নাড়ীর টানে নেদারল্যান্ড থেকে চট্টগ্রামে
তার পুরো নাম সুলতানা ভ্যান ডি লিস্ট। নাম শুনেই যে কেউ ভাববেন তিনি বিদেশী নাগরিক। ধারনাটা সঠিক, তবে পুরোপুরি নয়। কারন ডাচ নাগরিক হলেও সুলতানার জন্ম বাংলাদেশে। তার জন্ম চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার দোহাজারীতে।
অবশ্য নিজেও জানতেন না তার আসল পরিচয়। শৈশব থেকে নেদারল্যন্ডে বেড়ে ওঠা সুলতানা কয়েক বছর আগে জানতে পারেন তিনি ডাচ নন, বাঙালি। আর জন্ম পরিচয় জানার পর থেকেই ব্যাকুল হয়ে উঠেন বাবা-মা ও স্বজনদের বিষয়ে জানতে। অবশেষে জন্মের ৩৭ বছর পর নাড়ীর টানে ভাষার মাসের প্রথম দিনে মাতৃভূমিতে এসেছেন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সুলতানা স্বজনদের খুঁজে পাওয়ার আকুতি জানান সকলের কাছে। জানান, বাবা-মা অথবা আত্মীয় স্বজন এমনকি বাড়ির নাম ঠিকানাও জানা নেই তার। তবে তার মনে আছে দোহাজারী রেলস্টেশন ও বাজারের কথা।
আবেগে আপ্লুত সুলতানা বলেন, ছোটবেলার কোন স্মৃতি আমার মনে নেই। আমার বাবা-মাকে তাও জানি না। কিন্তু তাদের ও স্বজনদের ফিরে পাওয়ার প্রবল টানে বাংলাদেশে এসেছি। তাদের খুঁজে বের করবো।
তিনি জানান, প্রতিনিয়ত মনের মধ্যে কিসের যেন শূন্যতা অনুভব করতেন সুলতানা। কোথায় যেন ভিন্নতা খুঁজে পেতেন ডাচ ও নিজের মধ্যে। প্রকৃত পরিচয় জানার সঙ্গে সঙ্গেই জন্মভূমিতে ফেরার প্রবল ইচ্ছা থাকলেও যোগাযোগের কোন মাধ্যম পাচ্ছিলেন না তিনি। পরে নেদারল্যান্ডসভিত্তিক এনজিও সংস্থা স্লোবের মাধ্যমে বাংলাদেশ আসেন তিনি। সংগঠনের সাবেক এক কর্মকর্তার সহযোগিতায় চট্টগ্রামে এসেছেন। সঙ্গে এসেছেন স্বামী ইউরি জেকবস ও ছেলে নোয়া আবেদ নাবিলা জেকবস।
জন্মভূমির সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করতে চাওয়ার ইচ্ছা কথা জানিয়ে সুলতানা বলেন, আমি জানি স্বজনদের খুঁজে পাওয়া কষ্টসাধ্য। কারণ আমার কাছে কোন তথ্য নেই, মনেও নেই।
সুলতানা যে পরিবারে বেড়ে উঠেছেন ওই পরিবারে এস কামাল নামে তার এক দত্তক ভাইও রয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, কামালকেও বাংলাদেশ থেকে দত্তক নেওয়া হয়েছিল। তবে তার বাড়ি কোথায় তা জানি না।
বর্তমানে নেদারল্যান্ডসের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা সুলতানা লেখাপড়া শেষ করে বিয়ে করেছেন ডিজাইনার ইউরি জেকবকে। তাদের সংসারে ১০ বছরের এক ছেলে সন্তানও আছে।
সুলতানার বন্ধু ইসমাইল শরীফ জানান, বাবা-মা মারা যাওয়ার পর দাদী রহিমা খাতুন ডাচ দম্পতির কাছে সুলতানাকে তুলে দেন। তারপর সেখানেই বেড়ে ওঠেন। সুলতানার দত্তক বাবা-মা’র কাছে থাকা অ্যাফিডেভিট থেকে জানা যায় রহিমা খাতুন দোহাজারী এলাকার কদম আলীর স্ত্রী। সুলতানার জন্মের পর তার মা-বাবা মারা গেলে অভিভাবক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন রহিমা খাতুন। কিন্তু ভরণ-পোষণের সামর্থ না থাকায় সুলতানাকে একটি ডাচ পরিবারের কাছে দত্তক দেন। তবে ওই অ্যাফিডেভিটে সুলতানার মা-বাবার নাম উল্লেখ নেই।
তিনি জানান, এরই মধ্যে আমরা দোহাজারী এলাকায় খোঁজ খবর নিয়েছি। উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও স্থানীয় চেয়ারম্যানের সঙ্গে আলাপ করেছি। তারা সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।