জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের যৌথ বিবৃতি
বাংলা সংলাপ ডেস্কঃ ২-৪ জুন বাংলাদেশ পরিদর্শনকালে, বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন – কপ২৬ এর মাননীয় প্রেসিডেন্ট অলোক শর্মা ও বাংলাদেশের মাননীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডাঃ এ.কে. আব্দুল মোমেন ০২ জুন ২০২১ তারিখে ঢাকায় বৈঠক করেন। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণ ও নেতিবাচক প্রভাব মোকাবেলায় তাঁরা যৌথভাবে বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি পুনরায় নিশ্চিত করেছেন। দ্বিপাক্ষিক ও বৈশ্বিকভাবে তাঁরা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য টেকসই নেতৃত্ব প্রদর্শন করতে সম্মত হয়েছেন।
দুই দেশ দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা বিনিময়, অংশীদারিত্ব/পার্টনারশীপ ত্বরান্বিত করা এবং উভয় দেশ যেসব জলবায়ু চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে তার ব্যবহারিক এবং প্রযুক্তিগত সমাধান বের করতে সম্মত হয়েছে। প্যারিস চুক্তির আওতায় নিজ নিজ দেশের প্রতিশ্রুতি পালন করতে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের ফলে যারা বেশি ঝুঁকিতে আছেন তাদের সহনশীলতা বাড়ানো নিশ্চিত করতে দুই দেশ একসাথে কাজ করতে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে।
ইউএনএফসিসিসি এবং প্যারিস চুক্তির বাস্তবায়ন জোরদার করার জন্য দু’দেশ তাদের দৃঢ় ও অবিচল প্রতিশ্রুতি পুনরায় নিশ্চিত করেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের সাথে অভিযোজন আরো জোরালো করতে প্রি-ইন্ডাস্ট্রিয়াল লেভেলে গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রির মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার লক্ষ্য ও প্রচেষ্টা ত্বরান্বিত করার, এবং এতে অর্থায়ন ও সাহায্যের জরুরি প্রয়োজনীয়তা উভয়ই অনুধাবন করেন। নভেম্বরে গ্লাসগোতে অনুষ্ঠিতব্য় কপ২৬ শীর্ষ সম্মেলনকে সামনে রেখে, উভয়ে নিজ নিজ দেশের উন্নয়নের প্রয়োজন বিবেচনায় রেখে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন। উভয়েই, প্যারিস রুলবুকের ম্যান্ডেট চূড়ান্তকরণসহ, কপ২৬ এ উচ্চাভিলাষী ফলাফল অর্জনের প্রতিশ্রুতি প্রকাশ করেছেন।
জাতীয়ভাবে নির্ধারিত অবদান (এনডিসি) এর সাথে সামঞ্জস্য রেখে এই শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে যেন বিশ্বের সকল দেশ নেট জিরো কার্বন নির্গমন লক্ষ্য অর্জন করতে পারে সেই বিষয়ে কপ২৬ প্রেসিডেন্ট গুরুত্বারোপ করেন। বাংলাদেশে কয়লা ব্যবহারের পরিবর্তে পরিবেশবান্ধব ও টেকসই জ্বালানি শক্তির দিয়ে ক্রমাগত এগিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাকে কপ২৬ প্রেসিডেন্ট-ডেজিগনেট স্বাগত জানিয়েছে। এমন উদ্যোগের সম্ভাবনা অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং টেকসই কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে।
বৈশ্বিক নির্গমনকে যথাযথ পরিমাণে নিয়ন্ত্রণে রাখতে, বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধিকে ১.৫ ডিগ্রিতে সীমাবদ্ধ রাখতে, অভিযোজনের জন্য অধিক জলবায়ু অর্থায়ন এবং স্বল্প-কার্বন নির্গমন করে এমন প্রযুক্তি স্থানান্তরের জন্য জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিশ্বের নেতৃবৃন্দের, বিশেষ করে জি২০ নেতৃবৃন্দের প্রতিশ্রুতি রক্ষার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেন। অদূর ভবিষ্যতে নেট জিরো লক্ষ্যমাত্রা সহ আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে বাংলাদেশ একটি উচ্চাভিলাষী ও হালনাগাদ এনডিসি জমা দেওয়ার জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ।
অ্যাডাপ্টেশন অ্যাকশন কোয়ালিশনের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসাবে, বাংলাদেশ এবং যুক্তরাজ্য জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে খাপ খাওয়ার (অভিযোজন) প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করার জন্য স্থানীয়ভাবে জলবায়ু সংকট নিরসনে উদ্যোগ গ্রহণকে এগিয়ে নিতে অন্যান্য কোয়ালিশন সদস্যদের সাথে একত্রে কাজ করার প্রতিশ্রুতি পুনরায় ব্যক্ত করেছে।
ক্ষয়ক্ষতি এড়ানো, প্রশমন ও সুরাহা করতে উভয় দেশ আরো বেশি কাজ করবে। সান্টিয়াগো নেটওয়ার্কের গঠনের সাথে একমত পোষণ করা এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। যুক্তরাজ্যের নেতৃত্বে ক্লাইমেট এন্ড ডেভেলপমেন্ট মিনিস্টারিয়াল, যুক্তরাজ্য, বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক দক্ষতার সহায়তা নেওয়ার মাধ্যমে এই নেটওয়ার্ককে সক্রিয় করতে উভয়দেশই কাজ করতে পারে।
অর্থায়নের ক্ষেত্রে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়নে স্বচ্ছতার কথা মাথায় রেখে, উন্নয়নশীল দেশের প্রয়োজন পূরণ করতে, ২০২০ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে পাবলিক, প্রাইভেট, দ্বিপাক্ষিক এবং বহুপাক্ষিক সহ বিভিন্ন উৎস থেকে জলবায়ু অর্থায়নের জন্য উন্নতদেশগুলোর একটি সম্মিলিত লক্ষ্য থাকাকে যুক্তরাজ্যের কপ২৬ প্রেসিডেন্সি এবং বাংলাদেশ গুরুত্বের সাথে দেখে।
ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের প্রেসিডেন্ট হিসেবে বাংলাদেশের সক্রিয় নেতৃত্ব এবং জলবায়ু সংকটের ঝুঁকিতে থাকা এই ফোরামের ৪৮টি দেশ যে অস্তিত্ব সংকট ও চরমভাবে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে রয়েছে তা বিশ্বব্যাপী সকলের কাছে তুলে ধরার কাজকে কপ২৬ প্রেসিডেন্ট স্বাগত জানান। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতি সর্বাধিক সহনশীলতা বাড়ানোর মাধ্যমে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি অর্জন করতে বাংলাদেশের মুজিব ক্লাইমেট প্রোসপারিটি প্ল্যান ও দশক ২০৩০ কে তিনি স্বাগত জানান।
কপ২৬ এ সক্রিয় নেতৃত্ব ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিরসন (mitigation), জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের সাথে অভিযোজন (adaptation) ও সহনশীলতার (resilience), জলবায়ু অর্থায়ন ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার উপর গুরুত্ব প্রদানের জন্য বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী যুক্তরাজ্যের প্রশংসা করেন। তিনি এর পাশাপাশি ২০৫০ সালের মধ্যে কার্বন নির্গমন শূন্যের ঘরে নিয়ে যাওয়ার জন্য ঘোষণা দেওয়া প্রথম উন্নতদেশ হিসেবে যুক্তরাজ্যের প্রশংসা করেন।
জলবায়ু সংকট নিরসনের জন্য গৃহীত উদ্যোগের কেন্দ্রে প্রাকৃতিক পরিবেশকে স্থাপন করতে উভয় দেশ একসাথে কাজ করতে সহমত পোষণ করেছে। এই সহমত ২০২০ সালের জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে অনুষ্ঠিত লিডারস্ প্লেজ ফর ন্যাচার, গ্লোবাল ওশেন এলায়েন্স ও কমনওয়েলথ ব্লু চার্টারকে এগিয়ে নেওয়া এবং জীববৈচিত্র্য ও বাস্তুতন্ত্র সংরক্ষণের সম্মিলিত অঙ্গীকারকে উপলব্ধি করে গ্রহণ করা হয়েছে।
দু’জন নেতাই আশা করেন এই বছরে গ্লাসগোতে অনুষ্ঠিতব্য বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন – কপ২৬ এর আগে যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশের মধ্যে একটি জলবায়ু চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে। সম্মেলনে এ ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরাম ও কপ২৬ এর নেতৃবৃন্দদের বৈঠক এবং কপ২৬ সম্মেলনের সফলতা কামনা করেন।