ত অবস্থান যুক্তরাষ্টের জনসাধারণের বিবেককে দারুন ভাবে নাড়া দেয়। ইসরাইলে ৭৩৫মিলিয়ন ডলার অস্র বিক্রি বন্ধের দাবী তুলেন সাবেক প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ও সিনেটর Bernie Sanders (বার্নি স্যান্ডার্স)। তিনি আরও বলেন যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি বোমায় গাজার শিশুদের প্রান ঝরছে, ঘর-বারি ভেঙ্গে চুরমার হচ্ছে, শিশু, বৃদ্ধ , মহিলারা গৃহহীন হয়ে পড়ছে। ফোর্ড গাড়ির আঞ্চলিক শোরুম উদ্ভোধন করতে গিয়ে রাশিদা তায়িবের তোপের মুখে পরে জো বাইডেন খৈ হারিয়ে ফেলেন। পরবর্তীতে রাশিদা তালিবের প্রসংশা করতেও পিছপা হননি মিঃ প্রেসিডেন্ট। রাশিদা তায়িবের সেই বক্তব্য যেখানে ফিলিস্তিনি মায়ের এক সাথে মৃত্যুবরনের করুণ আকুতি প্রকাশিত হয়েছিলো “A Palestinian mother put her children together, if they die, they will die together and no one lives to mourn” . সোশ্যাল মিডিয়া, টুইটার ও অন্যান্য ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় যেভাবে বলা শুরু হয়েছে Free Palestine, We Stand For Palestine, Palestinian Lives Matter এবং খোদ আমেরিকার জনগণের মনোভাব উপলব্ধি করে অবশেষে ২১শে মে জো বাইডেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী Benjamin Netanyahu (নেতানিয়াহু)কে যুদ্ধবন্ধের আদেশ করেন এবং সাথে সাথে কালক্ষেপন না করে যুদ্ধ বিরতির ডাক দেয় ইসরাইল। জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক বিশ্ব ইসরাইলকে যুদ্ধবন্ধের চাপ দিতে থাকে ক্রমাগত। ইসরাইল যখন দেখলো তাদের বড় ভাই, তাদের কাছ থেকে আপাতত ইউটার্ন করেছে, এবং আন্তর্জাতিক বিশ্ব ও খোদ ইসরাইলে যুদ্ধবন্ধের দাবী প্রবল থেকে প্রবলতর হচ্ছে, যুদ্ধে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচের প্রশ্ন উঠছে, তখন ইসরাইলের যুদ্ধ বন্ধ না করে আর কোনো উপায়ই ছিল না। ফলে হামাসের সাথে যুদ্ধ বন্ধের দেন দরবার শুরু করে ইসরাইল। আর ইসারাইলের নৈতিক ও বাহ্যিক পরাজয় দেখে গোটা বিশ্ব।
৪. ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ব জনমত: এবারই প্রথম বিশ্বের প্রতিটি তথা ইউরোপ, এশিয়া ও আফ্রিকার দেশসমূহের আনাচে-কানাচে, দেশে দেশে এবং খোদ ইসরাইলেও নিরস্র ফিলিস্তিনের পক্ষে গড়ে উঠেছিল নিরঙ্কুশ জনমত। ইসরাইলে ইহুদিরা নেতানিয়াহুর যুদ্ধনীতির বিপরীতে অবস্থান নিয়েছিল, নিরস্র ফিলিস্তিনিদের আর্তনাদের পক্ষে তাদের মন কেঁদেছিলো। এজন্য ইসরাইলে ইহুদিরা মানবতার পক্ষে ও ইসরাইলি বর্বর হামলার বিপক্ষে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছিল তেলআব্বিব সহ বড় বড় সব শহরেই। অন্যদিকে গোটা ইউরোপজুড়ে ইসরাইলের বিরুদ্ধে ঘৃণাভরে দলমত, বর্ন ও শ্রেণী নির্বিশেষে সকলস্তরের মানুষ রাস্তায় নেমেছিল ফিলিস্তিনের পক্ষে। আমেরিকার লেখক Noam Chomsky (নোয়াম চমস্কি) সহ আরো অনেকেই এবার ইসরাইলের এই বর্বর হামলার বিপরীতে অবস্থান নিয়ে কথা বলেছেন। ইসরাইলিরা যখন একে একে সব কিছু ধংস করে দিচ্ছে, তখন ফিলিস্তিনিদেরও রয়েছে আত্মরক্ষার অধিকার। তিনি বলেছেন “You take my water, burn my olive trees, destroy my house, take my jobs, steal my land, imprison my father, kill my mother, bombard my country, starve us all, humiliate us all but I am not to blame: I shot a rocket back”. এই দিকে UK Labour পার্টির সদ্যবিদায়ী দলপ্রধান Jeremy Bernard Corbyn (জেরেমি করবিন) নিরস্র ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার কথা বলেছেন, তিনি আরও বলেন যে আমরা কখনও ফিলিস্তিনকে ছেড়ে যাবো না “We will never give up on the Palestinian people, we will never go away from the Palestinian people and their cause.”। অন্যদিকে Conservative পার্টির সাবেক প্রধান Sayeeda Hussain Wars (সাইয়েদা ওয়ার্সি)এর হাউস অব লর্ডসে ঐতিহাসিক বক্তব্য, শুধুমাত্র ইসরাইলকে নয় বরং ফিলিস্তিনের কথাও শুনতে হবে, তাঁদের পক্ষেও কথা বলতে হবে। তিনি বলেন “Stop listening to narrow political interests – listen to Palestinians & Israelis who stand together to call for an end to occupation”। আয়ারল্যান্ডের Leader of the Opposition বিরোধী দলীয় নেত্রী, Mary Lou (ম্যারি লাউ এর বক্তব্য ইসরাইল একটি বর্ণবাদী গোষ্ঠী “Israel is a racist, apartheid regime” গোটা বিশ্ববাসীকে জাগিয়ে তোলে। আরেক বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত লেবার এমপি আপসানা বেগমও ফিলিস্তিন ইস্যুতে ছিলেন বেশ সরব। বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও এক্ষেত্রে ব্যাতিক্রম ছিলেন না; যদিও নেত্রীর ভাগ্নি টিউলিপ সিদ্দিকী Labour Friends of Israel (LFI) এর পক্ষ নিয়ে মাঠে ছিলেন। LFI আরেক লেবার এমপি ডঃ রুপা হক ফিলিস্তিন ইস্যুতে নিজেকে গুটিয়ে রেখেছিলো, যা ব্রিটেনে বসবাসরত বাংলাদেশী মানুষের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ ঘটিয়েছে। রাজনীতিবিদদের পাশাপাশি ফুটবলার যেমন Leicester City ক্লাবের হামজা চৌধুরী, Premier League Liverpool ক্লাবের মিশরীয় বংশোদ্ভূত মোহাম্মদ সালাহ, Premier League club Manchester United এর পল পগবা, জার্মান ফুটবলার মেসুত ওজিল, আর্জেন্টাইন ফুটবলার লিওনেল মেসির ফিলিস্তিনের নিরস্র জগণের প্রতি নিরুঙ্কুশ সমর্থন বিশ্ববাসীকে ফিলিস্তিনের প্রতি জনমত গড়তে আরো বেশী উৎসাহিত করেছিল। ক্রিকেটারও পিছিয়ে ছিলেন না। পাকিস্তানের শহিদ আফ্রিদি সহ বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক মুশফিকুর রাহিম ও রুবেল হোসেন ছিল ফিলিস্তিনের পক্ষে বেশ সোচ্চার। যদিও সাকিব আল হাসান, মাশরাফি বিন মর্তুজা ভারতের দালালি করে ফিলিস্তিন ইস্যুতে ছিল চুপ, ফিলিস্তিনের শিশুদের কান্না তাদের কর্ণ কুহুরে প্রবেশ করে নি। পাশ্চাত্য নায়ক, গায়ক, কার্টুনিস্ট, কৌতুক অভিনেতা থেকে শুরু করে সর্ব স্তরের মানুষ শুধু মাঠে নেমেই এবার ক্ষ্যান্ত হননি, বরং অকাতরে দিয়েছেন ডোনেশন যা মার্কিন-ইসরাইল গংদের মাথা ব্যাথার কারণ হয়ে উঠেছিল। ফলে দ্রুত যুদ্ধ বিরতি ছাড়া ইসরাইলের অন্য কোন উপায় ছিলনা বলে সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান।
৫. ফিলিস্তিনের প্রতি চীন ও রাশিয়ার ভালোবাসা অফুরন্ত: ইসরাইলের বর্বর আক্রমনের বুলেট শুধু ফিলিস্তিনির নিষ্পাপ শিশুর বুকেই বিঁধেনি, তাঁদের বুককেই ঝাঁঝরা করেনি বরং ঝাঁঝরা করেছে অগনিত মানবতাবাদী মানুষের অন্তরও, যেন শুধু ফিলিস্তিনি শিশুই ইসরাইলি হায়েনার শিকারে পরিনত হয় নি, তাঁদের ছোড়া প্রতিটি বুলেট যেন বিশ্বের প্রতিটি শিশুর বুকে লেগেছিল। তাইতো প্রতিটি বিবেকবান মানুষের হৃদয় নাড়া দিয়েছিলো।”You don’t need to be Muslim to stand up for Gaza, you just need to be human”, এই শ্লোগান সাদা-কালো, মুসলিম-অমুসলিম, হিন্দু, বৌদ্দ, ক্রিস্টিয়ান, ইহুদী সবাইকে এক কাতারে এনেছিল ফিলিস্তিনের মুক্তিকামী মানুষের পক্ষে আর দখলদারী ইসরাইলের বিপক্ষে। ইসরাইল বিরোধী পাশ্চাত্যের বিক্ষোভ মিছিলে অমুসলিমদের অংশগ্রহন ছিল চোখে পড়ার মতো, তারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে, ব্যানার, ফেস্টুন, প্ল্যাকার্ড নিয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে কথা বলেছে। ফিলিস্তিন ও ইসরাইলের যুদ্ধ যেমন গণ মানুষকে আকৃষ্ট করছিলো, তেমনি চীন ও রাশিয়াও এগিয়ে এসেছিলো ফিলিস্তিনের জনগণের পক্ষে। যুদ্ধ যদি আরো দীর্ঘ হত রাশিয়ার অস্রসশ্র হয়তোবা ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী মানুষের হাতে চলে যেত। তখন সদ্য নির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্টের পক্ষে ইসরাইলকে রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়তো, তাই হয়তো মার্কিন প্রেসিডেন্ট এতো অল্প সময়ের মধ্যে একটি যুদ্ধে জড়ানো থেকে বিরত থেকে ইসরাইলকে যুদ্ধ বন্ধের ঘোষণা দিতে বাধ্য করেন। মার্কিন প্রেসিডেন্টের এই আদেশ ইসরাইলের পরাজয়কে তরান্বিত করে।
৬. আরব বিশ্বে ঐক্যের সূচনা: বিদায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বে গত বছর “Abraham Accords Peace Agreement: Treaty of Peace, Diplomatic Relations and Full Normalization Between the United Arab Emirates and the State of Israel” নামে একটি চুক্তি সাক্ষর হয় আরব আমিরাত ও ইসরাইলের মধ্যে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের মেয়ের ইহুদি জামাই Jared Corey Kushner (কুশনার) এবং আমিরাতের ক্রাউন প্রিন্স Sheikh Mohamed Bin Zayed (MBZ নামে খ্যাত) আব্রাহাম একোর্ডস বা এগ্রিমেন্ট স্বাক্ষরের পিছনে কুশীলবের ভূমিকা পালন করলেও সৌদি ক্রাউন প্রিন্স Mohammad Bin Salman (MBS নামে সমধিক পরিচিত) নেপথ্যে গুটি চালায়। এই চুক্তির পিছনে ছিল বাহরাইন ও মিশরের অকুণ্ঠ সমর্থন। এই চুক্তির মধ্য দিয়ে আরব ভূখণ্ডে ইসরেলের পদচারণা শুরু হয়েছে, বিশেষ করে আরব আমিরাত যেন আরেক ইসরাইল বনে যাচ্ছিলো, ইসরায়েলিরা আমিরাতকে মুসলিম বিশ্বে সবচেয়ে নিরাপদ ভূমি হিসেবে চিন্তা করতে শুরু করেছে, আমিরাতের দোকানপাট, এয়ারপোর্ট ও হোটেলগুলো শুধু কালো কোর্ট আর মাথায় ছোট কালো টুপির লোকে লোকারণ্য। যদিও কাতার ও কুয়েত বরাবরই এই চুক্তির বিরোধিতা করে আসছিলো। বর্তমান সময়ে ইসরাইলের বর্বর হামলার প্রতিবাদে কাতারের আমির Tamim bin Hamad Al Thani (শেখ তামিম) আরব নেতাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশী সোচ্চার ছিলেন। তিনি নিজ উদ্যোগে সৌদি বাদশা Salman bin Abdulaziz Al Saud (বাদশা সালমান)এর সাথে কথা বলেছেন, তার উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং নিরস্র ফিলিস্তিনির পাশে থেকে সার্বিক সহযোগিতা দিয়েছেন, বরাবরেরমতো হামাসকে সাহস জুগিয়েছেন। কাতারের পাশাপাশি কুয়েত, লেবানন ও মিশরও এগিয়ে এসেছে ফিলিস্তিনের জনগণের পক্ষে। বাহরাইন, আমিরাতের বিরোধিতা, ও MBS এর চাপকে উপেক্ষা করে সৌদি বাদশা সালমান ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট Mahmoud Abbas এর সাথে কথা বলেছেন এবং মুসলমানদের তৃতীয় পুন্য ভূমি মসজিদ আল-আকসার পক্ষে তার অবস্থানের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন, যদিও তার ছেলে MBS বরাবরই ইসরাইলের পক্ষাবলম্বন করে চলেছে। এবারের যুদ্ধ আরো দীর্ঘস্থায়ী হলে আরব দেশ সমূহের নিজেদের ভুল ভ্রান্তি কেটে গিয়ে তাদেরকে এককাতারে, এক টেবিলে, একই কণ্ঠে ইসরাইলের বিরুদ্ধে কথা বলতে আরো সোচ্চার হতে দেখা যেত। তারপরেও কাতারের দৃঢ় ভূমিকার কারণে আরব ভূখণ্ডের অন্যান্য দেশের মধ্যে যে ঐক্যের সূচনা হয়েছে, তা ইসরাইলকে কিছুটা হলেও চিন্তায় ফেলেছে এবং যুদ্ধ বিরতিতে কিছুটা হলেও তাগাদা দিয়েছে। সর্বোপরি পরাজয় বরন করে নিতে বাধ্য করেছে।
৭. মুসলিম বিশ্বে ঐক্যের সুবাতাসের অনুরনন: অপেক্ষাকৃত দুর্বল, নিরস্র কিন্তু ঈমানী চেতনায় উজ্জীবিত ফিলিস্তিনের উপর ইসরাইলের বর্বর হামলা শুধু আরব ভূখণ্ডেই ঐক্যের সূচণা করে নি বরং তুরস্কের নেতৃত্বে মুসলিম বিশ্বের অন্যান্য দেশের মধ্যেও ঐক্যের সুবাতাস বইতে শুরু করেছে। অতিসত্বর যদি ফিলিস্তিনের জনগণের উপর হামলা বন্ধ করা না হয়, তাহলে সামরিক শক্তিতে বলীয়ান তুরস্কের প্রেসিডেন্ট Recep Tayyip Erdoğan (এরদগান) এর নেতৃত্বে ইসরাইলকে সমুচিত জবাব দেয়ার জন্য পাকিস্তানী প্রধানমন্ত্রী Imran Ahmed Khan Niazi (Imran Khan নামে বেশী পরিচিত), লেবাননের হিজবুল্লাহ নেতা Sayyed Hassan Nasrallah (নাসরুল্লাহ)এর হুঙ্কার, ইরানের প্রেসিডেন্ট Hassan Rouhani (রুহানি) হুঙ্কার ও গাযা নামক ড্রোন আক্রমনের প্রস্তুতি এবং সারাবিশ্বে ক্লিন ইমেজের জন্য প্রসংশিত মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী Mahathir Mohamad (মাহাথির মোহাম্মাদ) সহ অন্যান্য মুসলিম দেশসমূহের মধ্যে এক অঘোষিত ঐক্যের সুবাতাস বইতে শুরু করেছিল। ইতিমধ্যে তুরস্ক বসফরাস প্রণালিতে সামরিক মহড়া প্রদর্শন করে তাদের শক্তির জানান দেয় ইসরাইল ও তাদের বড়ভাই, মিত্র আমেরিকাকে। অন্যদিকে পাকিস্তান লিয়াজোঁ মেইনটেইন শুরু করে তাদের পরীক্ষিত বন্ধু চীনের সাথে। আবার তুরস্কের সাথে কথা বলতে শুরু করে রাশিয়া। এই অবস্থায় ফিলিস্তিন ও ইসরাইল যুদ্ধ যদি আরো দীর্ঘায়ত হতো তাহলে ইসরাইল যে সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হতো তা বুঝার জন্য রকেট সায়েন্সের দরকার নেই, ফিলিস্তিনের ছোট শিশুও তা বুঝতে সক্ষম। তাই USA এর প্রেসক্রিপশনে অতি তাড়াতাড়ি ইসরাইল তাদের লেজ গুটিয়ে যুদ্ধ বিরতির ঘোষণা দেয়, যুদ্ধ বন্ধ না করে ইসরাইলের পক্ষে অন্য কোনো পথও আর খোলা ছিলোনা।
৮. ইসরাইলের বিভাজন দৃশ্যমান এবং নেতানিয়াহুর পতন অনিবার্য: ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ফিলিস্তিনের উপর বর্বর হামলার মধ্য দিয়ে সস্তা জনপ্রিয়তা অর্জন করে তার বিরুদ্ধে যে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে তা চাপা দেয়ার জন্য এবং আগামী নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার লক্ষ্যে অনাখাঙ্খিত ভাবে পবিত্র রামাদান মাসে নিরস্র ফিলিস্তিনবাসীর উপর আক্রমণ চালায়। কিন্তু এটি তার জন্য বুমেরাং হয়েছে। বরং তার বিরোধী গোষ্ঠীরা তার পিছনে উঠেপড়ে লেগেছে, তার যুদ্ধংদেহী মনোভাবের বিরধিতা শুরু হয়েছে খোদ ইসরাইলের অভ্যন্তরে। ইসরাইলের Haaretz (হারেয) পত্রিকা মারফত জানা যায়, নিজ দেশে প্রায় বারোটি (যেমন ধর্মীয়, রাজনৈতিক, সামাজিক, জাতিগোষ্ঠী ব্যাবস্থা ইত্যাদি) বিষয়ে ইসরায়েলিদের মধ্যে যে বিরোধ, সংঘাত ও সংকট রয়েছে তাও এবার জনসম্মুখে প্রকাশিত হয়ে পড়েছে। ইসরাইলের বিভিন্ন শহরে নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে, ফিলিস্তিনের পক্ষে ও যুদ্ধ বন্ধের জন্য বিক্ষোভ করেছে খোদ ইহুদিরা। এই পত্রিকা এটিও বলেছে যে, নেতানিয়াহু ইসরাইলকে একটি গৃহযুদ্ধের দিকে ধাবিত করছে, যা তার জন্য এক বিশাল চ্যালেঞ্জ । এতে করে নেতানিয়াহু নিঃসন্ধেহে বার্তা পেয়েছে যে তার নিজ দেশেই শত্রু রয়েছে, যা কিনা ঘরে শত্রু বিভীষণ। আর তার জনপ্রিয়তা নেমে এসেছে শূন্যের কোঠায়। হারেয পত্রিকার রাজনৈতিক বিশ্লেষক Akiva Eldar (আকিভা এলদার) কোন রকম সংকোচ না করেই স্বীকার করেছে যে ইসরাইল হামাস, পশ্চিমতীর, ও গাজার মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করেতে চেয়েছিলেন তা সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়েছে। এই অবস্থায় ইসরাইলের পক্ষে কোনোভাবে যুদ্ধ কন্টিনিউ করা সম্ভব ছিলোনা, আর কন্টিনিউ করলেও তা তাদের জন্য আরো বড় ধরণের লজ্জা, পরাজয় ও গ্লানি নিয়ে আসতো।
৯. হামাসের দৃঢ়তা ও হিজবুল্লার সহযোগিতা: হামাসের বর্তমান রাজনৈতিক নেতা Ismail Abdel Salam Ahmed Haniyeh (যিনি ইসমাইল হানিয়া নামে বহুল পরিচিত) তার যোগ্য নেতৃত্ব এনে দিয়েছে একদিকে যেমন খোদ ফিলিস্তিনের মধ্যে ঐক্য অন্যদিকে বিজয়।হামাস প্রায় চার হাজারের উপর শুধু মাত্র রকেট নিক্ষেপ করেছে ইসরাইলের উপর, যেগুলো ইসরাইলের শক্তিশালী মিসাইলের চক্ষুকে ফাঁকি দিয়ে ইসরাইলের তেলআব্বিব সহ বিভিন্ন শহর ও বিমান বন্দরে আঘাত আনতে সক্ষম হয়। তিনি ইসরাইলকে সতর্ক করে দিয়ে এও বলেছেন যে তাঁদের মিসাইল ও ক্ষেপণাস্র এখনও ব্যাবহার করেন নি, তবে তাঁদের আঙ্গুলের ট্রিগার ইসরাইলের দিকে। তার এই হুঙ্কারে ইসরাইল আরও বেশী বিচলিত হয়ে পরে। দেখা দেয় ইসরাইল শিবিরে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা। বেজে উঠে ইসরাইলের বিভিন্ন শহরে ভয়াল সাইরেন, দেখা দেয় ইসরাইলে ব্যাপক আকারে ভয়-ভীতি। হামাসের ও ফিলিস্তিনের যুবকদের দৃঢ়তার কাছে, পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিধর মিলিটারি ফোর্সের অসহায় আত্ম-সমর্পন। হিজবুল্লাহ ইসরাইলকে লক্ষ্য করে রকেট ছুড়ে হামাসের মনোবলকে আরো চাঙ্গা করতে সহযোগিতা করে যাচ্ছিলো। যা কিনা ইসরাইলের মাথা ব্যাথার কারণ হয়ে উঠে। এই অবস্থায় এক চতুর্মুখী বিপদ ও সংঘাতের মধ্যে জড়িয়ে যাচ্ছিলো ইসরাইল, তাই ইসরাইলের পক্ষে আর কোনো অবস্থায়ই যুদ্ধ কন্টিনিউ করা সম্ভব ছিল না, তারা সহজেই পরাজয় বরন করে নিল, বিশ্ব দেখে সবচেয়ে আধুনিক অস্রে সুসজ্জিত ইসরাইলি বাহিনীর এক অসহায় আত্ম-সমর্পন।
১০. বিবিসির হলুদ সাংবাদিকতা আর আল-জাজিরার জনপ্রিয়তা: যুগে যুগে, দেশে দেশে হলুদ সাংবাদিকতা দেখা গেছে বিভিন্ন ঘটনাকে কেন্দ্র করে। এবারের ফিলিস্তিন ও ইসরাইলের যুদ্ধের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। বিবিসির মতো জনপ্রিয় সংবাদ মাধ্যমও ইসরাইলের প্রকাশ্য পক্ষালম্বন করে ভুল নিউজ ও পক্ষপাতমূলক নিউজ প্রকাশ করছিলো। এজন্য সচেতন মহলের অনেকেই বিবিসিকে তাদের one-sided, disgustingly-bias, ও conflicting খবর প্রকাশের জন্য জনতার আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন। পাশাপাশি ইসরাইল সাংবাদিকের কণ্ঠকে রোধ করার জন্য ও বহিঃবিশ্ব যাতে তাদের বর্বর হামলার নাম-নিশানাও জানতে না পারে সে জন্য ফিলিস্তিনে অবস্থিত সবাদসংস্থা এপি ও আল-জাজিরার কার্যালয় মাত্র এক ঘন্টার মধ্যে গুড়িয়ে দেয়। তারপরেও সাহসী সংবাদ সংস্থা আল-জাজিরা চুপসে যায় নি, বন্ধ করেনি তাদের সম্প্রচার, বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরেছে তাদের বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ, প্রচার করেছে ইসরায়েলি বর্বর হামলার চিত্র। তাদের এই সাহসী সংবাদ সম্প্রচারের কারণেই বিশ্ববাসী ইসরাইলি হত্যাযজ্ঞ দেখতে পেরেছিলো। আল-জাজিরার সময়পোযোগী সংবাদ সম্প্রচারের কারণে ফিলিস্তিনের জনগণের পক্ষে সারা দুনিয়া ব্যাপী জনমত তৈরী হয় আর আল-জাজিরার জনপ্রিয়তাও বেড়ে হয়আকাশচুম্বী। ইসরাইল তাদের গৃহপালিত সংবাদ সংস্থা বিবিসি, সিএনএনের মাধ্যমে নেতিবাচক সংবাদ প্রচার করেও আল-জাজিরার সাহসী অবস্থানের জন্য পৃথিবীবাসীর দৃষ্টি ও ফোকাস অন্যদিকে ঘুরাতে পারেনি। ইসরাইলকে হজম করতে হয় এক কঠিন চপেটাঘাত।
সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, এবারের ফিলিস্তিন আক্রমণের ফলে ইসরাইলের চরম ভরাডুবি হয়েছে। আর জয়ী হয়েছে হামাস। হামাসের রকেটের কাছে ইসরাইলি মিসাইল হয়েছে কুপোকাত। আজ ইসরাইল বিরোধী যে মনোভাব গোটা দুনিয়া ব্যাপী তৈরি হয়েছে, তা থেকে ঘুরে দাঁড়াতে ইসরাইলকে খুবই বেগ পোহাতে হবে, তাঁদের যুদ্ধনীতির পরিবর্তন করতে হবে, বেড়ে যেতে পারে তাঁদের জীবনযাত্রার ব্যায়, সরে আসতে হবে যুদ্ধের পথ থেকে শান্তির পথে। তাছাড়া, ভবিষ্যতে ইসরাইল যদি আবারও ফিলিস্তিনের উপর আক্রমণের পথ বেছে নেয়, হামাস যদি দৃঢ় ভাবে তা মোকাবেলা করে, আর মুসলিম বিশ্ব ও পৃথিবীবাসী যদি দুর্বল ও নিরস্র ফিলিস্তিনিদের পক্ষে দাঁড়ায়, যেমনটি এবার দাঁড়িয়েছিল, তাহলে ইসরাইল বাধ্য হয়েই ফিলিস্তিনের সাথে শান্তিপূর্ণ সহবস্থানের পথ বেছে নেবে, অন্যথায় ইসরাইলকে দিতে হবে এক কঠিন পরীক্ষা। যেমনটি আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে বর্ণনা করেছেন-“আর সে সময়ের কথা স্মরণ কর, যখন তোমার পালনকর্তা সংবাদ দিয়েছেন যে, অবশ্যই কেয়ামত দিবস পর্যন্ত ইহুদীদের উপর এমন লোক পাঠাতে থাকবেন যারা তাদেরকে নিকৃষ্ট শাস্তিদান করতে থাকবে। নিঃসন্দেহে তোমার পালনকর্তা শীঘ্রই শাস্তি দানকারী এবং তিনি ক্ষমাশীল, দয়ালু। সুরা আল-আরাফ-১৬৭“। অসংখ্য নবী-রাসুলদের পুণ্যভূমি, মুসলিমদের তৃতীয় পবিত্রভূমি, প্রথম কিবলা মাসজিদ আল-আকসার নগরী, রাসুল (সঃ) এর ইসরা ওয়াল মিরাজের পবিত্রভূমিকে ইসরাইলি ইহুদিরা বারে বারে কলঙ্কিত করেছে, যেমনটি তারা অতীতেও অসংখ্য নবী-রাসুলকে অত্যাচার, নির্যাতন, হত্যা, দেশ ত্যাগে বাধ্য করার মতো অন্যায়ে লিপ্ত হওয়ার কারনে আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে কেয়ামতের আগ পর্যন্ত তাঁদের উপর নির্যাতন ও দাসত্ব অব্যাহত থাকবে, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে খণ্ডবিখণ্ড জাতি হিসেবে ভিনদেশিদের দয়া আর অনুকম্পায় ইসরাইলি ইহুদিদেরকে বেঁচে থাকতে হবে, হতে হবে বিতারিত ও নির্বাসিত; যেমনটি তারা অতীতেও হয়েছিলো।
লেখকঃ ব্যারিস্টার ওয়াহিদ মুহাম্মাদ মাহবুব, সলিসিটর, ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস