গণতন্ত্র: একই গর্ত হতে বারবার দংশিত হওয়ার ইতিহাস

Spread the love

মুহাম্মাদ ইসলাম:
পঞ্চাশ বছর পূর্বে, একটি শান্তিপূর্ণ ও ন্যায় সমৃদ্ধ জীবন যাপনের আকাঙ্ক্ষায়, রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশের জন্ম। দুঃখজনক বাস্তবতা হলো, সেই শান্তি ও ন্যায়ের পরিবর্তে দীর্ঘ পাঁচ দশক ধরে বাংলাদেশের মানুষ পেয়েছে উৎপীড়ন মূলক শাসন ও দুর্নীতির মহোৎসব। খুন, গুম, বিচার বহির্ভুত হত্যা, চাঁদাবাজি, ধর্ষণ, বেকারত্ব, দারিদ্রতা, শ্রমিক নিষ্পেষণ, দখল, উচ্ছেদ, সম্পদ ও অর্থ পাচার, মূল্যবৃদ্ধি, জনগণের সম্পদ লুটপাট ইত্যাদি এই দেশের মানুষ প্রতক্ষ্য করেছে শতাব্দীর জঘন্যতম আবিষ্কার গণতন্ত্রের অধীনে।

স্বাধীনতা পরবর্তী পাঁচ দশকের ও বেশী সময় ধরে সাম্য, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরেপক্ষতার সস্তা শ্লোগানের আড়ালে নয়া ঔপনিবেশিক রাজনীতিকে বাংলাদেশে বাস্তবায়িত করা হয়েছে। এই দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠী, রাজনীতি ও ভূকৌশলগত সম্পদের উপর সাম্রাজ্যবাদী মার্কিন, বৃটিশ ও আধিপত্যবাদী শক্তি ভারতের কর্তৃত্বকে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। মার্কিন ভারত বৃটেন নিয়ন্ত্রিত রাজনৈতিক মঞ্চে বহিঃশক্তির স্বার্থ রক্ষক দালাল স্বরুপ আবির্ভাব ঘটে মুজিব -জিয়া-এরশাদ গংদের। হাসিনা-খালেদা নিয়ন্ত্রিত দ্বি-জোটীয় গণতান্ত্রিক রাজনীতিও সেই স্বার্থকেই প্রতিনিধিত্ব করে যা আরো বেশি লুন্ঠন ও দূর্নীতির বিস্তার ঘটায় এবং দেশকে আরো অস্থিতিশীল করে তুলছে।

কারণ গণতন্ত্রের বাস্তবতা হল এটি এমন একটি ব্যবস্থা যা সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের নয় বরং গুটিকয়েক পুঁজিপতি সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজনীতিবিদদের স্বার্থরক্ষা করে। আমরা এখন যে সহিংসতা, দুর্নীতি ও প্রতারণার রাজনীতি প্রত্যক্ষ করছি তা সত্যিকার অর্থে ‘প্রকৃত গণতন্ত্রের’ পরিণতি। আমাদের এই জালিয়াতি ও জুলুমের গণতন্ত্র থেকে এবং আমাদের উপর চাপিয়ে দেওয়া এই ঔপনিবেশিক দালালদের থেকে পরিত্রাণ পেতে হবে, যারা নিজেদের ভাগ্য গড়ার জন্য তাদের মধ্যে লড়াই চালিয়ে যাবে আমাদের জান মালকে পুঁজি করে। ঔপনিবেশিক পশ্চিমারাও এই দালালদের মুসলিম ভূমিতে বহাল রাখবে যতক্ষণ পর্যন্ত তাদের ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ দালালদের মাধ্যমে অক্ষুন্ন থাকছে। বিদেশী হস্তক্ষেপের মাধ্যমে দুর্বল দেশগুলোকে ঔপনিবেশিক শক্তির অধীন করে রাখার জন্য ‘গণতান্ত্রিক মডেল’ মুসলিম ভূমিতে রপ্তানি করা হয়েছে, তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো তার প্রমাণ।

অপরদিকে ইসলামী খিলাফত ব্যবস্থা মুষ্টিমেয় পুঁজিপতিদের জন্য নয়, বরং এই ব্যবস্থা এসেছে জনগণের হাতে কর্তৃত্ব দেওয়ার জন্য। ইসলামী ব্যবস্থা অভিজাত শ্রেণীর মুনাফার আগে মানুষের মৌলিক চাহিদা মেটাতে অগ্রাধিকার দেয়। তাই খিলাফত ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ঘটাতে হবে যদি আমরা বর্তমান শাসনের কারণে সৃষ্ট দুর্দশা, দুঃখকষ্ট এবং অপমানের অবসান দেখতে চাই। এই দুর্নীতিবাজ, বিশ্বাসঘাতক এবং ধর্মনিরপেক্ষ সরকার ব্যবস্থা আমাদের মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার স্বপ্ন দেখায় যখন কি আমরা হতে পারব বিশ্বের বুকে একটি সমৃদ্ধ, শক্তিশালী ও নেতৃত্ব দানকারী রাষ্ট্র।

মানব রচিত জীবন ব্যবস্থা বাংলাদেশের সমাজকে আজ পরিণত করেছে একটি বিস্তীর্ন জেলখানায়। আজ সময় এসেছে সেই জেলখানার শৃংখল ভেঙ্গে বেরিয়ে এসে এক আল্লাহর স্বার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য এবং এই পৃথিবীতে শান্তি ও সমৃদ্ধশীল জীবন যাপনের জন্য খিলাফত প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মুসলিম উম্মাহর হারানো গৌরবকে পুনরুদ্ধার করা।


Spread the love

Leave a Reply