নারায়ণগঞ্জে একই পরিবারের দুই শিশুসহ পাঁচজনকে জবাই
নিজস্ব প্রতিবেদক
রাজধানী ঢাকার পার্শ্ববর্তী নারায়ণগঞ্জে একটি ফ্ল্যাট বাড়িতে একই পরিবারের পাঁচজনকে গলা কেটে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। নিহতদের দুজন শিশু। শনিবার রাত পৌনে ১০টার হত্যার বিষয়টি প্রকাশিত হয়। তবে কখন, কারা এ হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে সে বিষয়ে এখনো নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশ।
নিহতরা হলেন তাসলিমা (৩৫), তার ছেলে শান্ত (১০), মেয়ে সুমাইয়া (৫), তাসলিমার ছোটভাই মোরশেদুল (২২) ও তাসলিমার জা লামিয়া (২৫)। তাদের গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার চরভেলাবাড়িতে। তারা শহরের বাবুরাইল ২নং এলাকার খানকামোড় এলাকার আমেরিকা প্রবাসী ইসমাইলের বাসায় ভাড়া থাকতেন।
নিহত তাসলিমার মা মোর্শেদা জানান, তিনি ঢাকার ধানমন্ডি থাকেন। শুক্রবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে তার ছেলে মোরশেদুলের সঙ্গে তার সর্বশেষ কথা হয়। এরপর থেকে সারাদিন মেয়ে তাসলিাম ও ছেলে মোরশেদুলের নম্বর বন্ধ ছিল।
শনিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে নিহত তাসলিমার দেবর শরীফ মিয়া কিশোরগঞ্জের পাহাটি এলাকা থেকে বেড়াতে এসে দরজা বাহির থেকে তালাবদ্ধ অবস্থায় দেখতে পান। পরে তাদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন বন্ধ পেয়ে মোরশেদুলের খালাতো ভাই দেলোয়ার হোসেনসহ অন্যদের ডেকে আনেন। পরে তারা বাড়ির অন্য ভাড়াটিয়াদের উপস্থিতিতে দরজার তালা ভেঙে ভেতরে ৫টি লাশ দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর দেন।
তাসলিমার ননদ শহরের খানপুরের বাসিন্দা হাজেরা বেগম জানান, তাসলিমার স্বামী শফিক মিয়া গাড়িচালক। তিনি ঢাকায় প্রাইভেটকার চালান। সপ্তাহে একদিন বাড়িতে আসেন। ছেলে-মেয়ে নিয়ে বাবুরাইল এলাকার ইসমাইল হোসেনের ছয়তলা বাড়ির নিচতলায় কয়েক মাস আগে ভাড়া নেন। তার ভাই ময়মনসিংহ থেকে এসে দরজা বন্ধ দেখতে পেয়ে সবাইকে খবর দেন। পরে তালা ভেঙে পাঁচজনের গলাকাটা লাশ দেখতে পেয়ে পুলিশকে খবর দেন। তবে কখন এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে সে ব্যাপারে নিশ্চিত করে কিছু জানা যায়নি।
নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্যানেল মেয়র-১ হাজী ওবায়েদুল্লাহ জানান, তিনি খবর পেয়ে ওই কক্ষের ভেতরে প্রবেশ করেছিলেন সেখানে একটি কক্ষে তিনজনের লাশ ও অপরকক্ষে দুইজনের লাশ দেখতে পেয়েছেন। তাদেরকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। খবর পেয়ে প্রশাসনের লোক এসে তাদেরকে ওই কক্ষ থেকে বের করে দিয়ে ভেতর থেকে আটকে দিয়ে তদন্ত কাজ শুরু করেছে।
ঘটনাস্থলে আসা ঢাকা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি (অপরাধ) মোহাম্মদ আলী জানান, ঘটনাটি দিনের বেলা যেকোনো সময়ে ঘটেছে বলে আমরা প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি। যারা অপরাধী তারা অপরাধ করে বাইরে থেকে তালাবদ্ধ করে পালিয়ে গেছে। ঘটনার বিভিন্ন বিষয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। আর খুব দ্রুত আসামিদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হবে।
নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার ড. খন্দকার মহিদ উদ্দিন জানান, আমরা ধারণা করছি পারিবারিক বিরোধ নিয়েই এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। যারা হত্যা করেছে তারা অপেশাদার খুনি বলেই আমাদের মনে হয়েছে এবং তারা পূর্ব পরিচিত ছিল। কারণ একজন প্রাপ্তবয়স্ক যুবকের উপস্থিতিতে যারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে তারা পূর্ব পরিচিত হিসেবেই কক্ষে প্রবেশ করেছিল।
এদিকে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সন্দেহজনক হিসেবে নিহত তাসলিমার খালাতো ভাই দেলোয়ার হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রাত সাড়ে ১১টায় আটক করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় আরো একজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য আটক করা হয়েছে বলেও জানান খন্দকার মহিদ উদ্দিন।