৯২ বছর বয়সে মারা গেলেন বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমেদ

Spread the love

বাংলা সংলাপ ডেস্কঃ বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি ও প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমেদ মারা গেছেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৯২ বছর।

তাঁর জামাতা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক আহাদুজ্জামান মোহাম্মদ আলী জানান, শনিবার সকাল দশটার দিকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিচারপতি আহমেদের মৃত্যু হয়।

অধ্যাপক আলী জানান, “ফেব্রুয়ারির ১২ তারিখ থেকেই হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন তিনি। ফুসফুসে পানি উঠে যাওয়াসহ বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন জটিলতায় ভুগছিলেন। শুক্রবার রাতে লাইফ সাপোর্টে নেয়া হয় তাঁকে।”

আন্দোলনের মুখে এইচএম এরশাদ পদত্যাগ করার পর ১৯৯০ সালের ৬ই ডিসেম্বর থেকে ১৯৯১ সালের ৯ই অক্টোবর পর্যন্ত বাংলাদেশের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমেদ।

তিনি একটি নির্বাচনের মাধ্যমে জয়ী রাজনৈতিক দল বিএনপির কাছে রাষ্ট্রক্ষমতা হস্তান্তর করে আবার প্রধান বিচারপতির দায়িত্বে ফিরে যান একানব্বই সালে।

বাংলাদেশের প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে সাধারণত কোন বিষয়ে একমত হতে দেখা না গেলেও বিচারপতি আহমেদের এই অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন নিয়ে দুই দলই একমত পোষণ করেছিল সে সময়ে।

এরপর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর তাঁকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করে। সে বছরের ৯ই অক্টোবর থেকে ২০০১ সালের ১৪ই নভেম্বর পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন বিচারপতি আহমেদ।

সব দলের কাছে গ্রহনযোগ্য
সাহাবুদ্দিন আহমেদ বাংলাদেশের এরকম এক সংকটময় মুহুর্তে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপ্রধানের দায়িত্ব নেন।

উনিশশো নব্বই সালের এরশাদবিরোধী আন্দোলনের পর নির্বাচন দেয়ার জন্য এমন একজন অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির প্রয়োজন হয়, যিনি নিরপেক্ষ এবং সব দলের কাছে যার গ্রহণযোগ্যতা থাকবে।

সকল বিরোধী দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমদ একটি ‘নিরপেক্ষ নির্দলীয় কেয়ারটেকার’ সরকার গঠন করেন, যার একমাত্র দায়িত্ব ছিল তিন মাসের মধ্যে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করা।

তবে সেসময় অস্থায়ী প্রেসিডেন্ট হওয়ার প্রস্তাব মি. আহমেদ তাৎক্ষণিকভাবে গ্রহণ করেননি।

বিবিসি বাংলাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ড. কামাল হোসেন বলেছিলেন, সেসময় সংবিধানে সংশোধনীর মাধ্যমে মি. আহমেদকে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব অর্পণ করা হয়।

“একটা বিশেষ পরিস্থিতিকে মোকাবেলা করার জন্য উনাকে প্রস্তাব করা হয়েছিল। উনিও সেই বিশেষ পরিস্থিতিতে সেটা গ্রহণ করেছিলেন।”

“কিন্তু প্রধান বিচারপতি হিসেবে উনার যে মেয়াদ বাকি ছিল, অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব শেষে যেন উনি সেই মেয়াদ পূর্ণ করতে পারেন – সেটা সংবিধানের একটি সংশোধনীর মাধ্যমে বাস্তবায়ন করার প্রস্তাব করা হয় উনাকে।”

সাহাবুদ্দিন আহমেদ ঐ প্রস্তাবে রাজি হয়েছিলেন এবং পরবর্তীতে নির্বাচন সম্পন্ন করার পর প্রধান বিচারপতির দায়িত্বে ফিরে আসেন, বলেন মি. কামাল হোসেন।

অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হিসাবে দায়িত্ব পালনের পর নির্বাচন শেষে প্রধান বিচারপতির পদে ফিরে গিয়েছিলেন।

এই দু’টি বিষয়ে বৈধতা দেয়া হয়েছিল সংবিধানের একাদশ সংশোধনীর মাধ্যমে।

তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের সাথে মতবিরোধ
উনিশশো ছিয়ানব্বই সালে ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগ নির্দলীয় ব্যক্তি হিসেবে বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমেদকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করেছিল।

তিনি রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর জননিরাপত্তা আইন নামের একটি বিতর্কিত আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে সই করতে অস্বীকৃতি জানান।

সেকারণে তাঁর সাথে তৎকালীন সরকার এবং আওয়ামী লীগের তিক্ততা তৈরি হয়েছিল। তখন সেই সম্পর্কে আর উন্নতি হয়নি।

দুই হাজার ষোল সালে বিবিসি বাংলাকে দেয়া সাক্ষাৎকারে প্রয়াত অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেছিলেন যে, রাষ্ট্রপতি হিসেবে সরকারি প্রভাবমুক্ত হয়ে কাজ করতে চাওয়ায় তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিদের অনেকের বিরাগভাজন হয়েছিলেন তিনি।

“উনি নিজেকে যতদূর সম্ভব সরকারি বাধা-নিষেধের প্রভাব মুক্ত করে কিছু কথা বলেছিলেন, দেশের কল্যাণের জন্য। এই ধরণের কথা তিনি বলেছিলেন এবং কাজ তিনি করেছিলেন,তাতে পরবর্তীকালে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ কিছুটা রূষ্টই হয়েছিল”, ছয় বছর আগে বিবিসি বাংলাকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন প্রয়াত অধ্যাপক আনিসুজ্জামান।

সংসদীয় পদ্ধতিতে সরকার ব্যবস্থায় রাষ্ট্রপতি অতি সীমিত ক্ষমতার অধিকারী হলেও রাষ্ট্রপতি হিসেবে তাঁর পাঁচ বছরের মেয়াদে সাহাবুদ্দিন আহমেদ তার নিরপেক্ষ ভূমিকার জন্য প্রশংসিত ছিলেন।


Spread the love

Leave a Reply