জয়ী বেশেই বিদায় নিলেন ম্যাককালাম
ব্যাট হাতে যতই উদ্ধত, আচরনে ততটাই বিনয়ী। ডাউন দ্য উইকেটে এসে মিড অফ বা মিড অনের উপর দিয়ে দৃষ্টিনন্দন চার-ছয়, অদ্ভুত রকমের স্কুপ, রিভার্স সুইপ, স্লগ সুইপ। ক্রিকেটের ব্যকরণকে প্রতিনিয়তই বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখানো এক ব্যাটসম্যান ব্র্যান্ডন ম্যাককালাম।
ব্যাট হাতে বোলারদের খুন করার মাঝেই তার আনন্দ। তবে বোলারদের যম এই ব্যাটসম্যান আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আর ব্যাট-প্যাড পড়ে নামবেন না। সোমবার জয় দিয়েই ক্যারিয়ার শেষ করলেন ম্যাককালাম।
শুরুর মতো শেষের গল্পটাও একই। ২০০২ সালের জানুয়ারিতে সিডনিতে এই অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন ব্র্যান্ডন ম্যাককালাম। কিউইরা সেই ম্যাচ জিতেছিল ২৩ রানে। ১৪ বছর পর এই অজিদের বিপক্ষে খেলেই অবসরে গেলেন ক্রিকেটের এই বিস্ফোরক ব্যাটসম্যান। এবারো জয় পেয়েছে তার দল।
সোমবার হ্যামিল্টনে শেষ ওয়ানডেতে অস্ট্রেলিয়াকে ৫৫ রানে হারিয়ে চ্যাপেল-হ্যাডলি ট্রফিটাও ঘরে রেখে দিল কিউইরা। এই জয়ে ম্যাককালামকে সেরা উপহারটাই দিলেন সতীর্থরা। ২০০৭ সালের পর এই প্রথম অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজ জিতলো কিউইরা। ম্যাককালামের বিদায়ের মঞ্চটা হয়তো এর চেয়ে আর ভালো হতে পারতো না।
তবে ম্যাককালামের বিদায়ী ম্যাচে কিউইদের জয়টা বেশ ঘাম ঝড়িয়েই এসেছে। প্রথমে ব্যাট করে নিউজিল্যান্ডের সংগ্রহ করে ৫ উইকেটে ২৪৬ রান। ৪৪তম ওভারে অলআউট হবার আগে অজিদের সংগ্রহ ১৯১ রান। টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে মার্টিন গাপটিলের সঙ্গে ৫৭ বলে ৮৪ রানের উদ্বোধনী জুটি গড়েন। একটা সময় মনে হচ্ছিলো কিউইদের সংগ্রহটা বেশ হৃষ্টপুষ্ট হতে যাচ্ছে তবে মাত্র ১৫ বল ব্যবধানে ৯ রানে শেষ ৫ উইকেট হারিয়ে বসে নিউজিল্যান্ড।
গাপটিল ৫৯ ও গ্রান্ট এলিয়ট করেন ৫০ রান। কেন উইলিয়ামসন আর হেনরি নিকোলাস দুজনেই ১৮ রান করেন। কোরি অ্যান্ডারসন করেন ২৭ রান। ২৪৭ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে অস্ট্রেলিয়ার শুরুটাও খারাপ হয়নি। তবে ১৯তম ওভারে ৩ বলের ব্যবধানে অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথ ও গ্লেন ম্যাক্সওয়েলকে হারানোর পর ম্যাচটা হেলে পড়ে নিউজিল্যান্ডের দিকে।
পঞ্চম উইকেটে জর্জ বেইলি ও মিচেল মার্শ ৫৯ রানের জুটি গড়ে অবশ্য ভালোই প্রতিরোধ গড়েছিলেন। কিন্তু এ জুটি ভাঙার পর আর দাঁড়াতেই পারেনি সফরকারীরা। তাদের ইনিংস গুটিয়ে যায় ১৯১ রানে। মার্শ ৪৭ ও বেইলি ১৭ রান করেন।
বিদায়ী ম্যাচে আর একটি রেকর্ডে নাম উঠালেন ম্যাককালাম। ২৭ বলে ৪৭ রানের ইনিংস খেলার পথে ৩টি ছক্কা মারেন তিনি। এই ৩ ছক্কা দিয়ে ওয়ানডেতে ২০০ ছক্কা হাঁকানোর মাইলফলক স্পর্শ করেন কিউই অধিনায়ক। তার আগে ওয়ানডেতে ২০০ বা এর বেশি ছক্কা হাঁকিয়েছেন আফ্রিদি ও গেইল।
বর্নীল ক্রিকেট ক্যারিয়ারে বেশ কয়েকটি রেকর্ড গড়েন ম্যাককালাম। ইতিহাসের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে টানা ৯৯ টেস্ট খেলেছেন ম্যাকালাম। টানা ৯৮ টেস্ট খেলে রেকর্ডটি ছিল ডি ভিলিয়ার্সে দখলে। টানা ৯৬, ৯৩ ও ৮৪টি করে টেস্ট খেলে পরের তিনটি স্থানে অ্যাডাম গিলক্রিস্ট রাহুল দ্রাবিড় ও শচীন টেন্ডুলকারের।
৯৯ টেস্টে ৩৯ গড়ে ম্যাককালামের মোট রান ৬২৩৭। সেঞ্চুরি ১১টি। সর্বোচ্চ ৩০২ রান। টেস্ট ক্রিকেটে সর্বোচ্চ ছক্কা হাঁকানো দ্বিতীয় খেলোয়াড় তিনি। তার আগে ঠিক ১০০টি ছয় মেরেছেন অজি উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান অ্যাডাম গিলক্রিস্ট। ছক্কার রেকর্ডের ক্ষেত্রে পরের চারটি নাম ক্রিস গেইল (৯৮), জ্যাক ক্যালিস (৯৭) বীরেন্দর শেবাগ (৯১) ও ব্রায়ান লারা (৮৮)।
টি২০ ক্রিকেটের সর্বোচ্চ রানের মালিক ব্র্যান্ডন ম্যাকাকলাম। ৭১ ম্যাচে ২১৪০ রান করেছেন তিনি। ১৩টি হাফ সেঞ্চুরি এবং ২টি সেঞ্চুরি মালিক তিনি। আন্তর্জাতিক টি২০ ক্রিকেটে একমাত্র দুটি সেঞ্চুরি আছে কেবল ম্যাককালামেরই।
ওয়ানডেতে নিউজিল্যান্ডের হয়ে তৃতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ম্যাককালাম। স্টিফেন ফ্লেমিং (৮০০৭) এবং নাথান অ্যাস্টল (৭০৯০) রয়েছেন কেবল তার উপরে। সর্বাধিক ম্যাচ (২৬০) খেলার দিক থেকেও দেশের হয়ে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছেন তিনি। ভেট্টরি (২৯১) ও ফ্লেমিং (২৭৯) রয়েছেন তার উপরে।
বিশ্বকাপে ১৮ বলে হাফসেঞ্চুরি করেছেন ম্যাককালাম। টেস্ট ও ওয়ানডে ক্রিকেটে প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে ওপেনিং থেকে নবম স্থানে ব্যাটিং করেছেন তিনি।